পাব মানেই কি উদ্যম নাচ সাথে পানীয়! পাব শব্দের অর্থে জানেন?
বর্তমান সময়ে পাব এই শব্দটির সাথে সুপরিচিত শহরতলীর মানুষজনেরা। ‘পাবলিক হাউস’ যাকে সংক্ষেপে বলা হয় পাব। তবে এই পাব শব্দটির উৎপত্তি থেকে শুরু করে বর্তমান দিনের পাব কালচারের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, কারন উৎপত্তির সময় এর সংজ্ঞা অন্যরকম ছিল এবং বর্তমান দিনে এর অর্থ অন্য।
শব্দটি প্রথম ১৭ শতকের শেষের দিকে আবির্ভূত হয়েছিল। যার প্রাঙ্গনে মদ্যপানের জন্য মদ্যপ পানীয় পরিবেশনের লাইসেন্স দেওয়া হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় ভারতেরও দিকে দিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই পাবের সংখ্যা।
আনুমানিক ৮০০ এর বেশি অ্যালকোহল পরিবেশনকারী পাব এবং ক্লাব রয়েছে ভারতে। ভারতে এটি শুরু হয়েছিল মুম্বাইয়ের পাতিয়ালা পেগ থেকে। এটির সবচেয়ে সুপরিচিত স্থাপনা গুলির মধ্যে একটি, যেখানে প্রাচীনতম পাব থাকার পাশাপাশি এই স্থানটির আরেকটি বিশেষত্ব রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানেই ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজনের বিষয়ে গান্ধী, নেহেরু, জিন্নাহ এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন একমত হয়েছিলেন (যদিও এই পাবটির স্থান নিয়ে দ্বিমত রয়েছে)।
শুধু মুম্বাই নয় আরও অনেক ভারতেবর্ষের অনেক শহরে রয়েছে এই পাব সংস্কৃতি, বর্তমান দিনে উপার্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এই পাব কালচার। একটা সময় পাবে মানুষ সন্ধ্যবেলা শান্তির কারনে যেতেন হাল্কা পানীয়ের সাথে মন ভালো করতে, তবে বর্তমান দিনে এর সংজ্ঞা অনেকটাই বদলেছে। এখন শুধু পানীয় নয় সাথে মিউজিক এবং নাচের ব্যাপারটিও লক্ষ্য করা যায়।
ব্রিটেনে প্রদর্শিত প্রথম পাব গুলি ছিল আসলে রোমান সরাইখানা, যেখানে পরিবেশন করা হয়েছিল অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং খাওয়ার। পরবর্তীকালে, এই সমস্ত সরাইখানা গুলিকে লাইসেন্স দেওয়া হয় এবং তাদের কক্ষে ভ্রমণকারী অতিথিদের রাখার বিষয়ে সেই সময় সরাই হিসাবে এই গুলি পরিচিত ছিল। গ্রামাঞ্চলে বা মহাসড়কের পাশে হোটেল গুলি অবস্থিত হওয়ার প্রবণতা ছিল, যেখানে সরাইখানা গুলি সাধারণত গ্রাম এবং শহর কেন্দ্রীক হয়ে ওঠে।
আলেহাউসের এই ধারণাটি নিয়ে এসেছিল অ্যাংলো-স্যাক্সনরা, যারা ইংল্যান্ডে পঞ্চম শতাব্দীর পর থেকে বসবাস করেছিল। এই গুলি ছিল সরাইখানার তুলনায় কিছুটা কম পরিশীলিত, তবে এখানে একই রকম পানীয়ের সুবিধা প্রদান করা হত।
প্রথম দিকের আলিহাউসগুলি থেকে অনেক আলাদা হতে পারে আধুনিক পাব কালচার। এই পাব কালচার মূলত শিল্প বিপ্লবের আগমনের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা ১৯ শতকের মধ্যে বিয়ারের উৎপাদন সম্ভাবনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করাকে সাহায্য করে, এবং সময়ের সাথে বিয়ার-প্রেমী জনসংখ্যাও একই হারে বৃদ্ধি পায়।
এটি ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শত শত উদ্দেশ্য-নির্মিত পাবের জন্ম দেয়। সেই সময় থেকে শুরু করে বর্তমান দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাব। আর সেই তালিকা থেকে বাদ নেই ভারতের নামও। ভারতবর্ষেরও বিভিন্ন জায়গা বৃদ্ধি পেয়েছে পাবের সংখ্যা। সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতার নামও। কলকাতায় সূরা প্রেমী মানুষদের কাছে পাব একটি ভালবাসার জায়গা। বিশেষ করে সপ্তাহের শেষে মন ভালো করতে আজকাল পাবে ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন বয়েসের মানুষেরা। সুদূর ব্রিটেনে এই পাব বিষয়টি শুরু হলেও বর্তমান দিনে ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরে এই সংস্কৃতি মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। ভারতবর্ষের মেট্রোপলিটান শহর গুলিতে পাবে ভিড় জমাচ্ছে প্রচুর মানুষ। বিভিন্ন শহরে আবার সেখানকার সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে বর্তমান দিনের পাব গুলি। যেমন কলকাতা শহরে বাঙালিদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে DESTINATION 16। পাবের কর্ণধার বিশ্বজিৎ ঘোষ এর কথায় “ আমরা বাঙালি এবং আমাদের সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া বিশেষভাবে দরকার, সুদূর ব্রিটেনে এই পাব সংস্কৃতি শুরু হলেও আজকাল পৃথিবীর প্রচুর দেশে এই সংস্কৃতি দেখা যায়, আর সেই কারনেই কলকাতার মানুষের অর্থাৎ বাঙ্গালীদের কথা মাথায় রেখে আমাদের পাবে বাঙালি সংস্কৃতির উপর নজর রেখে কিছু ইন্টেরিয়ার ডেকোরেশান করা হয়েছে”। বিশেষ করে বাঙালি যেহেতু আনন্দ করতে ভালোবাসে তাই উল্লাস বলে আলাদা করে একটি জায়গা রাখার পাশাপাশি কলকাতার বনেদি আনার ছাপ ফুটিয়ে তুলেছে এই পাবটির দেওয়ালে আঁকা হাতে টানা রিক্সা এবং হলুদ ট্যাক্সির ছবি।