চীন

আর্থিক সমস্যার কারনেই চীনের দিকে ঝুঁকছে রাশিয়া!

চাকরিরত এবং অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সৈন্য এবং অফিসাররা অনুমান করছেন ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে যেভাবে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাশিয়ার ওপরে তাতে, শেষ পর্যন্ত আর্থিক সাহায্যের জন্য হয়তো চীনের দিকেই ঝুঁকবে রাশিয়া।

সাম্প্রতিক দিনগুলিতে ইউক্রেন এবং হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত লাদাখের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংঘঠিত সামরিক ইভেন্টগুলির মধ্যে এক উদ্বেগজনক সিম্বিয়াসিস লক্ষ্য করা গেছে। ৪,১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই অঞ্চলে সেই ২০২০ সালের মে মাস থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনী চিনা পিপলস্ লিবারেশন আর্মি অর্থাৎ PLA-এর সাথে একটা স্ট্যান্ডঅফের মধ্যে জড়িয়ে গেছে পারস্পরিক বহু বিতর্কিত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর।

বর্তমানে চাকরিরত সামরিক অফিসাররা তো বটেই, এমনকি, অবসরপ্রাপ্ত আইএ কর্মীরাও সীমান্তে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা এবং রাশিয়ার ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া চীন প্রীতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দ্য ওয়্যার-এর কাছে। এখনো ভারতের প্রধান সামরিক প্ল্যাটফর্ম এবং বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী দেশ কিন্তু রাশিয়াই;অথচ, ইউক্রেনে অগ্রসনের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বাকি পশ্চিমী দেশগুলি রাশিয়ার ওপর হাজারো নিষেধাজ্ঞার বোঝা চাপিয়ে দিতে ক্রমশ নগদ সমৃদ্ধ চীনের দিকে ক্রমশ ঘেঁষতে আরম্ভ করেছে রাশিয়া। 

ভারত ও চীনের মধ্যে বিবাদ আজকের নয়। বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে ভারত নিজ দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে বেইজিং এবং তার পারমাণবিক শক্তিধর মিত্র দেশ পাকিস্তানের সামরিক শক্তি রোধ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আর সেই কাজে এতদিন ভারত পাশে পেয়েছে রাশিয়ার অত্যাধুনিক অস্ত্র। কিন্তু, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেরই ভয় যে চিন শেষ পর্যন্ত হয়তো মস্কোকে চাপ দিতে পারে ভারতকে অস্ত্র সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ করার জন্য। ভারতে মজুদ থাকা রাশিয়ান অস্ত্রের স্পেয়ার পার্টস রাশিয়া থেকে আমদানি করতে না পারলে বিপদে পড়তে পারে ভারত।  

এর মধ্যে সম্প্রতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল পাঁচটি স্ব-চালিত Almaz-Antey S-400 Triumf সারফেস-টু-এয়ার (SAM) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, যা নয়াদিল্লি ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ দিয়ে অর্ডার করেছিল। এর মধ্যে, একটি ইতিমধ্যেই গত বছরের শেষের দিকে সমুদ্র ও আকাশপথে সরবরাহ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর সমস্ত অংশগুলোকে পাঞ্জাবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক ঘাঁটিতে একত্রিত করে ক্ষেপণাস্ত্রটি গড়ে তোলা হচ্ছে।  উদ্দেশ্য ছিলো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে একে পাকিস্তান সীমান্ত এবং এলএসি বরাবর আকাশ ক্রিয়াকলাপ নিরীক্ষণ করার জন্য মোতায়েন করা হবে। 

বাকি চারটি S-400 সিস্টেম প্রাথমিকভাবে ২০২৩ সালের মধ্যেই ভারতে আমদানি করার কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে বেশিরভাগ ভারতীয় পরিষেবা কর্মকর্তাদের-ই মত যে S-400 এর আমদানি বিলম্বিত হবে বেশ খানিকটা। ভয়ের বিষয় হলো, বেইজিংয়ের চাপ বা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে S-400 এর আমদানি সম্ভবত আটকে যেতে পারে। মস্কো বা দিল্লির তরফ থেকে অবশ্য S-400-এর ভবিষ্যত স্থিতি বা অ্যাসল্ট রাইফেল, ফ্রিগেট,পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন সহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে থাকা অন্যান্য রাশিয়ান প্রতিরক্ষা অস্ত্রসস্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। রাশিয়ান অস্ত্রের আমদানি বন্ধ হবে এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি।

সামরিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল এপি সিং বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে, রাশিয়া বাইরে অস্ত্র রপ্তানিতে মনোনিবেশ না করে তার নিজ দেশের সৈন্যদের হাতে সামরিক সরঞ্জাম তুলে দেওয়াটাই বেশি গুরুত্ব দেবে। তাছাড়া, এমন জটিল পরিস্থিতিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রপ্তানি করাটাও হবে প্রায় অসম্ভব। একই সাথে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা-বিদ্ধস্ত মস্কো এবং আধিপত্যবাদী বেইজিংয়ের মধ্যে প্রত্যাশিত সম্পর্ক ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অপারেশনাল দক্ষতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে তার ফলস্বরূপ রাশিয়ান সরঞ্জামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এমনকি, ইন-সার্ভিস রাশিয়ান অস্ত্রের স্পেয়ার পার্টস জোগাড় করা বেশ চাপের হয়ে উঠতে পারে। 

অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তারাও একমত যে ভারত কোনো প্রকারে কায়দা করে রাশিয়ার উপর চাপানো যৌথ নিষেধাজ্ঞা গুলিকে যদি এড়িয়ে যেতে  সক্ষম হয় তাতেও লাভের লাভ খুব একটা হবে না। এইবার মস্কোকে শাস্তি দেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলির সংকল্প দৃঢ়। তা বাইপাস করা হবে বেশ কঠিন। দিল্লি যদি এই নিষেধাজ্ঞাগুলি এড়িয়ে কোনো রকমে লুকিয়ে রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেও ফেলে, তাতেও ঘটনা লুকিয়ে রাখা হবে মুশকিল। অর্থাৎ, শাস্তিমূলক জরিমানা প্রায় নিশ্চিত। নিষেধাজ্ঞা অবমাননার ফলে বিক্রেতা অর্থাৎ রাশিয়া যেমন শাস্তি পাবে তেমনি গুরুতর জরিমানার মুখে পড়বে ক্রেতা দেশগুলিও।

সরকারী সূত্রগুলি অবশ্য উল্লেখ করেছে, এই মাসের শেষের দিকে বরফ গলে যাওয়ার পরে, পিএলএ- এর মোকাবেলার জন্য লাদাখে মোতায়েন করা সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে পর্যাপ্তভাবে সাজানো তোলা হয়েছে। সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে আমদানি করা এবং লাইসেন্স-নির্মিত রাশিয়ান ভীষ্ম T-90S, Ajeya T-72M1 প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, টাউড এবং স্ব-চালিত হাউইটজার। এছাড়া বাকি অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গোলাবারুদ, রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র; যার মধ্যে বেশ কিছু হলো মস্কো থেকে আমদানি করা।

দিল্লিতে সেনা সদর দফতরের একজন সিনিয়র অফিসার বলেছেন “এর পরেও যেকোনো সেনাবাহিনী মাত্রই প্রয়োজন নিরন্তর অস্ত্র। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো ভারতীয় সেনারা তাদের  ৫০% এরও বেশি সরঞ্জাম এবং অস্ত্রের জন্য অসহায়ভাবে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল”। আর এই নির্ভরশীলতা- ই হয়ে উঠছে এখন উদ্বেগজনক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা অফিসারের মতে, রাশিয়ায় তৈরি ম্যাটেরিয়ালকে টেক্কা দিতে পারবে বা অদূর ভবিষ্যতে প্রতিস্থাপন করতে পারবে, এমন কোনো বিকল্প আপাতত ভারতের সন্ধানে নেই। 

কিন্তু, মেজর জেনারেল সিং সতর্ক করেছেন ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ আসতে পারে সম্ভাব্য চীন-নেতৃত্বাধীন স্কোয়াডের তরফ থেকে। উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই মাসেই বেইজিং রাশিয়া, পাকিস্তান এবং ইরানকে নিয়ে এক জোট গঠনের কথা প্রকাশ করেছিল। যাতে পঞ্চম সদস্য হিসাবে তুরস্কও উপস্থিত থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ভয়ের বিষয় হচ্ছে এই গ্রুপের প্রধান চার দেশের মধ্যে চীন, রাশিয়া এবং পাকিস্তান – এই তিন দেশই হলো পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র। তার ওপর চিন এবং রাশিয়া আবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ায় তাদের হাতে রয়েছে ভেটো পাওয়ার। যা ব্যবহার করে তারা অনায়াসে যেকোন রেজুলেশনের বিরোধিতা করতে পারে। অপরদিকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ইরান চীনের এক মিত্রদেশ হওয়ার সাথে সাথে পারমাণবিক শক্তির উন্নতি সাধনেও যথেষ্ট সচেষ্ট। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে চিনের সাথে ২৫ বছরের এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তারা। এই চুক্তি অনুসারে চিন ইরানের অর্থনীতিতে ৪০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ বিনিয়োগ করবে; তার বিনিময়ে ইরান স্থায়ী ভেবে প্রচুর পরিমাণে ছাড় দিয়ে তেল সরবরাহ করবে চিনকে।

মেজর জেনারেল সিং- এর মতে, এলএসি-তে যে অচলাবস্থার পাশাপাশি আরও বেশি পরিমাণে অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত সৈন্য মোতায়েনের প্রয়োজন ছিল। চীনের অপর সহযোগী পাকিস্তানের প্রথম থেকেই লক্ষ্য ভারতকে বিভক্ত করা। তাই, উভয় সীমান্তে ভারতের সামরিক শক্তি ভাগ করে, ভারতকে আর্থিক চাপের মুখে ফেলে  সুযোগ পেলেই ভারতের পশ্চিম প্রান্তে পাকিস্তানী উত্থান ঘটাবে সেনাবাহিনীও। ভারতের দুই বিখ্যাত সামরিক অফিসারের মতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চালানো আক্রমণের নিন্দা করতে ভয় পাচ্ছে ভারত। কিন্তু, ঠিক এই ভয়টাই অরুণাচল প্রদেশ সহ অন্যান্য হিমালয় অঞ্চলের উপর চীনের অযৌক্তিক দাবিকে আরো উৎসাহিত করে তুলবে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন,এরকম ভয়াবহ এক পরিস্থিতিতে ভারত বিপদের মুখে পড়লে অন্য কোনো দেশ ভারতের সহায়তায় এগিয়ে আসবে এমনটা ভাবা খুব বড়ো ভুল হবে। 

তাছাড়া,২০০৭-২০০৮ সালে চীনকে নিয়ন্ত্রনের কৌশল হিসাবে অস্ট্রেলিয়া, জাপান,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতকে নিয়ে গড়ে তোলা নৌ-কেন্দ্রিক চতুর্ভুজ নিরাপত্তা সংলাপের মতো অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নতুন রূপে ফিরে এলেও তা বেইজিংকে যে বিন্দুমাত্রও নিরুৎসাহিত করে তুলতে পারে নি তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ লাদাখের চীনের অগ্রশন। তাছাড়া, এই স্কোয়াডের চার সদস্যই বর্তমানে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলাফলের সাথে মোকাবিলা করতে এবং একীভূত চীন-রাশিয়া ফ্রন্টের বিরুদ্ধে নিজেদের দেশকে প্রস্তুত করতে ব্যস্ত। রাশিয়ায় সামরিক প্রযুক্তি, দক্ষতা এবং জ্ঞানের সাথে বেইজিংয়ের শিল্প এবং অর্থ মিলিত হলে গঠিত হবে এক অপ্রতিরুদ্ধ শক্তি যাকে দমন করা হবে বেশ শক্ত। 

দিল্লির সিকিউরিটি রিস্ক এশিয়া কনসালটেন্সির ব্রিগেডিয়ার, রাহুল ভোঁসলে বলেছেন,”বিগত কয়েক বছরে যে বেইজিং-মস্কো অক্ষ প্রসারিত হয়েছিলো বর্তমান ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেটাই এখন আরো দৃঢ় হতে চলেছে। এই দুই দেশের বন্ধুত্ব বিশ্ব শান্তির জন্য এক ভয়ঙ্কর থ্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, উভয় দেশই আর্থিক এবং সামরিক শক্তির উপর ভিত্তি করে এক নতুন আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।”  

যে ভারত দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে আমেরিকার সাথে সুসম্পর্ক গঠন করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে শুধুমাত্র চীনের কবল থেকে সীমান্ত অঞ্চলকে রক্ষা করতে,সেই ভারতের সমগ্র কূটনৈতিক নীতিই ক্ষতির মুখে পড়বে যদি মস্কো, বেইজিং এবং ইসলামাবাদের এই মারাত্মক অংশীদারিত্ব চুক্তি বাস্তবে সফল হয়। ভোঁসলের মতে, ২৫ ফেব্রুয়ারি কিয়েভের বিরুদ্ধে রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরেই মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাম্প্রতিক বৈঠক এক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। রাশিয়া জানত ভারত নিরপেক্ষ থাকবে। তাই ভারত বাদে পূর্বে যারা যারা পুতিনকে যোগ দিতে চান তাদের একত্রিত করে নিজের সাপোর্ট বাড়ানোর এক কৌশল ছিলো এটি রাশিয়ার। মনে রাখা প্রয়োজন পূর্বে, ২০১৪ সালে, পুতিন পাকিস্তানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে তাদের Mi-35M Hind-E আক্রমণ হেলিকপ্টার বিক্রি করেছিলেন। এছাড়া ২০১৭ সালের অক্টোবরে- ও পেশোয়ারের কাছে এই দুই দেশের সেনাবাহিনী একত্রে এক যৌথ মহড়ায়‌ অংশগ্রহণ করেছিলেন।

প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম শরণও সম্প্রতি ভারতকে সাবধান করে বলেছেন, ওয়াশিংটন যদি এখন হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয় যে এশিয়ার সুদূর প্রান্তে অবস্থিত চীনের থেকে ইউরোপে ঘরের সম্মুখে অবস্থিত রাশিয়া তাদের সুরক্ষার জন্য বেশি ক্ষতিকর তবে, রাশিয়াকে প্রতিরোধ করতে তারা বেইজিংয়ের সাথে এক কৌশলগত সহাবস্থান বেছে নিতে পারে। চীনের সাথে চুক্তিতে জড়ানোও নেহাত অসম্ভব নয়।  অর্থাৎ, সোজা ভাষায় বলতে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় জোটকে সম্প্রসারণবাদী রাশিয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এশিয়ায় চিনা আধিপত্যকে মেনে নিতে বাধ্য হতে পারে। আর তা যদি সত্যিই হয় তবে, ভারতের কাছে এটি এক ভয়ানক দুঃসংবাদ। উল্লেখ্য, ২৫ ফেব্রুয়ারি দ্য ট্রিবিউনেও তিনি তার এই বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন।  

উল্লেখ্য, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ নিয়ে সারা বিশ্বে যেভাবে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে দ্য ওয়্যারকে দেওয়া এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে সারান জোর দিয়ে বলেছিলেন, এলএসি পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে কারণ, রাশিয়ার ওপর চাপানো নিষেধাজ্ঞা মস্কোকে ক্রমশ চীনের সাথে জোট বাঁধতে বাধ্য করবে। লাদাখে এলএসি সম্পর্কে ভারতের অবস্থান ঠিক কি সেই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, অবসরপ্রাপ্ত এই কূটনীতিক স্পষ্টতই জানিয়েছেন, ভারতকে একা কারোর সহায়তা ছাড়াই পিএলএ হুমকি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তার মতে এর জন্যে ভারতের প্রয়োজন নিজস্ব অর্থনৈতিক এবং সামরিক সক্ষমতাগুলিকে অল্প সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা। সারানের মতে সেই জন্যে প্রয়োজন বিপুল ‘জাতীয় সংহতি’। ইউক্রেনের তুলনা টেনে কথা প্রসঙ্গে সারান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী পার্টি, ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে সূক্ষ্মভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এই মুহূর্তে ভারতের প্রয়োজন নিজেকে এক ‘বিভাজনবিহীন ঐক্যবদ্ধ দেশ’ হিসাবে সকলের সামনে উপস্থাপন করা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাদের মতে যেরকম দ্রুত গতিতে ইউক্রেনের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে তা থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন ভারতের। যত দ্রুত সম্ভব ভারতের উচিত রাশিয়ান সরঞ্জামকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে এমন উন্নত অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশের সাথে কোন রকমে এক দীর্ঘ মেয়াদী জোট গঠনের চেষ্টা করা। বিশেষজ্ঞদের মতে একমাত্র তবেই ভারতের অভ্যন্তরীন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবিকভাবে উন্নত করা সম্ভব হবে।   

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রাক্তন অধিগ্রহণ উপদেষ্টা অমিত কৌশিক বলেছেন, “সামরিক সক্ষমতা বিকাশের জন্য সরকারের প্রয়োজন বিচ্ছিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বন্ধ করা। অপটিক্সের ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, বিভিন্ন সামরিক-গ্রেডের নাট এবং বোল্ট ভারতীয় শিল্প সংস্থার মাধ্যমে তৈরি করার সিদ্ধান্ত অর্থাৎ স্বদেশিকরণ এক ভালো প্রচেষ্টা হলেও এই মুহূর্তে MoD-এর প্রয়োজন দুষ্প্রাপ্য আর্থিক সংস্থানগুলিকে অপ্টিমাইজ করা এবং ভারতের নিরাপত্তাকে বাধাপ্রাপ্ত করতে পারে এমন বিষয়গুলির ওপর বেশি করে মনোযোগ দেওয়া। “

Leave a Reply

Your email address will not be published.