ভারত

আমেরিকার উড়ন্ত ট্যাঙ্কার ভারতবর্ষের কাছেই রয়েছে

নিজস্ব সংবাদদাতা:হেলিকপ্টারের ব্যবহার কোন নতুন বিষয় নয়। সেই বহু যুগ আগে থেকেই যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে হেলিকপ্টার। তবে বর্তমানে যুদ্ধে ব্যবহৃত অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রের মতোই হেলিকপ্টারেও করা হচ্ছে তুমুল রদবদল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তৈরি করছে বিভিন্ন অত্যাধুনিক শক্তিশালী হেলিকপ্টার। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক অস্ত্র সমৃদ্ধ এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলির মধ্যে অন্যতম। মার্কিন যুদ্ধ বিমানের চাহিদা বেশি থাকায় এই দেশ বরাবরই অন্যান্য দেশের তুলনায় সামরিক অস্ত্র বাণিজ্যে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকে। তবে, এ্যাপাচী যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শী হওয়ায় বর্তমানে এর চাহিদা এতটাই তুঙ্গে পৌঁছেছে যে আগ্রহী সমস্ত দেশকে এই বিমান সরবরাহে ব্যার্থ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সেই ১৯৮৩ সালে প্রথম আমেরিকায় এএইচ-৬৪ এট্যাক হেলিকপ্টারের উৎপাদন প্রথম শুরু হয়। তারপর থেকে এখনো পর্যন্ত এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ ক্যাটাগরির প্রায় ২,৫০০ ইউনিট এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ হেলকপ্টার তৈরি করা হয়েছে। এই ২,৫০০তম হেলিকপ্টারটি সবে বিগত জুলাই মাসের শুরুতেই মার্কিন সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৩ সালে তৈরি হলেও মার্কিন সেনাবাহিনীতে এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ এডভান্স এট্যাক হেলিকপ্টারটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৮৬ সালে। তবে, এই এএইচ-৬৪ হেলিকপ্টারটি তার যুদ্ধজয়ের যাত্রা শুরু করে প্রথম ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে এক গোপনীয় কমব্যাট মিশনে। সেই সময় ৮টি এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ এট্যাক হেলিকপ্টার একত্রে মিসাইলের আঘাতে কুয়েতে অবস্থিত ইরাকের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস করে মধ্যপ্রাচ্যে ভয়ঙ্কর উপসাগরীয় যুদ্ধের সূচনা করে।

বর্তমানে মার্কিন সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির এই রকম মোট ১১৭৫টি এডভান্স এএইচ-৬৪ এট্যাক হেলিকপ্টার নিয়মিত যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাবহার করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও জাপান, সৌদি আরব, ভারত, ইসরাইল, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত এবং মিশর সহ বিশ্বের মোট ১৬ টি দেশের কাছে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ এট্যাক হেলিকপ্টারের এক্সপোর্ট ভার্সন। ২০২৪ সালেই এই লিস্টে যোগ হতে চলেছে আরো একটি দেশের নাম। ওই বছরই ১৭ তম দেশ হিসাবে মরক্কোর কাছে মোট ২৪টি এই জাতীয় এট্যাক হেলিকপ্টারের প্রথম ব্যাচ হস্তান্তর করতে চলেছে মার্কিন বোয়িং কর্পোরেশন। ইতিমধ্যে ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২২টি বোয়িং এ্যাপাচী ক্রয় করেছে ১.৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। আন্তর্জাতিকে হিসেবে এক একটি বোয়িং এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ এ্যাটাক হেলিকপ্টারের বাজার মূল্য প্রায় ৪৫-৫০ মিলিয়ন ডলার। এরপর বাকি দাম নির্ভর করে যে দেশ ক্রয় করছে তার নিজস্ব চাহিদা মতো কাস্টমাইজেশন এবং কতগুলি অস্ত্র ক্রয় করা হচ্ছে তার ওপর। এ্যাপাচীর সাথে মিসাইল, এমিউনেশন, ট্রেনিং, স্পেয়ার পার্টস সরবরাহ করা, তার রিপিয়ার এবং যত্ন নেওয়ার মতো বিষয়গুলি যোগ করা হলে বাজার মূল্য ৪০-৪৫ মিলিয়ন থেকে সোজা ৬৫ কিংবা ৮০ মিলিয়ন ডলারেও পৌছে যেতে পারে।

প্রশ্ন উঠতে পারে এত অ্যাটাক হেলিকপ্টার থাকা সত্বেও এ্যাপাচী এ্যাটাক হেলকপ্টারের দিকেই কেনো পাখির চোখ সমস্ত দেশের! আসলে এই হেলির মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু বিশেষত্ব। মাত্র দু জন ক্রু চালিত এই এডভান্স এএইচ-৬৪ এ্যাপাচী এ্যাটাক হেলকপ্টারের উচ্চতা ৪.৭২ মিটার,দৈর্ঘ্য ১৪.৬৮ মিটার, এবং রোটার ডায়ামিটার ৮৪ ফিট। অন্যান্য হেলিকপ্টারে তুলনায় অনেকটা হালকা এই এ্যাপাচীর ওজন খালি অবস্থায় প্রায় ৬,৮৩৮ কেজি এবং অস্ত্র লোডেড অবস্থায় প্রায় ১০,৪৩২ কেজি। এখানেই শেষ নয়, এটির সর্বোচ্চ ফ্লাইট স্পীড  যেমন ২৭৯ কিলোমিটার তেমনই এর সার্ভিস সিলিং প্রায় ২০ হাজার ফিট। এ্যাপাচীর মেক্সিমাম রেট অফ ক্লাইম্ব প্রত্যেক মিনিটে ২,৮০০ ফিট। দুটি টি-৭০০-জিই-৭০১সি টার্বো শ্যাফট ইঞ্জিন ও চারটি ব্লেড দ্বারা চালিত এই হেলিকপ্টারের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৩০০ মাইল বা ৪৮০ কিলোমিটার হলেও ফুয়েল ভরা হলে একেবারে ১,৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে সক্ষম এটি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমন্বিত হেলমেট মাউনটেণ্ট ডিসপ্লে সজ্জিত এই এট্যাক হেলিকপ্টারের সামনে লাগানো রয়েছে ১,২০০ রাউণ্ডের ৩০ এমএম এম২৩০ চেইন গান। আর এই এম২৩০ চেইন গানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য এবং রাতের অন্ধকারে টার্গেটের নিশানা লাগানোর জন্য এর সামনে আবার লাগানো রয়েছে এক নোজ মাউনটেন্ট সেন্সর এবং নাইট ভিশন সিস্টেম। দিনে বা রাতে যেকোনো রকম পরিস্থিতিতে নিপুণভাবে আক্রমণের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে এই হেলিকপ্টারটিকে।

একদিকে যেমন এজিএম-১১৪ হেলফায়ার মিসাইল এআইএম-৯২ স্টিংগার এবং স্পাইক মিসাইল বহন করতে সক্ষম এটি তেমনি এ্যাপাচী হেলিকপ্টারে টার্গেট একুয়েজেশন ডিজিনেশন সিস্টেম এবং পাইলট নাইট ভিশন সিস্টেম রয়েছে সেন্সর এবং এভিয়নিক্স সিস্টেম হিসেবে। প্যাসিভ ইনফ্রডেড কাউন্টারমেজারস, জিপিএস, জ্যামিং রেজিস্ট্যান্ট, এবং আইন এইচএডিএসএস সিস্টেম সহ যাবতীয় উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে এই বিমানে। ভবিষ্যতে ভালো করে গবেষণা চালিয়ে সতর্কতার সাথে যথাসম্ভব কম মূল্যে উচ্চ মানের লকহীড মার্টিন/নরথ্রপ গ্রুম্যান এর এ এন/এ পিজি-৭৮ লংবো ফায়ার-কন্ট্রোল রেডার সহ এইরকম আরো  ১৬-২৪টি সুপার এডভান্স এ্যাপাচী এ এইচ-৬৪ই সিরিজের এট্যাক হেলিকপ্টার ক্রয় কিংবা সংগ্রহ করা হলে আমাদের সৈন্যবাহিনী আকাশ প্রতিরক্ষায় ক্ষমতা যে অনেকটা বৃদ্ধি করবে এই কথা বললে অত্যুক্তি হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.