ফকিরের আশীর্বাদেই ৯৯টি জাহাজের মালিক এক ভারতীয়। জানুন বিস্তারিত
নিউজ ডেস্ক – গোটা পৃথিবীতে কমবেশি সকলেই জানে টাইটানিক জাহাজের বিষয়ে। পৃথিবীর বৃহত্তম ও বিধ্বংসী জাহাজ নামে পরিচিত টাইটানিক। কারণ একদিকে যেমন তার আকার আকৃতি ও সৌন্দর্যের কারণে পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছে ঠিক সেরকমই ডুবে যাওয়ার জন্য কুখ্যাতিও রয়েছে টাইটানিকের। তবে একটি তথ্য প্রকাশ হয়েছে যা রীতিমত ঝড় তুলেছে গোটা বিশ্বে।
জানা গিয়েছে, অধিনায়ক ও জমিদার হাজী কাশেম বোম্বে নিকটবর্তী দহিসারের জমিদার ছিলেন। তিনি বরিভালি দহিসারের মধ্যে জমির একটি বড় অংশের মালিক ছিলেন। মূলত মালাবার হিলে বসবাস করতেন তিনি। তিনি একজন ফকির দ্বারা আশীর্বাদ প্রদত্ত ছিলেন। সেই ফকির তাকে জানিয়েছিল হাজী কসম ৯৯টি জাহাজের মালিক হবেন। মূলত সেই ভবিষ্যৎবাণী সত্যিও হয়েছিল। বম্বে সেন্ট্রালের একটি চাউল হাজী কাশীমের নামে নাম করা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে হাজী সেলিমের নেতৃত্বে গ্র্যাঞ্জমাউথ ডকইয়ার্ড কোম্পানি লিমিটেড স্কটল্যান্ডের দ্বারা ১৮৮৫ সালে একটি জাহাজ নির্মিত করা হয়। যার নাম বৈতরণা নদীর নামকরণ অনুসারে করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে জাহাজটি টাইটানিকের মতো বিলাসবহুল না থাকলেও এর উদ্দেশ্য ছিল পণ্যসম্ভার এবং সাধারণ যাত্রী এবং অভিজাতরা নয়। কিন্তু এই জাহাজের মূল আকর্ষণ ছিল বিদ্যুৎ পরিবহন। যা লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। মূলত বিলাসবহুল জাহাজের রূপের কারণে স্থানীয়রা জাহাজটির নাম দিয়েছিল ভিজলি।
পরবর্তীতে ১৮৮৮ সালের ৮ই নভেম্বর এস এস বৈতরনা প্রায় কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে মান্ডভি বন্দর থেকে রওনা হয়েছিল। পরের বন্দর দ্বারকার বোর্ডে আরও বেশ কিছু যাত্রী উঠেছিল যাদের মধ্যে ১৩টি বিবাহের দল ছিল এবং বেশিরভাগ যাত্রী পরীক্ষার দেওয়ার জন্য বোম্বে যাচ্ছিল। পাশাপাশি সেই জাহাজে উপস্থিত ছিল ৭০৩ ক্রু, সরকারি আধিকারিক ১২০০। যদিও লোক ভাষ্যমতে জাহাজের যাত্রীরা ডুবে গিয়েছিল প্রায় ১৩০০ জন। যাদের ৭৪৬ জনের মধ্যে (৭০৩ জন যাত্রী এবং ৪৩ জন ক্রু সদস্য যাদের দুর্যোগের পর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি)।
অন্যদিকে বিশাল বহুল জাহাজটি পোরবন্দরে থামতে হয়েছিল। কিন্তু এরপরে আর কোন বন্দরে জাহাজ নিয়ে থামতে পারেনি। কারণ প্রাকৃতিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে উঠেছিল যে সোজা সেটি বোম্বে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নাবিকরা । বোম্বে পৌঁছানোর আগেই জুনাগর উপকূলে ম্যাংরোল বন্দরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে ছিল বহু মানুষ। পরবর্তীতে ঘটনার তদন্তে নেমে বোম্বে প্রেসিডেন্সিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে কমিটি মমেম্বাররা তদন্ত করে জানিয়েছেন ” জাহাজটি প্রবল ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে গিয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল প্রায় সিংহভাগ মানুষের। অবশিষ্ট ছিল হাতেগোনা কয়েকজন”।
দুঃখজনকভাবে বিধ্বংসীর কবলে পড়া জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পরে বিশ শতকে সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে এটিকে গণ্য করা হয়। পাশাপাশি জেমস ক্যামেরুনের টাইটানিক ১৯১২ সালের ১৫ই এপ্রিল অমরত্ব লাভ করে। তবে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়ার কারণে জাহাজকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বোর্ডে থাকা প্রায় হাজার জনের মৃত্যু হওয়া সত্বেও জাহাজটিতে যারা মারা গেছে তাদের বেশিরভাগই ছিল ভারতীয়। কারণ সেই সময় ভারত ছিল ব্রিটিশ শাসিত। সুতরাং ভারতীয়দের মৃত্যু হওয়ায় সেই ভাবে কোন রকম শোক পালন করা হয়নি।
তবে স্থানীয়রা জাহাজটিকে স্মরণ করে ও বহু মানুষের মৃত্যু মিছিল কে মনে রেখে কিছু গান লিখেছিল। গুজরাটে এখনো সেই লোকো কাহিনীর অংশ হিসেবে গান গাওয়া হয়। গানটি এরকম ছিল অনেকটা” হাজী কসম তা ভিজলি রে মাঝদরিয়া বরান থাই”। যার আক্ষরিক অর্থ হলো হাজী কসম তোমার ভিজলি সমুদ্রের অতলে ডুবে গেছে।