হিটলারের পাপের মাশুল এখনও গুনছে জার্মান
নিউজ ডেস্কঃ ইসরায়েল। যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে সক্ষম এই দেশটি। পাশাপাশি একা সাতটি দেশের সাথে যুদ্ধে লড়েছে। এই দেশের পার্শ্ববর্তী দেশ গুলিকে উচিৎ শিক্ষাও দিয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যেকোনো দেশের সাথে টক্কর দিত পারে। ভারতবর্ষের পাশাপাশি আমেরিকা থেকে শুরু করে ফ্রান্স এবং জার্মানের মতো দেশের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক এই দেশটির। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় করে সেগুলিকে আবার নতুন করে তৈরি করে একাধিক সময় চমক ও দিয়েছে ইসরায়েল।
ইজরাইলি নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে একটি সম্পূর্ণ পাওয়ার হাউসের মতো যুদ্ধজাহাজ। ইজরাইল জার্মানি থেকে চারটি Sa’ar Vl ক্লাসের চারটি ফ্রীগেট অর্ডার করেছিল ২০১৫ সালে। ২০১৮ দিকে তা তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০২০ এর শেষ হওয়ার আগেই ইজরাইলি নৌবাহিনীর হাতে প্রথম জাহাজ টি তুলে দিল জার্মানি।
এই জাহাজ গুলিকে কেন পাওয়ার হাউস বলা হয়?
সাধারণ বৈশিষ্ট্য :-
ওজন = ২০০০ টন
রেঞ্জ = ৪০০০ কিলোমিটার
অস্ত্র সমূহ :–
অ্যান্টিশীপ মিসাইল = ১৬ টি গ্যাব্রিয়াল মিসাইল
৫ অ্যান্টিশীপ মিসাইল,যেগুলির রেঞ্জ ৩০০+ কি.মি।
এয়ার ডিফেন্স মিসাইল = ৩২ টি (বারাক-৮ মিসাইল,যেগুলির রেঞ্জ ৯০ কিলোমিটার)। এছাড়াও একজোড়া C-Dome সিস্টেম,যেগুলিতে মোট ৪০ টি তামির মিসাইল (নেভাল আয়রন ডোম) রয়েছে। বারাক-৮ মিসাইল শর্ট রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল থেকে শত্রুর এয়ারক্রাফ্ট,সব ধরনের এরিয়াল থ্রেটের বিপক্ষে কার্যকর। আর তামির মিসাইলকে মূলত রকেট ও আর্টিলারি প্রজেক্টাইলকে ধংস করার জন্য ব্যবহার করা হয় বিশেষত। তবে এগুলি স্লো মুভিং এরিয়াল হুমকিকেও ধংস করতে সক্ষম। একজোড়া টর্পেডো টিউব,যা থেকে Mk-54 লাইট ওয়েট টর্পেডো লঞ্চ করা হবে। একটি অটো মেলারা ৭৬ মি.মি মেইন গান। ২৫ মি.মি অটোমেটিক ক্যানন সহ দুটি টাইফুন ওয়েপন সিস্টেম। এছাড়া এর মূল রাডারটি হল EL/M 2248 MF-STAR AESA রাডার। তাছাড়া এটিতে ডিকয় সিস্টেম হিসাবে রয়েছে C-Gem সিস্টেম।
মাত্র ২০০০ টনের একটি যুদ্ধজাহাজকে বিধ্বংসী রুপ দিয়েছে ইজরাইল। ইজরাইল এটিকে মূলত তাদের কোষ্টাল এরিয়া রক্ষা করতেই ব্যবহার করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগের Sa’ar 5 ক্লাস জাহাজ গুলিতে এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থার কমতি ছিল,যা এটিতে শোধরানো হয়েছে। মূলত এটিকে ইজরাইল হিজবুল্লা জঙ্গি সংগঠনের রকেট হামলার হাত থেকে বাচানোর জন্য নিজেদের মতো সাজিয়েছে। যুদ্ধজাহাজটি একটি লিটোরাল ক্লাস করভেট এর মতো ওজনের হলেও,গভীর সমুদ্রে পরিচালনা করার সক্ষমতা রয়েছে। তবে রেঞ্জ এর কমতি থাকায় দূর পাল্লার যুদ্ধ জাহাজ এটি নয়। ইজরাইলের সেল্ফ-ডিফেন্স এর জন্য এটি একটি অসাধারণ যুদ্ধজাহাজ বলে মনে করছে সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
দামের নিরিখেও এই যুদ্ধজাহাজ গুলিকে বেশ কমদামেই পেয়েছে। জার্মানির তৈরী এই জাহাজ গুলির প্রতিটির দাম ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ চারটি জাহাজের দাম ১.৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ইজরাইলকে চারটি জাহাজের জন্য মূল দামের এক তৃতীয়াংশই দিতে হয়েছে। অর্থাৎ ইজরাইল চারটি জাহাজ জার্মানি থেকে পেয়েছে মাত্র ৬০০ মিলিয়নে, বাকি ১২০০ মিলিয়ন জার্মান সরকার ইজরাইলকে ভর্তুকি দিয়েছে। প্রতিটি জাহাজের পিছনে ইজরাইল খরচ করেছে ১৫০ মিলিয়ন ডলার,আর নিজেদের মতো অস্ত্রে সজ্জিত করতে গিয়ে ইজরাইল জাহাজ পিছু আরো ৪০ মিলিয়ন খরচ করেছে। অর্থাৎ এই প্রতিটি জাহাজের দাম ১৯০ মিলিয়ন ডলার (শুধুমাত্র ইজরাইলের জন্য)।
প্রশ্ন হল মোট দাম ১.৮ বিলিয়ন ডলার,সেখানে জার্মান সরকার ইজরাইলকে ১.২ বিলিয়ন ভর্তুকি কেন দিল? আসলে এটি হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে হিটলারের পাপের ফল, যা আজও জার্মানি বহন করতে হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে ইহুদি দের ওপর অত্যাচারের পর, জার্মানি যখন যুদ্ধে হেরে যায়, তাদের প্রচুর অপমান জনক চুক্তি ও আর্থিক ক্ষতি হয়। তারই একটি হিসাবে এখনো প্রতি বছর ইজরাইল জার্মানি থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা ভর্তুকি পেয়ে থাকে।