২৮ টি ইউরোপীয় দেশ ও ২ টি আমেরিকার দেশ নিয়ে গঠিত ন্যাটো আসলে কী জানেন?
সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে একটি নাম খুব বেশী শোনা যাচ্ছে তা হচ্ছে ন্যাটো। আজ আমরা এই ব্যাপারেই বিস্তারিত আলোচনা করব। আজ এটা বলব যে ন্যাটো আসলে কী, এটা কীভাবে কাজ করে এবং ভারত কেন ন্যাটো বা কোন মিলিটারি জোট গঠন করে নি। ন্যাটোর পূর্ন নাম নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের আশেপাশের ৩০ টি দেশের একটি সম্মিলিত মিলিটারি জোটের নামই ন্যাটো। ন্যাটো তৈরি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল। মূলত ইউরোপে শান্তি বজায় রাখার জন্য ন্যাটো তৈরি হয়। তবে এর পেছনে আলাদা গল্প আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে দুটি সুপার পাওয়ার তৈরি হয় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন থেকে ইউরোপ কে রক্ষার জন্যই ন্যাটো তৈরি করা হয়েছিল। ন্যাটোয় ২৮ টি ইউরোপীয় দেশ ও ২ টি আমেরিকার দেশ রয়েছে।
আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, আলবেনিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, জার্মানি, গ্রীস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইটালি, লাটাভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টেনেগ্রো, নেদারল্যান্ডস, নর্থ ম্যাসাডোনিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন ও তুরস্ক এই ৩০ দেশ নিয়ে ন্যাটো তৈরি যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। এই সমস্ত দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অথবা বিদেশ মন্ত্রী ন্যাটোর সমস্ত বৈঠকে উপস্থিত থাকেন অর্থাৎ দেশ গুলির প্রতিরক্ষা ডিপার্টমেন্টের প্রধানই ন্যাটোর প্রধান হয়। ন্যাটোর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্মিলিত ভাবে যুদ্ধ করা তা সে সাইবার অ্যাটাক হোক বা জঙ্গি আক্রমণ হয়। যদি ন্যাটো দেশ গুলোর দিকে দেখেন সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হচ্ছে আমেরিকা যে নিজেই পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। অর্থাৎ ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার অর্থ একপ্রকার আমেরিকার ছত্রছায়ায় চলে আসা। ন্যাটোর একটি শক্তিশালী আইন হচ্ছে আর্টিকেল ৫ যাতে বলা হয়েছে কোন একটি ন্যাটো দেশে যদি আক্রমণ হয় তাহলে এটা মনে করা হবে ন্যাটোর উপরই আক্রমণ হয়েছে এবং সেই দেশকে বাঁচাতে পুরো ন্যাটো একসাথে লড়াই করবে। যেমন ধরুন ছোট্ট একটি দেশ আইসল্যান্ডের উপর আক্রমণ হয়েছে তাহলে তাহলে বাকী ২৯ টি দেশ একসাথে লড়াই করবে। অর্থাৎ ন্যাটোর সদস্যভুক্ত ছোট ছোট ইউরোপীয় দেশ গুলি সামরিক দিক থেকে নিরাপদ বোধ করে নিজেদের অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটাতে পারে। সবথেকে বড় কথা ন্যাটোর সদস্য দেশ গুলোর মধ্যে আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের কাছে পরমানু বোম্ব আছে সুতরাং ন্যাটোর সদস্য হওয়ার অর্থ পরমানু অস্ত্র লাভের সমান। তবে একটা কথা মাথায় রাখা দরকার ন্যাটো শুধুমাত্র দেশগুলোকে বাহ্যিক নিরাপত্তা প্রদান করে, দেশ গুলোর অভ্যন্তরে যদি গৃহযুদ্ধ হয় তাহলে সেব্যাপরে ন্যাটো হস্তক্ষেপ করে না। যেমন ২০১৬ সালে তুরস্কের ভিতর গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রায় তখন কিন্ত ন্যাটো হস্তক্ষেপ করে নি। ন্যাটোর বছরে বাজেট প্রায় ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার যার চারভাগের তিনভাগ আমেরিকা একাই দিয়ে থাকে।
আগেই বলা হয়েছে ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল ন্যাটো তৈরি হয়েছিল যার প্রধান কার্যালয় বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। ন্যাটো তৈরির সময় জাতিসংঘ, আইএমএফ বা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড সহ বিশ্ব ব্যাঙ্ক একে সাপোর্ট করেছিল। ১৯৪৪ সালে ব্রেটন উডস সম্মেলনে এই সংস্থা গুলিকে তৈরি করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যাটো তৈরি করা হয়েছিল তার প্রধান কারন কমিউনিস্ট দেশ গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করবার জন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় কমিউনিস্ট দেশ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলা স্নায়ুযুদ্ধের সময় ন্যাটোর লক্ষ ছিল যাতে পরমানু যুদ্ধ শুরু না হয়ে যায়। এবার যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন দেখল তাদের বিরুদ্ধে এতগুলো দেশ একত্রিত হয়েছে তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও এমন একটি গ্রুপ তৈরি করে যাকে ওয়ার সো প্যাক্ট বলা হয়। সেই সময় জার্মানির দুটি ভাগ ছিল পূর্ব জার্মানি ও পশ্চিম জার্মানি। পশ্চিম জার্মানি ন্যাটোতে যুক্ত হয়েছিল। পূর্ব জার্মানি সহ বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, চেক স্লোভিয়া, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড ছিল ওয়ার সো প্যাক্টের দেশ। ন্যাটো ওয়ার সো প্যাক্টের বিরুদ্ধে নতুন নীতি তৈরি করে যাকে “ম্যাসিভ রিটালিয়েশন” পলিসি বলা হয়। এই নীতি অনুযায়ী ওয়ার সো প্যাক্টের কোন দেশ ন্যাটোর কোন দেশে আক্রমণ করে থাকে তাহলে ন্যাটো পরমানু যুদ্ধ শুরু করে দেবে। কিন্ত তা সত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের মিলিটারি ক্ষমতা বাড়াতেই থাকে। এমনকী স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হতে হতে আমেরিকার মোট ডিফেন্স বাজেটের তিনগুন খরচা করছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। একে তো সোভিয়েত ইউনিয়ন সেসময় আমেরিকার মত এত বিশাল শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ ছিল না তার উপর এত ব্যাপক সামরিক ব্যায়ের কারনে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতির ব্যাপক ধ্বস নামে। এই সময় আরও একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য তা হল বার্লিন ওয়াল।
এবার বার্লিন ওয়ালের ইতিহাস সম্পর্কে একটু বলি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এক পক্ষে ছিল এদের অ্যালায়েড ফোর্স বলা হত। অ্যালায়েড ফোর্স যুদ্ধে হিটলারের জার্মানি কে পরাজিত করে। ১৯৪৫ সালে ঠিক করা হয় জার্মানি কে দুই ভাগে ভাগ করা হবে। জার্মানিকে ভেঙে দুটি ভাগ করা হয় পূর্ব জার্মানি যাকে, একে জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক ও বলা হত, একে নিয়ন্ত্রণ করত সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিম জার্মানি, একে ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানি ও বলা হত যাকে নিয়ন্ত্রণ করত ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকা। এবার সমস্যা শুরু হয় জার্মানির রাজধানী বার্লিন শহর নিয়ে। হিসাব মত বার্লিন পড়ত উভয় ভাগের মধ্যে। সুতরাং ১৯৬১ সালে বার্লিন শহরের মাঝামাঝি দেওয়াল তুলে দেওয়া হয় যাকে বার্লিন ওয়াল বলা হত, ১৯৮৯ সালে এটি ভেঙে দেওয়া হয়। এর দুবছর পরই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় এবং ১৫ টি দেশ তৈরি হয়। এবার একটা কথা বলি ন্যাটোর সদস্য দেশ ৩০ টি কিন্তু ন্যাটোর কিছু বন্ধু দেশ আছে যারা ন্যাটোর অংশ না কিন্তু ন্যাটোর সব মিশনে থাকে।
১৯৯১ সালে ন্যাটো এধরনের গ্রুপ শুরু করে যার একটি হল ইউরো – আটলান্টিক৷ পার্টনারশিপ কাউন্সিল, যাতে ২০ টি দেশ রয়েছে। আরও একটি গ্রুপ হচ্ছে মেডিটেরিয়ান ডায়লগ। এই গ্রুপ তৈরি হয় ১৯৯৪ সালে এতে ইসরায়েল, মরক্কো, তিউনিসিয়া, মিশর, জর্ডান, আলজেরিয়া ও মৌরিতানায়া। ন্যাটো মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে এই গ্রুপ তৈরি করে। ২০০৪ সালে ইস্তাম্বুল কোঅপারেশন নামে আরও একটি গ্রুপ তৈরি করে ন্যাটো যাতে কুয়েত, ইউনাইটেড আরব এমিরেটস, বাহরিন ও কাতার রয়েছে। এছাড়া আরও আটটি দেশের সাথে ন্যাটো যুক্ত আছে যাদের মধ্যে পাঁচটি এশিয়া-প্যাসিফিক দেশ অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও নিউজিল্যান্ড, একটি দক্ষিণ আমেরিকান দেশ কলোম্বিয়া। ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান ও একসময় ন্যাটোর সাহায্যকারী দেশ ছিল কারন সে সময় ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের বন্ধু ছিল তাই পাকিস্তান কে অন্তর্ভুক্ত করেছিল ন্যাটো। তবে এখন চীনের সাথে বন্ধুত্ব থাকায় ন্যাটোর লিস্টের বাইরে পাকিস্তান। ন্যাটোর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল নরওয়ের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টোল্টেনবারগ। ন্যাটোর চেয়ারম্যান অফ মিলিটারি কমিটি হচ্ছে রয়্যাল নেদারল্যান্ডস নেভির অ্যাডমিরাল রব বাউয়ার। ন্যাটোর সুপ্রিম কমান্ডার আমেরিকান এয়ারফোর্স এর জেনারেল টড দি ওয়াল্টার। আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময় পর্যন্ত ন্যাটো কোন মিশনে অংশ নেয় নি। ১৯৯১ এ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পরই ১৯৯১ সালে ইরাকের কুয়েত আক্রমণে সর্বপ্রথম ন্যাটো অংশ নেয়। যাকে অপারেশন অ্যাঙ্কর গার্ড ও অপারেশন এশ গার্ড বলা হয়। এরপর ১৯৯২ সালে হওয়া বসিনিয়া যুদ্ধে ন্যাটো অংশ নেয়, যেখানে যুগোস্লাভিয়া ভেঙে বসিনিয়া হার্জেগোভিনিয়া তৈরি হয়। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়াতেও ন্যাটো অংশ নিয়েছিল।
বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যে যুদ্ধ তার অন্যতম কারন হচ্ছে ন্যাটো। কারন ন্যাটো তৈরি হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন কে আটকাতে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর ন্যাটোর কোন দরকারই ছিল না কিন্তু ন্যাটো যে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখে শুধু তাই নয় বরং নিজের বিস্তার করতে শুরু করে অর্থাৎ আরও সদস্য যোগ করতে শুরু করে। দেখুন ১৯৪৯ সালে যখন ন্যাটো তৈরি হয় তখন তার সদস্য ছিল আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স,বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইটালি, কানাডা, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও পর্তুগাল এই ১২ টি দেশ। ধীরে ধীরে ন্যাটো বাড়তে থাকে। ১৯৫২ থেকে ১৯৯০ এ আরও চারটি দেশ তুরস্ক, গ্রীস, জার্মানি ও স্পেন। ১৯৯৯ সালে চেক রিপাবলিক, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি যুক্ত হয় এবং ২০০৪ সাল থেকে ২০০৯ সালে বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাটাভিয়া, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভানিয়া, আলবেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়া এবং ২০১৭ থেকে ২০২০ এর মধ্যে মন্টেনেগ্রো ও নর্থ ম্যাসিডোনিয়া ন্যাটোয় যুক্ত। ন্যাটো এই ভাবে ক্রমাগত নিজেকে বাড়িয়ে রাশিয়ার সীমানায় চলে আসে। এরপর ন্যাটো ২০০৮ সালে জানায় জর্জিয়া ন্যাটের অংশ হবে। যারজন্য ২০০৮ সালে রাশিয়া ও জর্জিয়ার যুদ্ধ হয়। এখন ন্যাটো জানা ইউক্রেন ও ন্যাটোর অংশ হবে যা রাশিয়ার সীমানায় যার জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ হচ্ছে। এমনকী ন্যাটো জানিয়েছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোর অংশ হবে যার জন্য এই দুই দেশকেও যুদ্ধের জন্য সতর্ক করেছে রাশিয়া।
গত কিছুদিন ধরেই অনেকে মন্তব্য করছেন ভারত কেনো ন্যাটো তে যোগ দিচ্ছে না। দেখুন আজ আপনাদের এই ব্যাপারে ধারনা দিচ্ছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম গোটা বিশ্ব সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এই দুই ব্লকে ভাগ হয়ে যায়। এই সময় ততকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু ঠিক করেন ভারত কোন পক্ষেই যোগ দেবে না নিরপেক্ষ থাকবে। সেই নীতি আমরা এখনও পালন করছি। কারন ভারত সবসময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পক্ষে। সম্প্রতি রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ভারত না রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে না ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। অর্থাৎ ভারত পুরো নিরপেক্ষ থাকছে। এবার আসি ভারত কেনো ন্যাটো তে যোগ দেয় নি। প্রথমত ন্যাটোর অর্থ জানুন, ন্যাটো মানে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন। আর ভারতের অবস্থান আটলান্টিক মহাসাগরের আশেপাশেও নয় তাই টেকনিক্যাল ভারত ন্যাটোর সদস্য হতে পারে না। দ্বিতীয়ত ন্যাটোর মধ্যে না থেকেও ন্যাটোর বিভিন্ন দেশের সাথে গ্রুপ আছে, ভারত তাতেও যোগ দেয়নি কারন আমরা কোন মিলিটারি জোট চাই না। তৃতীয়ত ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক অনেক পুরোনো। সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকে ভারত ও রাশিয়ার দারুন বন্ধুত্ব। রাশিয়া থেকে যুদ্ধবিমান, মিসাইল, এয়ারডিফেন্স, যুদ্ধজাহাজ, রাইফেল সহ প্রচুর সামরিক সরঞ্জাম কিনি আমরা। আর ন্যাটো তৈরি হয়েছিল মূলত রাশিয়া কে কাউন্টার করবার জন্য সুতরাং ভারত ন্যাটোতে যোগ দিয়ে রাশিয়ার সাথে খারাপ সম্পর্ক করতে চায় নি। চতুর্থত ন্যাটোর আর্টিকেল ৫ অনুযায়ী কোন ন্যাটো দেশে আক্রমণ করলে সমস্ত দেশ একসাথে সেই দেশকে আক্রমণ করবে। তাই ভারত ন্যাটোতে যোগ দিলে ভারত না চাইতেও রাশিয়া সহ অন্যান্য দেশের সাথে বেকার যুদ্ধ করতে হত। এছাড়াও যদি আমরা ন্যাটোতে যোগ দিই তাহলে আমেরিকা সহ বাকী দেশ গুলো ভারতে সামরিক বেস তৈরি করতে চাইবে যেটা আমরা কখনওই চাইব না। আমাদের দেশে বাইরের দেশের সেনা আসা মানে আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্যও ভাল না। এর বিরুদ্ধে ভারতেও আন্দোলন শুরু হয়ে যেত।
১৯৬১ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে যুগোস্লাভিয়ার বেলগ্রেড শহরে ন্যাম না নন অ্যালাইমেন্ট মুভমেন্ট তৈরি হয়, যাতে যুগোস্লাভিয়া, মিশর, ঘানা ও ইন্দোনেশিয়া যুক্ত ছিল। ন্যামের লক্ষ্য ছিল আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন কোন পক্ষেই যোগ না দিয়ে নিরপেক্ষ থাকে। শুধু ন্যাটোই নয় এমন কোন মিলিটারি জোটেই ভারত অংশ নেয় নি। যেমন ১৯৫৪ সালে সিটো তৈরি হয় যার পূর্ন নাম ইস্ট এশিয়ান ট্রিটি অর্গানাইজেশন। আমেরিকা, ব্রিটেন, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, পাকিস্তান এবং ফিলিপিন্স এর সদস্য। এরপর ১৯৫৫ সালে বাগদাদ প্যাক্ট তৈরি হয় এটাও একটা মিলিটারি গ্রুপ যার সদস্য ছিল ব্রিটেন, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক এবং ইরাক। কিন্তু ১৯৫৮ সালে ইরাকে বিদ্রোহের পর ইরাক এখান থেকে বেরিয়ে যায় তখন এর নাম হয় সেন্টো বা সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন। কিন্তু এইসব সংস্থা গুলো তেমন সফল হয় নি কারন পাকিস্তানের মতন দেশের গ্রহন যোগ্যতা কম এবং সেনাবাহিনীর শাসন রয়েছে পাকিস্তানে কিন্তু এই গ্রুপ গুলোর উদ্দেশ্য ছিল গনতন্ত্র কায়েম রাখা। এরপর সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ওয়ারশো প্যাক্ট নামে একটি গ্রুপ তৈরি করে ন্যাটোর বিরুদ্ধে, সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, চেকস্লোভিয়া, বুলগেরিয়া ও পূর্ব জার্মানি এর সদস্য ছিল। কিন্তু ভারত এসব কোন পক্ষেই যোগ দেয়নি কোনওদিন। বর্তমানে ভারত উন্নয়নশীল দেশ গুলোর সাথে যৌথভাবে গ্রুপ তৈরি করছে যাতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়, যেমন এশিয়ান সংস্থা। তবে সম্প্রতি ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কোয়াড নামে একটি জোট গঠন হয়েছে যা অর্ধেক সামরিক ও অর্ধেক ব্যবসায়ীক। দেখুন ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকা দিয়ে ভারত সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বানিজ্য হয়। কিন্তু এখানে বিগত কয়েক বছর ধরে চীন তাদের নৌশক্তি বাড়িয়ে চলেছে। তাই এখানে বানিজ্য যাতে ভালভাবে চলতো পারে এবং প্রয়োজনে চীনের নৌসেনাকে চ্যালেঞ্জ করবার জন্য কোয়াডে যুক্ত হয়েছে ভারত।