দেশীয় অস্ত্র বিক্রি করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভারতবর্ষকে
নিউজ ডেস্কঃ ভারতবর্ষের দেশীয় প্রযুক্তির অস্ত্র যে সারা বিশ্ব জুড়ে প্রশংসা করছে তা আর নতুন করে কিছু বলার নেই। ভবিষ্যতে আরও এরকম বিধ্বংসী অস্ত্র আসতে চলেছে। তবে এই অস্ত্র গুলি শুধু ভারতবর্ষেই নয় সারা বিশ্ব জুড়ে বিরাটভাবে চাহিদা রয়েছে। আসলে প্রথমসারির দেশ গুলিকে দেখলে দেখা যাবে যে তারা অস্ত্র বিক্রি করে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে অর্থাৎ তাদের জিডিপির একটা বিরাটভাগ আসে এই অস্ত্র ব্যবসা থেকে। তবে কখনও ভেবে দেখেছেন যে ভারতবর্ষ সারা বিশ্ব জুড়ে কেন অস্ত্র ব্যবসায় নামতে পারছেনা এতো অত্যাধুনিক দেশীয় অস্ত্র থাকতেও? আসলে পুরোটাই ডিপ্লোম্যাসি। কারন অস্ত্র ব্যবসায় বিরাটভাবে এটির প্রয়োজন। পাশাপাশি ভারতবর্ষের অস্ত্রের প্রডাকশান রেট কম থাকার কারনে। যেখানে আমেরিকার মতো দেশ বছরে ২০০ র উপর যুদ্ধবিমান তৈরি করে, সেখানে ভারতবর্ষ এখনও বছরে ২০ টি যুদ্ধবিমান তৈরি করতে সক্ষম নয়। এরকম প্রডাকশান রেট থাকলে চীনকে টেক্কা দেবে কি করে?
ভারতবর্ষের দেশীয় বার্ডস তেজাস চীনের জে এফ ১৭ থেকে অনেক ভালো। তবুও কেন বিক্রি হচ্ছেনা কেন জানেন? কারন তেজাসের প্রডকাশান রেট কম হওয়ার পাশাপাশি ডিপ্লোম্যসির অভাব রয়েছে। অন্যদিকে চীনের বিমান বিক্রির প্রধান কারন হল তাদের ডিপ্লোম্যাসি। চীন তাদের চাপ সৃষ্টি করে মায়ানমার এবং নাইজেরিয়াকে এই বিমান বিক্রি করছে। শুধু বা বিমান অস্ত্র ভালো হতে হবে সামরিক ব্যবসার ক্ষেত্রে তেমন নয় এটাই তার এক বিরাট প্রমান।
ভারতবর্ষের দেশীয় প্রযুক্তির তৈরি এমন কিছু টেকনোলোজি আছে বা যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে যা পৃথিবীতে খুব কম দেশ তৈরি করে। ঠিক তার একটি হল নেত্রা আওাক্স। বিশেষ টেকনোলোজির এই আওাক্সের রেঞ্জ ২৬০ কিমি হলেও হাইপুট এনার্জি স্ক্যানিং শুরু করলে তা ৫০০ কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে, তবে তা খুব অল্প সময়ের জন্য। বেশি সময় ধরে এই স্ক্যানিং করলে রেডার ভীষণভাবে গরম হয়ে গিয়ে ক্ষতির সম্ভবনা থেকে যায়। বিশেষ এই রেডার গুলি ভূমিতে অর্থাৎ সারফেসে বা সমুদ্রের যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে এর ট্র্যাকিং রেঞ্জ ৩৫০ কিলোমিটার। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক সাপোর্ট মেজর,ইলেকট্রনিক সাপোর্ট মেজর, নিজেস্ব ইলেকট্রনিক কাউন্টার মেজর সিস্টেম, ইলেকট্রনিক কাউন্টার কাউন্টার মেজর, মেনেজমেন্ট সিস্টেন সফ্টওয়্যার,ডাটা লিংক, স্যটেলাইট কমিউনিকেশান লিংক দেশীয় প্রযুক্তির তৈরি।
বর্তমানে নেত্রা গুলি ব্রাজিলের ERJ-145EX বিমানের ওপর রয়েছে। একটা আওক্স নির্মাণ করা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়, ব্রাজিলের ERJ-145EX ছাড়া আর কোন প্ল্যাটফর্ম এই আওাক্সের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়না। এই বিমান গুলি আরও বেশি পরিমাণে ভারতের হাতে থাকলে আরও নেত্রা তৈরি করা যেত। কিন্তু এই বিমান গুলি ক্রয় করার সময় কংগ্রেস সরকারের দুর্নীতি সামনে আসার কারনে ভারতবর্ষ আর এই বিমান গুলি পায়নি। আর সেই কারনে বিমানবাহিনীর হাতে তিনটি নেত্রা রয়েছে। বর্তমানে ভারতবর্ষের এখনও ৬ টি নেত্রার প্রয়োজন আছে। আর সেই কারনে ইতিমধ্যে ১০০০০ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। বর্তমানে আওাক্স তৈরি করার জন্য ৬টি এ-৩২০ এর ওপর এর আপগ্রেডেড ভার্সান মোতায়েন করা হতে চলেছে। তবে এর আগে DRDO সি ২৯৫ এর উপর নেত্রা মোতায়েন করার অফার দিয়েছিল। কিন্তু বায়ুসেনা সি ২৯৫ ক্রয় করার প্রোজেক্ট বাতিল করে দেয়। তার প্রধান কারন হল হাই অল্টিটিউড। অর্থাৎ ভারতবর্ষের বর্ডার গুলির হাই অল্টিটিটিউডে হওয়ার কারনে সি ২৯৫ এর টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন অপারেশানে উপযুক্ত নয়। আসলে বায়ুর ঘনত্ব কম হওয়ার ফলে এই ইঞ্জিন গুলি খুব একটা সুবিধার হবেনা। তবে এরকম কোন অসুবিধা পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশেরই নেই।
ভারতবর্ষ যদি যৌথভাবে এই প্রোজেক্ট হাতে অর্থাৎ সি ২৯৫ যৌথভাবে বিভিন্ন দেশকে অফার করা হয় সেক্ষেত্রে ইউরোপের পাশাপাশি পৃথিবীর বহু দেশ এর অফার নিতে বেশি সময় নেবেনা বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের। পাশাপাশি ভারতবর্ষ এয়ারবাসের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে ফলে একাধিক লাভ হবে। সবথেকে বড় ব্যাপার হল বাংলাদেশ, লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশ, ভিয়েতনাম এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলি এবং গ্রীসের মতো বেশ কিছু দেশ এবং ইউরোপের বেশীরভাগ দেশের কাছে বেশ লোভনীয় অফার হতে পারে। এবং নেত্রার ১ এবং ২ দুটি ভার্সন ই ভালোভাবে রপ্তানি করা যেতে পারে। কিন্তু এখনও এই নিয়ে সরকারের কোন হেলদোল নেই। কবে ভাঙবে সরকারের এই শীত ঘুম? প্রশ্ন আন্তর্জাতিক মহলের।