সেনাবাহিনীর সার্ভিসে থাকা পুরনো অস্ত্রসস্ত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। বিকল্প কি প্ল্যান?
নিজস্ব সংবাদদাতা:বিশ্ব রাজনীতির অবস্থা বর্তমানে বেশ উদ্বেগজনক। বিশ্বের নানা প্রান্তে লেগে রয়েছে অবিরাম ঝামেলা। তার ওপর আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সেখানে তালিবানের নতুন দাপটকে কাজে লাগিয়ে ভারতে পাকিস্তান ও চীন যাতে আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে সেই জন্য যাবতীয় চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ভারত। আর সেই জন্যেই সামরিক শক্তিধর দেশ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে বিপুল পরিমানে অস্ত্রের যোগান বাড়িয়ে চলেছে ভারত। শুধুমাত্র সামরিক অস্ত্রের জন্যই এক বড় বাজেট আলাদা করে রাখা হয়েছে। ফ্রান্স আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক অস্ত্রে দিয়ে মুড়ে ফেলা হচ্ছে ভারতীয় সেনাকে। এমনকি নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েও ভারতে সামরিক অস্ত্র তৈরির কারখানা তৈরি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সার্ভিসে থাকা বেশ কিছু পুরনো অস্ত্রসস্ত্রের মেয়াদ ফুরিয়েছে। এই সামগ্রী গুলো বাতিল হলে নতুন প্রযুক্তির অস্ত্র সংযোজন করা হবে সেনাবাহিনীতে। লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে চলেছে ভারত।
একদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অবস্থা বেশ তপ্ত তার ওপর চীন ও পাকিস্তানের লাগাতার সামরিক হুমকি। এই জোড়া সমস্যার মধ্যে ভারত সরকার যতটা সম্ভব সুপরিকল্পিতভাবে বিমান বাহিনীর ফিক্সড এয়ার কমব্যাট এরিয়্যাল ক্যাপাবিলিটি বৃদ্ধি করার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে । ভারতীয় সেনার কমব্যাট এয়ার ফ্লীটের পর্যাপ্ত পরিমাণ স্কোয়াডোনের ঘাটতি পূরণ করার উদ্দেশ্যে মেক ইন ইন্ডিয়া ক্যাম্পেনকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের মাটিতেই যুদ্ধ বিমান উৎপাদনের লক্ষ্যে বিশ্বের এক প্রথম সারির যুদ্ধ বিমান মানুফাকচারিং কর্পোরেশনের সাথে মিলিত হয়ে বর্তমানে যুদ্ধ বিমান তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিষয়টা এখনো পুরোপুরি আলোচনার স্তরে থাকলেও চেষ্টা চলছে (এমএমআরসিএ) ২.০ প্রজেক্টের আওতায় প্রায় ২০.০০ বিলিয়ন ডলারের ১১৪টি এডভান্স চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান সংগ্রহ করার। তবে সুখবর হলো, চুক্তি অনুযায়ী ইতিমধ্যেই ফ্রান্স থেকে ৩৬ টি চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক রাফায়েল বিমানের মধ্যে ২৪টি ভারতের মাটিতে এসে পৌঁছেছে। অপরদিকে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকেও ২২ টি অত্যাধুনিক ১.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এএইচ-৬৪ এ্যাপাচি যুদ্ধ বিমান সংগ্রহ করেছে। আপাতত ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য মোট ২২টি এবং সেনাবাহিনীর জন্য ছটি এএইচ-৬৪ এ্যাপাচি যুদ্ধ বিমান ক্রয়ের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তবে, শোনা যাচ্ছে ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও ৪৮-৬০ টি এএইচ-৬৪ এ্যাপাচি যুদ্ধবিমান ভারতীয বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাছাড়া, এখনো আমেরিকার সাথে ভারত আলোচনা চালাচ্ছে ৩.০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৩০টি কমব্যাট এমকিউ-৯বি গার্ডিয়ান ড্রোন (ইউএভি) ক্রয়ের ব্যাপারে।
এই মুহূর্তে ভারতীয় বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং কোস্টাল গার্ড সব মিলিয়ে পূর্ণ মাত্রাই সার্ভিসে রয়েছে আনুমানিক প্রায় ২,৪৩০টি জেট ফাইটার, বোম্বার, সামরিক পরিবহণ বিমান, হেলিকপ্টার, মেরিটাইম পেট্রোল ক্রাফট, কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি)। এর মধ্যে অবশ্য ফাইটার/ইন্টারসেপ্টর সহ বিশ্বমানের সামরিক পরিবহন যুদ্ধ বিমান রয়েছে আনুমানিক ভাবে মাত্র ৭০০ টি এবং গ্রাউন্ড এট্যাক বা বোম্বারসহ সক্রিয় বিমান রয়েছে ৮০০ টি। পাশাপাশি আকাশ সুরক্ষার স্বার্থে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছে ভারতের প্রায় ২৬০টি সামরিক পরিবহণ হেলিকপ্টার এবং ৬০টি কমব্যাট হেলিকপ্টার।সমস্ত রকম প্রস্তুতি থাকা সত্বেও ভারত সরকারকে এই মুহূর্তে ভীষণভাবে চিন্তিত করে তুলেছে ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন এবং তাদের গোপন সাবমেরিন ও ড্রোনের ব্যাপক উপস্থিতি। সুবিশাল এই সাগরের সঠিকভাবে নজরদারি রাখতে এবং চীনের অগ্রাসন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোধ করতে ইতিমধ্যে ভারত পুরনো ৮টি সাবমেরিনের সাথে নতুন করে আরো ৪টি মার্কিন বোয়িং ৮টি পি-৮আই দূর পাল্লার সাবমেরিন হান্টার অর্ডার দিয়েছে। দরকার মতো ভারত যাতে আমেরিকার কাছ থেকে নতুন করে ৬টি পি-৮আই নেপচুন এন্টিশীপ এণ্ড সাবমেরিন হান্টার কিলার বিমান ক্রয় করতে পারে তার জন্যও ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাইডেন প্রশাসন। এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য, আপাতত এই মুহূর্তে আকাশপথে এরিয়্যাল রিফুয়েলিং এর জন্য ৬টি ইলুসিন ইএল-৮৭ হেভী ট্যাংকার, ৫টি উন্নত প্রযুক্তির এডাব্লিউএসিএস সহ ৪টি ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ারফার এরিয়াল সিস্টেম পরিচালনা করে ভারতীয় বিমান বাহিনী।
ভারতীয় বিমান বাহিনীতে এই মুহূর্তে সার্ভিসে রয়েছে ৬৮টি মিগ-২৯, ৫৭টি মিগ-২৭, ৪২টি মিরেজ-২০০০ , ২৩১টি মিগ-২১ এবং জাগুয়ার ফাস্ট যুদ্ধ বিমান রয়েছে মোট ৯১টি। অপরদিকে, ভবিষ্যতে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা সামাল দিতে রাশিয়ার ৩৬টি মিগ-২৯কে এবং ৮টি মিগ-২৯কেইউবি এডভান্স যুদ্ধ বিমান ও রয়েছে ভারতের কাছে। সেনাবাহিনীর সার্ভিসে থাকা যুদ্ধ বিমানবাহী ক্যারিয়ারে ব্যবহারের জন্যই রয়েছে এগুলো। ভারতীয় সেনাহিনীতে থাকা সকল সী হ্যারিয়ার পুরোনো হয়ে যাওয়াই ইতিমধ্যেই তাদের সম্পূর্ণভাবে অবসরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তার বদলে পরিচালনা করা হচ্ছে কেবল ১৪টি ক্যামভ কে-৩১ হেলিকপ্টার। তবে, সূত্রের খবর খুব শীঘ্রই এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের ঘাটতি মেটানোর জন্য ৫৭টি ক্যারিয়ার ব্রোন মার্কিন বোয়িং এফ/এ-১৮ সুপার হরনেট কিংবা ফ্রান্সের রাফাল এম সিরিজের ক্যারিয়ার বেসড যুদ্ধবিমান সার্ভিসে যোগ করার পরিকল্পনা চলছে। এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল সহ ভারতের নিজের প্রযুক্তিতে সম্পূর্ণ দেশীয় ভাবে তৈরি মোট ২৪০টি এর কাছাকাছি সামরিক ও অসামরিক ড্রোন রয়েছে। যার মধ্যে ইসরাইলের হারোপ সুসাইডাল ড্রোনও রয়েছে বেশ কয়েকটি। তবে এখনো অব্দি পাওয়া খবর অনুযায়ী আগামী ২০২৫-২৮ সালের মধ্যেই এতদিন ভারতীয় সেনা বাহিনীতে ব্যবহৃত হওয়া বেশ কিছু বিমান বাধ্যতামূলক ভাবে অবসরে পাঠানো হবে। এর মধ্যে যেমন থাকবে বিমান বাহিনীর মিগ-২১, মিগ-২৩, মিগ-২৭ এবং মিগ-২৯ সিরিজের সকল বিমান তেমনি থাকবে জাগুয়ার এবং মিরেজ-২০০০ সহ তিন দশকের বেশি পুরোনো প্রায় ছয় শতাধিক বিমান। ফলত নতুন বিমান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুষ্ঠ ভাবে পরিকল্পনা মাফিফ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা অতীব প্রয়োজনীয়। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার কম্ব্যাট ফিক্সড ইউংস এণ্ড এরিয়্যাল ক্যাপাবিলিটি ৪০% হ্রাস পেতে পারে। এমনকি স্কোয়াডন অর্ধেকে নেমে আসার ও এক বড় সম্ভবনা রয়েছে।
কিন্তু, চিন্তার বিষয় হলো ভারতের শত্রু প্রতিবেশী দেশ চিন যেখানে প্রতি বছর প্রায় দুই শতাধিক জেট ফাইটার, হেলিকপ্টার, ড্রোন, বোম্বার সামরিক পরিবহণ বিমান তাদের বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে সেখানে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র ভারতের। সত্যি বলতে কি এই মুহূর্তে চিনের প্রযুক্তিগত উন্নতির তুলনায় বর্তমানে ভারত পিছিয়ে রয়েছে বেশ অনেকটাই। তার ওপর সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান চিন্তা বাড়িয়েছে অনেকটাই। পরিসংখ্যানের তথ্য থেকে জানা গেছে ২০০০- ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ২০ বছরে ভারতীয় বিমানবাহিনী জেট ফাইটার, হেলিকপ্টার,পরিবহন,সামরিক বিমান এবং প্রশিক্ষণ বিমান সহ মোট ৩২৫টি বিমান হারিয়েছে বিভিন্ন দুর্ঘটনাই। এর মধ্যে কিছু বিমান আকাশে সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে আবার কিছু বিমান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দীর্ঘ মেয়াদে সার্ভিস থেকে অবসর নিতে বাধ্য হয়েছে। জানলে অবাক হবেন শুধুমাত্র ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৫ মে পর্যন্ত এই স্বল্প সময়েই ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১৫টি এরিয়াল সিস্টেম। এভাবেই যদি একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে তবে ২০২৫-২০২৮ এর মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যায় যুদ্ধবিমান সেনাবাহিনীর সার্ভিসে আনা একেবারেই অসম্ভব। ফলত বিমান বাহিনীর হাতে থাকা এয়ার ফ্লীট ৩২ স্কোয়াডন এর নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা একটা থেকেই যায়।
অপরদিকে চীন তড়িৎ এর গতিতে এগিয়ে চলেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে এভিয়েশন টেকনোলজি এবং ডেভলপমেন্টে ২০২৮ সালের মধ্যেই বিশ্বে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলেছে রেড জায়ান্ট চিন। চাইনিজ এয়ার এণ্ড নেভাল ফোর্স এর সার্ভিসে এই মুহূর্তে রয়েছে ৫,৫০০টি যুদ্ধ বিমান । যার ফলে বাকি দেশগুলিকে পেছনে ফেলে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক যুদ্ধবিমান সম্পন্ন এক দেশে পরিণত হয়েছে এই দেশ। চীনের শি জিং পিং সরকার অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা মাফিক হেলিকপ্টার, ড্রোন, সামরিক এবং প্রশিক্ষণ বিমানের এক বিশাল সম্ভার গড়ে তোলার পথে এগিয়ে চলেছে। চাইনিজ অস্ত্রের মান ঠিক কতটা ভালো তা নিয়ে আলোচনা অন্যদিন হবে কিন্তু ঘটনা যাই হোক না কেন এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে বর্তমানে চীনের সামরিক বাহিনীর কাছে রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ প্রায় ১,২২০ এর কাছাকাছি সামরিক এবং অসামরিক ড্রোন, স্পাই এবং নজরদারি বা আক্রমনাত্বক ড্রোন। এছাড়া, চিন নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা এতটাই বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে যে চীন সরকার সরাসরি ঘোষণা করে দিয়েছে রাশিয়ার এসইউ-৩৫ এর পর আর কোন যুদ্ধ বিমান বা এরিয়াল সিস্টেম আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজার থেকে তারা আমদানি করবে না। এমনকি প্রতিশ্রুতি মাফিক এর মধ্যেই তারা সফলভাবে অস্ত্র আমদানীর ১০% এর নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতেই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে চীন। তার মধ্যে ভারতকেও রেয়াত করছে না তারা। ভারতকে কৌশলগতভাবে প্রবল চাপের মুখে ফেলতে নিত্যনতুন নানা নীতির ওপর কাজ করছে চিন। আর এই পরিকল্পনারই অংশ হিসাবে চীন-ভারতের অপর শত্রু পাকিস্তানকে বিভিন্ন অত্যাধুনিক সামরিক সাজ-সরঞ্জাম, যুদ্ধবিমান,সাবমেরিন, ড্রোন এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (এইচকিউ-১৬) সরবরাহ তো করছেই সেই সঙ্গে অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞই অনুমান করছেন যে পাকিস্তান নিজস্ব প্রযুক্তিতে বলে দাবি করলেও আদপে চীনই আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে গোপনে পাকিস্তানকে ব্যালেস্টিক এণ্ড ক্রুজ মিসাইল সরবরাহ করছে। এছাড়া চিনের প্রযুক্তিগত উন্নতি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকে। তাদের মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার কাছ থেকে স্পর্শকাতর একাধিক প্রযুক্তি চুরি করেই হয়তো এতো অল্প সময়ে এরকম কল্পনাতিতভাবে প্রযুক্তিগত বিপ্লব আনতে সক্ষম হয়েছে চিন। প্রযুক্তির মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তাই-ই হইতো নিত্য নতুন যুদ্ধবিমান, বোম্বার, স্টিলথ ফাইটার, হেলিকপ্টার, ড্রোন এরিয়াল এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে চিন।
অপরদিকে ভারতের জন্য আরেকটা চাপ হয়ে উঠছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের বহু প্রতীক্ষিত ২০.০০ বিলিয়ন ডলারের (এমএমআরসিএ) ২.০ নতুন প্রজন্মের ১১৪টি যুদ্ধবিমান ক্রয়ের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক বাধা সৃষ্টি করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ চাপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য ভারতকে যেনোতেন প্রকারে মার্কিন এফ-১৮ সুপার হরনেট বা এফ-১৬ এর বিকল্প হিসাবে এফ-২১ যুদ্ধ বিমান ক্রয়ে বাধ্য করা। অথচ তার জন্য ভারতকে বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল মার্কিন লকহীড মার্টিন কর্পোরেশনের ১.৫৩ ট্রিলিয়ন প্রজেক্টের জয়েন্ট স্টাইক এফ-৩৫ লাইটনিং স্টিলথ যুদ্ধবিমান প্রজেক্টের আন্তর্জাতিক ক্রেতা হিসেবে অন্তভুক্ত করার ব্যাপারে কোন রকম বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। অবশ্য লকহীড মার্টিন কর্পোরেশন প্রয়োজন পড়লে তাদের অত্যাধুনিক এফ-১৬ এর আপগ্রেডেড ভার্সন এফ-২১ অথবা বোয়িং কর্পোরেশনের এফ-১৮ সুপার হরনেট ফাইটার জেট মেইক ইন ইণ্ডিয়া নীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ভারতের মাটিতে তৈরি করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।
এহেন পরিস্থিতিতে কিভাবে এগোনো যায় তা নিয়ে সঠিক শির্ধান্ত নিতে পারছে না ভারত সরকার। আমেরিকার জেট ফাইটার কেনার ইচ্ছা একেবারেই নেই ভারতের। কিন্তু আমেরিকার কাছ থেকে বিমান না কিনে রাশিয়ার সুপার এডভান্স এসিউ-৩৫ বা ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফায়েল কেনা হলে,সেক্ষেত্রে ভারত সম্পর্কে আমেরিকার নীতি কি হবে সেটাও যথেষ্ট চিন্তার। মার্কিন প্রশাসন যদি কূটনৈতিকভাবে ভারতকে কোনো ভাবে বিপদে ফেলে বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে ফেলে সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি হয়ে উঠবে ভয়ানক। বর্তমানে আমেরিকার সাথে ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বেশ গভীর। কিন্তু ভবিষ্যতে রাশিয়ার এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম সংগ্রহই হোক বা অন্য কোন কারণেই হোক সম্পর্কের যদি তলানিতে গিয়ে ঠেকে তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সার্ভিসের থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যাবতীয় হেলিকপ্টার, তাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এবং কারিগরি ক্ষেত্রে সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার আগে দুইবার ভাববে না আমেরিকা।
ইতিমধ্যেই আমেরিকার হাবভাবে একথা স্পষ্ট যে রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের বিষয়টিকে মোটেও সুনজরে দেখছেনা মার্কিন প্রশাসন। ফারা কাটানোর জন্য ভারতের কাছে রয়েছে এখন একটি মাত্র উপায়। আমেরিকা ও রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিমান কেনার বদলে ভারত যদি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্রান্সের কাছ থেকে চতুর্থ প্রজন্মের নুন্যতম ১০ স্কোয়াডন রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয় করে নিতে পারে তবে ভবিষ্যতে নিরাপদে থাকাটা অনেকটাই সহজ হবে। এছাড়া আর্থিক সুবিধা পাবে ভারত। পূর্বে ফ্রান্সের কাছ থেকে ৮.৮৭ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি অনুযায়ী ভারত ৩৬টি রাফাল জেট ফাইটার কিনেছে ফলত ভবিষ্যতে পুনরায় আরো অধিক সংখ্যাক যুদ্ধবিমান রাফেল ফ্রান্সের কাছ থেকে ক্রয় করা হলে ক্রয়মূল্য এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে 40 শতাংশ পর্যন্ত কম খরচ বইতে হবে। সবদিক বিবেচনা করে দেখলে তাই ২০৩০ সালের মধ্যে ফ্রান্সের কাছ থেকে নুন্যতম ১৮০টি বা পূর্ণ ১০ স্কোয়াডন চতুর্থ প্রজন্মের রাফায়েল এডভান্স সেমি স্টিলথ যুদ্ধবিমান কেনা ছাড়া ভারতের কাছে আর কোনো রাস্তা খোলা আছে বলে মনে হয় না।
তাছাড়া ২০২৮-৩০ সালের মধ্যে ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি তেজাসের বার্ষিক প্রডাকশন ক্যাপাবিলিটি ১৬ থকে ৩০ এ উন্নীত করে নুন্যতম ৩২০টি তেজাস মার্ক-১ এবং মার্ক-২ সিরিজের লাইট যুদ্ধবিমান যেনতেন প্রকারে সেনাবাহিনীর সার্ভিসে আনতে হবে। সেই সঙ্গে দ্রুত এসইউ-৩০ এমকেআই ফ্লীটকে আরো বর্ধিত করে ৩৬০-৪০০ এ উন্নীত করা উচিত। ঠিক এই একই সময়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী দিনরাত এক করে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করে চলেছে বিমান বহরে থাকা সবগুলো এসইউ-৩০ এমকেই যুদ্ধবিমানকে উচ্চ পর্যায়ে আপগ্রেডেড করার সঙ্গে সঙ্গে কমপক্ষে ৮০টি যুদ্ধবিমান সুপার সুখোই এ রুপান্তর করার জন্য। উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকরা ভীষণভাবে আশাবাদী যে আগামী ২০২৬-২০২৮ সালের মধ্যেই ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ যুদ্ধবিমান (এএমসিএ) প্রজেক্টের প্রটোটাইপ কপির প্রথম উড্ডয়ন সম্ভব।