ভারত

ভারতবর্ষের অর্থনীতি বিরাট ভূমিকা নিতে চলেছে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি। জানুন বিস্তারিত

রাজেশ রায়:– কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন উত্তর পূর্ব রাজ্য গুলোকে বাদ দিয়ে ভারতের পরিপূর্ণ আর্থিক বিকাশ সম্ভব নয়। উত্তর পূর্ব রাজ্য গুলো ভারতের গ্রোথ ইঞ্জিন তৈরি করতে সক্ষম যা দিয়ে ভারতের ইকোনমি ৫ ট্রিলিয়ন ডলাট হওয়া সম্ভব।উত্তর পূর্ব ভারতীয় রাজ্য গুলিতে বর্তমানে ব্যাপক উন্নয়ন চলছে এবং এর মাধ্যমে পূর্ব এশিয়ান দেশগুলোর সাথে ভারতের বানিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। অদূর ভবিষ্যতে এই রাজ্য গুলো ভ্রমণ, পর্যটক ও বানিজ্যক কেন্দ্র হয়ে উঠবে। তবে ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারনে উত্তর পূর্ব রাজ্য গুলো দীর্ঘদিন ভারতের বাকী রাজ্য গুলোর তুলনায় পিছিয়ে ছিল। আজ এই উত্তর পূর্ব রাজ্য গুলোর আর্থিক ডেভলপমেন্ট ব্যাপারেই আলোচনা করব যা ভারতের ইকোনমি ৫ ট্রিলিয়ন ডলার করবে। আজ এটাও আলোচনা করা হবে কেন দীর্ঘদিন ধরে এই রাজ্যগুলোতে তেমন কোন ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করা হয় নি?

ভারতের পূর্ব হিমালয়ের কোলে অবস্থিত উত্তর পূর্বে সাতটি রাজ্য রয়েছে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, অরুনাচল প্রদেশ, মনিপুর, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ড। এদের একসাথে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়। সিকিমেও এখানে উল্লেখ করা হয়। ২,৬২,১৭৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই রাজ্যগুলোর সাথে চীন, নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমানা রয়েছে। এই রাজ্যগুলোর সাথে ৫,১৮২ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। যারজন্য এই রাজ্যগুলো রাজনৈতিক ও স্ট্রাটেজিক্যালি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিও পলিটিক্যালি এই এলাকা ইন্দো-বার্মা বায়ো ডায়ভারসিটি হটস্পটে রয়েছে। ৭.৯৮ শতাংশ ভৌগোলিক এলাকা যুক্ত এই এলাকায় ভারতের মোট বনের ২৫ শতাংশ রয়েছে। ভারতের ৯ টি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য শস্যের ৬ টি আসে এই এলাকা থেকে। এছাড়াও ১৫০০ গুরুত্বপূর্ণ ফ্লোরাল প্রজাতির মধ্যে ৮০০ প্রজাতি, ৩৬২৪ পতঙ্গ প্রজাতি, ২৩৬ প্রজাতির মাছ, ৫৪১ প্রজাতির পাখি, ১৬০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী সহ একশিঙ্গ গন্ডার ও ব্রো অ্যান্টলিয়াড হরিন এখানে পাওয়া যায়। যদি এই রাজ্যগুলোর গঠন দেখি তাহলে ১৯৫০ সালে আসাম, ১৯৬৩ সালে নাগাল্যান্ড, ১৯৭২ সালে মনিপুর, মেঘালয়, ত্রিপুরা, ১৯৭৫ সালে সিকিম এবং ১৯৮৭ সালে মিজোরাম ও অরুনাচল প্রদেশ তৈরি হয়। ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার পরেও শিক্ষাগত ক্ষেত্রে এই রাজ্যগুলো যথেষ্ট আগে। ২০১১ এর সেনসেক্স অনুযায়ী মিজোরামে ৯১.৩৩ শতাংশ, ত্রিপুরায় ৮৭.৭৫ শতাংশ এবং মনিপুর ও মেঘালয়ে ৭৫ শতাংশের বেশী শিক্ষার হার রয়েছে। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩.৭৫ শতাংশ এখানে থাকে। ৮ টি রাজ্যে ৮০ এর বেশী জেলায় প্রায় ১৬০ ধরনের উপজাতি রয়েছে। আর্টিকেল ৩৭১ অনুযায়ী উত্তর পূর্ব রাজ্য গুলোকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। যেমন আর্টিকেল ৩৭১ এ অনুযায়ী নাগাল্যান্ড ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি পার্লামেন্টের আইনের বাইরে রাখা হয়েছে এবং নাগাল্যান্ড তাদের সম্পদ নিজেদের সুবিধা মত ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়াও আর্টিকেল ৩৭১ সি, ৩৭১ জি, ৩৭১ এফ ও ৩৭১ এইচ অনুযায়ী মনিপুর, মিজোরাম, সিকিম ও অরুনাচল প্রদেশকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এসব কিছুই ভারতের ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি প্রমান করে। এবার যদি আর্থিক দিক দিয়ে দেখি তাহলে ২০১৮ সালে মিনিস্ট্রি অফ স্ট্যাটেস্টিক্স এর তথ্য অনুযায়ী এই আটটি রাজ্য ভারতের জিডিপিতে মাত্র ২.৮ শতাংশ দিয়েছে যা খুবই কম যার মধ্যে শুধু আসামই তিনভাগের দুই ভাগ দিয়েছে। এই আটটি রাজ্যের মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। হিমালয় থেকে উৎপন্ন তিনটি নদী গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদী এখান দিয়ে গেছে যা অত্যন্ত সুন্দর। এখানের সবচেয়ে বড় শহর গৌহাটি। নর্থ ইস্ট সভ্যতা ২৫০০ বছরের পুরোনো, আগে এখানে তিব্বতের শাসন ছিল। তখন তিব্বত চীনের অধীনে ছিলনা। অ্যাংলো বার্মিজ যুদ্ধের পর পুরো উত্তর পূর্ব ভারত ব্রিটিশদের অধীনে চলে আসে, যার জন্য এখনও নাগাল্যান্ডের সরকারি ভাষা ইংরাজি। শুনলে অবাক হয়ে যাবেন স্বাধীনতার আগে নাগাল্যান্ডে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার ছিলনা, রীতিমতো অনুমতি নিতে হত ব্রিটিশ সরকারের। আটটি রাজ্যের মধ্যে এখানে বেশ কিছু অটোনোমাস বা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আছে যেমন বড়োল্যান্ড, গোর্খাল্যান্ড, গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া পাহাড়, ডিমা হাসাও প্রভৃতি। অটোনোমাস অঞ্চলের ব্যাপারে একটু বলি, ভারতীয় সংবিধানের ছয় নম্বর শিডিউলে, ভারতীয় সংবিধানে মোট ১২ টি শিডিউল আছে, অটোনোমাস অঞ্চল গঠনের কথা বলা আছে যা বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে রয়েছে। উত্তর পূর্ব ভারতে সবচেয়ে বেশী অটোনোমাস অঞ্চল রয়েছে। শুধু আসামেই ১০ টি অটোনোমাস অঞ্চল আছে। নর্থ ইস্ট ভারতের অত্যন্ত সুন্দর জায়গা এখানে প্রচুর পাহাড়, নদী, ভ্যালি রয়েছে যেমন বারাক ভ্যালি, মাজুলি আইল্যান্ড, সেলে পাস, ভগবান যেন নর্থ ইস্ট কে নিজের হাতে তৈরি করেছে। প্রচুর সুন্দর সুন্দর মনাস্ট্রি রয়েছে এখানে যেমন অরুনাচল প্রদেশের তাওয়াং মনাস্ট্রি।

এত সুন্দর ও শিক্ষিত লোক থাকা সত্বেও কেন ভারতের বাকী রাজ্যগুলোর তুলনায় উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলো এতটা পিছিয়ে আছে? আসুন জানা যাক।

১) ভৌগলিক কারন:– নর্থ ইস্ট রাজ্যগুলোতে ভারতের প্রধান ভূভাগের মত প্রচুর বৃষ্টিপাত, সংকীর্ণ ড্রেনেজ সিস্টেম, নদী গুলোর গতিপথ পাল্টে যাওয়া এবং হাই ভ্যালির কারনে এই এলাকা গুলো বন্যা প্রবন এবং এখানে ভূমিকম্প, ল্যান্ড স্লাইড লেগেই থাকে। যার জন্য এখানে ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়। যার জন্য এখানে ন্যাশনাল হাইওয়ে, রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সহ ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম খুবই কম দীর্ঘদিন ধরে। 

২) সামাজিক ও রাজনৈতিক কারন :– এর সূত্রপাত হয় স্বাধীনতার পরেই। ১৯৬২ সালে ভারত ও চীন যুদ্ধের পর থেকেই বিশেষ করে চীনের অরুনাচল প্রদেশকে নিজেদের অংশ বলার পর থেকেই এই এলাকায় প্রাইভেট বিনিয়োগ কম। উত্তর পূর্বের এই আটটি রাজ্যের আয়তন ও জনসংখ্যা কম বলে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে এদের গুরুত্ব কম। 

৩) উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোতে এত বেশী উপজাতি বসবাস করে এবং তাদের আলাদা আলাদা সংস্কৃতির কারনে দীর্ঘদিন ধরে শহরাঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে এদের যোগাযোগ ছিল না। তবে বর্তমানে ধীরে ধীরে এরাও আধুনিক সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।

৪) ট্যাক্স কালেকশন এবং সম্পদ কম হওয়ার কারনে এই রাজ্যগুলোকে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের উপর নির্ভর করতে হয়।

৫) লজিস্টিক সাপ্লাই :– উত্তর পূর্ব রাজ্য গুলো একমাত্র শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে ভারতের মূল ভূভাগের সাথে যুক্ত। অত্যন্ত সংকীর্ণ এই অংশের আয়তন মাত্র ২২ কিলোমিটার, একে চিকেন নেক বলা হয়। সংকীর্ণ প্যাসেজ হওয়ার কারনে এখানে লজিস্টিক সাপ্লাই খুবই সমস্যার। যার জন্য মেঘালয়, মনিপুরের মতন ছোট রাজ্য গুলোতে খুবই সমস্যা হয়। তবে সেই তুলনায় আসামে ততটা সমস্যা হয় নি।

৬) প্রাচীন কাল থেকে এই এলাকার সাথে দূরত্ব রয়েছে মূল ভূভাগের। পূর্বে চোল, দ্রাবিড় সাম্রাজ্যের সময়ও এই এলাকা আলাদা ছিল। ব্রিটিশ শাসনে দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকাকে কাঁচামালের সাপ্লায়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এখানকার অধিবাসীদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। স্বাধীনতার পরেও এখনো এখানের মানুষের মনে বাইরের রাজ্যের মানুষের প্রতি একটু সন্দেহ রয়েই গেছে।

৭) আভ্যন্তরীণ ঝামেলা:– উত্তর পূর্ব রাজ্য গুলোর অর্থনৈতিক অবনতির জন্য আভ্যন্তরীণ ঝামেলা বড় আকারে দায়ী। জম্মু কাশ্মীরে ঝামেলার জন্য পাকিস্তান যেমন দায়ী তেমনি এই এলাকায় দীর্ঘদিন অশান্তির কারনে চীন দায়ী। দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন থাকার কারনে এই এলাকায় সেপারেটিস্ট ও মাওবাদী মুভমেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে আর একে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আর্থিক সহয়তা দিয়েছে চীন। যে কোনও জায়গায় আর্থিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য দরকার নিরাপত্তা। উত্তর পূর্বে দীর্ঘদিন এসব না থাকায় তেমন বড় কোন কোম্পানি এখানে যায়নি। এখনও পর্যন্ত এখানে ঝামেলার জন্য আসাম রাইফেলস ও প্যারামিলিটারির ৭৫০ জন বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছে। এই ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৯৫০ সালে। তখন এখানকার রেবেলদের অস্ত্র সাহায্য করত পূর্ব পাকিস্তান, পরে ষাঠের দশকে চীন এখানে অস্ত্র সাহায্য করতে থাকে। মাও জেদং এর সময়ে চীন সরাসরি এদের সাহায্য করত তবে তারপর ডেং জিওপিং এর সময়ে চীন পরোক্ষভাবে সাহায্য করা শুরু করে। চীন প্রায় ১৫ বছর ধরে এদের সরাসরি সাহায্য করত এবং এর সূত্রপাত হয় তখন যখন নাগাল্যান্ডের রেবেল গ্রুপ ইউনান প্রদেশে আশ্রয় নেয়। ১৯৬০ সালে দলাই লামার ভারতে আগমন এবং ১৯৬২ সালে ভারত চীন যুদ্ধের পর থেকে চীন এসব রেবেল গ্রুপকে সরাসরি সমর্থন করে। নাগাল্যান্ডের পাশাপাশি মনিপুর লিবারেশন আর্মিকেও তিব্বতে ট্রেনিং দেয় চীন। ১৯৬৬ সালে চীন ৩০০ জন নাগা সেনাকে ট্রেনিং দেয় ও অস্ত্র দেয়। এর ১৯৬৮ সালে ভারতে এসে নাগাল্যান্ডের এক জঙ্গলে এসে আশ্রয় নেয় যখন ভারতীয় সেনা এদের উপর অ্যাটাক করে তখন এখান থেকে প্রচুর চাইনিজ অস্ত্র ও ডকুমেন্টস পাওয়া যায়। তবে ডেং জিওপিং এর ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৯৮০ সাল থেকে রেবেলদের সরাসরি সাহায্য করা থেকে সরে আসে চীন। তখন চীনের সিক্রেট ইনটেলিজেন্স এজেন্সি মায়ানমারের কাচিন জঙ্গল থেকে গোপনে রেবেলদের সাহায্য করতে থাকে। ১৯৮৯ সালে ভারতীয় ইনটেলিজেন্স এজেন্সি  র কাচিনে এক চুক্তি করে এখান থেকে সাহায্য আসা বন্ধ করে। ১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত সময়ে সবচেয়ে বেশী রেবেলদের সহায্য করে চীন। এরপর শি জিনপিং এর সময়ে চীন তাদের স্ট্রাটেজি পাল্টায়, আরও গোপনে সাহায্য শুরু হয়। চীন এইসময় করল কী ব্ল্যাক মার্কেট তৈরি করে যার মাধ্যমে গোপনে অস্ত্র বাংলাদেশের কক্সবাজার হয়ে ভারতে পাঠাতে থাকে। বহুবার এই প্ল্যান বানচাল করে দিয়েছে র। 

তবে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে। কেন্দ্রীয় সরকার অনেক প্রজেক্ট শুরু করেছে উত্তর পূর্বের ডেভেলপমেন্টের জন্য যা সম্পর্কে এখন আলোচনা করব। ২০০১ সালে তৎকালীন ভারত সরকার মিনিস্ট্রি অফ ডেভেলপমেন্ট অফ নর্থ ইস্টার্ন রিজিওন তৈরি করে। নর্থ ইস্ট স্পেশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট নীতির মাধ্যমে এখানে জল, বিদ্যুৎ সাপ্লাই, শিক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে গৌহাটিতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর উপস্থিততে উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোতে বিনিয়োগের জন্য বৈঠক হয়। এখানে ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম অ্যাডভান্সড করবার জন্য রেলওয়ে নেটওয়ার্ক ও রোড নির্মান চলছে যার উদাহরন গত বছর ফেব্রুয়ারীতে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর ধুবড়ি-ফুলবাড়ি ব্রিজ নির্মান প্রজেক্ট। ১৯ কিলোমিটার লম্বা এই ব্রিজ আসাম ও মেঘালয়কে সংযুক্ত করবে। গত ২ বছরে এই এলাকায় ১৯০০ কিলোমিটারের বেশী রাস্তা নির্মান করা হয়েছে। সিকিমে পাকিয়াং এয়ারপোর্ট, আসামে রুপসি এয়ারপোর্ট এবং অরুনাচল প্রদেশে ৩০০ এবং ১১০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। কালিতাকুচি থেকে বারপেতা পর্যন্ত ৫৮.৫ কিলোমিটার,  তামলপুর থেকে পানেরি পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং পানেরি থেকে উদলপুর ১৯ কিলোমিটার রাস্তা এবং আসামে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ নির্মান হয়েছে যা এই অঞ্চলের ডেভেলপমেন্টেট ছবি পাল্টে দিয়েছে। ন্যাশনাল হাইওয়ে করপোরেশন ৯২,০০০ কিলোমিটার হাইওয়ে নির্মানের দায়িত্বে আছে এবং আরও ১,২০,০০০ রোড নির্মানের প্রজেক্ট শুরু হবে। ২০১৫ সাল থেকে রেবেলদের সাথে সরকারের ক্রমান্বয়ে বৈঠকে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এখানকার সামজিক পরিস্থিতির পরিবর্তন করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারীর তথ্য অনুযায়ী নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের ৭৫ শতাংশ লোকমটিভকে ইলেকট্রিফায়েড করা হয়েছল। এতে রেলের ৩৬১ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এবছরের মাধ্যমে বাকী ২৫ শতাংশ ইলেকট্রিফায়েড করা হবে। স্বাধীনতার ৭৪ বছর পর গত কয়েকমাস আগে মনিপুরে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হয়। ২০২১ এ কেন্দ্রীয় সরকার এখানে ইনফ্রাস্ট্রাকচারের জন্য প্রায় ৭৫,০০০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষনা করে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তৎকালীন ভারত সরকার এখানে প্রতিবছর ৭০০০ কোটি টাকার মতন বাজেট দিত। ২০০৪-১৪ অবধি উত্তর পূর্ব ভারতে প্রতিদিন গড়ে ০.৬ কিলোমিটার হাইওয়ে তৈরি হত যেখানে ২০১৪ এর পর থেকে এখন প্রতিদিন গড়ে ১.৫ কিলোমিটার হাইওয়ে তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন এখানে কত দ্রুত কাজ চলছে বর্তমানে। আরও একটি তথ্য দিই স্বাধীনতার ৩৩ বছর পরে ১৯৮০ অবধি পুরো ভারতে মোট হাইওয়ে তৈরি হয়েছে ৩১,৬৭১ কিলোমিটার, ১৯৮০-১৯৯৮ অবধি ১৭,৯১৪ কিলোমিটার, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ অবধি ১৫,৯৮৪ কিলোমিটার, ২০০৪ থেকে ২০১৪ অবধি ২৭,২৮২ কিলোমিটার এবং ২০১৪ থেকে ২০১৯ অবধি ৩৮,৪৭৫ কিলোমিটার এবং ২০১৯ থেকে এখনও অবধি ৬১,১৬৪ কিলোমিটার নতুন হাইওয়ে তৈরি হচ্ছে  এবং আরও ৫৩,০৩১ কিলোমিটার নতুন হাইওয়ে প্রজেক্ট ঘোষনা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সময়ে রেকর্ড পরিমানে রোড ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। 

এবার নর্থ ইস্ট রাজ্য গুলোর জন্য কয়েকটি বিশেষ প্রজেক্টের ব্যাপারে জানা যাক। প্রথমেই আসছে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসওয়ে প্রজেক্ট যা ব্রহ্মপুত্র নদীর দুই তীর বরাবর ছয় লেন বিশিষ্ট একটি এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হবে যার মোট দৈর্ঘ্য হবে ৮৯০ কিলোমিটার। এই প্রজেক্টের টোটাল খরচ হতে চলেছে ৪০,০০০ কোটি টাকা। এরপরে রয়েছে অরুনাচল ফ্রন্টিয়ার হাইওয়ে প্রজেক্ট, একে ম্যাগো, থ্যাঙ্গো, বিজয়নগর বর্ডার হাইওয়ে প্রজেক্টও বলা হয়। ২০০০ কিলোমিটার লম্বা এই হাইওয়ে পশ্চিমে তাওয়াং জেলাকে পূর্বে চেংলাং এর সাথে কানেক্ট করবে। এতে ৪০,০০০ কোটি টাকা খরচ হবে। গত ১২ জুলাই, ২০২১ কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর পূর্ব ও গুলিতে ১৬ টি নতুন হাইওয়ে প্রজেক্ট শুরু করে যা এই রাজ্য গুলোর ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম পুরো বদলে দেবে। ভারতমালা ফেজ-২ এর আওতায় এগুলো তৈরি হবে। লুক ইস্ট পলিসি তে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে এবং চীনের বিরুদ্ধে স্ট্রাটেজিক ভাবে উত্তর পূর্ব ভারতে ব্যাপক ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করছে ভারত।

Leave a Reply

Your email address will not be published.