ভারত

ফ্রান্সের কাছে সুপারসনিক মিসাইল থাকলেও ভারতবর্ষের ব্রহ্মসকে কেন এতো গুরুত্ত্ব দেওয়া হয় জানেন?

নিউজ ডেস্কঃ ভারতের হাতে আসা রাফালে যে অতরিক্ত ক্ষমতা আছে ফ্রান্সের রাফালের তুলনায় তা একাধিকবার স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে এই রাফালে থেকে পরমাণু হামলা চালানো সক্ষম।

ফরাসি বিমান বাহিনীর রাফালের সাথে এরিয়াল নিউক্লিয়ার ডেলিভারি সিস্টেম ASMP-A সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল। এর র‍্যামজেট লিক্যুইড ফুয়েল ইঞ্জিনের মাধ্যমে এটি ম্যাক তিন গতিবেগে টার্গেটের দিকে যেতে পারে। এর রেঞ্জ ৩০০-৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই মিসাইল ১০০ থেকে ৩০০ কিলোটন ইয়েল্ড সমৃদ্ধ নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহন করতে পারে।

ভারতীয় চাহিদার রাফালে পেতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। ভারতীয় রাফালে কনভেনশনাল স্কোয়াড্রন এর অংশ নয়। এগুলো ভারতের স্ট্রাটেজিক ফোর্স কমান্ড এর অন্তর্গত নিউক্লিয়ার স্ট্রাইক ক্ষমতাসম্পন্ন রাফালে। সেই হিসাবে ভারতের চাহিদা মতো ফ্রান্স থেকে এগুলিকে ব্রহ্মস মিসাইল ক্যারিয়ার হিসাবে মডিফিকেশন করা হচ্ছে। কারণ ব্রহ্মস কনভেনশনাল এর পাশাপাশি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ও বহন করতে সক্ষম।

ব্রহ্মস মিসাইল এর ব্যাপক কার্যকরীতার জন্য এটিকে ভারতীয় আর্মি,নেভী ও এয়ারফোর্স — তিন বাহিনীতেই ব্যবহার প্রকৃয়া চলছে। বর্তমান এগুলোর গতিবেগ ম্যাক তিন এবং রেঞ্জ ৩০০-৫০০ কিলোমিটার। আর্মি ও নেভীর ব্রহ্মস ২০০ কে.জি এর ওয়ারহেড বহন করে , অপর দিকে এয়ারক্রাফ্ট লঞ্চড ব্রহ্মস ৩০০ কে.জি ওয়ারহেড বহন করে। ভারতের কাছে ২০০ কে.জি ওজনের নিচে ফিশন ওয়ারহেড রয়েছে,যেগুলো ১২-১৫ কিলোটন ইয়েল্ড ক্ষমতা সম্পন্ন। ভারতের কাছে ৩০০ কেজি ওজনের‌ও ফিশন ওয়ারহেড রয়েছে,যেগুলির ইয়েল্ড ক্ষমতা ১০০ কিলোটন।এই ওয়ারহেড গুলিকে এয়ারলঞ্চড ব্রহ্মসের সাথে নিউক্লিয়ার স্ট্রাইকে ব্যবহার করতে সক্ষম।

ভারতের ব্রহ্মস আর ফ্রান্সের ASMP-A উভয়েই তো সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল, রেঞ্জ‌ও মিডিয়াম। তাহলে ব্রহ্মসকে নিয়ে এতো আলোচনা কেন হয়?

আসল ব্যাপারটা হল ম্যানুভারেবাল ও অ্যাকুরেসিতে। লো অল্টিটিউড(অপেক্ষাকৃত নিচু) এবং সুপারসনিক স্পীডে ASMP-A সহ বিশ্বের অধিকাংশ সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রহ্মসের মতো ম্যানেভার করতে পারে না। যেমন বিভিন্ন সুপারসনিক মিসাইল লো অল্টিটিউড এ গাছের উচ্চতায় বুলেটের গতিবেগে উড়ছে,সেক্ষেত্রে তার টার্গেট যদি স্থীর হয় (যেমন কোন বীল্ডিং)সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু টার্গেট যদি কোন চলন্ত বস্তু হয়, সেক্ষেত্রে পৃথিবীর অধিকাংশ সুপারসনিক মিসাইল টার্গেট মিস করতে পারে। কিন্তু ব্রহ্মসের ক্ষেত্রে তা অসম্ভব। ব্রহ্মস স্থীর অথবা চলমান উভয় টার্গেটকেই পিন পয়েন্ট অ্যাকুরেসি তে হিট করতে সক্ষম। টারৃমিনার স্টেজে ব্রহ্মসের ‘এস’ ম্যানুভার করার সক্ষমতা রয়েছে। মূলত এর জন্যই ব্রহ্মস কে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ অ্যান্টিশীপ ক্রুজ মিসাইল বলা হয়। কারন এই ম্যানুভারিটি ভূমিতে থাকা টার্গেটের পিছনে ততটা কাজে লাগে না,যতটা সামুদ্রিক টার্গেটে দরকার হয়। কারণ সমুদ্রে টার্গেট সর্বদা চলমান এবং তাদের পাল্টা এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা থাকে। ব্রহ্মস খুব সহজেই তার ম্যানুভারিটির মাধ্যমে সেসবকে ভেদ করতে পারে,যা বাকিদের কাছে এত সহজ নয়‌।

এই ধরনের এয়ার লঞ্চ লো ইয়েল্ড নিউক্লিয়ার ওয়েপন টে ‘প্রি স্ট্রাটেজিক’ ওয়েপন বলে। মূলত ফুল স্কেল নিউক্লিয়ার যুদ্ধের আগে। শত্রুর ওপর ছোটখাটো নিউক্লিয়ার স্ট্রাইক করে, তাকে হুমকি দেওয়া হয়,যে আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে এরপর বড় অস্ত্র আসবে। তবে অন্যান্য দেশ যেখানে লো ইয়েল্ড ওয়ারহেড শত্রুকে হুমকি দেওয়ার জন্য তৈরী করেছে,সেখানে পাকিস্তান লো ইয়েল্ড ওয়ারহেড দিয়েই ফুল স্কেল নিউক্লিয়ার যুদ্ধ করার স্বপ্ন দেখছে। কারন তাদের অধিকাংশ ইয়েল্ড ই লো ওয়ারহেড এর।

Leave a Reply

Your email address will not be published.