পৃথিবী

‘উইন্টার ওয়ার’। রাশিয়ার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল ফিনল্যান্ড

ইউক্রেনের রাশিয়ার অভিযানের প্রেক্ষাপটে বহু বছরের নিরপেক্ষতার নীতি থেকে সরে নেটো সামরিক জোটে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ড।

তাদের এই সিদ্ধান্তে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া, যার মধ্যে সামরিক ব্যবস্থাও থাকতে পারে বলে তারা ইঙ্গিত দিয়েছে।

ফিনল্যান্ড আর রাশিয়ার মধ্যে বিরোধ অবশ্য এই প্রথম নয়। যুদ্ধ বা সংঘাত থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলেও প্রায় ৮২ বছর আগে ১৯৩৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন মাসের এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিল ফিনল্যান্ড। ইতিহাসের পাতায় সেই যুদ্ধ ‘উইন্টার ওয়ার’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

অনেক ইতিহাসবিদ একে রুশো-ফিনিশ ওয়ার নামেও বর্ণনা করেছেন। সেই যুদ্ধে রাশিয়ার কাছে এক দশমাংশ এলাকা হারিয়েছিল ফিনল্যান্ড। কলকারখানা, কৃষি জমি, খামার বাড়িসহ প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের বসবাসের সেই এলাকা আজও রাশিয়ার অংশে রয়েছে। 

কিন্তু যে কারণে ফিনল্যান্ডে সোভিয়েত হামলা করেছিল সেই কারণটা কি জানেন?  আসুন জেনে নেওয়া যাক-

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় রাশিয়া থেকে স্বাধীনতার লড়াই শুরু করে ফিনল্যান্ড। সোভিয়েত বিপ্লবের পর ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেন সোভিয়েত নেতা ভ্লাদামির লেনিন। এরপর দেশটি বড় একটি গৃহযুদ্ধ পার করে স্থিতিশীল হতে শুরু করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন ইউরোপের দেশগুলো একের পর এক জড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, তখন শুরু থেকেই নিজেদের একটি ‘নিরপেক্ষ’ দেশ হিসাবে ঘোষণা করেছিল ফিনল্যান্ড। সেই সময় ফিনল্যান্ডের সীমানা থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লেলিনগ্রাদ বা সেন্ট পিটার্সবার্গের দূরত্ব ছিল মাত্র ৩০ কিলোমিটার। উত্তর ইউরোপে রাশিয়ার সঙ্গেই ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে দীর্ঘ সীমানা রয়েছে।

সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্তালিন পূর্ব ইউরোপে প্রভাব বাড়াতে চাইছিলেন। ‘এ ফ্রোজেন হেল: দি রুশো-ফিনিশ উইন্টার ওয়ার: ১৯৩৯-১৯৪০’ বইয়ে ইতিহাসবিদ উইলিয়াম আর ট্রোটার লিখেছেন, ”ফিনল্যান্ড সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করতে পারে এটা জোসেফ স্তালিনও মনে করতেন না। কিন্তু তার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল আসলে কেরেলিয়ান ইস্থামুস ভূখণ্ড, যেটি সামরিক কৌশলগত দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা ছিল সুইডেন, নরওয়ে বা উত্তর ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়া ও এশিয়ার মধ্যে একটি প্রাকৃতিক সেতুর মতো কাজ করে। ”

উইলিয়াম আর ট্রোটার লিখেছেন, সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিনের মূল লক্ষ্য ছিল কেরেলিয়ান ইস্থামুস পর্যন্ত সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। ফলে এই এলাকা লেলিনগ্রাদ রক্ষায় একটি বাফার এলাকা হিসাবে কাজ করবে। এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আঠারো শতকে সুইডেন ও রাশিয়ার মধ্যে একাধিক লড়াই হয়েছিল।

সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিন দাবি করেন, তখন ফিনল্যান্ডের সীমানা যেখানে ছিল, তার থেকে ১৬ মাইল ভেতরে কারেলিয়ান ইস্থামুসে সীমানা নিয়ে যেতে হবে। এই এলাকা লেলিনগ্রাদ সুরক্ষায় একটি বাফার জোন বা প্রতিরক্ষা এলাকা হিসাবে কাজ করবে। সেই সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের দাবি ছিল, গালফ অব ফিনল্যান্ডের বেশ কয়েকটি দ্বীপ তাদের কাছে ছেড়ে দিতে হবে।

এছাড়া হাঙ্কো পেনিনসুলায় একটি সোভিয়েত নৌঘাঁটি তৈরির জন্য লিজ দিতে হবে। এর বদলে সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু এলাকা ফিনল্যান্ডকে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়ে থাকা ফিনল্যান্ড তাদের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের আশঙ্কা ছিল, এসব দেশে নাৎসি বাহিনী বা জার্মানি ঘাঁটি গেড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে হামলা চালাতে পারে। ইতিহাসবিদ রবার্ট এডওয়ার্ডস ‘দ্যা উইন্টার ওয়ার’ বইতে লিখেছেন, ”১৯৩৮ সালের এপ্রিল মাসে সোভিয়েত ইউনিয়নের আচরণে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে, জারের আমলে দখলে থাকা রাশিয়ার যেসব ভূমি বিপ্লবের গণ্ডগোলে তাদের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল, সেসব তারা আবার পুনরুদ্ধার করতে চায়।”

জার্মানির আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে পরস্পরকে আক্রমণ না করার জন্য অগাস্ট মাসে একটি চুক্তি হয়েছিল। প্রকাশ্যে এই ঘোষণা করা হলেও সেখানে একটি গোপন সমঝোতা ছিল যে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়া হবে। কিন্তু পহেলা সেপ্টেম্বরই পোল্যান্ড আক্রমণ শুরু করে জার্মানি, যার মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

তখন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। সেই মাসেই সতেরোই সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের পূর্ব অংশ আক্রমণ শুরু করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর পরপরই এস্তোনিয়া, লাটভিয়া আর লিথুয়ানিয়া তাদের দেশে সোভিয়েত ঘাঁটি তৈরির চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়।

ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীদের সঙ্গে মস্কোর কয়েক দফা আলোচনা হলেও তাতে কোনো সমঝোতা হয়নি। কিন্তু ফিনল্যান্ডের সঙ্গে ১৯৩৮ সালের শুরু থেকেই সোভিয়েত রাশিয়ার দরকষাকষি আর হুমকি-ধমকি চলছিল। এস্তোনিয়া বা লাটভিয়া সোভিয়েত হুমকিতে সৈন্য ঘাটি তৈরির অনুমতি দিলেও ফিনসরা তাতে নমনীয় হয়নি। অবশেষে যুদ্ধের পথ বেছে নেন সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিন।

ফিনল্যান্ডের ব্যান্ডের জার্মান সংগীত:

উনিশশো আটত্রিশ সালের এপ্রিল মাসে হেলসিঙ্কিতে স্বাধীনতার কুড়িতম বর্ষপূর্তির যে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, সেখানে জার্মান সৈন্যদের উদ্দেশ্যে সঙ্গীত পরিচালনা করে আর্মি ব্যান্ড দল। ফিনল্যান্ড যখন রুশ জারের বাহিনীর কাছ থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করেছিল, ফিনিশ ন্যাশনাল আর্মি প্রশিক্ষণ পেয়েছিল জার্মানিতে। তাদের যুদ্ধে জার্মান সেনা সদস্যরাও অংশ নিয়েছিল।

ফলে স্বাধীনতার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে সাবেক জার্মান যোদ্ধারাও অংশ নিয়েছিল। সেই সময় ইউরোপের রাজনীতি টালমাটাল হয়ে উঠেছে। মার্চ মাসেই অস্ট্রিয়ার জার্মান ভাষাভাষী এলাকাকে থার্ড রাইখের সঙ্গে একীভূত করে নিয়েছেন হিটলার। 

‘দ্যা উইন্টার ওয়ার’ বইতে রবার্ট এডওয়ার্ডস লিখেছেন, ”ফলে রাশিয়াও ভাবতে শুরু করে, জার্মানি হয়তো ফিনল্যান্ডকে ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে রাশিয়ার লেলিনগ্রাদে হামলা চালাতে পারে”। সেই বছরের ৩০শে নভেম্বর প্রায় পাঁচ লাখ রেড আর্মি ফিনল্যান্ডে হামলা শুরু করে।

রাশিয়ার গ্রামে হামলা কে করেছিল?

এ ফ্রোজেন হেল: দি রুশো-ফিনিশ উইন্টার ওয়ার: ১৯৩৯-১৯৪০’ বইয়ে ইতিহাসবিদ উইলিয়াম আর ট্রোটার লিখেছেন, ফিনল্যান্ডে হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিন ইন্টারনাল সিকিউরিটি ফোর্স-এনকেভিডিকে একটি নাটক সাজানোর নির্দেশ দেন, যাতে তিনি হামলার পক্ষে যুক্তি দিতে পারেন। 

নভেম্বর মাসের ২৬ তারিখে ফিনল্যান্ড সীমান্ত থেকে রাশিয়ার ৮০০ মিটার ভেতরে কারেলিয়ান গ্রামের সাতটি কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়। রাশিয়া অভিযোগ করে, ফিনল্যান্ড থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে ফিনিশদের দাবি, এসব গোলা ছোড়া হয়েছে রাশিয়ার ভেতর থেকেই।

সেদিন দুপুরে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ফিনিশ সরকারের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে দাবি করা হয়, গোলার আঘাতে চারজন রেড আর্মি সীমান্তরক্ষী নিহত হয়েছে। ফিনল্যান্ড জানিয়ে দেয়, রাশিয়ার সৈন্যরা নিহত হয়ে থাকলে তারা ফিনিশ গোলার আঘাতে নিহত হতে পারে না। কারণ দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও এড়াতে বেশ কিছুদিন আগে সোভিয়েত এলাকার কাছ থেকে সব ফিনিশ কামান সরিয়ে আনা হয়েছে।

পরের দুইদিন ধরে সীমান্তে ফিনল্যান্ডের হামলার খবর প্রচার করতে থাকে মস্কোর রেডিও। অবশেষে নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে রাশিয়ান একটি বিমান থেকে হেলসিঙ্কি শহরের ওপর হাজার হাজার লিফলেট বিতরণ শুরু করা হয়। সেখানে কর্মীদের বেরিয়ে এসে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানানো হয়। এর এক ঘণ্টা পরেই এস্তোনিয়া থেকে এক ঝাঁক রুশ বোমারু বিমান উড়ে এসে একাধিক শহরে বোমা ফেলতে শুরু করে। শুরু হয়ে যায় ‘উইন্টার ওয়ার’।

শূন্যের নীচের তাপমাত্রায়  সাড়ে তিন মাসের যুদ্ধ:

রাশিয়া পুরোদমে হামলা শুরুর আগে থেকেই হামলার আশঙ্কা করছিল ফিনল্যান্ডের লোকজন। সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ একের পর এক ট্রেনে করে অন্য জায়গায় যেতে শুরু করে। ফিনল্যান্ডের সাধারণ মানুষ মিলিশিয়া বাহিনীতে নাম লিখিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

সেই সময়কার ফিনল্যান্ডের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন অ্যানটি হনটনেন। তখন তিনি কিশোর ছিলেন।

দক্ষিণ-পশ্চিম ফিনল্যান্ডে পারিবারিক খামারে তিনি বসবাস করতেন, যে এলাকা দাবি করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। 

”আমরা তখনো জানি না রেড আর্মি কতো সৈন্য মোতায়েন করেছে। কয়েকদিন পরেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যায়। তাদের তুলনায় আমাদের সৈন্য ছিল চারজনে একজন। বিমান ছিল ১০টায় একটা, কামান ছিল ১২টায় একটা। আমাদের একেকটা ট্যাংকের বিপরীতে সোভিয়েতের ছিল ১৯২টা ট্যাংক। আমাদের ধারণা ছিল না যে, এত বেশি রাশিয়ান ডিভিশন ফিনিশ সীমান্তে নিয়ে আসা হয়েছে”, তিনি বলছেন।

ফিনল্যান্ডের বাহিনীর গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করতে শুরু করে। বরফের ওপর সাদা কাপড় পরে আর স্কি ব্যবহার করে ফিনিশ যোদ্ধারা নিজেদের দেশের সর্বত্র দ্রুত চলাচল করতে পারতো। সেই তুলনায় বরফের ওপর পুরাদস্তুর সুসজ্জিত রাশিয়ার বাহিনীর চলাচল ধীরগতির হয়ে গিয়েছিল।

কৌশল বদলে ব্যাপক বোমাবর্ষণ আর ট্যাংক দিয়ে হামলা করে ফিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা ভেঙ্গে দেয়। সেই সময়ের আরেকজন যোদ্ধা আনটি হেনথমনেন  বলেছেন, ”তাপমাত্রা শূন্যের ৩০ ডিগ্রির নীচে নেমে গিয়েছিল। সেই সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করা কঠিন। সবার মধ্যেই ভয় ছিল। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছিল, ভয় যেন আমাদের হারিয়ে যেতে না দিতে পারে।”

”সামনে ছিল রাশিয়ান ট্যাংক আর ইনফ্যান্ট্রি। আমাদের বেয়নেট প্রস্তুত করতে বলা হলো। তবে আমাদের সামনে থাকা বয়স্ক সৈন্য সামনের দিকে কিছু গর্ত খুড়ে অবস্থান নিল। তাদের হাত ভর্তি ছিল বিস্ফোরক আর মলোটভ ককটেল। যখন ট্যাংক সামনে এলো, তারা সেগুলো ট্যাংকের ওপর ছুঁড়ে মারলে ট্যাংকে আগুন ধরে যায়। তখন সোভিয়েত পদাতিক বাহিনী পিছিয়ে যায়,” তিনি বলছেন।

তবে কিছুদিনের মধ্যে ফিনল্যান্ডের বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদ দ্রুত ফুরিয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে তারা অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। ”আমাদের শত্রুরা আমাদের ওপর ক্রমাগত বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছিল। আমাদের কমান্ডারের কাছে জানতে চাইলাম, আমরা কেনো পাল্টা জবাব দিচ্ছি না। তিনি বলেছিলেন, আমাদের মর্টারের গোলা গতকাল শেষ হয়ে গেছে।”

যুদ্ধে রাশিয়ার প্রায় তিন লাখ আর ফিনল্যান্ডের ৬৫ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

উনিশশো চল্লিশ সালের মধ্যে ফিনিশ সেনাবাহিনী তাদের বেশিরভাগ অবস্থান হারিয়ে ফেলছিল। ব্রিটেন বা ফ্রান্সের কাছ থেকে কোনো সাহায্যও আসছিল না।

তখন বাধ্য হয়ে সোভিয়েত দাবীর কাছে পরাজয় মেনে নেয়া ছাড়া ফিনল্যান্ডের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। উনিশশো চল্লিশ সালের বারোই মার্চ সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করে ফিনল্যান্ড। সব মিলিয়ে প্রায় এক দশমাংশ এলাকা রাশিয়ার কাছে হারায় ফিনল্যান্ড।

হাঙ্কো পেনিনসুলায় রাশিয়ার নৌঘাঁটিতে তৈরিতেও সম্মতি দিতে হয় ফিনল্যান্ডকে। কারেলিয়া এলাকাও রাশিয়ার কাছে হারাতে হয় ফিনল্যান্ডের, যেখানে অ্যানটি হনটনেনের বাড়ি ছিল। ”হাজার হাজার বছর ধরে কারেলিয়া ফিনল্যান্ডের ছিল। আমাদের মনে হলো, সারা পৃথিবী ভেঙ্গে পড়েছে। সেখানকার শিল্পকারখানা, সংস্কৃতি, পাঁচ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি-সব হারাতে হলো। আমার পরিবার পশ্চিম ফিনল্যান্ডে চলে যায়,” বলছেন অ্যানটি হনটনেন।

উনিশশো একচল্লিশ সালে রাশিয়ায় জার্মানির হামলা শুরুর পর ফিনল্যান্ড আবার এই এলাকা দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৪ সালে রাশিয়ান রেড আর্মি আবার নিয়ন্ত্রণ নিলে দ্বিতীয়বারের মতো ওই এলাকা ফিনল্যান্ডের হাতছাড়া হয়। এরপর থেকে ওই এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.