ভারত

পাক উপকূলেই পাকিস্তানকে সঠিক শিক্ষা দিয়েছিল ভারতবর্ষ। জানুন বিস্তারিত

২০১৯সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারিতে উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন (যিনি বর্তমানে গ্রুপ ক্যপ্টেনের পদে গেছেন) নিজের পুরোনো মিগ-২১ দিয়ে পাকিস্তানের এফ-১৬ শুট ডাউন করার পর ও অপর একটি এফ-১৬ এর মিসাইল হিটে শুট ডাউন হওয়ার পর একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্বে ক্যবিনেট কমিটির মিটিং শেষ হওয়ার আগেই পাকিস্তান নিজের সমস্ত ওয়ারশিপকে “ ডিপ ওসান ” বা সমূদ্রের মাঝখান থেকে নিজের উপকূলের খুব কাছে নিয়ে আসে। আর এর একটা বড় কারন ছিল ভারতের নৌবাহিনী। ক্যবিনেট কমিটির মিটিং শেষ হতেই ব্রাহ্মোস ক্রুজ মিসাইলের ব্যটারি ও নৌবাহিনী পাকিস্তানের দিকে অগ্রসর হয় এবং স্ট্যন্ড বাই মুডে থাকে। অর্থাৎ শুধু একটি গ্রীন সিগনাল আর ব্রাহ্মোসের বৃষ্টি হত পাকিস্তানে। এরপরই অকস্মাৎ করাচী হয় সম্পূর্ণ ব্ল্যক আউট! ফিরে আসে ১৯৭১ সালের অপরেশান ট্রাইডেন্ট ও পাইথনের স্মৃতি। আকাশে তখন পাকিস্তানী ফাইটারের গর্জন। জানা যায় করাচীর ওপর থেকে তখন পাক বিমানবাহিনীর জেএফ-১৭ ফাইটার এ্যন্টি শিপ মিসাইল সিএম-৪০০একেজি নিয়ে উড়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন পাকিস্তান নিজের নৌবাহিনীকে নিজের উপকূলের পাশে নিয়ে এলো? কেনই বা পাকিস্তানের নৌবাহিনী একা ভারতীয় নৌবাহিনীর সাথে মোকাবিলা করতে না পেরে তাদের বিমানবাহিনীকেও এই কাজে নিয়োজিত  করলো?

একটি জেএফ-১৭ এর ফাইটারের কম্ব্যট রেডিয়াস ১৩৫০কিমি খালি অবস্থায় হলেও দুটি ভারি এ্যন্টিশিপ মিসাইল বহন করলে তা কমে হবে ৭০০ কিমি। যদি উপকূলের থেকে পাক নৌবাহিনীর জাহাজ দূরে থাকে তবে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী তাদের নৌ ফ্লিটকে ভারতের ব্রাহ্মোসের মত সুপারসনিক যুদ্ধাস্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না। আর এটাই কারন কেন তারা উপকূলের কাছে চলে গেছিল। 

কিন্তু এরকম জায়গায় যদি ভারত থাকতো তবে ভারতের পিছনে সরে যাওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তা ছিল না। কারন যে এয়ারসাপোর্ট পাকিস্তানকে উপকূলের এয়ারবেস থেকে নিতে হয় সেই একই এয়ার সাপোর্ট আমাদের মাঝ সমূদ্রে এয়ারক্রাফট ক্যরিয়ার দিতে সক্ষম। আর নৌ যুদ্ধেও এখনও এয়ার সাপোর্ট সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করছে। একটি ভালো এয়ারসাপোর্ট আপনার থাকলে আপনার চেয়ে ১০গুন বড় নৌবাহিনীকেও আপনি দ্রুত পরাজিত করা সম্ভব। এবার সেই কারনটা বুঝুন। 

ভাবুন চীনের টাইপ-৫৫ ডেস্ট্রয়ার। এর যদি এয়ার ডিফেন্স হয় এইচকিউকিউ-০৯ তবে তার রেঞ্জ ১২০কিমি অব্ধি হতে পারে। এবার ১২০কিমি ব্যসার্ধের একটি বৃত্ত আঁকতে হবে যার কেন্দ্রে যুদ্ধ জাহাজটি থাকবে। অর্থাৎ এই বৃত্তের মধ্যে যেকোনো এয়ারক্রাফট অসুরক্ষিত !  এখন ভারত যদি একটি সুখোই-৩০এমকেআই যুদ্ধবিমানকে ব্রাহ্মোসের সাথে টেকঅফ করায় তবে ব্রাহ্মোসের রেঞ্জ ২৯০কিমি হওয়ায় সুখোই সেই বৃত্ত থেকেও ১৭০কিমি দুর থেকে মিসাইল লঞ্চ করতে সক্ষম। অর্থাৎ সুখোই চীনের টাইপ-৫৫ এর বিমান বিধ্বংসী মিসাইলের রেঞ্জের মধ্যে গিয়েই তাকে আক্রমণ করতে সক্ষম। একই ভাবে ১৩০কিমির কেএইচ-৩৫ এ্যন্টিশিপ মিসাইল কে যদি জাগুয়ার থেকে লঞ্চ করি তবুও সেই হুমকি সার্কেলের ১০কিমির বাইরে থেকে জাগুয়ার টাইপ-৫৫ কে আক্রমন করতে সক্ষম। 

কোনও কারনে যদি থ্রেট সার্কেলের মধ্যে যেতেও হয় তবুও এখানে একটা মজার জিনিস হবে। একটা জাহাজ অত্যন্ত ধীর গতী সম্পন্ন হয়ে থাকে একটি ফাইটারের তুলনায়। সেক্ষেত্রে বিমান থ্রেট সার্কেলের বেশ কিছুটা ঢুকেও মিসাইল লঞ্চ করে দ্রুত সেই থ্রেট সার্কেল থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবে। ফলে যেকোনো যুদ্ধ জাহাজ বা সাবমেরিনের ক্ষেত্রে এয়ারক্রাফট অত্যন্ত ভয়ংকর হতে পারে। 

আর এই জন্যই কিন্তু এয়ারক্রাফট ক্যরিয়ার একটি দেশের নৌবাহিনীর এত বড় একটা এ্যসেট। এয়ারক্রাফট ক্যরিয়ার কিন্তু কখনও একা থাকে না। এর সাথে একাধিক জাহাজ ও সাবমেরিন যোগ হয়ে একটি ক্যরিয়ার ব্যটেল গ্রুপ তৈরি করে যা মূল ক্যরিয়ারকে এয়ার ডিফেন্সের কভার দেয় শত্রুর মিসাইল আক্রমণ থেকে ও শত্রুর সাবমেরিন থেকে ক্যরিয়ারকে সুরক্ষিত রাখে। 

একটি ক্যরিয়ারে কয়েক হাজার নাবিক, অফিসার ও অন্যান্য সাপোর্ট ক্রু মেম্বাররা থাকে। এছাড়া ক্যরিয়ারের সাইজ অনুযায়ী একাধিক ফিক্সড উইং বিমান ও হেলিকপটার সহ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল, ক্যনন, রেডার, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সুইট, কমিউনিকেশান সুইট ইত্যাদি থাকে। ফলে একটা ক্যরিয়ারের দাম বহু বিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে। এত মানুষ আর জাহাজে এত মূল্যবান এ্যসেট থাকার কারনে কোনও দেশের ক্যরিয়ারে আক্রমণ হয়ে থাকলে সেই ক্যরিয়ার যদি সম্পূর্ন ধ্বংস হয়ে যায় তবে তা একটি পরমাণু যুদ্ধের বাতাবরণও তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে নতুন যুগের ক্যরিয়ার গুলি ডিজেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ছাড়াও নিউক্লীয়ার রিএ্যক্টর বা পরমাণু চুল্লিতে চলে। এই ধরনের ক্যরিয়ারে আক্রমণ হলে তার সেই এলাকাতে রেডিয়েশান ছড়াতে পারে। যা পরিবেশের জন্যেও মারাত্মক!

Leave a Reply

Your email address will not be published.