ভারত

পাবলো এস্কোবারের ভারতীয় ভার্সন। কুখ্যাত চন্দন দস্যু বিরাপ্পানের সম্পর্কে জানা আছে?

রাজেশ রায়:— মীনা বিজয়কুমার তার স্বামীকে বলেন আপনার চাকরির আর আট বছর বাকী আছে। বীরাপ্পানকে ধরতে গেলে এই পুরো সময়টা লেগে গেলেও চিন্তা করবে না। জবাবে ওনার স্বামী কে বিজয়কুমার বলেন এতটা ভরসা করবার জন্য ধন্যবাদ তবে তোমার কী মনে হয় বীরাপ্পান কে ধরতে আমার এত সময় লাগবে! জবাবে মীনা বলেন ঘরে একজোড়া চটিও তুমি সহজে খুঁজে পাও না সেক্ষেত্রে বীরাপ্পানকে ধরা এতটা সহজ নয়। এই কথোপকথন থেকে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কার কথা বলা হচ্ছে। বীরাপ্পানের সম্পর্কে বলা হচ্ছে যার পুরো নাম মীনাস্বামী বীরাপ্পান। ১৯৫২ সালের ১৮ জানুয়ারি কর্নাটকের মাইসোর জেলার গোপীনাথম গ্রামে জন্মানো বীরাপ্পন একজন কুখ্যাত চন্দন দস্যু যে প্রায় ৪৪ জন পুলিশ কর্মী এবং ১০০ এর বেশী সাধারন মানুষকে হত্যা করেছিল। বীরাপন্নকে মারতে তামিলনাড়ু, কর্নাটক ও কেরালার প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচা হয়ে যায়। একটা নাম আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন পাবলো এস্কোবার। কলম্বিয়ার কুখ্যাত এই ড্রাগ মাফিয়ার নেটওয়ার্ক দক্ষিন আমেরিকা পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল। স্টিফেন মার্ফি এবং জেভিয়ার পেনা নামে আমেরিকার দুই বিখ্যাত সিভিল সার্ভিস অফিসার প্রায়ই আফসোস করেন যে পাবলো এস্কোবারের মতন কুখ্যাত ড্রাগ মাফিয়াকে যে তারা মেরেছিলেন তা হয়ত বিশ্বের খুব কম লোকই জানেন। তবে বীরাপ্পানকে যারা মেরেছিল সেই বাহাদুর পুলিশ অফিসার কে বিজয়কুমার ও তার স্ত্রী মিনা বিজয়কুমার এবং এই অপারেশন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। জানলে অবাক হবেন বীরাপ্পান দক্ষিন ভারতের সুপারস্টার থালাইভা রজনিকান্তকেও অপহরনের চেষ্টা করেছিল কিন্তু পরে অন্য এক কন্নড় অভিনেতাকে অপহরন করে। কে বিজয়কুমার সাহেবের লেখা বীরাপ্পন চেসিং দ্য ব্রিগেন্ড বইয়ে এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

চার ভাইবোনের মধ্যে বীরাপ্পন ছিল দ্বিতীয়। দক্ষিন ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী আছে যার নাম কাবেরী। এই নদীটি বীরাপ্পনের গ্রাম গোপীনাথমের কাছে একটি রিজার্ভার তৈরি করে তামিলনাড়ুতে প্রবেশ করেছে। এই রিজার্ভারের উপর মেটুর ড্যাম তৈরি হয়েছে যার পর এই গ্রামে লোক বসতি বেড়ে যায়। ১৯৫৬ সালে যখন ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য তৈরি হচ্ছিল তখন গোপীনাথম কর্নাটকের অংশ হয়। এই এলকা একটু জঙ্গলে ভর্তি। যার জন্য এখানের মানুষ ছোট ছোট বন্দুক রাখত নিজেদের কাছে, যার কোন লাইসেন্স ছিলনা। আসলে অনেকে বন্দুক রাখত ভাল্লুক বা অন্য কোন বন্য প্রানী থেকে আত্মরক্ষার জন্য। তবে বেশীরভাগ লোক খারাপ কাজের উদ্দেশ্যে বন্দুক রাখত। পুলিশ বারবার অভিযান চালিয়ে অনেক বন্দুক উদ্ধার করত। বীরপ্পানও ছোট থেকেই বন্দুক চালাতে অভ্যস্ত ছিল এবং দশ বছর বয়স আসতে আসতে সে বন্দুক চালাতে দক্ষ হয়ে উঠেছিল। একটি স্থানীয় গ্যাং সেভি গাউন্ডারে এসময় যুক্ত হয় বীরাপ্পান। কো বিজয়কুমার বলেন বীরাপ্পান কোন রবিনহুড ছিল না। বীরাপ্পান গরিব ছেলেদের ভুল বুঝিয়ে তার দলে ঢুকিয়ে ডাকাতি করত। মূলত চন্দন কাঠের চোরাকারবারি এবং বন্য জীব জন্তুদের শরীরের অংশ বিক্রি করত বীরাপ্পান। তবে এলাকার এমনও কীছু লোক ছিল যারা তাকে সমর্থন করত না, মূলত তারাই পুলিশকে খবর দিত। 

একবার এলাকার সমস্ত স্মাগলার ও চোরাকারবারিদের আমন্ত্রন জানায় বীরাপ্পান এবং অনেক খাওয়া দাওয়ার পর সবাইকে পান সুপারি দেওয়া হয় আসলে এটা ছিল ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা লোকেদের প্রতি বীরাপ্পানের ইশারা এবং সাথে সাথে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি এসে সবাইকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এভাবে বাকী সমস্ত লিডারদের হত্যা করে বীরাপ্পান একা এই এলাকার অলিখিত রাজা হয়ে ওঠে। ১৯৮৬ সালে এক অস্ত্র ব্যাবসায়ীর সাথে অস্ত্রের দাম নিয়ে বীরাপ্পানের ঝগড়া হয় এবং সেই অস্ত্র ব্যাবসায়ীটি পুলিশকে সব জানায় এবং ব্যাঙ্গালোরের একটি রেস্তোরাঁ থেকে বীরাপ্পানকে গ্রেফতার করা হয়। ভারতীয় বন বিভাগের একজন অফিসার পি শ্রীনিবাসের অধীনে রাখা হয়। একদিন শ্রীনিবাস কোন কাজের জন্য শহরে যায় এবং বীরাপ্পানের দায়িত্ব দুজন পুলিশ কর্মীর উপর দিয়ে যায়। বীরাপ্পান মাথা ধরার অজুহাতে সেই দুজন পুলিশের কাছে তেল চায় এবং তেলের সাহায্যে হাতকড়া খুলে পালিয়ে যায়। আসলে বীরাপ্পান রোগা চেহারার ছিল তাই এটা সম্ভব হয়েছিল। শ্রীনিবাস বেশ কীছু পুলিশ কর্মী নিয়ে বীরাপ্পানের গ্রাম গোপিনাথম এসে উপস্থিত হয়। সেখানে মেডিক্যাল ক্যাম্প, মন্দির তৈরি সহ অনেক জনসেবা মূলক কাজ করে শ্রীনিবাস এবং বীরাপ্পানের ভাইকে বলা হয় বীরাপ্পান যেন আত্মসমর্পন করে। শ্রীনিবাস ৮০০ কেজি চন্দনকাঠও বাজেয়াপ্ত করেছিল। বীরাপ্পান এসব কাজ কর্মে খুবই ভয় পেয়েছিল এবং পুলিশকে চর মারফত জানায় সে আত্মসমর্পন করতে প্রস্তত তবে গোপিনাথম থেকে আড়াই ঘন্টা দূরে নামদালি নামক একটি জায়গায় সে আত্মসমর্পন করবে। নির্দিষ্টদিনে শ্রীনিবাস কীছু গ্রামবাসী ও বীরাপ্পানের ভাইকে নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু নামদালি আসতে আসতে এক এক করে গ্রামবাসী সব উধাও হয়ে যায় এবং সবশেষে একটি ঝোপ থেকে বীরাপ্পান বেড়িয়ে এসে শ্রীনিবাসকে গুলি করে হত্যা করে। 

কর্নাটক থেকে তামিলনাড়ু অবধি পালার নদী বয়ে যায়, এই নদীর অনেক অংশ এখন শুকিয়ে গেছে। ৯ এপ্রিল, ১৯৯৩ এ কর্নাটকের কোলাথপুর গ্রামে পালার সেতুর উপর দুটি পুলিশের গাড়িতে আইইডি বিস্ফোরন ঘটায় বীরাপ্পান। একটি গাড়িতে আইপিএস কে গোপাল কিষ্নন এবং একটি বাসে ৪১ জন সেনা জাওয়ান সহ পুলিশ কর্মী ও বন বিভাগের কর্মীরা ছিলেন। মোট ১৪ টি আইইডি বিস্ফোরন ঘটে যাতে পাঁচজন পুলিশ কর্মী এবং বন বিভাগের ১৭ জন কর্মীর মৃত্যু হয় এবং ১৩ জন গুরুতর আহত হয়। ১৯৯০ এর দশকে বীরাপ্পান অনেক লোককে অপহরন করেছিল এবং পরে তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়। তবে নিজের পরিচিতি আরও বাড়াতে বীরাপ্পান বড় কোন ব্যাক্তিকে অপহরন করবার পরিকল্পনা করে। প্রথমে ঠিক হয় তামিলনাড়ুর প্রক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন করুনানিধির ছেলে এম কে স্ট্যালিনকে অপহরন করা হবে কিন্তু কোঠোর নিরাপত্তার জন্য তা বাতিল করা হয়। এরপর ঠিক করা হয় রজনীকান্তকে অপহরন করা হবে কিন্তু রজনীকান্তের বাংলো তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার বাড়ির কাছে হওয়ায় এখানেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই জোরদার ছিল, ফলে এই পরিকল্পনাও বাতিল করা হয়। শেষে কন্নড় অভিনেতা সিঙ্গানাল্লুরু পুত্তুয়াস্বামীয়া মুথুরাজ কে অপহরন করা হয়, যিনি রাজাবাবু নামে বিখ্যাত ছিলেন। রাজাবাবু সেসময় কন্নড় সিনেমা জগতে অনেক বড় নাম ছিলেন যিনি দাদা সাহেব ফালকের মতন পুরষ্কার জিতেছিলেন। 

৩০ জুলাই, ২০০০ সালে রাজাবাবুর বাড়ি থেকে তাকে অপহরন করা হয় এবং ওনার স্ত্রীকে একটি ক্যাসেট দেওয়া হয় এবং বলা হয় এটি তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এসএম কিষ্নকে দিতে। অল ইন্ডিয়া রেডিও মারফত রাজকুমারের প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যাপারে জানানো হয় বীরাপ্পানকে। রাজকুমারকে মুক্তি দেবার জন্য বীরাপ্পান দশটি শর্ত রাখে যার মধ্যে তিনটি প্রধান শর্ত হচ্ছে কাবেরী নদী নিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে হবে, ১৯৯১ সালে দাঙ্গায় নিহত তামিলদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং কর্নাটকের বিদ্যালয় গুলোতে তামিল ভাষাকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসাবে পড়াতে হবে। এই নিয়ে যাতে কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্যে ঝামেলা না হয় তার জন্য রজনীকান্ত জঙ্গলে বীরাপ্পানের সাথে কথা বলতেও রাজি হয়েছিল। রাজকুমার একবার বীরাপ্পানের খপ্পর থেকে পালিয়ে গিয়ে রাস্তায় একটি বাসে উঠে পড়ে তবে বাসের চালক বাস নিয়ে রাজকুমারকে বীরাপ্পানের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসে। তবে ১০৮ দিন বন্দি রাখবার পর রাজকুমার কে ছেড়ে দেয় বীরাপ্পান। তবে সীমান্ধি নামে এক জায়গায় একবার বীরাপ্পানকে প্রায় খুঁজে পেয়ে গিয়েছিল বন বিভাগের হেলিকপ্টার তবে সেবার কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচে বীরাপ্পান। আগস্ট, ২০০২ এর কর্নাটকের কৃষি মন্ত্রীকে হত্যা করে বীরাপ্পান। এর পরেই কর্নাটক সরকার বীরাপ্পানের মাথার দাম পাঁচ কোটি টাকা  ঘোষনা করে। ২০০১ সালে কে বিজয়কুমার বিএসএফের আইজি ছিলেন। একদিন তাঁকে ফোন করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা এবং ওনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বীরাপ্পানকে গ্রেফতারের। এর জন্য কে বিজয়কুমারকে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফের প্রধান নিযুক্ত করা হয়। 

তামিলনাড়ুর সত্যিয়ামঙ্গলমে এসটিএফের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। কে বিজয়কুমার সিদ্ধান্ত নেয় বীরাপ্পানকে না হত্যা করা অবধি এই সত্যিয়ামঙ্গলমেই থাকার। বীরাপ্পানকে হত্যার জন্য তিনি একজন বিশেষ পুলিশ অফিসারকে ডাকেন যার নাম এন কে সেন্ঠামারাই কানান। ১৯৮৭ সালের আইপিএস ব্যাচের সদস্য এই কানান। বিজয়কুমার ও কানান যৌথভাবে বীরাপ্পানকে হত্যা করার অপারেশন কোকুনের পরিকল্পনা করেন।

আমেরিকান সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স গ্রীন ব্যারেট এবং কিউবান মিলিটারি লিডার এলবার্তো বায়োর স্ট্রাটেজি অনুসরন করে ছোট ছোট বিভিন্ন দল গঠন করা হয় যাতে কনস্টেবল এবং ইন্সপেক্টররা ছিল। কোন বড় ব্যাটেলিয়নের বদলে ছোট ছোট দল গঠন করা হয়। এরকম করা হয় কারন যাতে বীরাপ্পান মনে করে এটা শুধু প্রতিদিনের মতন স্বাভাবিক পুলিশ মহড়া এবং সে এদিকে এতটা মোনোযোগ না দেয়। এই ছোট ছোট দলকে অ্যাডভান্সড অস্ত্র, নাইট ভিশন ডিভাইস সহ যতটা সম্ভব আধুনিক উপকরন দেবার পাশাপাশি চোখে কাপড় বেঁধে হাটা এবং আওয়াজ চেনার প্রশিক্ষন দেওয়া হয় কারন জঙ্গল ছিল বীরাপ্পানের ঘর এবং তাঁকে তার পদ্ধতিতেই মারতে হবে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা বীরাপ্পানের চর ছিল এবং সেজন্য পুলিশ খুঁজে খুঁজে সেসব লোকের সাথে যোগাযোগ করে যাদের কোনও না কোনও ক্ষতি বীরাপ্পান করেছিল। একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কে বিজয়কুমারকে বলে পরিকল্পনায় একটু পরিবর্তন আনতে কারন বীরাপ্পান একটা কুমিড় এবং জঙ্গল তার জল। সুতরাং বীরাপ্পানকে মারতে হলে জঙ্গলের বাইরে আনতে হবে। সালেম বলে একটা জায়গায় বীরাপ্পানের স্ত্রী মুখু লক্ষী থাকত তার দুই মেয়ের সাথে।  বীরাপ্পান অনেকদিন তাদের সাথে দেখা করতে পারে নি। এদিকে গোঁফে রং করতে গিয়ে কীছু রঙের ছিটে বীরাপ্পানের চোখে লেগে যায়। সেজন্য পরিকল্পনা করা হয় বীরাপ্পানকে চোখের চিকিৎসার জন্য জঙ্গলের বাইরে আনা হবে এবং তাকে তার মেয়ের ব্যাপরে মনে করানো হবে। একটি চায়ের বাগানে কে বিজয়কুমার ও কানন এই পরিকল্পনা তৈরি করে। 

১৭৭৩ সালে আমেরিকার বোস্টন টি পার্টির স্মরনে এই অপারেশনের এই অংশের নাম রাখা হয় অপারেশন বোস্টন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিএসপি অশোককুমার এক স্থানীয় পুলিশ কর্মী হিসাবে মুথু লক্ষীকে সবসময় নিরাপত্তা দিতে থাকে। কয়েকজন এসটিএফকে সালামে পাঠানো হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাতে মুথু লক্ষীর মনে হয় তারা এসেছে তাকে গ্রেফতার করতে। এই সুযোগে মুথু লক্ষীকে নিরাপত্তা দিতে অশোক কুমার তাকে এক স্থানীয় মহিলা রম্যার ঘরে রেখে আসে। মুথু লক্ষী এসব বিশ্বাস করে। রম্যার ছোট মেয়ে ছিল যার সাথে বীরাপ্পানের মেয়েদের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আসলে এই রম্যা একজন ছদ্মবেশী মহিলা পুলিশ ছিল যে পরিকল্পনার অংশ ছিল। একদিম রম্যা মুথু লক্ষীকে বলে সে তার সাথে বীরাপ্পানের দেখা করবার ব্যাবস্থা করে দেবে যাতে বীরাপ্পান চোখের চিকিৎসা করাতে পারে। এর জন্য একটি মারুতি ওমনি গাড়িকে হসপিটালের মতন করা হয় যার নাম দেওয় হয় কোকুন এবং এই নামেই গোটা মিশনের নাম দেওয়া হয়। এসটিএফের দুই সদস্য সারভ্যানন এনং ভেলাদুরাই অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও পরিচালকের দয়িতত্ব নেয়। 

কোকুন জঙ্গলে নির্দিষ্ট জায়গায় চলে যায় বীরাপ্পানকে নিতে। অন্যদিকে তখন অপারেশন কোকুনের প্রস্ততি চলছে। ধর্মাপুরী গ্রাম থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পরি নামে একটি জায়গার একটি বিদ্যালয়ের সমানে এসে একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে যায় গভীর রাতে। তবে গাড়িটি একা আসেনি তার সাথে আরও দুটো লড়ি এসেছে যার একটায় আখ রয়েছে, এর কোড নেম সুইট বক্স এবং অন্যটায় বালির বস্তা আছে যার পেছনে লুকিয়ে আছে এসটিএফের কম্যান্ডো বাহিনী, এই ট্রাকটার কোড নেম মোবাইল বাঙ্কার। ছয়জন এসটিএফ কম্যান্ডো একে-৪৭ নিয়ে স্কুলের ছাদে তাদের অবস্থান নিয়েছে। আসলে এই ট্রাক দুটোর কাজ ছিল বীরাপ্পানের অ্যাম্বুলেন্সকে আটকানো। হঠাৎ দূর থেকে অন্ধকারের বুক চীরে একটি অ্যাম্বুলেন্স দেখা যায় যার মাথায় নীল আলো এবং ফগ লাইট জ্বলছে। তবে এটাও একটি সাংকেতিক চিহ্ন। নীল আলো জ্বলার অর্থ ভিতরে বীরাপ্পান তার কীছু সঙ্গীর সাথে আছে এবং ফগ লাইট জ্বলার অর্থ প্রত্যেকের কাছে অস্ত্র আছে। অ্যাম্বুলেন্সের চালক লড়ির কাছে এসে ব্রেক কষে গাড়ি দাঁড় করিয়েই দরজা খুলে পালিয়ে যায়। এদিলে স্কুলে এবং লড়িতে থাকা এসটিএফ কম্যান্ডোরা একে-৪৭ এ ঝাঁঝড়া করে দেয় অ্যাম্বুলেন্সটিকে। সব শেষে দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্সের ভিতর বীরাপ্পান ও তার তিন সঙ্গীর মৃতদেহ পড়ে আছে। অবশেষে মারা যায় দুদশক ধরে কর্নাটকের জঙ্গলে রাজ করা কুখ্যাত দস্যু বীরাপ্পান যে নিজের জীবনে প্রায় ১৮৮ জনকে হত্যা করেছিল, এছাড়াও ৫০০ হাতিকে হত্যা করেছিল এবং হাতির দাঁত স্মাগলিং করে ১৬ কোটি টাকা কামিয়েছিল, শুধু তাই নয় ৬৫০০০ কিলোগ্রাম চন্দনকাঠ ১৪৩ কোটি টাকায় পাচার করেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.