১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের জন্য বাজপেয়ীর অবদান ভুলবেনা বাংলাদেশ
নিউজ ডেস্কঃ ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর উপমহাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বছর বলা চলে ১৯৭১ কে। সম্প্রতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ তম বার্ষিকী উদযাপন করছি আমরা। আজ থেকে ৫০ বছর আগে অগুনতি বাংলাদেশির কৃচ্ছসাধন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সিদ্ধান্তমূলক সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে অভ্যুদয় হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। আর এই যুদ্ধে কৃতিত্বের জন্যেই ২০১৫ সালের জুন মাসে, বাংলাদেশের তরফ থেকে অটল বিহারী বাজপেয়ীকে মর্যাদাপূর্ণ ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মান’ প্রদান করা হয়। ভারতীয় জনতা পার্টির বর্ষীয়ান এই নেতা সশরীরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার তরফে পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলেন। এই সম্মান প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত সম্মানীয় এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে বাজপেয়ীর “সক্রিয় ভূমিকা” স্বীকার করে নিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাজপেয়ী ভারতীয় জনসংঘের (বিজেএস) সভাপতি ছিলেন এবং বিজেএস-এর সভাপতি ও লোকসভার সদস্য হিসেবে বাজপেয়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে নানা সংগঠনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সংগঠকের মতে, “বাজপেয়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে তৎকালীন ভারত সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য।”
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নিজেও স্বীকার করেছিলেন যে বিরোধী দলের নেতা হওয়া সত্ত্বেও, বাজপেয়ী বাংলাদেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও তার দলকে আন্তরিক ভাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন সেই সময়। তবে, এটা কোন গোপন খবর নয় যে ১৯৫১ সালের ২১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত BJS তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তি এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির অন্যতম বড় সমর্থক ছিলো। এর পেছনে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ ও জড়িয়ে ছিলো বটে। ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেই সময় ঘটছিল বহুল পরিবর্তন। সত্যি বলতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ই কিন্তু পরোক্ষে আর এস এস কে ভারতের রাজনীতিতে তাদের হারানো জমি ফেরত পেতে সাহায্য করেছিল। ১৯৬৯ সালে কংগ্রেসে ধরা ফাটল ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বকে এক বড়োসরো প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছিল। “সিন্ডিকেট কংগ্রেস” এর ছত্রছায়ায় থাকা স্বতন্ত্র পার্টির মতো কেন্দ্রীয় দলগুলোকে খালি করে কংগ্রেসের স্থানীয় কোনো নেতা না থাকার শূন্যস্থান পূরণ করতে উদ্যত ছিলো বিজেএস। বিজেএস এমন সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর যোগ্য বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলো যখন সত্যিই ই দেশে বিরোধী দল বলে তেমন কিছুই আর ছিলো না।
বাজপেয়ী ততদিনে বিজেএস-এর সবচেয়ে বড় নেতা তো বটেই সেই সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস বিরোধী ছোট বড় সব দলগুলোরই সম্মিলিত মুখ হিসাবেও বেশ কিছুটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। আর এর মধ্যেই আরএসএস রেজোলিউশন, এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে ভারতীয় জনমতকে একত্রিত করার মাধ্যমে জাতিসংঘ তাদের ডানা মেলার এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্ল্যাটফর্ম পেয়ে গেছিলো।সীমান্ত রাজ্যেগুলিতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা উদ্বাস্তুদের থাকার বন্দোবস্তের জন্য সরকারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশাল বিশাল মিছিল আয়োজনের মাধ্যমে আরএসএস পাকিস্তানের পিঠ ভাঙ্গতে উদ্যত ইন্দিরা গান্ধীকে সমর্থন তো করেছিলই তার সাথে নিজেদের এজেন্ডাকেও গুছিয়ে নিতে পেরেছিল। রাজিব গান্ধীর হত্যার সাথে জড়িত থাকায় আর এস এস দোষী সব্যস্ত হয়ে নিষিদ্ধ হলে আরএসএস ক্যাডার এবং তাদের কার্যক্রম ভীষণ ভাবে ধাক্কা খায়। আর তাই, ভারতের রাজনৈতিক পটভূমির পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে তারা যতটা সম্ভব মূলস্রোতে ফেরার চেষ্টা করছিল। হয়েছিলো ও ঠিক তাই। উত্তর ভারতে আর এস এস এর ঘাঁটি বরাবরই ছিল শক্ত, তার ওপর মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তারা পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশেও নিজেদের প্রভাব বিস্তর করতে সক্ষম হয়েছিল। তৎকালীন সরসঙ্ঘচালক অর্থাৎ ‘গুরুজি’ নামে পরিচিত গোলওয়ালকার এর দক্ষ ও কৌশলগত নেতৃত্বে, ১৯৬২ সালের চীনা আগ্রাসন, ১৯৬৫ সালের পাকিস্তানের দুঃসাহসিক অভিযান এবং ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে গ্রাউন্ড লেভেলে জনগণের মাঝে থেকে কাজ করে ও সরকারের প্রতি সমর্থনের মাধ্যমে আরএসএস ধীরে ধীরে তাদের হারানো জায়গা ফিরে পায়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের হিন্দু এবং বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর রোষের স্বীকার হলে ওই বছর জুলাইয়ে আরএসএস পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্যও ভারত সরকারকে আহ্বান জানায়। এমনিকি ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের উপর হামলা চালালে তখনও RSS সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে জানায়, “আমাদের সরকার এবং সেনাবাহিনী পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্পূর্ন রূপে সক্ষম।”
ইন্দিরা গান্ধী এক সময় একসময় আরএসএস এর সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ত্যাগ করলেও এই সময় পুনরায় যে দুই দলের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৭১ সালে তৎকালীন সরসঙ্ঘচালক ‘গুরুজি’ গোলওয়ালকারের ইন্দিরা গান্ধীর উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি থেকেই।
এই চিঠিতে উল্লেখিত ছিলো, “জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ সবসময় আপনার সাথে আছে এবং থাকবে। আপনার নেতৃত্বে ভারতবর্ষের প্রতিপত্তি এভাবেই বাড়বে বলে কামনা করি।”
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, স্বাধীনতার আগে ব্রিটেনের আসল পরিকল্পনা ছিলো ভারতের পূর্বাঞ্চলে আসাম ও বাংলাকে নিয়ে এমন এক’স্বাধীন দেশ’ গঠন করার যা ভারত বা পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য হিসাবে যোগদান করবে না। শোনা যায় লর্ড মাউন্টব্যাটেন জিন্নাহর সামনে এই প্রস্তাব তুললে তিনি বলেছিলেন, “কলকাতা ছাড়া বাংলার পূর্ব পাকিস্তান গঠনের কোনো মনেই হয় না। তার থেকে বরং তাদের ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীন থাকা অনেক ভালো; আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে তারা আমাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে।”
কিন্তু শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি, কে.সি. নিওগী এবং বিনয় কুমার রায় সহ বাকি হিন্দু নেতারা “বাংলার স্বাধীন দেশ” গঠনের সরাসরি তীব্র বিরোধিতা করেন। সেই সময় দাঙ্গা শুরু হওয়ায় এবং সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় তাদের মনে হয়েছিল ‘অখণ্ড এবং স্বাধীন বাংলা’ গঠিত হলেও তাতে হিন্দুরা কখনোই নিরাপদ থাকবে না। এমনকি সর্দার প্যাটেল এবং জওহরলাল নেহরু সহ হেভি ওয়েট বিভিন্ন নেতারাও তখন চরম ভাবে ইউনিয়নের সাথে সংযোগহীন সার্বভৌম বাংলার বিরুদ্ধে ছিলেন।
দেশভাগ-পরবর্তী দাঙ্গা এবং ক্রমবর্ধমান বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী মনোভাব সেই সময় এমনই বৃদ্ধি পেয়েছিলো যে পরিস্থিতি সামাল দিতে খোদ নেহরুকে কলকাতা সফরে আসতে হয়। উল্লেখ্য হিন্দু মহাসভার নেতা আশুতোষ লাহিড়ী এই সময় হিন্দুদের রক্ষার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে ‘যুদ্ধ চালাতে’ অনুরোধ করেন নেহেরুকে। রাজি না হওয়ায় উপহাসও নেহাত কম করা হয়নি তখন নেহেরুকে। তিনি সেই সময় হিন্দু মহাসভার নেতাদের কথায় পাত্তা না দিলেও ১৯৫০ সালের এক সমীক্ষা তাকে ভীষণ ভাবে ব্যথিত করে তুলেছিলো।এই সমীক্ষায় দেখা যায় উত্তরদাতাদের মধ্যে ৮৭% পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে ছিলেন। নেহেরু এতটাই ভেঙ্গে পড়েছিলেন যে তিনি দিল্লিতে ফিরে এসে পদত্যাগের প্রস্তাব অব্দি দেন। তবে, পরিস্থিতি সামাল দিতে নেহেরুর অক্ষমতা নয় বরং কলকাতায় নেহেরু-লিয়াকত চুক্তির বিরোধিতা করার মূল কারণ ছিল যে কেউ সেই সময় পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছিল না যে দাঙ্গার পর হিন্দুরা পুনরায় পূর্ব পাকিস্তান( বর্তমান বাংলাদেশ) এ তাদের আদি বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে। কিন্তু, এর মধ্যেই লিয়াকত আলী খান দিল্লিতে নেহেরুর সাথে ফের আলোচনায় বসে বিভক্তির উভয় দিকে ‘সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়ে কিছু করতে’ রাজি হন।
তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। এই নেহেরু লিয়াকাত চুক্তির শর্তাবলীর তীব্র বিরোধিতা করে নেহেরুর মন্ত্রিসভার তৎকালিন শিল্পমন্ত্রী মুখার্জি পদত্যাগ করেন। হিন্দু মহাসভা এবং মহাবোধি সোসাইটির সভাপতি মুখার্জীর সেই সময় অগ্রাধিকার ছিলো উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং বাংলার স্বার্থ রক্ষা করা।তিনি ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখতে বদ্ধপরিকর হলেও হিন্দু ও বৌদ্ধদের কিছুটা হলেও অগ্রাধিকার দিতেন, বিশেষ করে যারা দেশভাগের শিকার হয়েছিলেন।
এক সময় তিনি হিন্দু মহাসভাকে একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করে অহিন্দুদের জন্যও দরজা খুলে দিতে চেয়েছিলেন তবে, সাভারকর ও তার অনুগামীরা মুখার্জির বিরোধিতা করেন। কারণ সাভারকর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে অ-হিন্দু সদস্যদের (অর্থাৎ মুসলমান) নিয়ে হিন্দু মহাসভা গঠন করা হলে তা আখেরে কংগ্রেসের বি-টিম তৈরি করারই সমান হবে। সত্যি বলতে আসলে, মুখার্জির রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা হিন্দু মহাসভা এবং কংগ্রেস উভয়ের থেকেই বেশ খানিকটা সত্বন্ত্র ছিলো। নেহেরু যেভাবে পাকিস্তান ইস্যুকে পরিচালনায় করছিলেন তা নিয়ে তিনি বেশ খানিকটা অসন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি মনে করতেন পাকিস্তানে, বিশেষ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু সংখ্যালঘুদের প্রতি প্রথম মন্ত্রিসভার আচরণে আখেরে তাদের নিষ্ঠুর মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছিল। হিন্দু মহাসভায় থাকাকালীন তিনি তার কিছু সহকর্মীর সাথে মিলে এমন এক নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন যা কংগ্রেসের থেকে হবে কিছুটা আলাদা তবে, একচেটিয়া ভাবে হিন্দুদের জন্য সংরক্ষিত হবে না।
তার ব্যক্তিগত মত ছিলো গণতান্ত্রিক স্বাধীন ভারত যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার প্রদান করেছে এবং এক পৃথক নির্বাচকমণ্ডলীর ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে, সেখানে আলাদা করে হিন্দু দল বা সংখ্যালঘু কমিশনের কোনো স্থান নেই। কিন্তু, তার নিজের সংগঠনই তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে তিনি শেষ পর্যন্ত ১৯৪৮ সালে হিন্দু মহাসভা ত্যাগ করেন।তবে, শুধু মুখার্জিই নয় বি.আর.আম্বেদকর এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বহু সদস্যদের(আরএসএস) সঙ্গেও সাভারকরের সেই সময় বেশ কিছু গুরুতর মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল।
এদিকে, মহাত্মা গান্ধীর হত্যা-পরবর্তী সময়ে আরএসএস-এর মধ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছিল। অবশেষে, ১৯৫০ সালে সর্দার প্যাটেলের মৃত্যুর পরে আর এস এস উপলব্ধি করে যে বিভক্তির পরে কংগ্রেস আর পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের আস্থা লাভ করতে পারবে না। বঙ্গ ভঙ্গ তখনও পশ্চিমবঙ্গে এক বড় ইস্যু ছিলো। আর তা কাজে লাগিয়েই পশ্চিমবঙ্গ একটি নতুন রাজনৈতিক দল, ভারতীয় জনসংঘের কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন দীর্ঘ পরিশ্রমের পর ১৯৭১ সালের যুদ্ধ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণা জনসংঘের কাছে অনেকটা এক ঈশ্বর প্রেরিত সুযোগেরই সমান ছিলো। অখন্ড ভারত গঠনের যে উদ্দেশ্য তাদের ছিলো সেটা পূরণ করার সবচেয়ে বড় সুযোগ ছিল এটাই। পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় তার পুস্তিকা অখন্ড ভারতে তাই লিখেছিলেন “অবিভক্ত ভারত শুধু একটি রাজনৈতিক স্লোগান নয়, এটি আমাদের জীবনের মৌলিক নীতি।”
জনসংঘ এবং আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতারা ১৯৫১ সালে যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন তা অবশেষে ২০ বছর পরে ১৯৭১ সালে বাস্তবায়িত হয়। তবে, মজার বিষয় হলো ঠিক এই বছরেই ঝামেলা চলাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতবর্ষকে পূর্ব পাকিস্তানে স্থল বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করতে বাধা দেয়।
এমনকি নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই সময় চীনের দিকেও বন্ধুত্ত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে,সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রবেশের ভয়ে চীন কৌশলগতভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু, ইতিহাস সাক্ষী, তার ২০ বছর পরে অর্থাৎ ১৯৯১ সালে, এই চিনই কিন্তু পুনরায় ভারত মহাসাগরে অবাধ প্রবেশ করেছিল।
৫০ বছর পর অর্থাৎ ১৯৭১ সালে পূর্ব ফ্রন্টে শান্তি, জনসংঘের অস্তিত্ব বিলুপ্ত, ‘মুক্তিযুদ্ধের’ নেতা ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দেশের অগোছালো পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুপস্থিতে হঠাৎ চীনের উত্থান লক্ষ্য করা যায়। মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন শক্তি হিসাবে বিকশিত হয় চিন।
বর্তমানে নরেন্দ্র মোদির পররাষ্ট্রনীতিতেও কিন্তু, ইন্দিরা গান্ধীর মতই, কৌশলগত আউটরিচ লক্ষ্য করা যায়, কোনো রকম আলোচনায় একেবারেই ভীত নন তিনি। আন্তর্জাতিক পরিবর্তনশীল রাজনীতির সাথে আদর্শ ভাবে মানিয়ে চলেছেন তিনি। আশা করা হয় আরএসএস ও তাদের ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক হবে। যদি, কোনো ভাবে এখন পুনরায় ১৯৭১ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটে তবে আগের বারের মত এবারও মোটেই দীর্ঘ সময়ের জন্য ‘পশ্চিম ফ্রন্ট শান্ত থাকবে না।