পৃথিবী

আরবের মেয়েদের অবস্থা এখনও খারাপ। জানুন বিস্তারিত

আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ সৌদি আরব। ২০১১ সালের আগে ভোট দেওয়ার অধিকারটুকু ছিল না এখানকার মেয়েদের। রাজা আবদুল্লার হাত ধরে সেই প্রথম দৃশ্যটা বদলায়। তবে সে তো কেবল ভোটের অধিকার।

তা বাদ দিয়ে কেমন আছেন আরবের মেয়েরা?

পিতৃতান্ত্রিকতার চরম প্রকাশের জন্য ‘খ্যাত’ সৌদি আরবে শরিয়ত কড়া ভাবে মেনে চলা হয়। আর সেই প্রকাশ যত না আইনে, তার চেয়েও অনেক বেশি তা পালনের পরম্পরায়। সৌদি আববের আইনে মেয়েদের পুরুষ-অভিভাবকত্বের তত্ত্বটি স্বীকৃত। স্বামী, বাবা, নিদেনপক্ষে ভাই, এমনকী ছেলে— এদের অনুমোদনের উপরই ঘুরপাক খায় আরব-নারীদের জীবন। সেখানে এটাই ‘স্বাভাবিক’। তবু ভিতরে ভিতরে জমতে থাকে ভয়-ক্ষোভ-অবসাদ।

সম্প্রতি নারী-কলমে উঠে এসেছে সেই অভিজ্ঞতাই। একটি মার্কিন দৈনিক সৌদি আরবের মহিলাদের কাছে তাঁদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। লেখা পাঠিয়েছেন তিন হাজার জনেরও বেশি। সেই সব অভিজ্ঞতা নিয়েই তৈরি করা হয় প্রতিবেদনটি।

রিয়াধের বাসিন্দা ১৯ বছরের রুলা জানাচ্ছেন, একবার ট্যাক্সিতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা হয় তাঁর। গুরুতর চোট পেলেও তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি, যত ক্ষণ না তাঁর ‘অভিভাবক’ এসে সম্মতি দিচ্ছেন। ৪২ বছরের সারা পেশায় চিকিৎসক। জানাচ্ছেন, কোথাও যাওয়ার হলে প্রতিবার তাঁকে তাঁর কিশোর ছেলের থেকে অনুমতি নিতে হয়। 

এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি দেখেছেন ২৮ বছরের আল কাহাতনিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘স্বামীর অনুমতি না নিয়ে বইয়ের দোকানে যাওয়ার অপরাধে আমার বোনকে তাঁর স্বামী পৈশাচিক ভাবে মারধর করে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বছর তেইশের এক তরুণী জানাচ্ছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। বাবার সঙ্গে সমস্যার জেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে সৌদির মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে পুলিশের কাছে যেতে বলা হয়। পুলিশের কাছে গিয়ে তিনি দেখেন, ইতিমধ্যেই বাবাই তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। এবং মেয়েটির কথা না শুনেই তাঁকে জেলে পুরে দেওয়া হয়।

সৌদি আরবের মহিলাদের নিজেদের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার অধিকার নেই। ১৯ বছরের বাশারের কথায়, ‘‘এই জন্যই আরবের বেশির ভাগ মেয়েরা কুড়ির আগেই বিয়ে করতে চায়। বিয়ে করে বাপের বাড়ির কঠোর শাসন থেকে মুক্তি পেতে চায়। কিন্তু বিয়ের পরে বুঝতে পারে, আরব সমাজে পুরুষ মাত্রই হাতকড়া।’’ 

রিয়াধের বাসিন্দা ২১ বছরের ডিনা জানাচ্ছেন, তাঁর স্বামী তাঁর মায়ের সঙ্গে পর্যন্ত তাঁকে কোথাও যেতে দিতে চান না। টাকার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও চাকরি করার অনুমতি নেই তাঁর। অথচ তাঁর স্বামীও তাঁর কোনও চাহিদা পূরণের ব্যাপারে যত্নবান নন। তাঁর কথায়, ‘‘যেন মনে হয় একটা মিথ্যে জীবনে বাঁচছি।’’

তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা-ও নয়। সামাজিক অনুশাসনের বাইরে গিয়ে বাড়ির মেয়েটিকে এগিয়ে দিতেও চান অনেক পুরুষ অভিভাবকও। মধ্য বয়সি আবিরের কথায়, ‘‘ভাগ্য করে এমন বাবা ও ভাইদের পেয়েছি, যাঁরা আমার ইচ্ছেকে কখনও বাধা দেননি।’’ ২২ বছরের লতিফাও জানিয়েছেন, ‘‘বাবা ইসলাম ধর্মকে ভিতর থেকে বুঝেছেন। তাঁর জন্যই আমার বিদেশে পড়তে আসা সম্ভব হয়েছে।’’

এই সব ব্যতিক্রমীর হাত ধরেই ক্রমশ বদলাচ্ছে সমাজ। শামুক গতিতে হলেও। উঠে আসছেন অসংখ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার তরুণী। পুরুষের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন তাঁরাও। গত সাত বছরে অনেকটাই এগিয়েছে আরব। আরও একটু ধৈর্য আর সুযোগের অপেক্ষা শুধু। সে দিকেই তাকিয়ে সৌদি আরবের ‘অর্ধেক আকাশ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published.