পৃথিবী

ইসরাইলকে মিনি সুপার পাওয়ার বলার পেছনে কি কারন রয়েছে?

একাই ৬ টি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে আছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের সিংহ বলা হয় এই ছোট্ট দেশটিকে। ৬ টি ইসলামিক দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় পাওয়ার পর রীতিমতো ঘুম উড়েছে সেই দেশ গুলির। আমেরিকার অস্ত্র সরঞ্জাম প্রচুর পরিমানে থাকার ফলে বাকি দেশ গুলির থেকে অনেক বেশী এগিয়ে রয়েছে, তবে শুধু আমেরিকার অস্ত্রশস্ত্র নয় পাশাপাশি দেশটির নিজেদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের কারনে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ২৭ হাজার কিলোমিটারের এই দেশটিতে রীতিমতো নিজেদেরকে শক্তিশালী হিসাবে প্রমান করেছে। জানলে অবাক হবেন যে ইসরায়েলে প্রচলিত রয়েছে যে তারা এতো শক্তিশালী হওয়ার পেছনে আসলে ঈশ্বরের হাত রয়েছে। আর সেই কারনে প্রতিবছর তারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রচুর চিঠি লিখে থাকেন। প্রতিবছর জেরুজালেমের ডাক বিভাগে এরকম অনেক চিঠি আসে যেখানে প্রাপকের নামের জায়গায় লেখা থাকে ঈশ্বর।

১৯৪৮ সালে দেশটি প্রতিষ্ঠা হলেও তার ঠিক ৩ দশক আগেই ইহুদিরা জেরুজালেমে “দ্য হিব্রু ইউনিভার্সিটি অফ জেরুজালেম” প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। উচ্চশিক্ষার জন্য ইহুদিদের এই বিশ্ববিদ্যালয় বাকি দেশ গুলি থেকে তাদেরকে অনেক আলাদা করে তুলেছে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়য়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩ হাজার।

প্রযুক্তি এবং গবেষণার উপর ভিত্তি করে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি পৃথিবীর যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয় নয় এর পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রচুর এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিদ্যার মান যথেষ্ট প্রশংসনীয়। আসলে শেষ ৪ দশকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিই ইসরায়েলকে এতো শক্তিশালী দেশ হিসাবে পরিনত করতে সাহায্য করেছে।

ইসরায়েলের এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে শুধু শিক্ষা দেওয়া হয় বললে ভুল করা হবে, পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠান গুলি সফল পেশাদার উদ্যোক্তা তৈরিতেও বিরাট বড় ভূমিকা পালন করছে। এতো যুদ্ধের পরিবেশের মধ্যেও ইসরায়েলে ৪ হাজারের বেশী প্রযুক্তি নির্ভর কারখানা গড়ে উঠেছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পরা দেশ গুলির সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে যে ইসরায়েলের থেকে তারা ভীষণভাবে পিছিয়ে পড়েছে। ইসরায়েলের সাথে টক্কর দেওয়ার মতো ইসলামিক দেশের সংখ্যা খুবই কম। 

পৃথিবীর ড্রোন টেকনোলোজির আঁতুড় ঘর হিসাবে পরিচিত ইসরায়েল ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম নজরদারি ড্রোন আবিস্কার করে ইতিহাস সৃষ্টি করে।

ইসরায়েলের মতো একটি ছোট্ট দেশ হওয়া সত্ত্বেও সামরিক অস্ত্রের উন্নতি দেখে রীতিমতো অবাক হতে হয় গোটা বিশ্বকে। শুধু তাই নয় তাদের অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা দেখে সমীহ করে চলে গোটা পৃথিবী। ২৭ হাজার কিলোমিটারের একটি দেশ হলেও তাদের তৈরি মেইন ব্যাটল ট্যাংক এবং বিশ্ব মানের আয়রন ডোম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, কমব্যাট ড্রোন সবাইকে অবাক করে। পাশাপাশি শুনলেও অবাক হবেন যে ইসরায়েলের টেকনোলোজি ব্যবহার করেই বিশ্বের সুপার পাওয়ার আমেরিকা। ইসরায়েলের প্রত্যেক নাগরিককে সেনা প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ দেশটির সর্বমোট জনসংখ্যাই হল দেশটির সৈন্য সংখ্যা। দেশের প্রত্যেক নাগরিককে কমপক্ষে ২ বছর ট্রেনিং নেওয়া বাধ্যতামূলক(ছেলেদের ৩ বছর, মেয়েদের ২ বছর)।

ইসরায়েলের তিনবাহিনীই যথেষ্ট শক্তিশালি। তাদের নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং স্থলবাহিনী নিয়ে একটি বাহিনীর অন্তর্গত ধরা হয়। তাদের এই সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠিত করা হয় ১৯৪৮ সালের ২৬ মে। এই বছরেই আরবের সাথে যুদ্ধের সময় সাধারন নাগরিককে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। পাশাপাশি ইসরায়েলের সংগঠন হাগানাহ, ইরগান ও লেহির সদস্যপদে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়, আর তার প্রধান কারণ ছিল যে তারা অনেক গুলি যুদ্ধে এই একই সময় জড়িয়ে পড়েছিল।

ইসরায়েলের সাথে পৃথিবীর বাকি দেশ গুলির যুদ্ধাস্ত্রের অনেক পার্থক্য রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তাদের মেইন ব্যাটেল ট্যাঙ্ক। মেশিনগান, অ্যাসল্ট রাইফেল। তবে তাদের এই যুদ্ধাস্ত্রের জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করে আমেরিকা। সবথেকে উল্লেখযোগ্য খাত হচ্ছে এফ-১৫১ জেট বিমান, টিএইচ।

আধুনিক যেকোনো ধরণের টেকনোলোজি তৈরি করতে সবার থেকে এককদম এগিয়ে থাকে ইসরায়েল। চীনের যুদ্ধাস্ত্র সারা বিশ্ব জুড়ে ব্যবহার করছে তার প্রধান কারণ হল কম দামে জিনিস ব্যবহার করতে পারছে, কিন্তু নতুন প্রযুক্তি তৈরি বা গবেষণার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সামনে কোনও দেশই নেই। গুগলের নতুন প্রযুক্তির প্রচুর জিনিস এই ইসরায়েলের প্রযুক্তিবিদরা তৈরি করছে। আমেরিকার মাইক্রোচিপ তৈরি করা কোম্পানি ইন্টেল যা গোটা পৃথিবীর সবথেকে বড় প্রসেসর তৈরির কারখানা তারাও ইসরায়েলের দিকে চেয়ে বসে থাকে। ইসরায়েলের ইন্টেল কারখানায় প্রায় ১১ হাজারের ও বেশী প্রযুক্তিবিদ, আইটি কর্মী কাজ করেন, যা বর্তমানে দেশটির সবথেকে বড় কারখানা। শুধু তাই নয় জানলে অবাক হবেন যে মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানি আমেরিকান হলেও ইসরায়েল থেকেই আসে বেশীরভাগ জিনিস, অর্থাৎ উইন্ডস সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের জন্য ইসরায়েলের কর্মীদের প্রচুর অবদান রয়েছে।

শুনতে অবাক লাগলেও ইসরায়েলের আয়ের একটা বিরাট অংশ আসে এই কোম্পানি গুলি থেকে। ফেসবুক বা আই বি এমের মতো কোম্পানি গুলির রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্টের উপর যে কাজ করা হয় এবং টেকনোলোজি ট্রান্সফারের ফলে যে আয় হয় তা ইসরায়েলের মতো জিডিপির ১২.৫ শতাংশকে ও ছাড়িয়ে যাবে।

মাত্র ৯৬ লক্ষ জনসংখ্যা নিয়ে ইসরায়েলের বর্তমান জিডিপি প্রায় ৪১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাশাপাশি তাদের মাথা পিছু আয় ৪৪,৪০০ মার্কিন ডলার, যদিও ইসরায়েলের জন্মের পর থেকেই তাদের উন্নয়নের জন্য আমেরিকার বিরাট অবদান রয়েছে। এখনও আমেরিকা ইসরায়েলকে প্রতিবছর ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সামরিক খাতে উন্নয়নের জন্য দিয়ে থাকে। তবে শুধু আমেরিকা নয় এর পাশাপাশি ইউরোপের বহু দেশ তাদের অনুদান দিয়ে থাকে যা কমপক্ষে ৩-৫ বিলিয়ন ডলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.