চীন

চারটি দ্বীপপুঞ্জকে নিয়ে আবারও ঝামেলা শুরু করেছে চীন

দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর চীনের লক্ষ্য যে বরাবরই সেকথা কারোরই অজানা নয়। আন্তর্জাতিক নিয়মের কোনোরকম তোয়াক্কা না করে ওই অঞ্চলের বাকি দাবিদারদের হঠিয়ে চিন যেভাবে ক্রমশ SCS রিজিয়নের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে তা রীতিমত অস্বস্তিতে ফেলছে সকলকেই। তবে, হালে এই SCS রিজিয়নের ওপর চীনের দাদাগিরি যেনো এক লাফে বেড়ে গেছে আরো অনেকটা। নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে চিন যেভাবে তথাকথিত ‘নাইন-ড্যাশ লাইন’ থেকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে ক্রমে নিত্য নতুন আইনী তত্বের ওপর মনোযোগ দিচ্ছে তাতে এই অঞ্চলের সাথে জড়িয়ে থাকা ভারতের স্বার্থের জন্যেও ভবিষ্যতে এক নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে।

কয়েকদিন আগেই স্থানীয় সংবাদদাতাদের কাছে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ জানিয়েছেন যে, এসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এর সদস্য দেশগুলিও ইতিমধ্যে চীনের এই পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে। সাথে তার দাবি পুরোনো অবস্থার তুলনায় এবারের ঘটনা আরো অনেক বেশি গুরুতর।

চিন বর্তমানে দাবি করছে, দক্ষিণ চিন সাগরের বুকে অবস্থিত “ফোর শা” নামে পরিচিত ছোট চারটি দ্বীপপুঞ্জের ওপর নাকি তাদের রয়েছে এক “ঐতিহাসিক অধিকার”। আন্তর্জাতিকভাবে এই দ্বীপগুলো প্রাটাস দ্বীপপুঞ্জ, প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ, ম্যাকলসফিল্ড ব্যাঙ্ক এলাকা এবং স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত হলেও চীনের জনগণের কাছে দ্বীপগুলো ডংশা কুন্ডাও, জিশা কুন্দাও, ঝোংশা কুন্ডাও এবং নানশা কুন্দাও নামে পরিচিত।

ভারত বিভিন্ন দেশের সাথে জলপথে বাণিজ্যের জন্য অনেকাংশে নির্ভরশীল দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর। ফলে, এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তিবৃদ্ধি ভারতের বাণিজ্যের উপরেও ছায়া ফেলতে পারে। একই সাথে চীনের এই পলিসি ভিয়েতনামের সাথে ভারতের বন্ধুত্বতেও বড়সড় বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে।

পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভারত বারংবার বাকি দেশগুলিকে SCS রিজিয়ন ব্যবহার করে নৌচলাচল ও ওভারফ্লাইটের স্বাধীনতা বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছে।

দক্ষিণ চিন সাগরে মালয়েশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলের ওপর অধিকার ফলাচ্ছে চিন। ঠিক এই একই অবস্থা ব্রুনাই, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের ও। এই প্রত্যেকটি দেশই CSC রিজিয়নের কোনো না কোনো অংশের হকদার। অপরদিকে, ইন্দোনেশিয়া অবশ্য কোনোদিনই দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চলমান এই বিরোধের অংশ ছিলো না। তবুও, বেইজিং হঠাৎ করে ইন্দোনেশিয়ার নিজস্ব অর্থনৈতিক রিজিয়নের সাথে ওভারল্যাপ করে থাকা অঞ্চলগুলির ওপর নিজেদের ঐতিহাসিক অধিকার দাবি করতে আরম্ভ করলে হালফিলে বিষয়টি নিয়ে জাকার্তা এবং বেইজিংয়ের মধ্যে এক তীব্র বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে খবর প্রকাশ করা,বেনারনিউজ নামক এক নিউজ পোর্টাল হালে নিউ ইয়র্কের লং-আইল্যান্ডের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ ল-এর একজন অধ্যাপক জুলিয়ান কুকের একটি লেখা প্রকাশ করেছিল। দক্ষিণ এশিয়ার এই কুটনীতি বিশেষজ্ঞ লিখেছেন,দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর চীনের দাবি নিয়ে যারা সমালোচনা করেন তাদের জন্য নাইন-ড্যাশ লাইন সত্যিই একটি সহজ লক্ষ্য হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। একই সাথে দক্ষিণ চীন সাগরের সালিসি ট্রাইব্যুনালও ২০১৬ সালে এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

বেনারনিউজ সূত্রে জানা গেছে দক্ষিণ চীন সাগরের উপর বই লেখা বিখ্যাত সাংবাদিক এবং পণ্ডিত বিল হেটন বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ের মধ্যস্ততার পর থেকেই   “ফোর শা’ তত্ত্বটি ধীরে ধীরে উত্থিত হচ্ছে।

এই “ফোর-শা’ তত্ত্ব জিনিস টা ঠিক কি? বিল হেটনের মতে এটি হলো আইনী উপায়ে দক্ষিণ চীন সাগরের উপর চীনের নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করার এক উপায় মাত্র। চিন যেনো তেনো প্রকারে এখন নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য UNCLOS-এর মতো ন্যায্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা। উল্লেখ্য, এই UNCLOS হল জাতিসংঘের সমুদ্র সংক্রান্ত যাবতীয় আইনের প্রতিষ্ঠাতা।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দ্বারা প্রকাশিত ‘লিমিটস ইন দ্য সিস’ নামক প্রতিবেদনে আবার দক্ষিণ চিন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা প্রদর্শন নিয়ে সমস্ত তথ্য খুঁটিয়ে লেখা হলেও ,’ফোর শা’ তত্ত্বের কোনো উল্লেখ নেই এতে। কিন্তু, ডংশা, জিশা, ঝোংশা এবং নানশার উপর চীনের সার্বভৌমত্বের দাবি সম্পর্কে লেখা রয়েছে এতে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং- ই অবশ্য দাবি করেছেন যে তার দেশ কখনোই শক্তির অপব্যবহার করে না। একইসাথে আশেপাশের ছোটখাটো প্রতিবেশী দেশগুলির ওপর শক্তি প্রদর্শনের কথাও সরাসরি অস্বীকার করেছেন তিনি। বরং উল্টে, দক্ষিণ চীন সাগরে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন তিনি।

ফিলিপাইনে চীনা দূতাবাস দ্বারা আয়োজিত এক ভার্চুয়াল ফোরামে ওয়াং বলেছিলেন,শুধু এক পক্ষের  দাবির উপর জোর দেওয়া এবং অন্যের উপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া কখনোই প্রতিবেশী হিসাবে একে ওপরের সাথে কথা বলার সঠিক উপায় হতে পারে না এবং মানুষের একে ওপরের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত পুরোনো সেই প্রাচ্য দর্শনের ও বিরোধী এই আচরণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.