বিদেশেও রয়েছে ভারতবর্ষের বায়ুসেনা ঘাঁটি। কিন্তু কোন দেশে জানা আছে?
নিউজ ডেস্কঃ প্রতিটি দেশই নিজেদের স্বার্থে একাধিক গোপন সামরিক অভিযান চালান। কিছু কথা সামনে এলেও প্রচুর খবর গোপনই থেকে যায় চিরজীবন। এরিয়া ৫১। এই স্থানটিতে কি হয়? আজ পর্যন্ত কারও পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। আমেরিকার এই এরিয়া ৫১ নিয়ে কৌতূহল কম নেই। সেখানকার খবর আজ পর্যন্ত বাইরে বের হয়নি। জীবিত কোনও ব্যাক্তি সেখানে গেলে আর জীবিত হয়ে ফিরে আসেনি। ঠিক তেমনই ভারতবর্ষের ও রয়েছে বেশ্ব কিছু সামরিক ঘাটি। যা নিয়ে একাধিক দেশ বিস্ময় প্রকাশ করেছে, সেখানে কি হয় তা নিয়ে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ না করা হলেও একাধিক দেশ একাধিক মতামত প্রকাশ করেছে।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ:
বর্তমানে এখানে প্রচুর সেনা মোতায়েন করা হয়েছে চীনকে চাপে রাখতে। পাশাপাশি এখানে বহু বছর ধরেই ভারতীয় সেনার আনাগোনা রয়েছে। দেশের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে থাকা এই দ্বীপপুঞ্জে অনেকেই বেড়াতে যান। ভারতের কেন্দ্রীয় শাসিত এই অঞ্চলে রয়েছে কমবেশি ৫০টি দ্বীপ। যার মধ্যে মাত্র ৩৪টিতে সাধারণ মানুষের যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। সূত্রের মতে এখানকার কোন এক দ্বীপেই রয়েছে ভারতের গোপন সামরিক ঘাঁটি। ভারতের গোপনতম ট্রাই-সার্ভিস কমান্ডের কমান্ড পোস্টও নাকি এখানেই এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
আশির দশক থেকেই এখানে গোপন সামরিক ঘাঁটির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বঙ্গোপসাগরের বুকে এই দ্বীপপুঞ্জ বর্তমানে কূটনৈতিক দিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চীনের মাথা ব্যাথার এক বড় কারন হল এই দ্বীপপুঞ্জ।
বরেলি বিমানবাহিনীর ঘাঁটি
একসময় পাকিস্তানের আকাশে রীতিমতো দাদাগিরি করে বেড়িয়েছে ভারত। আর পাকিস্তানের কিছু করার ক্ষমতা ছিলনা, কারন সেসময় ভারতের কাছে পাকিস্তানের থেকে অনেক উন্নত যুদ্ধাস্ত্র থাকার পাশাপাশি Mig-25 Foxbat র মতো সর্বচ্চ গতিবেগের যুদ্ধবিমান ছিল। যা এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবথেকে দ্রুততম এয়ারক্রাফট। শত্রুরা তো দূরে থাক ভারতেরও কেউই জানতেন না। যেদিন এই এয়ারক্রাফটের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, সেদিনই এটি জানা যায়। আন্তর্জাতিক মহলের মতে এয়ারক্রাফট গুলি থাকত বরেলি বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে।
এই এয়ারবেস এতটাই গোপনীয়তার সাথে রাখা হয়েছিল যে এখান থেকে কোন যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করতে দেখেনি কেউ। উত্তরপ্রদেশের বরেলি থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তরে ইজ্জতনগরের কাছে এক জনমানব শূন্য স্থানে অবস্থিত এই ত্রিশুল এয়ার বেসটি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর গোপনতম ঘাঁটি এটি। এখানেই রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম আন্ডারগ্রাউন্ড এয়ারক্রাফট হ্যাংগার। কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকজন উচ্চপদস্থ আধিকারিকই কেবল যেতে পারেন এখানে। বর্তমানে এই এয়ারবেসে Su-30Mki ও হেলিকপ্টার ইউনিট রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
হুইলার আইল্যান্ড, ওড়িশা
নিরাপত্তার কারনে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহন করে থাকে ভারতীয় সেনা।আর ঠিক সেই কারনেই এই দ্বীপ তৈরি করা হয়েছে। ওড়িশার ভুবনেশ্বর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপ, যেটি তৈরি করেছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম। এই স্থান থেকেই একাধিক মিসাইল পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। আজ পর্যন্ত বহু লং রেঞ্জের মিসাইল এই স্থান থেকেই পরীক্ষা করা হয়েছে। ভারতের পূর্ব উপকূল থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত এই দ্বীপটি। একমাত্র জাহাজ ছাড়া আর কোনও ভাবে এই দ্বীপে যাওয়া সম্ভব নয়। মূল ভূখণ্ডের সাথে কোনও ব্রিজ বা বিমান যোগাযোগের ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। একটা ছোট হেলিপ্যাড থাকলেও মিসাইল বা অন্যান্য যাবতীয় জিনিস জাহাজেই নিয়ে যাওয়া হয়।
চরবেতিয়া এয়ারবেস, কটক
ভারতের গুপ্তচর সংস্থা RAW(রিসার্চ অ্যান্ড আনালিসিস উইংস)- কে এরিয়াল সাপোর্ট দেয় বেশ কিছু আধুনিক যুদ্ধবিমান। Aviation Research Centre(ARC)-র অধীনে রয়েছে এই বিমান গুলি। তবে প্রশ্নের বিষয় হল এই যে কোন স্থান থেকে সেইসব সুপার -সিক্রেট এয়ারক্রাফট চালানো হয়? আজ পর্যন্ত কারও পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এটি চরবেতিয়া এয়ারবেস। ওড়িশার কটক থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই বেসটি।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে থেকেই চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়তে ভারতকে গোপনভাবে বিশেষ সাহায্য করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। আর সিআইএ এই Aviation Research Centre(ARC) গঠন করতে সাহায্য করে। এরপর চীনের কূটনৈতিক চাল নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে ভারত ও মার্কিন সংস্থা সিআইএ উভয়েই এই এয়ারবেস ব্যবহার করতে শুরু করে।
ফারখোর এয়ারবেস, তাজিকিস্তান:
নামটা শুনেই অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই? আসলে আফগানিস্থান যে ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র তা অনেকেরই জানা। তবে কেন এই দেশ বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত পেল? তা অনেকেরই জানা নেই। ভারতের এয়ারবেস কেন তাজিকিস্তানের মতো স্থানে থাকবে! এই নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন।
১৯৯০ সাল নাগাদ যখন তালিবানের হত্যালীলায় বিধ্বস্ত আফগানিস্তান, তখন বন্ধু দেশ হিসেবে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। আফগানিস্তানের গেরিলা বাহিনী অর্থাৎ ‘আফগান নর্দার্ন অ্যালায়েন্স’ কে সাহায্যের বার্তা দেয় ভারতবর্ষ। তবে আফগানিস্তানে ঢোকা, একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ভারতীয় আর্মিদের জন্য। আর সেই কারনে সোভিয়েত ইউনিয়নের থেকে ভেঙ্গে তৈরি হওয়া দেশটি তাজিকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতা করতে শুরু করে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা RAW।
আফগানিস্তানে অস্ত্র পৌঁছে দিতে সেখানকার ফারখোস এয়ারবেস ব্যবহার করার জন্য সেই দেশটিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে, RAW এই এয়ারবেস ব্যবহারের সুবিধা বুঝতে পারে। আর একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এয়ারবেসটি ভালো অবস্থায় না থাকার কারনে ভারত সরকার সেখানে ১ কোটি ডলারে বিনিয়োগ করে সেই এয়ারবেস পুনর্নির্মাণ করে। ভারত বর্তমানে Mig-29 UPG ও Su-30Mki র মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান গুলি ব্যবহার করে এই এয়ারবেস থেকে। এই এয়ারবেস পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ভারতের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
একসময় পারভেজ মোশারফ এই এয়ারবেস নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে ‘ভারতের ফারখোর এয়ারবেস সত্যিই আতঙ্কের বিষয় পাকিস্তানের কাছে। এই এয়ারবেস থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তানের আকাশে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ঢুকে পড়তে পারে।