উইনস্টন চার্চিল বর্নবিদ্বেষী ছিল যার মানে সে সাদা চামড়ার লোকেদের কালো চামড়ার লোকেদের থেকে বেশী গুরুত্ব দিত
রাজেশ রায়:– সময়টা তখন ১৯৪৩ সাল, গোটা বিশ্ব তখন প্রানঘাতী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করছিল। সেসময় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিক চলছিল এবং তখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিল উইনস্টন চার্চিল। চার্চিল সেই ব্যাক্তি যে তার সেনাদের খাদ্য জোগাতে ৩০ লাখ ভারতীয়কে হত্যা করেছিল। এটা হিটলারের হলোকাস্টের থেকে কোন অংশে কম ছিলনা কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্ব শুধু হিটলারের হলোকাস্টকেই বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে নৃশংস ঘটনা বলে। হ্যাঁ এটা ঠিক অত্যাচারের কোন তুলনা হয় না। ব্রিটিশ শাসনে ভারতে কোটি কোটি ভারতবাসী অত্যাচারিত হয়েছে এবং লাখা লাখ নিরাপরাধ ভারতীয়কে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু এর পরেও ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা বরং ব্রিটিশরা গর্ব করে জানিয়েছে তারা ভারতীয়দের সভ্য বানিয়েছে! পশ্চিমা বিশ্ব বোধ হয় ভুলে গেছে তারা যখন জঙ্গলে থাকত তখন ভারতীয়রা নগর গঠন করেছিল। ইউরোপের মানুষ যখন ঘর তৈরি করতে পারতনা ভারতে তখন চোল সাম্রাজ্যে একের পর এক আধুনিক নগর তৈরি হচ্ছিল। যদি উদাহারন স্বরূপ তামিলনাড়ুর বিহদেশ্বরা মন্দিরের কথা বলা যায়।
১০০৩ সালে তৈরি এই মন্দির এক অসাধারন ইন্জিনিয়ারিং কীর্তি। ২১৬ ফুট লম্বা এই মন্দিরের একদম চূড়ায় যে পাথরটা আছে তার ওজন ৮০ টন! ভাবুন তখনকার দিনে কোন ক্রেন ছিলনা তাও এত উঁচুতে এত বিশাল ওজনের পাথর স্থাপন করা সত্যিই অসাধারন স্থাপত্যকার্য। শুধু এটাই নয় গোটা ভারত জুড়ে এমন অসংখ্য স্থাপত্যশিল্প পাওয়া যাবে। ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন ও রহস্যময় ধর্মগ্রন্থ বেদে এমন এমন তথ্য আছে যা আধুনিক বিজ্ঞান এখন আবিষ্কার করছে। সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারত জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত। যদি ভারতের সোনালী ইতিহাসের কথা লিখতে শুরু করা হয় তাহলে বোধহয় একটা মহাকাব্য হয়ে যাবে সুতরাং জঙ্গলে থাকা পশ্চিমা লোকেরা ভারতকে সভ্যতা শিখিয়েছে এটা শুনলেও হাসি পায়। ১৯৪৭ সালের আগে ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসন ভারতে এক অন্ধকারময় যুগ ছিল। এই ২০০ বছরে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শারীরিক ভাবে শোষন করেছে। ১৭৫৭-১৯৪৭ এর মধ্যে ব্রিটিশ শাসনে অন্তত ১.৮ বিলিয়ন ভারতীয় মারা গেছে অত্যাচারের শিকার হয়ে। শশী থারুর আল জাজিরাতে লেখা একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে ১৮৫৭-১৯৪৭ এর মধ্যে ব্রিটিশদের অত্যাচারে ৩৫ মিলিয়ন ভারতীয়র মৃত্যু হয়েছে। হিটলার ইউরোপজুড়ে প্রায় ৬০ লাখ ইহুদীকে হত্যা করেছিল যা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে কুখ্যাত। কিন্তু ব্রিটিশরা ভারতে থেকে যে অত্যাচার করেছিল তা হলোকাস্টের থেকেও ভয়াবহ কিন্তু আজ এই ঘটনা অতটা মনে করা হয়না। এইরকমই একটি বর্বর ঘটনা ব্রিটিশদের তৈরি বাংলার দুর্ভিক্ষ। ১৮০০ সালের পর ভারতে অনেক দুর্ভিক্ষ হয়েছে কিন্তু ১৯৪৩ সালের এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সম্পূর্ণ ব্রিটিশদের দ্বারা সৃষ্ট ছিল। উইনস্টন চার্চিল হিটলারের থেকে কোন অংশে কম ছিলনা। এসম্পর্কেই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ইউরোপীয়ানরা হিটলারের হলোকাস্টকেই সবসময় প্রচার করে এসেছে এবং ভারতের এই দুর্ভিক্ষকে প্রাকৃতিক ঘটনা বলে চালিয়েছে সবসময় কিন্তু তাও চার্চিলকে দোষী বলা হয়নি। এছাড়া ইউরোপীয়ানরা ভারতকে সবসময় তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলে কিন্তু সোনে কী চিড়িয়া বলা ভারত কেন তৃতীয় বিশ্বের দেশ হল এটা সম্পর্কে আমাদের ইতিহাস বইয়ে কতটুকু আলোচনা করা হয়? উৎসব পটনায়েক সহ বেশ কিছু শিক্ষিত ভারতীয়ই কেবল এবিষয়ে বারবার আলোচনা করেন। আজও অর্ধেক ব্রিটেনবাসী মনে করে ভারতের উন্নতি ব্রিটিশদের জন্যই হয়েছে! কিন্তু বাস্তব পুরো এর বিপরীত, ব্রিটিশদের লুঠের কারনেই ভারত আজ তৃতীয় বিশ্বের দেশ। হিটলার কেমন অত্যাচারী ছিল কিংবা উইনস্টন চার্চিল কতটা ভারত বিরোধী ছিল এসব তো পরের ব্যাপার, প্রথমে মনে রাখা দরকার সেসময় জার্মানিতে একনায়কতন্ত্র ছিল কিন্তু ব্রিটেনে গনতন্ত্র ছিল। হিটলারের লক্ষ্য ছিল ইহুদিদের হত্যা করা কিন্তু চার্চিল সুযোগ থাকা সত্বেও লাখ লাখ ভারতীয়কে দুর্ভিক্ষে ছেড়ে দিয়েছিল। উইনস্টন চার্চিল ও অ্যাডলফ হিটলার দুজনেই গনতান্ত্রিক ভাবে রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচিত হয় কিন্তু পরে হিটলার নীতি পরিবর্তন করে ডিক্টেটরশিপ চালু করে।
উইনস্টন চার্চিল বর্নবিদ্বেষী ছিল যার মানে সে সাদা চামড়ার লোকেদের কালো চামড়ার লোকেদের থেকে বেশী গুরুত্ব দিত। আজও ইউরোপ ও আমেরিকাতে বর্নবিদ্বেষ আছে। আমেরিকার আদি অধিবাসী ছিল রেড ইন্ডিয়ানরা এবং অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসী ছিল কালো চামড়ার লোকেরা। ইউরোপীয়নরা তাদের দেশ দখল করে, তাদের অত্যাচার ও হত্যা করে আজ সেখানে তাদের প্রভাব বাড়িয়েছে। এপ্রসঙ্গে ১৯৩৭ সালে চার্চিল বলেছিল এসব লোকেদের সাথে যা হয়েছে ঠিকই হয়েছে কারন সাদা চামড়ার লোকেরা অনেক বেশী বুদ্ধিমান। দি এন্ড অফ গ্লোরির লেখক জন চার্লি জানিয়েছে চার্চিলের কাছে সবচেয়ে আগে ছিল সাদা চামড়ার প্রোটেস্টেন্ট খ্রিস্টানরা, এরপরে সাদা চামড়ার ক্যাথলিক খ্রিস্টান এবং তারপরে ভারতীয় ও আফ্রিকানরা ছিল। বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন বলেছেন যোগ্যতমের উদ্বর্তন অর্থাৎ যারা পরিবেশের সাথে টিকে থাকতে পারবে তারাই রাজত্ব করবে। চার্চিল ব্রিটেনকে ও নিজেকে সবচেয়ে বড় যোগ্য মনে করত। হিটলারও বর্ণবিদ্বেষী ছিল।