ভারত

স্বাধীনতা লাভের পর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন সর্দার পাটেল! জানুন বিস্তারিত

নিউজ ডেস্কঃ ব্রিটিশ আমল থেকেই চলে আসছে ভারতে চরম অপরাধের শাস্তি হিসাবে ফাঁসির সাজা। ভারতের বর্তমান সময়ও  এই নিয়মের ব্যাতিক্রমী নয়। যার ফলে এই দেশে বহু মানুষেরই ফাঁসি হয়েছে। কিন্তু স্বাধীন ভারতে প্রথম কাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল এবং  কোন অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল?  এই অপরাধ করার পিছনে কি ছিল কারন?   

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর প্রথম এই দেশের মাটিতে  ফাঁসির সাজা কার্যকারী হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ১৫ই নভেম্বর। এই দিন এক জন নয় হয়েছিল একসাথে দুই জনের  ফাঁসি । নভেম্বরের ১৫ তারিখে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল নাথুরাম গডসে ও নারায়ন আপ্তে। ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি গান্ধীকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন নাথুরাম গডসে।  মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার দায়ে ফাঁসির সাজা হয়েছিল  এই দুই ব্যক্তির।

নাথুরাম গডস  গান্ধীকে  হত্যা করার পর সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেননি। কারণ তিনি চেয়েছিলেন যে দেশবাসী যেন জানতে পারে তার এই জঘ্ন্য হত্যা করার কারণ। আদালতে তাঁর বিচার চলাকালীন সময় গান্ধীকে হত্যা করার পেছনে তিনি দুটো একটা নয়, জানিয়েছিলেন মোট ১৫০ টা কারণ। কিন্তু  সেই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতে দেয়নি সেই সময়কার কংগ্রেস সরকার। তবে নাথুরামের দাদা গোপাল গোডসের দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর তা প্রকাশ পায়। এই কারনগুলি মধ্যে অন্যতম কয়েকটি কারন হল – 

১) ১৯১৯ সালে যখন জালিওয়ান ওয়ালাবাগের গণহত্যাকারী জেনেরাল ডায়ারের শাস্তি চেয়েছিল গোটা দেশ,  কিন্তু গান্ধীজি খারিজ করে দেয় সেই দাবীকে।

২)  দেশবাসী চেয়েছিল যে ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী  ভগত সিং, সুখদেব এবং রাজগুর ফাঁসি আটকাতে হস্তক্ষেপ করুক গান্ধীজি,  কিন্তু তিনি তা করেননি। এক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য ছিল যে এরা  পথভ্রষ্ট বিপ্লবী এবং  এদের পথ সন্ত্রাসের, এই জন্য চরমপন্থীদের ফাঁসি আটকাবেন না তিনি।

৩)  ১৯৪৬ সালের ৬ই মে দেশের নানা প্রান্তে যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হচ্ছে, সেই সময় হিন্দুদের উদ্দেশ্যে গান্ধী বলেছিলেন যে এই দাঙ্গায় তারা যেন  নিজেদের বলিদান দেয় এবং মুসলিম লিগের লোকেদের বিরুদ্ধে লড়াই না করে।

৪)  তিনি  বিভিন্ন সময় দেশের যোদ্ধা শিবাজি মহারাজ, রাণা প্রতাপ এবং গুরু গোবিন্দ সিংকে পথ ভ্রষ্ট ভারতীয় বলে উল্লেখ করেছিলেন।

৫) কাশ্মীরের রাজা হরি সিংকে তিনি নির্দেশ দেন কাশ্মীর ছেড়ে হরিদ্বারে চলে যাওয়ার।  কারণ কাশ্মীরে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ট ছিল। অপরদিকে হায়দ্রাবাদের (বর্তমানে তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্র প্রদেশ) নিজাম ওসমান আলি খানকে নির্দেশ দেন পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার, তবে সেখানে হিন্দুরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ট  এবং মুসলিমরা ছিল সংখ্যালঘু। কিন্তু সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল গান্ধী এবং নেহেরুর কথা অমান্য করে  নির্দেশ দিয়েছিলেন হায়দ্রাবাদের অভিযান চালানোর এবং ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন হায়দ্রাবাদকে যা ইতিহাসের পাতায় অপারেশন  পোলো নামে পরিচিত। 

৬) ১৯৩১ সালে কংগ্রেস কমিটিতে সর্ব সম্মতিতে ভারতের পতাকার রঙ ঠিক করা হয় গেরুয়া, কিন্তু গান্ধীর নির্দেশে তার মধ্যে যোগ করা হয় সবুজ রঙকে।

৭) ত্রিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু কিন্তু গান্ধীজি নিজের ক্ষমতার জোরে সভাপতি বানিয়েছিলেন তাঁর অনুগত পট্টভি সিতারামাইয়াকে এবং ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছিলেন নেতাজীকে।

8) ১৫ই আগস্ট  ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস ঠিক করে যে ভারত বিভাজনের বিরোধীতা করবে তারা। কিন্তু সেই সভায় গান্ধীজি  পৌঁছান একদম শেষ মুহূর্তে এবং তিনি সমর্থন করেন দেশ ভাগের। তবে  এর আগে গান্ধী নিজেই বলেছিলেন যে দেশ ভাগ তার লাসের ওপর দিয়ে হবে।

৯) ভারত স্বাধীনতা লাভের পর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন সর্দার পাটেল, কিন্তু গান্ধীর নির্দেশে  প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়েছিল নেহেরুকে।

১০) সরকার গড়ার পর নেহেরু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে ভারত সরকার আবার নির্মান করবে সোমনাথ মন্দির, কিন্তু সরকারে না থেকেও সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করিয়েছিলেন গান্ধী। অন্যদিকে ঠিক সেই সময় ১৮৪৮ সালের ১৩ই জানুয়ারি  সরকারি টাকায় দিল্লীর মসজিদ নির্মানের জন্য অনশনে বসেন তিনি  এবং তিনি সেই দাবী মানতে বাধ্য করেছিলেন।

১১) দেশ ভাগের পর বাংলাদেশ এবং  পাকিস্তান থেকে আসা বহু হিন্দুরা আশ্রয় নিয়েছিলেন মসজিদে। স্থানীয় মুসলিমদের আপত্তি করার কারনে তাদের সেখান থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন গান্ধী । যার ফলে রাস্থায় দিন কাটাতে বাধ্য হয়েছিল তারা।

১২) ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে যখন পাকিস্তান কাশ্মীরে হামলা করে তখন গান্ধী  পুনরায় অনশনে বসেন ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এবং ৫৫ কোটি টাকা পাকিস্তানকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছিল ভারত সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.