ভারত

ভারতবর্ষের সামরিক শিল্পের পরিকাঠামো তৈরি করার পথে ফ্রান্স!

নিউজ ডেস্কঃ রাফালে নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি, তবে রাফালে হাতে আসার পর যে বায়ুসেনার ক্ষমতা একলাফে অনেকটা বেড়ে গেছে তা বলাই বাহুল্য। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বায়ুসেনার চাহিদা অনুসারে সরকারের দীর্ঘদিনের টালবাহানার পর ফ্রান্স থেকে ৩৬ টি অত্যাধুনিক রাফালে যুদ্ধবিমান ক্রয় করার চুক্তি হয়। সেই চুক্তি হয় ৭.৮৭ বিলিয়ন ইউরো তে। এই চুক্তির মধ্যেই রয়েছে প্রায় তিন বিলিয়ন ইউরোর অফসেট, যেগুলি ২০২৪ এর মধ্যেই ফ্রান্স ভারতে সামরিক শিল্প পরিকাঠামো গঠনে খরচ করবে,রয়েছে এয়ারবেস এ নতুন রান‌ওয়ে নির্মাণ, নতুন হ্যাঙ্গার তৈরী,দশ বছরের রক্ষনাবেক্ষন প্যাকেজ,যুদ্ধাস্ত্র প্যাকেজ এবং সর্বশেষে ৩৬ টি রাফালে।

যে কটি দেশ রাফালে ব্যবহার করে,তাদের মধ্যে ভারতীয় এবং কাতারের রাফালে তুলনামূলক বেশি আধুনিক। ভারতীয় রাফালেতে হেলমেট মাউন্টেড সাইট ও টার্গেটিং সিস্টেম রয়েছে,যা সহজেই পাইলটকে শত্রুর টার্গেটকে ধংস করতে সাহায্য করে। ভারতীয় রাফালে কে বিশেষ ভাবে আপগ্রেড করা হয়েছে, যে আপগ্রেডেশন কাতারের রাফালেতেও হয় নি। ভারতীয় রাফালে কে নিউক্লিয়ার স্ট্রাইক ক্ষমতাসম্পন্ন করা হয়েছে এবং এটিকে যাতে সহজেই হাই অল্টিটিউড এরিয়া থেকে টেক অফ করানো যায়,সেভাবে আপগ্রেড করা হয়েছে।

ভারতীয় রাফালে তে কি কি যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে?

রাফালের খালি অবস্থায় ওজন দশ টন। অর্থাৎ কোন ধরনের এক্সটারনাল(বাইরের) পেলোড না নিলে,রাফালের ওজন হয় দশ টন। কিন্তু রাফালের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল,এটি নিজের ওজনের সমান পেলোড বহন করতে পারে। অর্থাৎ এর চৌদ্দটি হার্ডপয়েন্ট দিয়ে এটি দশ টন পেলোড বহন করতে পারে। চৌদ্দটি হার্ডপয়েন্ট এর মধ্যে পাঁচটি হার্ড পয়েন্ট দিয়ে এটি ড্রপ ট্র্যাঙ্ক অথবা হেভী অর্ডিন্যান্স বহন করে। রাফালের এই অসাধারণ বহন ক্ষমতা একে অন্যান্য যুদ্ধবিমানের থেকে আলাদা করে এবং একে সহজেই এক‌ই সাথে এয়ার-টু-এয়ার অথবা এয়ার-টু-গ্রাউন্ড অপারেশন চালানোর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধবিমান করে তোলে। আর তাই একে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ওমনিরোল এয়ারক্রাফ্ট হিসাবে পরিগণিত করা হয়।

ভারতীয় রাফালের সাথে কি কি যুদ্ধাস্ত্র আছে?? রাফালের যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে বেশ কিছু ব্যপার আছে

ভারতীয় রাফালের যুদ্ধাস্ত্র কে দুটো ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একটি হল নিশ্চিত যুদ্ধাস্ত্র, আরেকটি হল সম্ভাব্য

নিশ্চিত যেসব যুদ্ধাস্ত্র গুলি সম্পর্কে জানানো হয়েছে

MICA BVR মিসাইল : এটি খুবই অত্যাধুনিক একটি মিসাইল, যেটিকে এক‌ই সাথে শর্ট রেঞ্জ এ (WVR) এবং মিডিয়াম রেঞ্জ এ (BVR) অপারেশন এ সহজেই ব্যবহার করা যায়। এটির সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৮০ কিলোমিটার। এটি পৃথিবীর একমাত্র অ্যাক্টিভ থাকা এয়ার টু এয়ার মিসাইল যেটির সিকার দুটি ভেরিয়েন্ট দুটি — অ্যাক্টিভ রাডার ও ইমাজিং ইনফ্রারেড। এর ফলে এটিকে সামনা সামনি ডগ-ফাইটে অথবা দুরের রেঞ্জের এয়ার কমবেটে দূর্দান্ত ভাবে ব্যবহার করা যায়। আসলে টেকনিক্যাল ভাবে এটি খুবই কার্যকরী মিসাইল। লংরেঞ্জ BVR মিশনে, এটি এর ফাইনাল স্টেজ এর সিকার টার্গেট কে লক করার আগে এটি নিষ্ক্রিয় বা প্যাসিভ মুডে চলে যায়। ফলে এর টার্গেট খুব কম সময়েই এফেক্টিভ ভাবে এর বিরুদ্ধে কাউন্টারমেজার গড়ে তুলতে পারে। আর তাই একে সাইলেন্ট কিলার বলা হয় । বর্তমানে রাফালে ছাড়াও ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ গুলিতে এই মিসাইল রয়েছে।

METEOR BVR মিসাইল : বলার প্রয়োজন নেই,তবে যদি কথা হয় এয়ার কম্বেট এর,তাহলে তার রাজা হল মিটিওর মিসাইল। এটি রকেট- র‍্যামজেট পাওয়ার মিসাইল, যেটি একে শুধু লংরেঞ্জ স্ট্রাইক ক্ষমতাই দেয় না, তার সাথে সাথে একে দ্রুত গতির এবং হাই ম্যানুভার মিসাইল হিসাবেই একে তুলে ধরে। পেছন থেকে ধাওয়া করে, টার্গেট কে ধংস করার ক্ষেত্রে এর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই পৃথিবীতে। এর নো-স্কেপ জোন (যে জোন থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব) পৃথিবীর অন্য যে কোন ট্রু-বি.ভি.আর মিসাইল থেকে বেশি। এর অফিশিয়াল রেঞ্জ ১৫০ কিলোমিটার বলা হলেও,এর রেঞ্জ আরো অনেক বেশি। ভারতীয় রাফালের সাথে এটি থাকছে।

SCALP লংরেঞ্জ স্ট্যান্ড অফ মিসাইল : এটি সার্ভিসে আসার সাথে সাথে, এটি হবে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে থাকা সর্বোচ্চ রেঞ্জ এর এয়ার-টু-গ্রাউন্ড মিসাইল। এর রেঞ্জ ৬৫০ কিলোমিটার। এর হাই অ্যাকুরেসি সিকার এবং থার্মাল রেকগনেশন সিস্টেম একে পিন পয়েন্ট অ্যাকুরেসি দেয়। লংরেঞ্জ এর পাশাপাশি এটি একটি স্টেলথ ক্রুজ মিসাইল, ফলে খুব সহজেই এটি শত্রুর এরিয়ার এয়ার ডিফেন্স এর নাগালের বাইরে থাকে,সহজেই নিরাপদ স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।

HAMMER : এটি হল একটি হাইলি এজাইল এবং ম্যানুভারেল এয়ার টু গ্রাউন্ড প্রিসিসন গাইডেড যুদ্ধাস্ত্র। রকেট বুস্টেড এই ওয়েপন বিভিন্ন গাইডেন্স কীটস দিয়ে পরিচালিত হয়।

রয়েছে ৩০ মিলিমিটারের NEXTER 30M791 ইন্টারনাল ক্যানন গান। এটি মিনিটে ২৫০০ গুলি ছুড়তে পারে।

তাছাড়া ভারতীয় রাফালের সাথে নিচু মানের পরমাণু বম্ব থাকবে।

ওপরের এই যুদ্ধাস্ত্র প্যাকেজ ভারতীয় রাফালের সাথে আসছে, তা নিশ্চিত। কিন্তু আরো কিছু অস্ত্র রয়েছে,যেগুলি রাফালের সাথে আসার কথা। কিন্তু এই সম্পর্কে কোন তথ্য এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে — লেজার গাইডেড বম্ব, ক্লাসিক নন-গাইডেড বম্ব এবং AM39 EXOCET অ্যান্টি শীপ মিসাইল। এই অস্ত্র গুলি রাফালের যুদ্ধাস্ত্র প্যাকেজ আছে, কিন্ত এখনো পর্যন্ত এগুলো সম্পর্কে তথ্য না পাওয়া যাওয়ায় এগুলিকে সম্ভাব্য ওয়েপন প্যাকেজে এ রাখা হয়েছে।

ভারতীয় রাফালে কে এই সময় ভারতের দরকার ছিল? যদি এটা প্রশ্ন হয়,তাহলে বলতে হবে,চাহিদার শেষ নেই।কিন্তু এখনই ভারতীয় বায়ুসেনা রাফ‍্যালে নিয়ে তারাহুরো করতে চাইছে না,অর্থাৎ একে কমবেট রোলে না ও দেখা যেতে পারে।বায়ুসেনার বিশ্বাস তারা ,ভারতের উত্তর সীমান্তে যথেষ্ট ভালো পজিশনে আছে।

ভারতীয় বায়ুসেনার প্রতিটি SU-30 MKI বিমানকে যেখানে ২৪ ঘন্টার মধ্যে দুটি অপারেশনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা যায়,সেখানে প্রতিটি রাফালেকে কে পাঁচটি অপারেশনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.