কেন আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে সমস্যা বাড়ছে?
বর্তমান বিশ্বের দুই মহাপরাক্রমশালী দেশ হল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। বর্তমানে এই সাপে নেউলে সম্পর্ক পর্যালোচনা করতে হলে এদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পুরো ইতিহাস একনজরে দেখতে হবে।
তাহলে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক পুরো ইতিহাস-
- ১৯৭১ সালের বিশ্বে এক নতুন কূটনীতি দেখা যায় যা “পিংপং ডিপ্লোম্যাসি” নামে পরিচিত। দুই দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে এই পিংপং খেলা অনুষ্ঠিত হয় যা আসলে একটি টেবিল টেনিস। এ খেলা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এরপর ১৯৭২ সাল থেকে এ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হয়।
- ১৯৭১ সালে তাইওয়ানকে বাদ দিয়ে চীনকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য করা হয়। এতে চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
- ১৯৭৯ সালে দুই দেশই পরস্পরকে স্বীকৃতি দেয় এবং দূতাবাস স্থাপন করে। উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই সফর করেন। এভাবেই দুদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
- এরপরেই বয়ে যায় তাদের মধ্যে শীতল সম্পর্কের জলধারা। প্রথমেই আসে তাইওয়ান সংকট। ১৯৯৫ সালে মার্কিন প্রতিনিধি সভার অধ্যক্ষ গিংরিচ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লি তেং লুই কে আমন্ত্রণ জানায় এবং জাতিসংঘের সদস্য করার আশ্বাস দেয়। এতে চীন ক্ষুব্ধ হয়। চীন দাবি জানায় যুক্তরাষ্ট্রের ও তাইওয়ানের উভয়েই এটা স্বীকার করবে যে তাইওয়ান চীনের অংশ।
- তিব্বত সংকট এ যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানো চীন ভালভাবে মেনে নেয়নি। দালাইলামকে যুক্তরাষ্ট্র বৈধ প্রতিনিধি মনে করে তিব্বতের।
- ১৯৮৯ সালে তিয়েন আনমেনে সংঘটিত আন্দোলনে গনতন্ত্রকামীদের যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রকাশ করে।
সম্প্রতি যেসব কারণে এ আলোচনা এখন তুঙ্গে তা হলো-
- ডোনাল্ড ট্রাম্প “স্টেট অফ দ্যা ইউনিয়ন” দেয়ার সময় চীন কে যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বরের শত্রু হিসেবে উল্লেখ করে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে টেক্কা দেয়ার জন্য চীন নিজেদের তৈরি করছে।
১৯৭৯ সালে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পরেও চীন ইরানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের নানা নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চীন ২০১৩ সালে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারী মাসেই ৪,১০,০০০ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনেছিল। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক অবনতি হয়।
- চীন বিভিন্ন দেশে ( যেমন-জিবুতি) তাদের সামরিক ঘাটি স্থাপন করে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। আমেরিকার একচেটিয়া আধিপত্য খর্ব করার হুমকি হয়ে দাড়াচ্ছে।
- একটা দেশের সামরিক শক্তি দিয়ে শুধু বিশ্বে রাজত্ব করা যায় না এর সাথে অর্থনৈতিক সক্ষমতা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। চীন এদিকেও এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অবদান ২.২% ছিল আর ২০১৯ এসে দাড়ায় ১৯%। যুক্তরাষ্ট্রের পরেই চীনের অবদান। একেবারে ঘাড়ে এসে নিশ্বাস ছাড়ছে।ট্রাম্প এজন্যই চীনের সাথে “বানিজ্য যুদ্ধে” জড়িয়ে পড়ে।
ট্রাম্প বুঝতে পেরেছে তাদের শক্তি খর্ব করার জন্য চীন ওয়ান বেল্ট কর্মসূচি গ্রহণ করেছে৷