ভারত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কেন ৪০ লাখ ভারতীয় বাঙালীর মৃত্যু হয়েছিল। কি এমন কারন ছিল? এর পেছনে কোন দেশ?

নিউজ ডেস্কঃ এরপরই জাপানের পরাজয় শুরু হয়। প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকা ও জাপানের মধ্যে মোট ৩০ টি যুদ্ধ হয় যার মধ্যে ২৭ টি আমেরিকা জেতে ও তিনটি জাপান জেতে। এখানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু যুদ্ধে জাপান হেরে যায় যেমন মিডওয়ে দ্বীপে হওয়া ব্যাটেল অফ মিডওয়ে, সলোমন দ্বীপে হওয়া ব্যাটেল অফ গোয়াডক্যানেল। পুরো প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে আড়াই বছর ধরে যুদ্ধের পর অবশেষে ১৯৪৪ সালে জাপানের অধিকৃত সমস্ত দ্বীপ আমেরিকা স্বাধীন করে দেয়। এবার ফিরে আসা যাক অপারেশন বারবারোসায় আবার। আগেই বলেছি ডিসেম্বর থেকে শীতকাল শুরু হয় সোভিয়েত ইউনিয়নে এবং ততদিনে লেলিনগ্রাদ, স্তালিনগ্রাদ সহ মস্কো পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে হিটলার। অপারেশন বারবারোসায় নাজি সেনা দুটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ করে সিজ অফ লেলিনগ্রাদ ও ব্যাটেল অফ স্তালিনগ্রাদ। সিজ অফ লেলিনগ্রাদে নাজি সেনা ২ বছরের জন্য পুরো শহরকে লক করে দিয়েছিল যাতে শহরের বাইরে ও ভেতরে প্রবেশ বন্ধ ছিল এমনকি খাবার সাপ্লাই ও বন্ধ ছিল। ফলে অনাহারে কয়েকলাখ লোক মারা যায়। কিন্তু ব্যাটেল অফ স্তালিনগ্রাদে সোভিয়েত সেনার কাছে পিছু হটে নাজি সেনা। একের পর এক শহর সোভিয়েত সেনা নাজি সেনার কাছ থেকে দখল করতে থাকে। বলা হয় ব্যাটেল অফ স্তালিনগ্রাদই হিটলারের পতনের সূচনা করেছিল। অপারেশন বারবারোসাকে ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস যুদ্ধ বলা হয় কারন এতে প্রায় ১ কোটি সাধারণ মানুষ বোম্বিং ও অনাহারে মারা গেছিল এবং ৮ লাখ সোভিয়েত সেনা সহ ৬ লাখ নাজি সেনা মারা গেছিল। এদিকে আগেই বলেছি লিবিয়া ও মিশর ইটালি দখল করে নিয়েছিল কিন্ত ১৯৪২ সালে ব্রিটেন আবারও মিশরে ইটালিকে পরাস্ত করে এবং ব্রিটেন মিশর থেকে ও আমেরিকা মরোক্ক থেকে লিবিয়া আক্রমণ করে ইটালিকে পরাস্ত করে। ইটালির অধীনে থাকা তিউনিসিয়াকেও দখল করে অ্যালায়েড ফোর্স। এভাবে পুরো উত্তর আফ্রিকায় জয়লাভ করে অ্যালায়েড ফোর্স। একে ইতিহাসে দি নর্থ আফ্রিকা ক্যাম্পেন বলা হয়। তিউনিসিয়া থেকে ১৯৪৩ সালের ১০ জুলাই অ্যালায়েড ফোর্স ইটালির সিসিলি দ্বীপে আক্রমণ করে এবং এখান থেকে ইটালির মূল ভূখন্ড আক্রমণ করে ১৩ অক্টোবর এবং অর্ধেক ইটালি দখল করে নেয়। এইসময়ই ইটালির শাসক বেনিটো মুসোলিনীকে তারই মন্ত্রীরা পদচ্যুত করে জেলে ভরে দেয় এবং মার্শাল পেয়িট্রো ইটালিতে নতুন সরকার তৈরি করে এবং ইটালি অ্যালায়েড ফোর্সের সামনে আত্মসমর্পণ করে দেয়। একদিক থেকে অ্যালায়েড ফোর্স এবং অন্যদিক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের মস্কো, লেলিনগ্রাদ, স্তালিনগ্রাদ, কিয়েভ শহর থেকে ক্রমান্বয়ে নাজিসেনাকে পিছু হটাতে থাকে। কিন্তু নরওয়ে থেকে শুরু করে স্পেন পর্যন্ত যাকে আটলান্টিক ওয়াল বলা হয় সেখানে হিটলারের নাজি সেনা খুব শক্তিশালী অবস্থায় ছিল কারন হিটলার চার বছর ধরে ফ্রান্স দখল করে রেখেছিল। ফ্রান্সকে মুক্ত না করে হিটলারের এই দেওয়াল ভাঙা সম্ভব ছিল না। তাই শুরু হয় ফ্রান্সকে মুক্ত করবার যুদ্ধ যাকে ইতিহাস অপারেশন নেপচুন বলা হয়। একে ডি ডে ও বলা হয় যা নিয়ে অনেক বই, সিনেমা তৈরি করা হয়। অপারেশন নেপচুন ছিল মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমুদ্র যুদ্ধ। প্ল্যান অনুযায়ী ৬ জুন,১৯৪৪ ফ্রান্সের নরম্যান্ডি সমুদ্রতীরে ব্রিটেন, আমেরিকা ও কানাডার অ্যালায়েড ফোর্সকে নামানো হয় এবং এরা নাজি সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।

২৫ জুলাইয়ে মধ্যে প্যারিস শহর এবং ১৫ আগস্টের মধ্যে পুরো ফ্রান্স সহ রেইনল্যান্ড পর্যন্ত মুক্ত করে দেয় অ্যলায়েড ফোর্স, সেই রেইনল্যান্ড যা জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে অবস্থিত, এটা দখলের মাধ্যমেই হিটলার শুরু করেছিল তার বিজয়রথ। ওদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন নাজিসেনাকে অর্ধেক পোল্যান্ড পর্যন্ত পিছু হটিয়ে দেয়। সেপ্টেম্বর আসতে আসতে অ্যালায়েড ফোর্স বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের অনেক অংশ মুক্ত করে জার্মানির সীমানায় পৌঁছে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নও পোল্যান্ড হয়ে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ায় নাজি সেনাকে পরাস্ত করে। যুগোস্লাভিয়া, গ্রীস ও আলবেনিয়াকেও হিটলারের হাত থেকে মুক্ত করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। হাঙ্গেরির সাধারণ মানুষ দেশে আন্দোলন শুরু করে যার নাম ছিল এরোক্রশ। এই আন্দোলনের মূল বক্তব্য ছিল জার্মানির সাথ ছেড়ে দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামনে  আত্মসমর্পণ করা। যার ফলে সেপ্টেম্বরে হাঙ্গেরিও স্বাধীন হয়ে যায়। একে একে হিটলারের পুরো সাম্রাজ্য ভেঙে যায়। হিটলার শেষ চেষ্টা করে বেলজিয়ামকে পুনরায় ফিরে পেতে যাকে ব্যাটেল অফ বাল্গ বলা হয় কিন্তু এখানেও জার্মান সেনার পরাজয় হয়। এবার একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সেনা ও অন্যদিকে অ্যালায়েড ফোর্স দ্বিমুখী আক্রমণ করে জার্মানিতে প্রবেশ করে রাজধানী বার্লিন পর্যন্ত চলে আসে। ২৯ এপ্রিল, ১৯৪৪ প্রায় গোটা জার্মানি দখল করে নেয় অ্যালায়েড ফোর্স ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর ঠিক একদিন পরেই ৩০ এপ্রিল হিটলার নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করে। ৭ মে অ্যালায়েড ফোর্সের সামনে ও ৯ মে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামনে আত্মসমর্পণ করে জার্মানি। একে ভিই ডে বা ভিক্ট্রি ইন ইউরোপ বলা হয়। এভাবে ইউরোপে যুদ্ধ শেষ হয়। ইউরোপে তো যুদ্ধ শেষ হল কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরে এখনও জাপান রয়েছে। ১৯৪৫ আসতে আসতে আমেরিকা জাপানের অধিকৃত সমস্ত দেশকে মুক্ত করে দিয়েছিল। আমেরিকা চাইলে ব্যাটেল অফ নরম্যান্ডির মতন জাপান উপকূল দিয়ে সেনা প্রবেশ করাতে পারত কিন্ত এতে অনেক সেনা মারা যেত আবার ততদিনে আমেরিকা সফল ভাবে পরমানু বোম্ব পরীক্ষা করে ফেলেছে। তাই আমেরিকা ৬ আগস্ট ১৯৪৫ জাপানের হিরোশিমা শহরে প্রথম পরমানু বোম্ব বিস্ফোরণ ঘটায়, যাতে এক ঝটকায় ১ লাখ লোক মারা যায়। জাপানের রাজধানী টোকিও কিন্তু ততদিনে বোম্বিং এ টোকিও প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে তাই আমেরিকা জাপানের শিল্পশহর হিরোশিমাকেই বেছে নেয়। এর দুদিন বাদ ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরে আরও একটি পরমাণু বোম্ব ফেলে আমেরিকা যাতে সাথে সাথে ৮০,০০০ মানুষ মারা যায়। যার ফলে বাধ্য হয়ে ১৫ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পণ করে দেয়। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। পরমানু বোম্বের প্রভাবে জাপানে কয়েক লক্ষ মানুষ মারা যায় পরে ও প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। আজ জাপানকে দেখে সভ্য, শান্ত ও উন্নত মনে হলেও ১৯ শতকের জাপানী সেনা যথেষ্ট নৃশংস ছিল। জাপান চীন যুদ্ধে জাপানী সেনারা কয়েক হাজার চীনা মেয়েকে ধর্ষন করে যাকে ইতিহাসে নানকিং ম্যাসাকার বলা হয়, তাই জাপানের সাথে এমন হয়েছে। অফিসিয়ালি ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ হয়।

এবার জানা যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল দেখুন এর সঠিক জবাব কোথাও পাওয়া যাবে না কারন এত লোকের মৃত্যু হয়েছিল কেউ গুনে দেখেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের। দেশটির পনেরো শতাংশ লোক বা দুই কোটি সত্তর লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে সেনাবাহিনী সহ সাধারণ মানুষের সংখ্যাও রয়েছে। চীনের দেড় কোটি থেকে প্রায় দুই কোটি লোক মারা গেছিল, জার্মানির প্রায় পঁচাত্তর লাখ, জাপানের একত্রিশ লাখ, পোল্যান্ডের ষাঠ লাখ, আমেরিকার চার লাখ, ব্রিটেনের সাড়ে চার লাখ, ইটালি ও রোমানিয়ার প্রায় পাচ লাখ লোক, যুগোস্লাভিয়ার সতেরো লাখ, ফ্রান্সের ৬ লাখ, হাঙ্গেরির ৯ লাখ, ফিনল্যান্ডের এক লাখ, ফিলিপিন্সের সাড়ে পাচ লাখ লোক, কানাডার ৪৩,০০০, গ্রীসের আট লাখ, অস্ট্রেলিয়ার ৪০,০০০, চেকস্লোভিয়ার সাড়ে তিন লাখ লোক, ইন্দোনেশিয়ার চার লাখ, নেদারল্যান্ডসের দুই লাখ লোক, লাটাভিয়ার আাড়াই লাখ, লিথুনিয়ার সাড়ে তিন লাখ সহ আরও বিভিন্ন দেশের প্রচুর লোকের মৃত্যু হয়েছিল এই যুদ্ধে। একটি তথ্য অনুযায়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে সর্বমোট সাত থেকে সাড় আট কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তাহলে একবার কল্পনা করে দেখুন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কতটা ধ্বংসাত্মক হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি নৃশংস ঘটনার কথা বলি যাকে হলোকাস্ট বলা হয়। হিটলারের কাছে ইউরোপে সবচেয়ে নীচু জাতি ছিল ইহুদিরা এবার ১৯৪১ সালের মধ্যে প্রায় গোটা ইউরোপই হিটলারের দখলে চলে আসে। যার জন্য হিটলার ইউরোপ থেকে খুঁজে খুঁজে ইহুদিদের এনে লেবার ক্যাম্পে কাজ করাত, কোন খাবার সাপ্লাই করত না যাতে তারা অনাহারে মারা যায়। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় হিটলার গ্যাস চেম্বার বা কনসেনট্রেশান ক্যাম্প তৈরি করেছিল যাতে ইহুদিদের প্রবেশ করিয়ে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগে হত্যা করা হত। প্রতিদিন এভাবে হাজার হাজার ইহুদি কে হত্যা করা হত। জার্মানিতে ইহুদিদের শনাক্তকরণের জন্য ইহুদি লোকেদের স্টার অফ ডেভিড নামে একটি তারার ব্যাজ পরতে হত সর্বদা যাতে লোকে বুঝতে পারে এরা ইহুদি। শুধু ইহুদিই নয় সমাজের দুর্বল ব্যক্তি সহ শত্রুর সেনা সহ এমন এক কোটি কুড়ি লাখ লোককে হত্যা করে হিটলারের নাজি সেনা, এর মধ্যে শুধু ইহুদি ছিল প্রায় ষাঠ লাখ। ইতিহাসে এই নৃশংস ঘটনা হলোকাস্ট নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বিশ্বজুড়ে ইহুদি জনসংখ্যার তিন ভাগের দুই ভাগকে হিটলার হত্যা করেছিল। এবার জানা যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের কী ভূমিকা ছিল? ১৯৩৯ সালের এই সময় ভারত ব্রিটিশদের অধীনে ছিল কিন্তু সেসময় ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলন চলছিল যার জন্য সাধারণ ভারতীয়রা ব্রিটিশদের হয়ে যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করেছিল কিন্তু ভারতের যেসব প্রদেশে রাজতন্ত্র ছিল সেখানের রাজাদের প্রায় ২৫ লাখ সেনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল যার মধ্যে ৮৭,০০০ সেনা বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছিল। এসময় ১৯৪৩ সালে বেঙ্গলে একটি ভয়ানক ঘটনা হয়েছিল যাকে বেঙ্গল ফেমাইন বলা হয়। বলা হয় হলোকাস্টেট মতনই নৃশংস ঘটনা ছিল এটা কিন্তু ইতিহাসে এটাকে তেমন উল্লেখ করা হয় না। ১৯৪৩ সালে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, আসাম ও মিজোরামের কীছু অংশ নিয়ে বিশাল বেঙ্গল ভূমি ছিল। বাংলা বরাবরই চাল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বেঙ্গলে যা চাল তৈরি হত ব্রিটিশ সরকার সব চাল তাদের সেনাবাহিনীর জন্য পাঠিয়ে দিত, এদিকে মায়ানমার তখন জাপানের দখলে ফলে মায়ানমার থেকেও চাল সাপ্লাই বন্ধ। ফলে ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা যায় বাংলায় যাতে লোক নিজের বাড়ি, জমি এমনকী নিজেদের বাচ্চাও বেচে দিতে থাকে ক্ষিদের তাড়নায়। প্রায় ৪০ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছিল বেঙ্গলে সেসময় অনাহারে। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। 

এবার দেখা যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাকী বিশ্বের উপর কেমন প্রভাব পড়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিকে দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। পূর্ব জার্মানি পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাগে এবং পশ্চিম জার্মানি পড়ে অ্যালায়েড ফোর্সের ভাগে। জার্মানির রাজধানী বার্লিনের মাঝামাঝি দেওয়াল তৈরি করে ভাগ করা হয়েছিল যাকে বার্লিন ওয়াল বলা হয়। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পর হওয়া ভারসাইলের চুক্তিতে জার্মানির উপর যেমন প্রচুর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তেমন করা হয় নি কারন যাতে ভবিষ্যতে জার্মানি আর কখনও যুদ্ধ করতে না পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ব্রিটেন সুপার পাওয়ার ছিল কিন্তু এই যুদ্ধে তাদের আর্থিক কাঠামো ভেঙে যায় পুরো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সুপার পাওয়ার হয় যাদের মধ্যে ১৯৪৫ সাল থেকে স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হয় যা ১৯৯১ অবধি চলেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে পুরো ধ্বংস করে দিয়েছিল যার জন্য ১৯৪৫ থেকে ১৯৫০ এর মধ্যে বিশ্ব জুড়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সমস্ত উপনিবেশ গুলো স্বাধীন হয়ে যায় যার মধ্যে আমাদের ভারত ও ছিল। কারন ফ্রান্স ও ব্রিটেনের কাছে উপনিবেশ শাসন করার শক্তি ছিলনা আর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পুরো ইউরোপ ধ্বংস হয়ে গেছিল ফলে জরুরি জিনিস উৎপাদনের ক্ষমতা কমে গেছিল ইউরোপের। ইউরোপ তখন পুরো আমেরিকার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, এই সুযোগে আর্থিক ভাবে ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে ওঠে আমেরিকা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যেমন লিগ অফ নেশনস তৈরি হয়েছিল তেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতি সংঘ তৈরি হয় যাতে ভবিষ্যতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হয় এখনও পর্যন্ত জাতি সংঘ এই কাজে সফল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্ধেক কোরিয়া এবং আমেরিকা অর্ধেক কোরিয়া দখল করে নিয়েছিল। ১৯৫০ সালে এই দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাগে থাকা কোরিয়া উত্তর কোরিয়া এবং আমেরিকা অর্ধেক কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া নামে পরিচিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাত বছর জাপানে আমেরিকা ছিল, এরপর জাপান কে স্বাধীন করে দেওয়া হয় কিন্তু জাপানের এখনও কিছু দ্বীপ আমেরিকার অধীনে। যেমন ওকিনামা দ্বীপ আমেরিকার অধীনে, প্রশান্ত মহাসাগরে এটাই আমেরিকার সবচেয়ে বড় সেনাঘাটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইসরায়েলের জন্ম হয়। ১৯১৭ সালে ব্রিটেন ও ইহুদিদের মধ্যে চুক্তি হয় যাকে বেলফোর ডিক্লেয়ারেশন বলে। সেময় ব্রিটেন জানায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জিতে গেলে তারা ইহুদীদের জন্য আলাদা দেশ তৈরি করে দেবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জিতে যায় ব্রিটেন কিন্তু দীর্ঘদিন পর অবশেষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইসরায়েল তৈরি হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারসাইলের চুক্তি অনুযায়ী অনেক জার্মান লোক চেকোস্লোভিয়া, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, রোমানিয়ার অংশ হয়ে গেছিল যার জন্য নিজের জাতির জন্য যুদ্ধ হয়োছিল। ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয় তাই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রপতি জোসেফ স্টালিন ঘোষনা করে যে যে দেশের বাসিন্দা সে সেই দেশে ফিরে যাক। যেমন জার্মানির লোক জার্মানিতে, পোল্যান্ডের লোক পোল্যান্ডে চলে আসে। সবচেয়ে বেশী লোক নতুন বসতি স্থাপন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে এসে কারন সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেই ১৫ টি দেশের সমষ্টি ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.