ফিচার আর্টিকেল

সোভিয়েত ইউনিয়নের গোপনে হাইড্রোজেন বোম্ব পরীক্ষার ব্যাপারে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের গোপন অপারেশান- দ্বিতীয় খণ্ড

জর্জ ব্ল্যাকের ডবল এজেন্ট হয়ে ওঠার ঘটনাটা বেশ অদ্ভুত ছিল। ১৯৪৮ সালের নভেম্বরে জর্জ ব্ল্যাককে এমআইসিক্স দক্ষিন কোরিয়ার রাজধানী সিওলে পাঠায় কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও উত্তর কোরিয়ার উপর নজর রাখার জন্য। 

১৯৫০ সালে জর্জ ব্ল্যাকের জীবনে বড় পরিবর্তন আসে। কারন ১৯৫০ সালের ২৫ জুন কোরিয়ান যুদ্ধ শুরু হয়, উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী সিওল দখল করে নেয়। জর্জ ব্ল্যাক সহ সমস্ত ব্রিটিশ কূটনীতিবিদদের উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং এ নিয়ে যাওয়া হয়, সেখান থেকে ইয়ালু নদীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। জর্জ ব্ল্যাককে উত্তর কোরিয়াতে তিনবছর নজর বন্দী রাখা হয়। এদিকে আমেরিকা ও ব্রিটেন দক্ষিন কোরিয়াকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে যুদ্ধে। এইসময় উত্তর কোরিয়ার গ্রামগুলোর উপর আমেরিকা ও ব্রিটেনের বায়ুসেনার বোম্বিং দেখে জর্জ ব্ল্যাক সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট ভাবধারাতে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। জর্জ ব্ল্যাক এখানে একজন কেজিবি এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করে কেজিবির হয়ে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। কেজিবি সাথে সাথে জর্জ ব্ল্যাকের প্রস্তাব গ্রহন করে নেয়। ১৯৫৩ সালে উত্তর কোরিয়া থেকে মুক্তি পেয়ে জর্জ ব্ল্যাক ব্রিটেনে ফিরে আসে এবং এমআইসিক্সের হয়ে পুনরায় কাজ করা শুরু করে কিন্তু এবার সে ডবল এজেন্ট ছিল। 

১৯৫৫ সালের প্রথমের দিকে জর্জ ব্ল্যাককে পশ্চিম বার্লিন পাঠানো হয়। এখান থেকেই জর্জ ব্ল্যাকের কাছে অপারেশন গোল্ডের খবর পায় সোভিয়েত ইউনিয়ন কিন্ত সব জেনেও কেজিবি চুপ ছিল যার দুটো কারন ছিল। প্রথমত সোভিয়েত ইউনিয়ন জানতো যদি তারা এই অপারেশনের ব্যাপার জনসমক্ষে নিয়ে আসে তাহলে সিআইএ ও এমআইসিক্স খোঁজ করবে তাদের ভিতরে থাকা বিশ্বাসঘাতকে। কেজিবি কোনওভাবেই চাইছিলনা জর্জ ব্ল্যাক ধরা পড়ুক। দ্বিতীয়ত কেজিবি ইচ্ছে করেই এমন সব তথ্য আমেরিকা ও ব্রিটিশ ইনটেলিজেন্সকে দিচ্ছিল যা এমনকিছু গুরুত্বপূর্ন ছিলনা। কেজিবি অপেক্ষা করছিল কবে জর্জ ব্ল্যাককে অন্যত্র পাঠানো হবে বার্লিন থেকে তারপরেই তারা আমেরিকা ও ব্রিটেনের এই পরিকল্পনা জনসমক্ষে এনে তাদের বদনাম করবে। 

১৯৫৫ সালের শেষের দিকে ট্রান্সফার হয় জর্জ ব্ল্যাকের। এরপরেই ১৯৫৬ সালের ২১ এপ্রিল এই সূড়ঙ্গে অভিযান করে সোভিয়েত সেনা এবং বিশ্ব মিডিয়ার সামনে আমেরিকা ও ব্রিটেনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তোলে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন মিডিয়ায় সিআইএ ও এমআইসিক্সের যে বদনাম হবে ভেবেছিল তা হয়নি বরং উল্টে এমআইসিক্সের অসাধারন কারিগরি দক্ষতা ও সিআইএর অপারেশনের প্রশংসা হতে থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের কথায় অপারেশন গোল্ড ব্যার্থ ছিল কারন তারা আগেই সব তথ্য জানতো। কিন্তু সিআইএ অপারেশন গোল্ডকে সফল বলে রীতিমতো উদযাপন করেছিল। অপারেশন গোল্ডে সিআইএ ও এমআইসিক্স ৫০,০০০ রিলস রেকর্ডিং, ৪,৪৩,০০০ সাংকেতিক বার্তা, ৪,০০,০০০ ঘন্টার ফোন কলের পাশপাশি আরও অনেক ইনটেলিজেন্স তথ্য পেয়েছিল যার জন্য আমেরিকার কাছে এই মিশন যথেষ্ট সফল ছিল। 

১৯৬১ সালে জর্জ ব্ল্যাককে গ্রেফতার করে এমআইসিক্স, বিচারে তাকে ৪২ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচবছর পর ১৯৬৬ সালে জেল থেকে পালিয়ে মস্কো চলে যায় জর্জ ব্ল্যাক এবং বাকী জীবন সেখানেই কাটায়। 

রাশিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন নিজে সম্মানিত করেছিল জর্জ ব্ল্যাককে। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৯৮ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। আজীবন কেজিবি তাকে প্রতি মাসে মোটা অর্থ দিয়ে গেছিল তাদের হয়ে কাজ করার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published.