সন্ত্রাস দমন করতে গিয়ে আমেরিকার যুদ্ধবিমান গুলি এখন পর্যন্ত কত হাজার নিরপরাধ মানুষের প্রান নিয়েছে জানেন?
নিউজ ডেস্কঃ ৯/১১ আমেরিকার ইতিহাসে এখনো রক্তাক্ষরে লিখিত রয়েছে। এই ঘটনাটিই কঠোর হাতে সন্ত্রাস দমনে উদ্বুদ্ধ করেছিল আমেরিকাকে। কিন্তু, সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে ৯/১১ সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকে সন্ত্রাস দমন করতে গিয়ে মার্কিন ড্রোন এবং বিমান হামলায় শুধু যে সন্ত্রাসবাদীরা নিহত হয়েছেন তাই কিন্তু নয় উল্টে শিশু ও মহিলা সহ মারা গেছেন আরো অসংখ্য বেসামরিক মানুষ। এই সমীক্ষায় প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় কমপক্ষে ২২০০০ থেকে ২৪০০০ বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন।
লন্ডন ভিত্তিক এক গ্রুপ এয়ারওয়ারস চালিয়েছে এই সমীক্ষাটি। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ৯/১১ তে শুরু হয়ে এই বছর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে শেষ হওয়া দীর্ঘ দুই দশক ব্যাপী যুদ্ধে ঠিক কতজন বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন তার হিসাব খুঁজে বের করা। আর এই উপলক্ষে তারা ইয়েমেন, সোমালিয়া, পাকিস্তান এবং লিবিয়া সহ আমেরিকার মোট সাতটি প্রধান সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে চালানো কমপক্ষে ৯১,৩৪০ টি হামলা নিয়ে দীর্ঘ এক গবেষণা চালিয়েছেন।
এই সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে, এয়ারওয়ারস অবশেষে জানিয়েছে “মার্কিন আক্রমণে নিহত অসামরিক ব্যক্তির সংখ্যা সর্বনিম্ন ২২,৬৭৯ জন থেকে সর্বোচ্চ ৪৮৩০৮ জন হতে পারে।
এয়ারওয়ারস এর চালানো দীর্ঘদিনের সংকলিত গবেষণা অনুসারে, মার্কিন বিমান হামলায় সবচেয়ে বেশি অসামরিক নাগরিক মারা গিয়েছেন ২০০৩ সালে। রিপোর্ট অনুযায়ী ইরাকে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে চালানো এই বিমান হামলায় প্রাণ হারান প্রায় ৫,৫২৯ জন।
এর পরেই আমেরিকার নিজস্ব ভুলভ্রান্তির জেরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারায় ২০১৭ সালে। ওই বছর ইরাক ও সিরিয়ায় যৌথ ভাবে মার্কিন বোমা হামলায় নিহত হন প্রায় ৪৯৩১ জন নিরপরাধ মানুষ।
জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তরসূরী জো বিডেন ক্ষমতায় আসার পর পরেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ড্রোন নীতির আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনার মাধ্যমে তিনি সন্ত্রাস দমনে বিমান হামলার উপর মার্কিন নির্ভরতা হ্রাস করার যথাযথ চেষ্টা করবেন।
তিনি বলেছিলেন “সন্ত্রাসবাদ আমাদের জন্য এখনো এক বড়ো ভয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে এক বড়ো কৌশলগত পরিবর্তন দেখা গেছে সুতরাং পরিবর্তন দরকার আমাদের কৌশলেও”। একই সঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন আফগানিস্তানের দায়েশ শাখার (দায়েশ-কে) বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার। উল্লেখ্য গোষ্ঠীটি সম্প্রতি কাবুল বিমানবন্দরে ২৬ শে আগস্ট ঘটা হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। এই ঘটনায় ১৬০ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছেন।
মার্কিন সামরিক বাহিনী এতদিন বিমান হামলায় বেসামরিক নিহতের কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি এমনকি সরকার কোনো অনুমানও প্রদান করেনি। কিন্তু এয়ারওয়েভস আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন, দ্যা ব্যিউরো অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিসম, দ্যা ইরাক বডি কাউন্ট এনজিও এবং দ্য নেশনের মতো সংস্থা থেকে ডেটা সংগ্রহ করে সেগুলো প্রকাশ করায় অবশেষে মিলেছে উত্তর।