কেন্দ্রীয় সরকার সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনীকে প্রয়োজনমাফিক অস্ত্র তুলে সক্ষম নয়?
নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বেড়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এক দেশের সাথে অপর দেশের ঝামেলা লেগে রয়েছে প্রায় সর্বত্রই। সেই জন্যেই দেশের সেনাবাহিনীর শক্তিশালী হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, যতই হোক না কেনো যেকোনো দেশের হার-জিত পুরোটাই প্রায় নির্ভর করে সেই দেশের সেনাবাহিনীর সক্ষমতার ওপর। কিন্তু, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সেনাবাহিনী সম্পন্ন দেশ হওয়া সত্বেও সেনা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে ভারতের। এক সময় বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ক্রমহ্রাসমান স্কোয়ার্ডন নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছিল। হালফিলে পুনরায় আবার জাগ্রত হয়ে উঠেছে সেই প্রশ্ন সমূহ।
সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য একাধিক প্রস্তাব সংবাদমাধ্যমে জারি করা হলেও বাস্তবে তার মধ্যে খুব কমই রূপ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসে বিমানবাহিনীর একাধিক প্ল্যাটফর্ম নিজের স্কোয়ার্ডনে সংযুক্ত করে নানান আশ্বাসবাণী দিলেও এখনো যে বেশ কিছু জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে তা ক্রমে প্রকাশ পাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে মোদি সরকার পাখির চোখ করেছে মূলত ট্রান্সপোর্ট বিমান এবং অ্যাটাক হেলিকপ্টারের ফ্লিটের উন্নয়নকে। এর ফলে সি-১৭ গ্লোবমাস্টার, সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস, এ্যপাচির মতো দুর্ধর্ষ প্লাটফর্ম ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে ঠিকই কিন্তু ভারতীয় বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর আসল প্রয়োজনের দিকেই নজর দেওয়া হয়নি একফোঁটা।
চীন ও পাকিস্তান এই দুই প্রতিবেশী দেশই ভারতকে ভাবায় সবচেয়ে বেশি। তাই সেনাবাহিনীর নজর থাকে মূলত এই দুই দেশের সীমান্তেই। ভারতের দুই শত্রু দেশের সাথে লাগোয়া সীমানার প্রায় ৮০% পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় রাজস্থান ও গুজরাট বাদে ভারতীয় বিমান বাহিনীকে মূলত পার্বত্য অঞ্চলে পেট্রোলিং চালাতে হয়। আর তাই এটা গোপন খবর নয় যে ভারতের হাতে রয়েছে এমন এক মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর যা সংখ্যায় যেমন অন্য যেকোনো দেশকে পেছনে ফেলতে সক্ষম তেমনই অভিজ্ঞতার দিক থেকেও এগিয়ে। উচ্চতা এবং ঠান্ডার এমন সংমিশ্রণ হিমালয় ছাড়া আর অন্য কোন জায়গায় না থাকায় পাহাড়ি অঞ্চলে লড়াই করার যে অভিজ্ঞতা ভারতীয় সেনার রয়েছে তা বিশ্বের আর অন্য কোন দেশের কাছে আছে কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের। ফলে সহজাতভাবেই প্রথম যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হলো ভারত সরকার কি নিজের সেনা ও বিমান বাহিনীকে সঠিকভাবে চিনে তাদের হাতে প্রয়োজনমাফিক অস্ত্র তুলে দিতে সক্ষম হয়েছে?
উত্তরটা হলো একেবারেই না।
গোটা ব্যাপারটা একটু ভালভাবে বুঝে নেওয়া যাক। এম-৭৭৭ ও চিনুক ভারতীয় বিমানবাহিনীতে আসার পর নতুন আশার আলো দেখতে পেয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর আর্টিলারি রেজিমেন্ট। আর্টিলারি রেজিমেন্টে এই দুইয়ের সংমিশ্রণের ফলে ভারতীয় সেনা যেমন খুব সহজেই যেকোনো জায়গায় এম-৭৭৭ কে পৌছে দিয়ে শত্রুর ওপর গোলাবর্ষন করতে পারবে তেমনই স্ট্রাইক শেষে দ্রুত স্থান পরিত্যাগ করতে সক্ষম হবে। তারপর আসা যাক এ্যপাচির কথায়। ভারতের জন্য আরেকটি গেম চেঞ্জিং যুদ্ধাস্ত্র এটি। কার্গিলের সময় ভারতের হাতে এ্যপাচি ছিল না কিন্তু তার বদলে ছিল ট্রান্সপোর্ট বিমান এমআই-১৭। ওই সময় ভারতের ডেডিকেটেড এই এ্যটাক হেলিকপ্টার কারগিলের পার্বত্য অঞ্চলের অতটা উচ্চতায় উড়তে সক্ষম ছিলো না। কিন্তু আজ ভারতের হাতে রয়েছে এ্যপাচি। শত্রু পক্ষের আর্মার্ড রেজিমেন্ট তাই ভারতে স্ট্রাইক করার আগে কিছুক্ষণের জন্য হলেও এই ভেবে সন্ত্রাসে ভুগবে যে উল্টোদিক থেকে “হেলফায়ার মিসাইল” বোধহয় যেকোনো সময়ে এসে হামলা চালাবে।
এরপরে আসা যাক স্পাইকের কথাই। কনকুর, কর্নেট ও মিলন-২টি এর মত এটিজিএম তো সেনাবাহিনীতে মজুদ ছিলোই তার ওপর দিন কয়েক আগেই জরুরিভিত্তিতে ইসরাইল থেকে ভারত আমদানি করে আনা হয়েছে স্পাইক। একদিকে চীন যেমন তিব্বতে নিজেদের টাইপ ১৫ লাইট ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে রেখেছে তেমন ই অপরদিকে চীনের প্রত্যুত্তরে ভারতের হাতে রয়েছে টি-৭২। ভারতের কনকুর, কর্নেটের মত মিসাইলগুলি যেখানে একের পর এক শক্তিশালী আর্মারের বিরুদ্ধে অসাধারণ সক্ষমতা দেখিয়ে এসেছে সেখানে টাইপ-১৫ এর আর্মার তো নিতান্তই দুর্বল। তাই টাইপ-১৫ আর্মার ভারতের কাছে কখনোই বড়ো কোনো হুমকি হয়ে উঠবে না।
এবার নিশ্চয়ই ভাববেন যে এগুলো কথা যে বললাম তার সবই তো সুখবর। তাহলে ভুলটা হল কোথায়? পজিটিভ এর পর নেগেটিভ দিকটা নিয়ে আলোচনা হলেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন নিজেই। চারপাশে একেই শত্রুদেশ বেষ্টিত ভারত। তার ওপর আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে আমেরিকা। সব মিলিয়ে ভবিষ্যতে ভারতের দিকে ধেয়ে আসতে পারে বড় শঙ্কা। ভারত সরকার সময় থাকতে থাকতে ভারতীয় সেনা ও বিমানবাহিনীকে প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় এর ফল ভোগ করতে হতে পারে আমাদের জওয়ানদের।
প্রথমেই আসা যাক সেনাবাহিনীর কথায়।
কয়েকদিন আগেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কদিন যোগ হয়েছে কে-৯ বজ্র। তবেএই কে-৯ বজ্র কিন্তু একেবারেই পাহাড়ী এলাকায় চলনশীল নয়। এর চাকার গঠন ট্যাঙ্কের মত হওয়াই কে-৯ বজ্র চলে ট্র্যকের ওপর। এদিকে চাইনিজ পিসিএল-১৮১ বা এসএইচ-৫১ এর মতো ট্রাক মাউন্টেড আর্টিলারি প্রয়োজন এর পাহাড়ী অঞ্চলে দ্রুত চলাচলের জন্য। অথচ ভারতীয় আর্টিলারি রেজিমেন্টের কাছে এখনো পর্যাপ্ত এম-৭৭৭ পর্যন্ত নেই।
দ্বিতীয়ত ইনফ্যন্ট্রি কম্ব্যট ভেহিকেল বলতে ভারতীয় সেনার কাছে রয়েছে কেবল বিএমপি-২ সারথ। সেটাও আবার ট্র্যক বেসড। আর্থৎ আবার চাকার গড়ন সেই ট্যঙ্কের মত। যেখানে কিনা মার্কিন স্ট্রাইকার বা কেস্ত্রলের মতো দ্রুত যাতায়াত ও আক্রমণাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন হুইল্ড আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যরিয়ার প্রয়োজন ভারতের সেখানে বিএমপি-২ সারথেই আটকে রয়েছি আমরা।
তৃতীয়ত চীনের তুলনায় লং রেঞ্জ মাল্টিব্যরেল রকেট লঞ্চারেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। যেখানে চিন ভারতের বিরুদ্ধে ৩০০ কিমি রেঞ্জ বিশিষ্ট PHL-03 মাল্টিব্যরেল রকেট লঞ্চার মোতায়েন করেছে সেখানে ভারতের স্মের্চ ও পানাকার রেঞ্জ মাত্র ৯০কিমির আশেপাশে।
চতূর্থত নির্ভয়কে এখনো পযন্ত সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত না করতে পারা ভারতের আরেক ব্যর্থতা। যেখানে চীন এর মধ্যেই সিজে-১০ ডেপ্লয় করে ফেলেছে সেখানে কেবল মাত্র সরকারি উদাসীনতা ও গাফিলতির জন্য এতো বড়ো প্রোজেক্ট এখনো সম্পূর্ণ রূপ পায়নি। এমনকি প্রলয় ব্যলিস্টিক মিসাইলের প্রজেক্টটিও এখনো সম্পূর্ণ করা যায়নি।
পঞ্চম টি-৭২ কে রিপ্লেস করার মত কোনো কিছু এখনো হাতে আসেনি ভারতের।
ষষ্ঠত ভারত সরকার এখনও একে-২০৩ এর অর্ডার প্লেস করে উঠতে পারেনি।
সপ্তমত এতদিন পরেও একটি লাইট এ্যটাক হেলিকপটার না আসা ভারতের জন্য এক লজ্জার বিষয়।
অষ্টম এখনো পর্যন্ত নাগ যুক্ত না হওয়ায় আর্মার্ড রেজিমেন্টের সামনে ম্যকানাইজ্ড ইনফ্যন্ট্রি ফায়ার পাওয়ারের অভাব বোধ করবে।
নবম চরম ম্যনপ্যডের ঘাটতি রয়েছে ভারতের। হাতে গোনা কয়েকটি ইগলা ছাড়া ভান্ডার প্রায় শুন্য বলা চলে। নতুন অর্ডার এখনো না এসে পৌঁছানোয় চাইনিজ এ্যটাক হেলিকপ্টারের কাছে কাছে রুখে দাঁড়ানোর পথ নেই বললেই চলে।
দশম সেল্ফ প্রোপেল্ড এয়ার ডিফেন্স কে-৩০ আজও অর্ডার করা না হওয়ায় আর্মার্ড রেজিমেন্ট ময়দানে এখনো ভীষণ ভাবেই অসুরক্ষিত।
এবার আসা যাক বিমান বাহিনীর কথায়।
প্রথমত সরকার ফাইটার ফ্লিট উন্নয়েনে ভীষণ ভাবে ব্যর্থ। যেখানে টেরেইন অঞ্চলে ইন্টার্সেপ্সানের জন্য তেজাস এক দুর্ধর্ষ প্ল্যাটফর্ম সেখানে আজও ৮৩টি তেজস মার্ক-১এ ঝুলে রয়েছে।
দ্বিতীয়ত আজও বহু প্রতীক্ষিত রাফাল হাতে পেলেও তা অল্প সংখ্যায়। এমনকি এমএমআরসিএ ২ কে নিয়ে এগিয়ে যেতেও ব্যর্থ সরকার।
তৃতীয় এ্যওয়াক্স এর সংখ্যা যেখানে পাকিস্তানের মতো দেশের কাছে ১১ সেখানে ভারতের কাছে আজও মাত্র ৫। অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। দুটি ফ্যলকন অ্যওয়াক্সের অর্ডার সরকার এখনও পর্যন্ত না দিতে পারায় তা এক বড়ো প্রভাব ফেলছে ক্রমহ্রাসমান ফ্লিটের কার্যক্ষমতার ওপর।
চতূর্থত আজও কেনো অস্ত্র বিভিআর ট্রায়াল সম্পূর্ণ ভাবে শেষ করেও কোনো অর্ডার করা হল না? চীনের মূল বিভিআর পিএল-১২ এর বিপক্ষে ভারতের আর-৭৭ যে আবারও আবারও যুদ্ধক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি করবে সেটাই স্বাভাবিক।
পঞ্চমত বিমানবাহিনীকে সিকিউর কমিউনিকেশান লিংক প্রদান করার জন্য ইসরায়েল থেকে ৪০০ সফ্টওয়্যার ডিফাইন্ড রেডিও কেনার কথা ছিলো। কিন্তু সেটাও স্থগিত হয়ে যাওয়াই বড়ো অসুবিধার সামনে পড়তে পারে সেনা।
ষষ্ঠত যেখানে চীনের এয়ার ডিফেন্স বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্সগুলির মধ্যে অন্যতম সেখানে ভারতের কোনো লং রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নেই এখনো। চীনের এস-৩০০, এস-৪০০, এইচকিউ-০৯ ও এইচকিউ-১৬ এর মত এয়ার ডিফেন্সের সামনে ভারতের সম্বল আকাশ। যার রেঞ্ছ কিনা মাত্র ৩০কিমি। অবস্থা সত্যিই ভয়াবহ। এতদিনে এস-৪০০ আর বারাক-৮ পুরোপুরি ভাবে সার্ভিসে থাকলে সেভাবে কোন চিন্তা থাকত না। এক রেজিমেন্ট এস ৪০০ ইতিমধ্যে ভারতবর্ষের হাতে আসলেও তা চীন বা পুরো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারবেনা। অর্থাৎ এখনও ২ বছর অপেক্ষা করতে হবে ভারতবর্ষকে।