কেন ৫০ বছর ধরে একই যুদ্ধবিমানকে সার্ভিসে রেখেছিল ভারতবর্ষের বায়ুসেনাতে?
নিউজ ডেস্কঃ দীর্ঘ ৫ দশক ধরে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে সার্ভিস দিয়ে আসছে। শুধু ভারতীয় বিমানবাহিনী বললে ভুল বলা হবে, ৫০ র অধিক দেশ এই বিমান ব্যবহার করছে। বর্তমানে ভারত, ক্রোয়েশিয়া এবং রোমানিয়ার বিমান বাহিনীতে এই বিমান দেখা যায়। মিগ-২১ ওরফে বালালাইকা খুব সম্ভবত মিগ সিরিজের সবচেয়ে বিখ্যাত নাম। ৬২ বছর আগে অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ সালে এটিকে প্রথমবার আকাশে দেখা যায়। ১৯৫৯ সালে এটি সার্ভিসে আসে। বিশ্বে মিগ-২১ এর চেয়ে বেশি সুপারসনিক বিমান আর বানানো হয়নি। ৬০টিরও বেশি দেশ এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে এগারো হাজার মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। তার মধ্যে ভারতের কাছেই ছিল ৮৪০ টি।
৪৮ ফুট লম্বা, ম্যাক ১ অর্থাৎ সি লেভেলে এর গতি ১৩০০ কিমি প্রতিঘণ্টা হলেও এর সর্বাধিক গতি ২২০০ কিমি/ঘণ্টা। মিগ-২১ ডেল্টা উইং বিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। ২৩ এমএম জিএসএইচ মেশিনগানের পাশাপাশি এটি ৪টি অনেক সময় ২টি মিসাইল ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে। দীর্ঘদিন বিমানবাহিনীতে থাকার কারণে প্রয়োজন অনুসারে নানা সময়ে মিগ-২১ এ বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিমানটি আকাশে খুব বেশিক্ষণ থাকতে পারে না, যুদ্ধক্ষেত্রে এটাই ছিল এর বড় দুর্বলতা। তবে এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মিগ-২১ আকাশযুদ্ধে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় বহু বোয়িং বি-৫২, এফ-১০৫ এবং এফ-৪ ফ্যান্টম যুদ্ধবিমান কে ধ্বংস করে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যেই ৫৬টি মার্কিন বিমান মিগ-২১ এর শিকার হয়। এই সংখ্যা আরো বেশিও হতে পারে। ১৯৭১ এ মিগ-২১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় বাহিনীর হয়ে অনেকগুলো পাকিস্তানি বিমানকে ধ্বংস করেছিল।
ভারতীয় পাইলটরা খুব সহজেই পাকিস্তানি এফ-৮৬ স্যাবর জেট এবং এফ-১০৪ এর ওপর হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল। তবে মিগ-২১ চালাতে হলে খুবই দক্ষ পাইলট প্রয়োজন। ভারতবর্ষ সহ আরো অনেক দেশের বিমানবাহিনীতে মিগ-২১ চালু আছে। এর একটি চীনা সংস্করণ ‘চেংদু জে-৭’ বাংলাদেশের বিমানবাহিনীতেও ছিল।
যান্ত্রিক গোলযোগ এর কারনে মিগ-২১ এর একটি বড় সমস্যা। এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ভারতবর্ষ। পুরনো বিমানগুলোকে চালু রাখতে প্রচুর ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। অনেকে তো বিমানটিকে ‘উড়ন্ত কফিন’ বলেও ডাকেন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে বানানো ৮৪০টি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের অর্ধেকই দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।