আমেরিকা থেকে ডিগ্রি অর্জন। লালা লাজপত রাইয়ের অবাক করা বিষয়
নিউজ ডেস্কঃ ভারত মুক্তির সংগ্রামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন লালা লাজপত রায় । স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এক শব্দে উচ্চারিত লাল-বাল-পাল-এর মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। লাল অর্থাৎ – লালা লাজপত রায়, বাল – বাল গঙ্গাধর তিলক এবং পাল – বিপিন চন্দ্র পাল, এঁরা তিনজনই ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চরমপন্থী গোষ্ঠীর নেতা এবং মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে।
ভারতের এই অন্যতম মহান মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে আপনাদের জন্য রইল কিছু অজানা তথ্য
১) ১৮৬৫ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঞ্জাবের একটি ছোট্ট গ্রামের এক জৈন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লালা লাজপত রায়। তিনি বেশি জনপ্রিয় ছিলেন ‘পাঞ্জাব কেশরি’ নামে। তাঁর পিতা ছিলেন মুনসি রাধাকৃষ্ণণ আজাদ যিনি পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক এবং তাঁর মাতা ছিলেন গুলাব দেবী। তিনি খুবই ধার্মিক ছিলেন।
২) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহনকারী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন লালা লাজপত রায়, তখন অনেকটাই ছোট ছিলেন তিনি।
৩) ১৮৭৭ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রাধা দেবী-র সাথে। এই দম্পতির তিন সন্তান ছিল- দুই ছেলে এবং একটি মেয়ে।
৪) তিনি ১৮৮০ সালে আইন নিয়ে পড়তে যান লাহোরের সরকারি কলেজে । ওই সময়ে তাঁর সাথে পরিচয় হয় কয়েকজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের।
৫) লাহোরে থাকাকালীন সময়ে, তিনি দেখেন আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীকে এবং তাঁর শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে আর্য সমাজে যোগ দান করেন লালা লাজপত রায়।
৬) তাঁর পরিবারসহ তিনি ১৮৮৬ সালে চলে আসেন হিসারে। এবং ওখানে আইন নিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করেন। পরে হিসারে আইনজীবী বাবু চূড়ামণি-র সাথে তিনি বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া-র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৭) তিনি এবং বাবু চূড়ামণি হিসার জেলায় প্রতিষ্ঠা করেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি শাখা এবং ওই একই জেলায় প্রতিষ্ঠা করেন আর্য সমাজের একটি শাখাও।
৮) ১৮৮৮ এবং ১৮৮৯ সালে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন লালা লাজপত রায়। যার ফলে তিনি চারজন প্রতিনিধিদের মধ্যে একজন হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল উভয় অধিবেশনই।
৯) তিনি ১৮৯২ সালে, আইন প্র্যাকটিস করতে যান লাহোর হাইকোর্টে । ওই সময়ে সাংবাদিকতা নিয়েও প্র্যাকটিস শুরু করেন তিনি ‘দ্য ট্রিবিউন’ নামের পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন।
১০) লাজপত রায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন পাঞ্জান ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এবং লক্ষী বিমা কোম্জল । তাঁর নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দয়ানন্দ অ্যাংলো বৈদিক বিদ্যালয় পরিচালন কমিটিও।
১১) খুব শীঘ্রই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন তার জীবনে পথকে অর্থাৎ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে আইন ত্যাগ করে তাঁকে অংশ নিতে হবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে । সেই অনুযায়ী ১৯১৪ সালে আইন প্র্যাকটিস করা বন্ধ করে দেন তিনি।
১৩) ১৯০৭ সালের মে মাসে তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন পাঞ্জাবের রাজনৈতিক আন্দোলনে। যার কারনে তাঁকে বার্মার মান্দালয়ে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল।
(১৪)১৯০৭ সালে উচ্চতর বিদ্যার্জনের জন্য লালা লাজপত রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং বিদ্যার্জন শেষ করে ফিরে আসেন দেশে।
(১৫) বিপ্লবী নেতা হওয়ার পাশাপাশি একজন সুপরিচিত লেখকও ছিলেন। তিনি ইংরেজি ভাষায় বেশ কয়েকটি বই লেখেন- History of the Arya Samaj, England’s Debt to India, The Problems Of National Education In India, Swaraj and Social Change, The United States of America, A Hindu’s impressions and a study।
১৬) ১৯২০ সালে কলকাতা অনুষ্ঠিত বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিযুক্ত হন লালা লাজপত রায়।
১৭) ১৯২৮ সালের ৩০ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হওয়া সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অন্দোলনের অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখানে ব্রিটিশ পুলিশ লাঠি চার্জ করার তাতে গভীর ভাবে আহত হন তিনি।
১৮) তাঁর মা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ১৯২৭ সালে মৃত্যুবরন করেন। এইজন্য তিনি তার মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠা করেন গুলাব দেবী চেস্ট হাসপাতাল। কথিত আছে যে, তাঁর মা যেখানে মারা গিয়েছিলেন হাসপাতালটিও পাকিস্তানের ওই একই জায়গায় অবস্থিত। ওই হাসপাতালটি ১৯৩৪ সালের ১৭ জুলাই উদ্বোধন করা হয়। কেবলমাত্র মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত এই হাসপাতালটি।
১৯) সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ সুপার জেমস এ স্কট নির্দেশ দেন বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি চার্জ করার । স্কট নিজেই এই লাঠি চার্জে করতে গিয়ে ধরে ফেলেন লালা লাজপত রায়কে। রিপোর্টে দাবি অনুসারে , লালা লাজপত রায়কে ধরার পর লাঠি দিয়ে আঘাত করেন স্কট। যার ফলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।
২০) লালা লাজপত রায় গুরুতরভাবে আহত হয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে, ”আমার শরীরে করা ব্রিটিশের প্রহার, ব্রিটিশের ধংসের কারণ হয়ে উঠবে।” তার চিকিৎসা করা হলেও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি এবং ১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ভারতের এই মুক্তিযোদ্ধা।