পৃথিবী

সূর্যেরও মৃত্যু হবে

অর্পণ সাঁতরাঃ নক্ষত্র মন্ডলের জন্ম থেকে মৃত্যু প্রর্যন্ত একটা প্রথমিক ধারনা দিয়েছিলাম আগের পোষ্টে। আজকের পোষ্টে আপনাদের নক্ষত্র মৃত্যুর পর যে প্রথম রূপটা ধারন করতে পারে তা সম্পর্কে বলা হবে। আর সেটা হল হোয়াইট ডোয়ার্ফ(সাদা বামন নক্ষত্র)।

মূলত একটি রেড ডোয়ার্ফ স্টার(লাল বামন নক্ষত্র) এবং ইয়োলো ডোয়ার্ফ(হলুদ বামন নক্ষত্র) স্টার নিজের মৃত্যুর পর হয়। জানিয়ে রাখা ভাল নক্ষত্রকে তার বাইরের উত্তাপ, রঙ এবং জীবনকালকে মিলিয়ে সাত ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন O, B, A, F, G, K, M।

এখানে Oনক্ষত্রের বাইরের তাপমাত্রা সব থেকে বেশি, আকারে বড় ও উজ্জ্বল বেশি আর রঙ নিলচে। এরা দ্রুত নিজের জ্বালানী শেষ করে তাই এর দ্রুত নিজের জীবনকাল শেষ করে ফেলে। এবার যত আপনি M ক্লাসের দিকে যাবেন তত উজ্জ্বলতা হ্রাস পাবে আর নক্ষত্রের রঙ সাদা হয়ে প্রথমে হলুদ ও তারপর লাল হয়ে যাবে। একই সঙ্গে এই ধরনের নক্ষত্রের আয়ু বেশি হতে থাকে। একটি রেড ডোয়ার্ফ স্টারের(বামন নক্ষত্রের) আয়ু ১ ট্রিলিয়ন বছর হতে পারে।

আমাদের সূর্য একটি G type main sequence star! যদিও এটির আসল রঙ সাদাটে। সূর্যের আয়ু মোটামুটি ১০বিলিয়ন বছর। এবার দেখা যাক সূর্যের মৃত্যু কিভাবে হবে। কারন এই ধরনের স্টার শেষে হোয়াইট ডোয়ার্ফ হবে।

সূর্যের মৃত্যু কখনও সুপারনোভা দ্বারা হবে না। তারার অভ্যন্তরে চলা ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি বহির্মুখী চাপের সৃষ্টি হয়। তারার অভ্যন্তরের যে ফিউশন প্রক্রিয়া তা শুধু তার কোরে (Core) হয় না বরঞ্চ তার আশেপাশের অংশ হয়ে থাকে। আগামি ৪-৫বিলিয়ন বছর বাদে সূর্য নিজের অভ্যন্তরে থাকা জ্বালানী শেষ করে ফেলবে। তখন ক্রমশ নিজের আয়তন বৃদ্ধি করতে থাকবে। সূর্যের আয়তন বাড়তে বাড়তে প্রথমে বুধকে গ্রাস করে তারপর শক্র গ্রহকে আর হয়তো শেষে পৃথিবীও সূর্যের মধ্যে হারিয়ে যাবে। এই স্টেজে সূর্যকে বলা হবে রেড জায়েন্ট।

রেড জায়েন্ট সূর্যের ভীতরে যখন জ্বালানী শেষ হবে তখন অভ্যন্তরের ব্যপক চাপ হিলিয়ামকে জ্বালাতে শুরু করবে। আর এই ঘটনাকে বলা হয় helium shell flash। এর ফলে থার্মাল ফ্ল্যশের একটি শক ওয়েভ উৎপন্ন হয় যা সূর্যের বাইরের অংশকে খন্ড বিখন্ডে পুরো মহাকাশে ছড়িয়ে দেয়। আর নির্মান করে planetary nebula!

ঠিক এর মাঝখানে থাকবে সূর্যের Core যাকে দেখতে একটা সাদা গ্লোয়িং বলের মত। এর নাম হোয়াইট ডোয়ার্ফ! হোয়াইট ডোয়ার্ফের আকৃতি পৃথিবীর মত ছোট হতে পারে। কিন্তু এর দ্রব্যমান এতটাই অধিক যে এর ভর বা mass সূর্যের ভরের ১.৪ গুন প্রর্যন্ত হতে পারে। এই মানকে বলা হয় “চন্দ্রশেখর লিমিট”। চন্দ্রশেখর লিমিটের বেশি ভারী নক্ষত্রে হয়ে থাকে সুপারনোভা।

যাই হোক এবার আপনার কাছে থাকলো একটি হোয়াইট ডোয়ার্ফ। হোয়াইট ডোয়ার্ফ ছোট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ভারী হয়। আর অত্যন্ত গরম। এর সার্ফেস টেম্পারেচার ১ লক্ষ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। আর আমরা জানি যে গরম জিনিস আলো উৎপন্ন করে। তাই হোয়াইট ডোয়ার্ফও উজ্জ্বল দেখায়। আর ধিরে ধিরে ঠান্ডা হয়ে একটি আরও কম উজ্জল হয়ে পরে। শেষে একটি কালো বলের মত অংশে পরিনত হয় যাকে বলা হয় ব্ল্যক ডোয়ার্ফ।

হোয়াইট ডোয়ার্ফ থেকে ব্ল্যক ডোয়ার্ফ হতে একটি নক্ষত্রের কোরের এক ট্রিলিয়ন বছর সময় লাগতে পারে। আর ব্রহ্মান্ডেরই আনুমানিক বয়স মাত্র ১৩.৭৭বিলিয়ন বছর। তাই ব্রহ্মান্ডে অনেক হোয়াইট ডোয়ার্ফ থাকলেও এখনও একটিও ব্ল্যক ডোয়ার্ফ তৈরি হয় নি।জেনে অবাক হবেন আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ৯০শতাংশ নক্ষত্রের মৃত্যুর পর হোয়াইট ডোয়ার্ফেরই রূপ নেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.