অস্ত্র ব্যবসায় প্রচুর দেশকে পেছনে ফেলবে তুরস্ক!
নিউজ ডেস্কঃ বিশ্ব বাজারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহন করছে তুরস্ক। বিশেষ করে একাধিক ইসলামিক রাষ্ট্রের পাশে দাঁড়ানো। আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার যুদ্ধে তারা যে আজারবাইজানকে সাহায্য করেছে শুধু তাই নয় পাশাপাশি এই ইসলামিক দেশটিকে প্রচুর পরিমানে অস্ত্র বিক্রি করেছে, তবে এই তালিকাতে শুধু আজারবাইজান নয় তালিকাতে রয়েছে পাকিস্তানের মতো দেশও অর্থাৎ ভারতের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধ বাঁধলে যে তারা পাকিস্তানকে সাহায্য করবে তা বলাই বাহুল্য। আসলে তাদের এই সাহায্যের পেছনে ভাল করে দেখলে দেখা যাবে যে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য অস্ত্র ব্যবসা। অর্থাৎ আজারবাইজানকে যুদ্ধে সাহায্যের পাশাপাশি পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলার মধ্যে প্রধান কারন হল তাদের অস্ত্র ব্যবসা। সাম্প্রতিককালে আজারবাইজান থেকে শুরু করে পাকিস্তানের কাছে প্রচুর পরিমানে অস্ত্র বিক্রি করছে তুরস্ক। যার ফলে অস্ত্র ব্যবসাতে পৃথিবীর প্রচুর দেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে তারা।
২০২১ সালের প্রথম তিনমাসে আমেরিকার কাছে ৩৮৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে তুরস্ক। পাশাপাশি প্রচুর অর্ডার রয়েছে এখন তাদের হাতে।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২.৭২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বুভিন্ন দেশকে বিক্রি করেছে এই ইসলামিক দেশ।
২০২০ সালে করোনার কারনে অস্ত্র বিক্রি হ্রাস পেয়েছিল। তারা শেষ অর্থ বছরে প্রায় ১.৪১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ব্যবসা করেছে। তবে আমেরিকার এফ ৩৫ প্রোজেক্ট বাদ পড়ার কারনে বেশ কিছুটা ক্ষতি হয়েছে তাদের। বিশেষ করে তুরস্ক আমেরিকার এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের ল্যাণ্ডিং গিয়ার, ফিউসলেসসহ শতাধিক স্পেয়ার পার্টস তৈরি করে লকহীড মার্টিনের এভিয়েশন কর্পোরেশনের ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে রপ্তানি করত। আর সেই কারনে তাদের এই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তবে ২০২১ সালে তারা আবার বিরাটভাবে যে ব্যবসা করতে চলেছে তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। আমেরিকার সাথে সম্পর্ক খারাপ হলেও বর্তমানে আমেরিকাই তাদের থেকে সবথেকে বেশি অর্থের অস্ত্র ক্রয় করে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চে অর্থাৎ প্রথম ত্রৈমাসিকে ৩৮৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তারা রপ্তানি করেছে। যা ২০২০ সালের থেকে ৫৬% পর্যন্ত বেশি ছিল।
পাশাপাশি আজারবাইজানের মতো দেশকে তারা ১১৭ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছে। ৯০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অস্ত্র রপ্তানি করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে তুরস্কের সামরিক সাজ সরঞ্জাম আমদানিকারী দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এছারাও চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তুরস্কের সার্বিক অস্ত্র রপ্তানি ছিল প্রায় ৩০২.৫০ মিলিয়ন ডলার।
একাধিক সুত্রের খবর অনুযায়ী ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তুরস্কের বিশ্ব বাজারে অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানি আশ্চর্যজনকভাবে ২৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে তুরস্ক ইউরোপের প্রচুর দেশকে উন্নত বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানি প্রতিরক্ষা সামগ্রী এবং ডিফেন্স হার্ডওয়ার সিস্টেম তৈরি এবং রপ্তানিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০টি দেশের মধ্যে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে।
তুরস্কের যে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র গুলি রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি) বায়রাক্তার টিবি-২, আনকা-এস জাতীয় ড্রোন। সিরিয়া, লিবিয়া এবং নার্গানো-কারাবাখ যুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করায় বিশ্বে বর্তমানে এর চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়ে গেছে। তুরস্ক বর্তমানে তাদের নিজেদের প্রযুক্তির কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, যুদ্ধজাহাজ, ট্যাংক, মাল্টিপল রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস), গাইডেড এন্টি-ট্যাংক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল এবং বিভিন্ন ধরণের উচ্চ প্রযুক্তির ডিফেন্স সলিউশন সিস্টেম তৈরি এবং রপ্তানি করছে। একাধিক সুত্র মতে ২০২৫ সালের মধ্যেই তুরস্কের সার্বিক অস্ত্র রপ্তানি ৬.০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে চলেছে।