মুঘল রাজাদের কাছে পাঁচ হাজারের বেশি রমণী ছিল। কেন রাখতেন রমণীদের? কি নামে ডাকা হত?
আরবি ভাষা হারাম শব্দ থেকে এসেছে হারেম শব্দটি। আরবি ভাষা হারাম যার অর্থ হলো অবৈধ। তুর্কিরা শব্দটির সাথে লিক যোগ করে নেয়। ফলে তুর্কি ভাষায় বাড়ির যে অংশে মহিলারা থাকেন সেই অংশের নাম হয় হারেমলিক। পালি ভাষায় মহিলাদের আবাসস্থলকে বলা হয় ‘ইত্থাগারা’ (স্ত্রী আগার)’। পুরুষের বহুগামিতাকে প্রশয় ও লালন করার জন্য হারেমের উৎপত্তি হয়েছিল।
মুসলিম যুগের হারেম সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় ১৪শ শতাব্দী থেকে। দাক্ষিণাত্যের গুলবর্গ রাজ্যের অধিপতি ফিরোজ শাহ বাহমিনি এক দিনে তিনশত পত্নী গ্রহণ করেছিলেন। মুগল আমলে জেনানা বিভাগ নামে একটি আলাদা বিভাগই ছিল হারেমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য।
আবুল ফজল তার লেখায় জানিয়েছেন- আকবর এক বিশাল প্রাচীরবেষ্টিত ভবন তৈরি করিয়েছিলেন- যেখানে তিনি প্রায়ই বিশ্রাম নিতেন। তাঁর হারেমে পাঁচ হাজারের বেশি রমণী ছিল-যাদের প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত ছিল আলাদা-আলাদা কক্ষ।
হারেমের ভিতর যে অসহায় মেয়েরা ছিল তাদের দেখাশোনার জন্য নিয়োজিত ছিল শুধুমাত্র খোজা পুরুষ। তারা ছাড়া আর কেউ জেনানামহলে প্রবেশ করতে পারত না। বিভিন্ন রীতি ও নিয়মনীতির বেড়াজালে বন্দী ছিল হারেমের নারীরা। তাদের জন্য যে কক্ষগুলো বরাদ্দ ছিল তার সামনে ছিল ফুল বাগান, ঝরণা, চৌবাচ্চা, ছায়াবীথি, ফোয়ারা, নকল গুহা ইত্যাদি। নিজস্ব দাস ও দাসী ছিল তাদের।
রাজা-বাদশাদের চোখে যাদেরকে ভালো লাগতো সেইসব নারীদেরকে হারেমে নিয়ে আসা হতো। হারেম পরিপূর্ণ থাকতো নানা দেশের নানা জাতির রমণীতে। তাদের যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপারটি পুরোপুরি নির্ভর করতো রাজা-বাদশাহের খামখেয়ালের ওপর।
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে রাজা-বাদশাদের চোখে যাদেরকে ভালো লাগতো সেইসব নারীদেরকে হারেমে নিয়ে আসা হতো। কিন্তু, বুদ্ধদেবের আমলে এই যাচাই-বাছাই চলতো কিভাবে তা জানা যায় না। তবে পরবর্তীকালের অবস্থা দেখে মনে হয় সেকালেও চলেছে একই নিয়ম।
সুন্দরী মেয়েদের যোগাড় করা হয়েছে দালাল, উমেদার ও বিদেশী বণিকদের মাধ্যমে, যুদ্ধবন্দিদের- এর মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে, পিতা-মাতাদের কাছ থেকে কিনে এবং অন্যান্য উপায়ে। হঠাৎ কোথাও দেখে ভালো লেগে-যাওয়া মহিলাদেরও রাজা-বাদশারা নিয়ে এসেছেন হারেমে।
তবে হারেমের জীবন রাজাদের জন্য যে সবসময় আনন্দ বয়ে আনতো তা নয়। কখনো কখনো হারেমের অভ্যন্তরে সংঘটিত ষড়যন্ত্র রাজা-বাদশাহের জন্য প্রাণঘাতী রূপও লাভ করতো।