আমেরিকার থেকে যুদ্ধবিমান ক্রয় করলে কি ধরনের যুদ্ধবিমান ক্রয়?
নিউজ ডেস্কঃ ভারত-চীন সংঘর্ষের ফলে ডিফেন্সের ক্ষেত্রে যে বাড়তি নজর দেবে তা একাধিক সমীক্ষায় উঠে এসেছিল। কারন দুর্গম পার্বত্য এলাকায় একাধিক পরিস্থিতির কথা বিচার করে এই কথা বলাই যেতে পারে যে পরবর্তীতে ভারতের ডিফেন্স চুক্তি করার সময় এই ব্যপারটা মাথায় রাখবে। এবং খুব শীঘ্রই ডিফেন্সের জন্য প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করবে ভারত। আর সেই মতো যদি আবার বিনিয়োগ করে তবে কি ধরনের যুদ্ধবিমান ভারতের জন্য উপযুক্ত হবে?
ইতিমধ্যে ভারতের হাতে ফ্রান্স থেকে রাফালে আসতে শুরু করেছে। এতদিন বিশাল পরিমাণে রাশিয়ান যুদ্ধবিমান ব্যবহার করত ভারত, পাশাপাশি ফ্রান্সের মিরাজ ২০০০ র মতো যুদ্ধবিমান ও ব্যবহার করেছে, তবে এখনও পর্যন্ত আমেরিকার যুদ্ধবিমান গুলি ভারত ব্যবহার করেনি। তবে আমেরিকার থেকে যুদ্ধবিমান যদি ব্যবহার করে তবে কি ধরনের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করবে ভারত?
রাফালে হাতে আসার পর এবার আরও যুদ্ধবিমান ক্রয় করতে চলেছে ভারত। তবে আবারও কি রাফালে ক্রয় করবে নাকি আমেরিকার এফ ১৫ এক্স র মতো বিমান ক্রয় করার কথা ভাববে?
রাফালে বা এই দুই ধরনের বিমানের কথা যদি ধরা যায় তবে ভারতের জন্য কোন বিমান বেশি লাভদায়ক হবে?
F-15EX ক্রয় করলে বিরাট বিপদে পড়বে চীন। কারন চীনের একাধিক এলাকা উচু যেখানে যুদ্ধবিমান গুলি ডেপ্লয়মেন্ট করার জন্য চীনের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। ৩৫-৫০ টি যুদ্ধবিমান একবারে তিব্বতে মোতায়েন করতে পারবে। কারন এয়ার ডেন্সিটি(বায়ুর ঘনত্ত্ব) র জন্য চীনের যুদ্ধবিমান গুলির পেলোডে একাধিক অসুবিধার সম্মুখীন হবে। সেক্ষেত্রে ভারত যদি ১৫ইএক্স ডেপ্লয় করে তাহলে চীন ধূলিসাৎ। এফ-১৫ইএক্সের ১৩টন লোড নিয়ে উড্ডয়ন করতে পারে পাশাপাশি লো ফ্লাই করতে সক্ষম। চীনের বিরুদ্ধে এফ-১৫ইএক্স ভারতকে বিরাট সুবিধা দেবে কারন স্ট্রাইক পারফর্মেন্স বৃদ্ধি করে।
এফ-১৫ইএক্স কে এখনও পর্যন্ত কোনও যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে পারেনি। এয়ার টু এয়ার ফাইটে ১০০শতাংশ সফলতার পাশাপাশি এফ-১৫ইএক্স ১০৪ টি বিমান ধ্বংস করেছে। সেক্ষেত্রে চীন এবং পাকিস্তান যে বড় বিপদের মুখে পরবে তা বলাই বাহুল্য।
এটি একটি মার্কিন যুদ্ধবিমান। আমেরিকার সাথে যুদ্ধাস্ত্র চুক্তি এবং রাশিয়ার সাথে চুক্তির মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য হল আমেরিকার কোনো জিনিসের দাম যদি ১০টাকা বলে সেক্ষেত্রে দাম ১০টাকাই হয়। অতিরিক্ত কোনও খরচ সেক্ষেত্রে নেই। আমেরিকা এবং ইজরায়েল নিজেদের জিনিস বিক্রয় করার ক্ষেত্রে খুব স্বচ্ছ। অপরদিকে রাশিয়ার সাথে চুক্তির পর একটা পার্থক্য হয়ে যায়।
আমেরিকার বোয়িং কিংবা লকহিড মার্টিনের ডেলিভারির গতি বেশ দ্রুত বাকি দেশ গুলির থেকে। চুক্তির সময় অনুযায়ী জিনিস ডেলিভারি করা তাদের একটা ভালো গুন। সাথে মেইন্টেন্যন্সের ঝামেলা বেশ কম। এককথায় দ্রুত ডেলিভারি আর চুক্তির কারনে আমেরিকা বরাবর এগিয়ে থাকে।
২২টি এয়ার টু এয়ার মিসাইলের প্যকেজ অন্যকোনো যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে দেওয়া সম্ভব নয় একমাত্র এফ-১৫ ছাড়া।
৬০,০০০ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এই যুদ্ধবিমানটি। এফ-১৫ এক মাত্র বিমান যার স্যাটেলাইট শুট ডাউন করার রেকর্ড রয়েছে। হিমালয়ের অঞ্চলে এই ফাইটার হাই অলটিটিউড পারফর্মেন্সে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকবে।
এর রেডার বেশ উন্নত। প্রায় ১৫০০ TR-Modules ব্যবহার করে। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র টার্গেটকে এটা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। পাশাপাশি অসাধারণ SAR ম্যপিং করতে পারে।
এগুলি হল এফ-১৫ইএক্সের ভালো দিক যা বোয়িংকে চুক্তি জিততে সাহায্য করবে। এবার আসা যাক রাফালেতে।
রাফালের সবথেকে বড় সুবিধা হল ভারত ইতিমধ্যে রাফাল ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। এরপর অন্য যুদ্ধবিমান ক্রয় করার ক্ষেত্রে বিমানবাহিনী রাফালকেই বেশি গুরূত্ব দেবে ভ্যরাইটি না বৃদ্ধি করে মেইন্ট্যনেন্সের সুবিধা আনতে।
রাফালের নৌবাহিনীর জন্য আলাদা ভ্যরিয়েন্ট রয়েছে যা এফ-১৫ এর কোনো নেভাল ভ্যরিয়েন্ট নেই। এক্ষেত্রে বিরাট বড় অসুবিধা এফ-১৫ র ক্ষেত্রে। ভারত এফ-১৫ নিলে নৌবাহিনীর জন্য অন্য যুদ্ধ বিমান নিতে হবে। অর্থাৎ একদিকে বিমান বাহিনীতে এফ-১৫ ও রাফাল। আবার নৌবাহিনীতে সুপার হর্নেট বা হয়তো রাফাল-এম। মোটামুটি ২-৩ রকমের বিমান বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে।
ভারত এর আগে কোনও আমেরিকান যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে নি। সেক্ষেত্রে ফ্রান্সের অনেক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। তাই রাফালে দিকে যে ঝোক বেশি থাকবে তা বলাই বাহুল্য।
আমেরিকান যুদ্ধবিমান ভারতে আসলে সব থেকে বড় অসুবিধা হবে নিজেদের নেটওয়ার্কে তাকে ইনস্টল করা। কারন ভারতের বেশির ভাগ ফাইটার রাশিয়ান। সংখ্যাটা ৩০০ র অধিক। সেখানে আমেরিকান যুদ্ধবিমান এলে তাকে একই নেটওয়ার্কে আনা অসম্ভব ব্যপার হয়ে যাবে। আর সব থেকে বড় কথা ভারতের S-400 এয়ার ডিফেন্সের IFF সেন্সর (যা শত্রু ও মিত্র টার্গেট চিহ্নিত করে) এফ-১৫কে শত্রু হিসাবে পর্যবেক্ষণ করার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে ফ্রেন্ডলি ফায়ারে শুট ডাউন হতে পারে এফ-১৫।
কিন্তু রাফালে সেরকম সম্ভাবনা অনেকটা কম। পাশাপাশি ফ্রান্স এবং রাশিয়া দুই দেশই এটি সমাধান করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে ইতিমধ্যে।
এফ-১৫ তে রাশিয়ান ডিএনএ তে তৈরি ব্রাহ্মোসের মতো অত্যাধুনিক মিসাইল থাকতে পারবে না। কিন্তু রাফালে তা সম্ভব।
এফ-১৫ তে মিটিওর আর স্টোর্মশ্যডো মিসাইলের ব্যপারটা ধোয়াশা রয়েছে যথেষ্ট। যে রেডার যত শক্তিশালী হোক। তার কাজ শুধু টার্গেট দেখা আর মিসাইল গাইড করা। কিন্তু মিসাইল যদি লং রেঞ্জ আর উন্নত না হয় সেক্ষেত্রে রেডারের মূল্য হ্রাস পায়। তাই মিটিওর যে যুদ্ধবিমানে থাকবে সেই যুদ্ধবিমানের দাম এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যাবে।
রাফালের লো ফ্লাই এর সক্ষমতা বেশ খানিকটা বেশি।
রাফাল একমাত্র 4.5th Gen ফাইটার যাতে সুপার ক্রুজ সক্ষমতা আছে। যদিও লিমিটেড সময়ের জন্য। যা এক বিরাট সুবিধা।
ডেসল্ট রাফালের অনেক প্রযুক্তি ভারতকে দিতে রাজি। রাফাল তৈরি হবে ভারতে। সেক্ষেত্রে বোয়িং র কোনও স্বচ্ছতা এখনও নেই। তবে এরকম সুযোগ বোয়িং দিতে পারে ।
রাফাল ক্রয় করলে নতুন ইঞ্জিন তৈরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন রিসার্চ ডেভেলপমেন্টের জন্য ফ্রান্স ভারতকে পূর্ন সহায়তা করবে। সেটা আমেরিকার ক্ষেত্রে অতটা সুবিধাজনক নয়।
সব থেকে বড় পয়েন্ট। রাফালের সাথে ভারত পাবে নিউক্লিয়ার স্ট্রাইক কেপেবিলিটি। এটা উপেক্ষা করার ক্ষমতা নেই বিমানবাহিনীর। এফ-১৫ এর সাথে এখানে বিশাল ফারাক রাফালে।
এগুলি বড় পার্থক্য তৈরি করে দুটি অপশানের মধ্যে। তবে এখনও রাফালকে সেরা প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যেতে পারে। একাধিক বিশেষজ্ঞদের মতে এই টেন্ডারে রাফালের জায়গা এখনও সব থেকে ওপরে। তবে রাফালের পর এফ-১৫ইএক্স বেশ পছন্দের, কারন এর অসাধারণ লোড ক্যপাসিটি আর কিল রেকর্ডের জন্য।