ভারত

কাশ্মীর দখল করা পাকিস্তানের পক্ষে অসম্ভব। কেন জানেন?

রাজেশ রায়:- ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হবার পর এখনও পর্যন্ত ভারত পাকিস্তানের মধ্যে চারটি যুদ্ধ হয়েছে যার প্রত্যেকটিতেই শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রথম থেকে একটাই লক্ষ কাশ্মীর দখল করা, যার জন্যই এত যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাবার আগে ভারত পাকিস্তান নামে দুটি দেশ গঠন করে দিয়ে যায়। কাশ্মীরের রাজা হরি সিং প্রথম থেকেই স্বাধীন কাশ্মীর পন্থি ছিল, তিনি চাইছিলেন কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তান কেন পক্ষেই যোগ না দিয়ে স্বতন্ত্র থাকতে। কিন্ত পাকিস্তানের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সেই বছরই ২২ অক্টোবর পাকিস্তানি সেনা ছদ্মবেশে কাশ্মীরে আক্রমন করে যাকে অপারেশন গুলমার্গ নাম দেয় পাকিস্তান। এই জন্য ২২ অক্টোবরকে কাশ্মীরের ইতিহাসে কালো দিন বলা হয়। এরপর পাঁচ দিনে পাকিস্তানি সেনা উরি হয়ে বারমুলা পর্যন্ত দখল করে নেয়। এরপর হরি সিং ভারতে যোগদানের চুক্তি করে এবং ২৭ অক্টোবর শ্রীনগরে ভারতীয় সেনাবাহিনী গিয়ে পৌঁছায় এবং যুদ্ধ শুরু হয় উভয় পক্ষের। স্থানীয় কাশ্মীদের একটি সেনা ছিল যার নাম ছিল সালামতি ফৌজ এবং এর নেতৃত্বে ছিল শেখ আবদুল্লাহ এবং সেসময় তিনি ভারতের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। কাশ্মীরের অনেকাংশ থেকে পাকিস্তানি সেনাদের হটাতে সেসময় স্থানীয় কাশ্মীরীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেসময় পাকিস্তানের তো আশা পূরন হয়নি তারপর আবারও পাকিস্তান চেষ্টা করে কাশ্মীর দখলের। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান অপারেশন জিব্রাল্টার শুরু করে কাশ্মীর দখলের জন্য কিন্তু এবারও ব্যার্থ হয়। তবে বর্তমানে ভারতীয় মিলিটারি অনেক শক্তিশালী এবং আর্টিকেল ৩৭০ তুলে নিয়ে কাশ্মীর ও লাদাখকে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করে দেওয়া হয়েছে যার জন্য এখন কাশ্মীর দখল করা পাকিস্তানের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। 

১৯৪৭ সালে প্রথম ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তান ভারতের কাছে পরাজিত হয় কিন্তু কাশ্মীর সমস্যা জাতিসংঘে এই সময় তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘ নির্দেশ দেয় পাকিস্তানকে তাদের সেনাবাহিনী সরিয়ে নেবার এবং তারপর ভারতও তাদের সেনা সরিয়ে নেবে এবং কাশ্মীরে ভোট হবে। কিন্তু আজও কাশ্মীরে ভোট হয় নি এবং ভবিষ্যতেও হবেনা কারন সবচেয়ে বড় বাধা পাকিস্তানই দেয়। পাকিস্তান বারবার প্রক্সি ওয়ারের মাধ্যমে কাশ্মীরে জঙ্গি প্রবেশ করিয়ে পুরো উপত্যকার শান্তি বিঘ্নিত করে। পাকিস্তানের অধীনে কাশ্মীরের যে অংশ আছে তাকে পাকিস্তান অকুপাইড কাশ্মীর বা পিওকো বলা হয় কিন্তু পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সহানুভূতি পাবার জন্য একে আজাদ কাশ্মীর বা স্বাধীন কাশ্মীর বলে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের কাছে সুযোগ হাত ছাড়া হবার পর পাকিস্তান আবার নতুন করে ১৯৬৫ সালে আক্রমন করে। তবে এর আগে দুই দেশে কেমন পরিস্থিতি ছিল সেটা আগে জানা যাক। ১৯৫০ সালের পর থেকে ভারতের অগ্রগতি শুরু হয়। জহরলাল নেহেরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, বি আর আম্বেদকরের মতন আরও অনেক ব্যাক্তিত্ব ভারতের উন্নতির জন্য একাধিক পরিকল্পনা তৈরি করেন। ভারতের সংবিধান তৈরি হয়, পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরি হয়, কৃষি, ভূমির জন্য আলাদা আইন তৈরি হয়। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হয় ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য গঠন করা হয়। সব মিলিয়ে ভারতের আর্থিক বিকাশ ঘটে এবং ভারতের জিডিপি বাড়তে থাকে। এই সময় ভারতের সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। 

অন্যদিকে আমেরিকা সহ ইউরোপ পাকিস্তানকে সমর্থন করত কারন আমেরিকা ও ইউরোপ ভাবত পাকিস্তান ইসলামিক দেশ সেই জন্য পাকিস্তান হয়ত অগ্রগতি করবে কারন এখানে একটাই ধর্ম ও ভাষার মানুষ আছে। অন্যদিকে ভারতে নানান ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা রয়েছে যার কারনে পশ্চিমারা ভাবত ভারত হয়ত ভেঙে যাবে বা অস্থিরতা দেখা দেবে। কিন্তু ইউরোপীয়ান ভুলে গেছিল ভারতের ইতিহাসের কথা। আধুনিক ইতিহাস হয়ত ৭০-৭৫ বছরের পুরোনো কিন্তু ভারতের ইতিহাস অনেক অনেক পুরোনো। প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে ভারতে ভিন্ন জাতি, ধর্মের লোক বাস করে যাদের সংস্কৃতি ও ভাষা একে অন্যের থেকে ভিন্ন। এইজন্য ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ ভারত সম্পর্কে বলেছিলেন বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। সেই সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই পুরো পাকিস্তানই ভারতের অংশ ছিল। আফগানিস্তানও ভারতের অংশ ছিল তবে আফগানিস্তান অনেক আগেই ভারত থেকে আলাদা হয়ে গেছিল। ভারতের অনেক রাজবংশ যেমন মৌর্য, মারাঠা এবং শিখরাও আফগানিস্তানের কীছু অংশ দখল করেছিল। ১৯৬১ অবধি সব ভালোই চলছিল কিন্তু ১৯৬২ সালে ভারত চীন যুদ্ধের পর থেকে আকসাই চীন চীনের দখলে যায় ফলে কাশ্মীর সমস্যায় পাকিস্তানের পাশাপাশি এবার চীনও যুক্ত হয়। তবে যুদ্ধের ফলে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি থমকে যায় এবং ভারতের জিডিপি কমতে থাকে। এইসময় পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন ছিল? পরবর্তী অংশ খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে…।।

Leave a Reply

Your email address will not be published.