গৃহ যুদ্ধ থামাতে কত হাজার ব্যাটেল ট্যাংকার নষ্ট হয়েছিল রাশিয়ার?
নিজস্ব সংবাদদাতা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে চলা কোল্ড ওয়ারের সময় প্রযুক্তিগত দিক থেকে অসাধারণ উন্নতি করেছিল রাশিয়া। এই সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ট্যাংক ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি সর্বশেষ ট্যাংক টি-৮০ মেইন ব্যাটল ট্যাংক। আজ থেকে বহু বছর আগে তৈরি হলেও এই ট্যাংকের ছিল বেশ কিছু অসাধারণ বিশেষত্ব। প্রচলিত ডিজেল ইঞ্জিনের পরিবর্তে তৈরির পর এতে ব্যবহার করা হয়েছিল গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিন। সবচেয়ে বড় কথা হল এর গতিবেগ। সেইসময় নাকি ঘণ্টায় ৭০কিলোমিটার গতিবেগ ছিল এই ট্যাংকের। ভাবা যায়?
তবে,ইউক্রেন পরবর্তীকালে এই ট্যাংকেরই আদলে গড়া তাদের টি-৮০ইউ ডি ভার্সনে গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিনের বদলে ব্যবহার করে ডিজেল ইঞ্জিন। টি-৮০ মেইন ব্যাটল ট্যাংকের অপর এক বিশেষত্ব হলো শত্রু নিকাশের জন্য এতে সংযুক্ত থাকা ১২৫ এমএম স্মুথবোর ক্যানন, ৭.৬২ এমএম হেভি মেশিনগান এবং ১২.৭ এমএম এন্টি-এয়ারক্রাফট হেভি মেশিনগান।
এছাড়াও দরকার মতো প্রয়োজনীয় পরিস্থিতিতে এটিকে যাতে শক্তিশালী এবং কার্যকরী মেইন ব্যাটল ট্যাংকে পরিণত করা যায় সেই জন্য এতে ফায়ার করার জন্য সংযুক্ত থাকতো এক অটোলোডার সিস্টেম। তার ওপর স্টিল এবং কম্পোজিট দিয়ে তৈরি আর্মার আলাদা করে অধিক সুরক্ষা দিত এই ট্যাংককে। ৪২.৫ টন ওজনের এই এক একটি টি-৮০ মেইন ব্যাটল ট্যাংকের তখনকার দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রয়মূল্য ছিল প্রায় ৩.০০ মিলিয়ন ডলার ছিল।
তারপর কেটে গেছে বহু বছর। কিন্তু, এখনো রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে এই ধরনের প্রায় ৩,০০০ টি-৮০ মেইন ব্যাটল ট্যাংক রিসার্ভে রয়েছে এবং সেনাবাহিনীর সার্ভিসে রয়েছে প্রাই ৫০০ টি ট্যাংক। শুধু রাশিয়ার সেনাবাহিনীতেই নয়। ইউক্রেন আর্মেনিয়া সহ আরো বেশ কিছু দেশের সেনাবাহিনীতে এখনো দিব্যি বহাল তবিয়তে সার্ভিসে রয়েছে এই ট্যাংক। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীতে টি-৮০ সিরিজের মেইন ব্যাটল ট্যাংক রয়েছে ৩৫০টি, পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ৩২০টি, আর্মেনিয়ার কাছে ২০টি, বেলারুশের কাছে ৭০টি, সাইপ্রাসের কাছে ৪১টি, মিশরের কাছে ৩৪টি, ইয়েমের কাছে ৯৭টি, কাজাকাস্তানের কাছে ৫টি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে রয়েছে ৩৫টি। তবে শক্তিশালী হলেও মোটেও অপ্রতিরোধ্য নয় এই ট্যাংক। রাশিয়া চেচনিয়ার বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রেরণ করেছিল বিপুল সংখ্যায় শক্তিশালী টি-৮০ মেইন ব্যাটল ট্যাংক। কিন্তু বদলে বড়সরো বিপদের মুখে পড়তে হয় তাদের। রাশিয়ার সেনাবাহিনী চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনী দখল করতে গেলে শুধুমাত্র একমাসের মধ্যেই প্রায় ২৩০টির কাছাকাছি টি-৮০ ট্যাংক ধ্বংস হয়ে যায় এবং দুবার বিদ্রোহ দমনের ব্যর্থ চেষ্টাই রাশিয়াকে হারাতে হয়েছে মোট প্রায় হাজার ট্যাংক ও সামরিক যান।