আমেরিকার এফ ১৬ এবং রাশিয়ার মিগ ২৯। যুদ্ধের ময়দানের এগিয়ে থাকবে কে?
নিউজ ডেস্কঃ পশ্চিমা দেশের যুদ্ধবিমানের সাথে পূর্বের দেশগুলির ফাইটার বিমানের তুলনা প্রায়শয় করা হয়ে থাকে। আর হবেই বা না কেন যখন এই সব দেশ নিজেদের জেট নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে হুমকি দেয়।
মার্কিন এফ ১৬ তৈরি করা হয়েছিল অর্থ সাশ্রয় করার জন্য। হালকা এবং এই মাল্টিরোল এই বিমান তৈরি করা হয়েছিল যাতে ব্যয়বহুল বিমান এফ ১৫ যুদ্ধবিমান গুলিকে সাহায্য করতে পারে। আর অন্যদিকে মিগ ২৯ হল এয়ার সুপেরিওটি ফাইটার জেট।
মিগ ২৯ এর ইঞ্জিনিয়াররা মূলত এর গতি,আক্রমনাত্নক ক্ষমতা, ইঞ্জিন, বেশি উচ্চতা যাওয়া এমন কি খারাপ রানওয়ে থেকে যাতে উড্ডয়ন করতে পারে সেই দিকগুলি মাথায় রেখেই তৈরি করেছিল।
মিগ ২৯ এর দুটি শক্তিশালী ইঞ্জিন রয়েছে যার ফলে এই বিমানের ক্ষমতা বেশি। এই দুই বিমানে ভার্টিক্যাল stabilizer আছে যার ফলে পাইলট ইঞ্জিন চালু করার পর বিমানকে ব্যালেন্স করতে পারে। এফ ১৬ বিমানে একটি ইঞ্জিন তৈরি করার পাশাপাশি ককপিটকেও বেশ উন্নত করে তৈরি করেছে। এছাড়াও এর ককপিটে রয়েছে মাল্টিফাংশনাল ডিসপ্লে এবং খুবই শক্তিশালি অটোমেশন ব্যবস্থা।
অন্যদিকে মিগের এই সব ব্যবস্থা নেই। মিগ ২৯ এর সাথে এফ ১৬ এর তুলনা দেওয়া হয় কারন মিগ ২৯ সার্ভিসে আসে ১৯৮০ সালে আর ঠিক ওই সময়ই সার্ভিসে আসে এফ ১৬ এর “সি” ভার্সন।
এই দুই বিমানই অনেক দূর থেকে টার্গেটকে আট্যাক করতে পারেনা(১০০ কিমি)। যদি মিগ ২৯ এবং এফ ১৬ একে ওপরের দিকে উড়ে আসতে থাকে তাহলে সর্বপ্রথম মিগকে ডিটেক করতে পারবে এফ ১৬। যেহেতু এফ ১৬ এর রয়েছে মিগের থেকে আরোও ভালো রাডার।
এফ ১৬ এবং মিগ ২৯ এর মধ্যে যুদ্ধ লাগে এবং দুই পক্ষ যদি মিসাইল একে অপরের দিকে নিক্ষেপ করে তাহলে এই ক্ষেত্রে কে এগিয়ে থাকবে তা বলা বেশ মুশকিল। কারন কোনও পক্ষই তাদের মিসাইলের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করে নি। তবে একাধিক সূত্রের মতে এফ ১৬ এই দিক থেকেও এগিয়ে থাকবে কারন মার্কিন এয়ার টু এয়ার মিসাইল নিক্ষেপ করার পর গাইড করা যায়। যার ফলে পাইলট নিক্ষেপ করে অন্যদিকে চলে যেতে পারবে।
অন্যদিকে স্বল্প দূরত্বের ডগফাইটে মিগ ২৯ বরাবরই এগিয়ে থাকবে। কারন এই বিমান এফ ১৬ থেকে বেশি maneverable। আর ঠিক এই কারনটার জন্য মিগ ২৯ এবং সু ২৭ এয়ার শোতে খুবই ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারে।
এই দুই বিমানের মধ্যে কোনটি সেরা তা বলা বেশ কঠিন। দুটি বিমানই সেরা। তবে ক্যাননের ক্ষেত্রে এফ ১৬ প্রতি মিনিটে ফায়ার করতে পারে ৬০০০ রাউন্ড আর অন্যদিকে মিগ ২৯ করতে পারে প্রতি মিনিটে ১৫০০ রাউন্ড। অর্থ্যা এফ ১৬ বেশি করতে পারে। তবে মিগ ২৯ এর গুলির ক্যালিবার ৩০ মি:মি: আর অন্যদিকে এফ ১৬ এর গুলির ক্যালিবার ২০ মি:মি: । অর্থ্যা মিগ ২৯ গুলির আঘাতে প্রতিপক্ষ বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে এফ ১৬ এর তুলনায়। মিগ ২৯ এর আরেকটা মজার দিক হল “ইনফ্রারেড সার্চ এন্ড track” । আর ঠিক এই সুবিধার জন্য ভারতের সাথে মার্কিন বিমান বাহিনীর মহড়ার সময় ভারত অ্যামেরিকার এফ ১৬ কে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।
যুদ্ধের পরিসংখ্যানের দিকে তাকেলে এই ক্ষেত্রে এফ ১৬ আবার অনেক এগিয়ে। এফ ১৬ প্রতিপক্ষের ৯২ টি যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল মাত্র ১৩ এফ ১৬ ধ্বংসের বিনিময়ে। অন্যদিক মিগ ২৯ মাত্র ১৬ টি প্রতিপক্ষের যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল ২৮ টি মিগ ২৯ ধ্বংসের বিনিময়ে। অর্থ্যা মিগ প্রতিপক্ষের বিমান ধ্বংস করার চেয়ে নিজে বেশি ধ্বংস হয়েছে।
মিগ ২৯ এর পাইলটের হেলমেট হল “হেলমেট মাউনটেড ডিসপ্লে” অর্থ্যা পাইলট যেদিকে তাকাবে টার্গেটিং কম্পিউটার সেদিকে মিসাইলে টার্গেট করাবে।
যদি একজন পর্যটককে প্রশ্ন করা হয় এই দুটি বিমানের মধ্যে সেরা কোনটি? সেক্ষেত্রে মিগ ২৯ ই জেতার সম্ভবনা বেশি। কারন মিগ ২৯ এর একটা ভার্সন আছে মিগ ২৯ইউবি(UB)। যে বিমানের দুটি সিট রয়েছে পাইলটের জন্য।
রাশিয়া বেড়াতে গিয়ে যদি আপনি মিগ বিমানে চড়তে চান, তা সম্ভব। রাশিয়ার বিমান বাহিনীকে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ দিলে আপনি মিগ ২৯ বিমানে চড়তে পারবেন। এবং পাইলট আপনাকে দূর দূরান্তে প্রচন্ড গতিবেগ নিয়ে উড়ে যাবে। পর্যটকরা তা করছেও।
এই দুটি বিমানের মধ্যে কোনটি সেরা সেভাবে বলা সম্ভব নয়, কারন পাইলটের দক্ষতাই পারে নিজ বিমানকে শ্রেষ্ঠ করতে।