ভারত

গালওয়ান ভ্যালির সংঘাতের পর চীনের বিরুদ্ধে কোন কোন ক্লাসের কামান মোতায়েন?

নিউজ ডেস্কঃ লাদাখে ভারত-চিন সীমান্তে ক্রমশ বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। ভারতের সঙ্গে চিনের সংঘাত দীর্ঘস্থয়ী। প্রায়ই লাদাখ সীমান্তে দেখা যায় চিনা সেনার অগ্রাসন। সীমান্তে চিন সেনার অবস্থান নিয়ে সমস্যা মেটানোর জন্য ভারত বহুবার চীনের সঙ্গে সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরের বৈঠকে বসলেও ফল মেলেনি কিছুই। তবে, আছে আশার আলো। উচ্চপদস্থ সরকারি সূত্রের খবর গালওয়ান ভ্যালির সংঘাতের পর আবার চীনকে কড়া সতর্ক বার্তা দেওয়ার সময় এসে পড়েছে। 

সেনা সূত্রে জানা গিয়েছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পারে একাধিক মিসাইল মোতায়েন করেছে চীন। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যুত্তর দিতে মাঠে নেমে পড়েছে ভারতীয় সেনা। চিনকে অবাক করে লাদাখ সীমান্তে লং রেঞ্জ মিসাইল নির্ভয় মোতায়েন করেছে ভারত। এই সারফেস টু সারফেস মিসাইল কম শক্তিশালী নয়। সেনা আধিকারিকদের মতে নির্ভয় প্রায় হাজার কিমি দূরে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। মাটি থেকে ১০০ মিটার- ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত ওপরে উঠতে পারে এই মিসাইল।

শুধু মিসাইলই নয়, সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে অগনতি সেনা এবং ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট। চীনের অগ্রাসনকে যে হালকা ভাবে নেওয়া হচ্ছে না তা প্রস্তুতির মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। উচ্চপদস্থ সেনা আধিকারিকদের মতে চীনের উস্কানির যোগ্য জবাব দিতে সম্পূর্নই ভাবে প্রস্তুত ভারত।

বোফর্স কেলেঙ্কারির পর থেকে ভারতের হাতে নতুন কামান না এলেও বছরখানেক আগে আমেরিকা থেকে এসে পৌঁছানো 145 M-777 আল্ট্রা লাইট কামান ই এবার চীনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় ভারতের এক বিশাল হাতিয়ার। চীনের অগ্রশনের কথা মাথায় রেখেই পোখরান রেঞ্জে বিগত বেশ কয়েকমাস ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয়েছে এই কামানের ওপর।সেনা সূত্রে খবর যাবতীয় পরীক্ষা অনায়াসেই পাস করে গেছে 145 M-777 আল্ট্রা লাইট। ভবিষ্যতে যুদ্ধের দিকে পরিস্থিতি এগোলেও চীনের সামরিক শক্তি ক্ষুন্ন করতে সম্পূর্ন ভাবে প্রস্তুত ১৪৫ M-৭৭৭।

২০২১সালের মধ্যে আরো ১৪৫টি কামান প্রস্তুত থাকবে যেকোনো যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গ দিতে। যার মধ্যে প্রথম ২৫টি কামান  আমেরিকা থেকে আনা হলেও বাকি ১২০টি মোদী সরকারের মেক ইন ইন্ডিয়া স্লোগানকে রূপকার করতে তৈরি করে হবে ভারতেই। এখনও অব্দি পাওয়া খবর অনুযায়ী BAE সিস্টেমের অধীনে মাহিন্দ্রা ডিফেন্সের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ৪০টি ভারতীয় সংস্থার উদ্যোগে তৈরি করা হবে কামানগুলি।

মূলত চিন সীমান্তে মোতায়েন করা মাউন্টেন স্ট্রাইক কর্পস ব্যবহারের জন্যই তৈরি করা হচ্ছে এগুলি৷ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রজেক্ট শেষ করার জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত সরকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করবে৷ প্রজেক্ট এর কাজ শেষ হলে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্থাপন করা হবে M-৭৭৭ কামান।

শক্তিশালী তো বটেই তার সাথে এই কামানের রয়েছে আরো এক বিশেষত্ব যা একে অন্য কামানের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে অনেকটাই। তা হলো এর হালকা ওজন। জানলে অবাক হবেন টাইটেনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের সংমিশ্রনে তৈরি M-৭৭৭ কামানগুলির ওজন মাত্র ৪,২১৮ কেজি৷ ফলত, লাদাখ কিংবা কারগিলের মতো উচ্চ রণক্ষেত্রে খুব সহজেই হেলিকপ্টারের সাহায্যে  কামানগুলিকে নিয়ে গিয়ে মোতায়েন করা সম্ভব৷

প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বের বিভিন্ন রণক্ষেত্রে প্রায় ১,০৯০টিরও বেশি M777 কামান মোতায়েন করা রয়েছে ৷ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা আফগানিস্তান ও ইরাকে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাধারণত এই কামান গুলি ই ব্যাবহার করে।

নতুন কামান ও অস্ত্র এ সজ্জিত হয়ে ভারতীয় সেনা এবার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। চিনকে এক প্রকার সতর্কবার্তা শুনিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতের তরফ থেকে। নয়াদিল্লি বিবৃতিতে জানিয়েছে চিন নিয়ন্ত্রণরেখা পার করলেই আত্মরক্ষার খাতিরে ভারতীয় সেনা তাদের দিকে গুলি চালাতে বাধ্য হবে। সুতরাং সেই ভুল যেনো চিন সৈন্য না করে। ভারত যে কোনো ভাবেই চীনের কোনো রকম উস্কানি মূলক কাজ বরদাস্ত করবে না তাও পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় এদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.