মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়
ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে যার কারনে ভারত সরকার ক্রমাগত নতুন পরিকাঠামো নির্মান ও পুরোনো পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রজেক্ট শুরু করেছে। বিশেষ করে জনসংখ্যার ভারে শহরাঞ্চলের পরিকাঠামো ব্যবস্থার উন্নয়ন সবচেয়ে বেশী দরকার কারন গ্রামাঞ্চল থেকে কর্মের খোঁজে বহু মানুষ শহরাঞ্চলেই যায়। ভারত সরকার শহরাঞ্চলে ট্রাফিক ব্যবস্থা ও পরিবেশ দূষন নিয়ন্ত্রনের জন্য ভারতের বহু শহরে মেট্রো প্রজেক্ট শুরু করেছে। প্রতিবছর নতুন কোনও শহরে মেট্রো প্রজেক্ট শুরু হচ্ছে যাতে ভারতে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী জানিয়েছেন আগামী দেড় বছরে শহরাঞ্চলে মেট্রোরেল পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক হবে ভারতের। মেট্রোরেল নেটওয়ার্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকার যে কাজ করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
ভারতে প্রথম মেট্রোরেল বা পাতাল রেলের সূচনা হয় কলকাতা মেট্রোরেলের মাধ্যমে। ১৯৭১ সালে মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট মাস্টার প্ল্যানে কলকাতাতে মেট্রোরেল তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। এর তেরো বছর পর ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর ভারতের মধ্যে কলকাতায় প্রথম মেট্রোরেল শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে কলকাতায় তিন থেকে চার কিলোমিটার পর্যন্ত মেট্রোরেল চালানো হত। এরপর ধাপে ধাপে ভারতের অনেক শহরে মেট্রোরেল শুরু করা হয়েছে। হরদীপ সিং পুরী জানিয়েছেন বর্তমানে ভারতের কুড়িটি শহরে ৮৭২ কিলোমিটার লম্বা মেট্রোলাইন রয়েছে। ভারতের পনেরোটি বড় শহর কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, আহমেদাবাদ, জয়পুর, গুরুগ্রাম, মুম্বাই, নয়ডা, কোচি, লখনউ, নাগপুর, কানপুর এবং পুনেতে বর্তমানে মেট্রোরেল রয়েছে। এসব মেট্রোরেলে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন শহরে এক ডজনের বেশী প্রজেক্ট চালু রয়েছে যাতে আগামী কয়েক মাসে আরও অনেক মেট্রো লাইন শুরু হবে। দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, কলকাতা, চেন্নাই, কোচি, মুম্বাই, নাগপুর, আহমেদাবাদ, গান্ধিনগর, পুনে, কানপুর, আগ্রা, ভোপাল, ইন্দোর, পাটনা, সুরাট এবং মেরুটে ৯৮৮ কিলোমিটার লম্বা মেট্রো লাইন তৈরির কাজ চলছে। এছাড়াও চন্ডীগড়, কটক, ভুবনেশ্বর, থানে, কোয়েম্বাটুর ও মাদুরাইয়ে নতুন মেট্রো প্রজেক্ট তৈরির পরিকল্পনায় সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছে ভারত সরকার। এছাড়াও প্রয়াগরাজ, গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, সেলাম, বিশাখাপত্তনম, গৌহাটি, গ্রেটার গোয়ালিয়র, বারেলি, রাঁচি, ভাবনগর, জামনগর, রাজকোট, ভদোদরাতে ভবিষ্যতে মেট্রো লাইন তৈরি করা হবে। সম্প্রতি ব্যাঙ্গালোর মেট্রোর কৃষ্ণরাজপুরা ও বাইপ্পানাহল্লির মাঝে ২.১ কিলোমিটারে লম্বা লাইনে বেন্নিগানাহল্লি স্টেশন এবং চাল্লাগহাট্ট থেকে মেট্রো লাইন ২.০৫ কিলোমিটার বাড়িয়ে কেনগেরি স্টেশন পর্যন্ত করা হয়েছে।
ব্যাঙ্গালোর মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেড বা বিএমআরসিএলের তথ্য অনুযায়ী এই দুই নতুন লাইন তৈরি হওয়ায় হোয়াইট ফিল্ড থেকে চাল্লাগহাট্ট পর্যন্ত ৪৩.৪৯ লম্বা বেগুনী লাইন সম্পূর্নভাবে তৈরি হয়ে গেছে যাতে মোট ৩৭ টি স্টেশন রয়েছে। ২০২৪ এর মধ্যে ভারতে ১,১০০ কিলোমিটারের বেশী লম্বা মেট্রো লাইন তৈরি হয়ে যাবে যা ভারতকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক বিশিষ্ট দেশে পরিনত করবে। শহরকে দূষনমুক্ত রাখতে এবং পরিবহন ব্যবস্থা আরও সহজ করতে ভারত সরকার আগামী সাত বছরে মেট্রো লাইন নেটওয়ার্ককে দুই হাজার কিলোমিটার লম্বা বিস্তার ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিগত ত্রিশ বছরে গড়ে কুড়ি থেকে পঁচিশ কিলোমিটার লম্বা মেট্রো লাইন তৈরি করা হয়েছে কিন্তু আগামী সাত বছরে ভারতে ১৭৫ থেকে ২০০ কিলোমিটার লম্বা মেট্রো লাইন তৈরি করা হবে, এর ফলে ভারতের মেট্রোতে বিনিয়োগ ৬.৮৩৮ বিলিয়ন রুপিতে পৌঁছে যাবে।
বর্তমানে মেট্রোতে প্রতি কিলোমিটারে গড়ে ৪০৭ কোটি টাকা করে খরচ করা হচ্ছে। প্রজেক্টে দেরী হলে খরচও বেড়ে যাচ্ছে যার কারনে ভারত সরকার পরবর্তী সমস্ত প্রজেক্ট নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করবার জন্য পরিকল্পনা করেছে যাতে খরচ কম হবে। ২৫ ডিসেম্বর, ২০০২ সালে তিস হাজারি ও সাহাদ্রার মাঝে প্রথম মেট্রোরেল শুরু হয় দিল্লিতে। তারপর থেকে এখনও অবধি দিল্লি মেট্রো সাতটি ভিন্ন রঙে দিল্লি থেকে গুরুগ্রাম, বাহাদুরগর, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, ফরিদাবাদ ও বল্লভগড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ৩৯৩ কিলোমিটার লম্বা ও ২৮৮ টি স্টেশনযুক্ত দিল্লি মেট্রোকে ভারতের সবচেয়ে বড় ও ব্যাস্ততম মেট্রো নেটওয়ার্ক বলা হয়। কার্বনের ব্যবহার কম করার জন্য জাতিসংঘ দিল্লি মেট্রোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনৌতে ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মেট্রোরেল শুরু হয়। লখনৌ মেট্রো ২২ কিলোমিটার লম্বা, তবে লখনৌ মেট্রো আরও বিস্তৃত করার কাজ চলছে। ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ সালে উত্তর প্রদেশের আরও একটি শহর কানপুরেও মেট্রোর সূচনা হয়েছে। কানপুর মেট্রোর গেরুয়া রঙ আইআইটি কানপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রয়েছে এবং নীল লাইনের কাজ চলছে।
মুম্বাই মেট্রোর সূচনা হয় ৮ জুন, ২০১৪ সালে। মুম্বাই মেট্রোর বেশ কিছু নতুন লাইনে কাজ চলছে। ২০২৬ এর মধ্যে মুম্বাই মেট্রো নেটওয়ার্কের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৩৫৬ কিলোমিটার যা দিল্লি মেট্রোর পর ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেট্রো নেটওয়ার্ক হবে। মুম্বাইয়ের পর মহারাষ্ট্রের আরও এক বড় শহর পুনেতে ২০২২ সালের ৬ মার্চ মেট্রোরেলের সূচনা হয়। পুনে মেট্রোতে বর্তমানে ৫৪.১৪ কিলোমিটার লম্বা দুই রঙের লাইন রয়েছে। ভারতের কমলালেবুর শহর নাগপুরেও ২০১৯ সালের ৮ মার্চ মেট্রোরেল শুরু হয়। ৪১.৬ কিলোমিটার লম্বা নাগপুর মেট্রো লাইন গেরুয়া ও অ্যাকোয়া দুই লাইনে বিভক্ত। গেরুয়া লাইন ২২.২৯৩ কিলোমিটার লম্বা এবং এতে ২০ টি স্টেশন আছে, অ্যাকোয়া লাইন ১৯.৪ কিলোমিটার লম্বা। ১৯৮৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর শুরু হওয়া কলকাতা মেট্রো ভারতের সবথেকে পুরাতন মেট্রোরেল। ৩৮ কিলোমিটার লম্বা কলকাতা মেট্রোতে দুটি লাইন রয়েছে। আরও কিছু নতুন পথের জন্য কাজ চলছে কলকাতা মেট্রোতে। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর ব্যাঙ্গালোর মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রা শুরু হয়। ব্যাঙ্গালোর মেট্রোতে সবুজ ও বেগুনি দুটি লাইন রয়েছে। ব্যাঙ্গালোর মেট্রোকে নাম্মা মেট্রোও বলা হয়। ব্যাঙ্গালোর মেট্রো দক্ষিন ভারতের প্রথম মেট্রো। দক্ষিন ভারতের আরও এক গুরুত্বপূর্ন শহর চেন্নাইয়ে ৯ জুন, ২০১৫ সালে প্রথম মেট্রোরেল শুরু হয়। দুটি লাইন ও ৪৩ স্টেশন বিশিষ্ট চেন্নাই মেট্রোকে ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম মেট্রো নেটওয়ার্ক বলা হয়। ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর হায়দ্রাবাদ মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়। তিনটি রঙের লাইন বিশিষ্ট হায়দ্রাবাদ মেট্রোতে ৫৭ টি স্টেশন রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৯ জুন কোচি মেট্রোর সূচনা হয়। কোচি মেট্রোতে এখন নীল লাইনই চালু রয়েছে এবং গোলাপি লাইনের কাজ চলছে যা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে সম্পন্ন হয়ে যাবে। তৃতীয় দফায় কোচি মেট্রোর লাইনের দৈর্ঘ্য আরও বাড়ানো হবে। রাজস্থানের রাজধানী ভারতের গোলাপি শহর রাজস্থানে ২০১৫ সালের ৩ জুন বারো কিলোমিটার লম্বা পথে মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়। জয়পুর মেট্রোতেও আরও নতুন লাইনের কাজ হচ্ছে। ৬ মার্চ, ২০১৯ সালে আমেদাবাদ মেট্রোর যাত্রা শুরু হয়। এখানেও দুটি লাইন রয়েছে। ভারতের সমস্ত মেট্রোরেল প্রজেক্টকে ভালোভাবে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে ২০১৪ সালে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মেট্রোরেলের মতোন গন পরিবহনের বিকাশে অনেক বেশী কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী সাত বছরে রেকর্ড হারে মেট্রো প্রজেক্টে কাজ হবে। মেট্রোরেল প্রজেক্ট ভারতের শহর গুলিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করছে, পাশপাশি দূষনমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতেও সাহায্য করছে। সমস্ত মেট্রো প্রজেক্ট সম্পম্ন হলে গন পরিবহনের ক্ষেত্রে ভারত এক নতুন রেকর্ড তৈরি করবে।