ভারতবর্ষের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করার পেছনে কি কারন রয়েছে?
রাজেশ রায়:– কোন দেশের বায়ুসেনা যত শক্তিশালী হবে তত সামরিক ক্ষেত্রে সেই দেশ মজবুত হবে। সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী দেশ হিসাবে ভারতের বায়ুসেনা যথেষ্ট শক্তিশালী। ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে সুখোই-৩০ এমকেআই, রাফায়েলের মতন অত্যাধুনিক চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রয়েছে। তবে বর্তমানে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করছে, ভারত ও নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রজেক্টে কাজ করছে যার নাম আমকা বা অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট।
প্রথমেই জানা যাক আমকা প্রজেক্ট কেন তৈরি করা হচ্ছে?
১) এতদিন পর্যন্ত আকাশযুদ্ধে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান রাজত্ব করেছে। কিন্তু প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে এখন আরও উন্নত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান তৈরি শুরু হয়েছে। বিশ্বের অনেকদেশ ইতিমধ্যেই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করা শুরু করেছে। আমেরিকা ২০০৩ সালের দিকেই বিশ্বের প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এফ-২২ রেপ্টর সার্ভিসে আনে। বর্তমানে এফ-৩৫ নামে আরও একটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে। চলতি বছর থেকে আমেরিকার অ্যাভিয়েশন জায়েন্ট লকহিড মার্টিন বছরে ২০০ টি করে এফ-৩৫ তৈরি করবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আমেরিকা এক্ষেত্রে কতটা এগিয়ে গেছে। শুধু এখানেই শেষ নয় আমেরিকা বর্তমানে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান তৈরি করছে। আমেরিকা ছাড়া রাশিয়া সুখোই-৫৭ এবং চীন জে-২০ ও জে-৩১ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে। সুতরাং বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী দেশ হিসাবে ভারতও নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান তৈরি শুরু করেছে।
২) ভারতের প্রতিবেশী চীন ২০১৭ সাল থেকেই জে-২০ সার্ভিসে এনেছে। বর্তমানে চীনের কাছে প্রায় ৪০ টি জে-২০ রয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে চীনের কাছে অন্তত ২০০ টি জে-২০ থাকবে। তবে এটা ঠিক নামে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হলেও বিশেষজ্ঞদের ধারনা অনুযায়ী জে-২০ পুরোপুরি পঞ্চম প্রজন্মের নয় কারন এতে অনেক সমস্যা আছে যার প্রধান হচ্ছে ইঞ্জিন সমস্যা। জে-২০ এর ইঞ্জিন চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমানের। চীন নতুন একটি ইঞ্জিন তৈরির চেষ্টা করছে এর জন্য। চীন জে-৩১ নামে আরও একটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে, শোনা যাচ্ছে এটা পাকিস্তানকে দিতে পারে চীন। যার জন্য ভারত বর্তমানে আমকা প্রজেক্টে জোর দিয়েছে।
৩) পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। ডাইরেক্ট এনার্জি ওয়েপনস যেমন লেজার, সুপার ক্রুজ, স্টেলথ এসব অ্যাডভান্সড টেকনোলজি একমাত্র পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমানেই ব্যবহার করা সম্ভব।
৪) আমকা তৈরির চতুর্থ সবচেয়ে বড় কারন হল অর্থ বাচানো ও আত্মনির্ভর হওয়া। দেখুন এই মহূর্তে একমাত্র আমেরিকা ও রাশিয়ার কাছ থেকেই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনা সম্ভব। কিন্তু ভারতের সাথে রাশিয়ার ভাল সম্পর্কের জন্য আমেরিকা এত অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ভারতকে দেবে না। আর যদি দেয়ও তাহলে এফ-৩৫ এর দাম ও তার মেইটেন্যান্স খরচ এত বেশী যে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের পক্ষে তা সম্ভব না। ভারত এর আগে রাশিয়ার সাথে এফজিএফএ নামে একটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রজেক্টে কাজ করেছিল কিন্তু এতে টেকনোলজি ট্রান্সফার সহ অনেক কারনে ভারত এই প্রজেক্ট থেকে বেরিয়ে আসে, এতে ভারতের আর্থিক ক্ষতিও হয়। তাই নিজস্ব একটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান প্রজেক্ট ভারতের জন্য খুবই দরকার ছিল। কারন এতে খরচ যেমন বাঁচবে তেমনি নতুন নতুন টেকনোলজি নিজেদের পচ্ছন্দমত ইনস্টল করা যাবে।