ভিয়েতনামের যুদ্ধে আমেরিকার এতো হেলিকপ্টার ধ্বংস হওয়ার পেছনে কি কারন ছিল?
নিউজ ডেস্কঃ কিছুদিন আগেই আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নিয়েছে আমেরিকা। তালিবানদের সাথে শান্তি চুক্তির মাধ্যমেই তারা তাদের সেনা সরিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মহলের সুত্রের খবর। যদিও দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে যে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমেরিকার এবং প্রচুর অর্থ খরচ হয়েছে যা আমেরিকা আর সেই খরচ করতে চাইছে না। তবে এই প্রথম নয় এর আগেও ভিয়েতনাম যুদ্ধে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে ভিয়েতনামের মাটিতে যুদ্ধ চালিয়েছিল আমেরিকা শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে পিছু হাটতে হয় তাদের। যদিও ফলাফল ছিল খুবই বাজে। ঘটনার সুত্রপাত হয় ১৯৬০ এর দিকে। ভিয়েতনামের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল আমেরিকা। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত বেশ কিছু বৈঠক হয়েছিল এই দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তির জন্য। যেখানে ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে জুয়ান থুই, লি ডাক থো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ফেব্রুয়ারি, ১৯৭০ থেকে শান্তি চুক্তির ব্যাপারে গোপনে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছিলেন। ১৯৭৩ সালের ২৩ জানুয়ারী প্যারিসে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে ৮০দিনের মধ্যে মার্কিন যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেয়া; যুদ্ধবিরতি; দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাধারণ নির্বাচন; দক্ষিণ ভিয়েতনামে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং উত্তর ভিয়েতনামের সেনাদের দক্ষিণ ভিয়েতনামে অবস্থান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
১৯৭৩ সালের ২৩ জানুয়ারি শান্তি চুক্তি হলেও সময়ের প্রয়োজনে আলোচনা চালিয়ে যায় এই দুই দেশ। পাশাপাশি ২৯ মার্চ মার্কিন সেনার আবারও বোমা বর্ষণ এবং যুক্তরাষ্ট্র সেনা সরিয়ে নেয়।উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। মে ও জুন মাসের দিকে ১৯৭৩ সালে কিসিঞ্জার এবং থো শান্তি চুক্তির উত্তরণে প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। ১৩ জুন, ১৯৭৩ সালে আমেরিকা এবং উত্তর ভিয়েতনাম যৌথভাবে প্যারিস চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাক্ষর করে।
আসলে ১৯৬৫ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামে সরকারের পতন রোধ করার জন্য আমেরিকা সেনা পাঠায় আর তার ফলেই এই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের শুরু হয়। ১৯৭৫ র দিকে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয় এবং ১৯৭৬ সালে সরকারিভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে।
১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৯ বছর ৫ মাস এই যুদ্ধ চলেছিল ভিয়েতনামে। যেখানে আমেরিকার ৫০,০০০ এর উপর সেনা প্রান হারায় এবং ১০ হাজারের কাছাকাছি যুদ্ধবিমান, বোম্বার ইউএভি ও হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছিল। যার মধ্যে ৩,৭২০টি যুদ্ধবিমান ও বোম্বার, ৫,৬০৭টি হেলিকপ্টার এবং ৫৭৮টি ইউএভি যুদ্ধক্ষেত্রে ধ্বংস হয়ে যায়।
আসলে এই ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকা মোট ১১,৮৩৫ টি হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছিল। অর্থাৎ আর্থিক ক্ষতি দেখলে টা চমকে দিতে পারে অনেক দেশকেই। এই ২০ বছর ধরে চলা যুদ্ধে আমেরিকার প্রায় ২০,০০০ বিলিয়ন ডলার মত খরচ হয়েছিল। শুধুমাত্র আমেরিকা বিরোধী শিবির সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনকে প্রতিহত করার জন্য।
ভিয়েতনামে সাথে চলা এই যুদ্ধে সেইসময়কার অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান মিগ ২১ কে ব্যবহার করা হয় যা দিয়ে আমেরিকার ৩০০ এর উপর যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছিল। এছাড়াও ল্যাণ্ড বেসড সারফেস টু এয়ার মিসাইল এবং এন্টি এয়ার ক্রাফট গান দিয়ে হাজার হাজার মার্কিন জোটের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার নজিরবিহীনভাবে ধ্বংস হতে থাকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সামনেই। এদিকে মার্কিন মদদপুষ্ট রিপাবলিক অফ ভিয়েতনাম এই যুদ্ধে ১,০১৮টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার হারায়। আর সভিয়েত পক্ষের উত্তর ভিয়েতনামের মাত্র দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছিল।
১৯৭৫ সালের দিকে যুদ্ধ শেষ জানা যায় যে উত্তর ভিয়েতনাম আমেরিকার ২৭৫০ টি যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার দখল করে নিয়েছিল। যার মধ্যে ২৪০ টি থাইল্যান্ডে এবং ৬৮ টি আমেরিকাতে অর্থাৎ ৩০৮ টি যুদ্ধবিমান পালাতে সক্ষম হয়েছিল। পাশাপাশি ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার শিবিরে রিপাবলিক অব ভিয়েতনামের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যাণ্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া সীমিত পরিসরে হলেও অংশগ্রহণ করে। তাদের সম্মিলিতভাবে মোট প্রায় ১২,৫০০টি যুদ্ধবিমান, বোম্বার, হেলকপ্টার এবং ইউএভি ধ্বংস হয়েছিলয়। অবশ্য মার্কিন শিবিরের রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম বাদে সকল দেশই এক রকম তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই এবং মার্কিন যুক্তরাষ্টের চাপে এই ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাদ্ধ হয়েছিল বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ।