তুরস্কের অস্ত্র নির্মাতাদের কারনে চাপ বাড়ছে ভারতবর্ষের
নিজস্ব সংবাদদাতা:সম্প্রতি বেশ কিছু বড় বড় পশ্চিমী দেশ তুরস্কে ড্রোনের কিছু যন্ত্রাংশ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার পরেও তথাকথিত ছোট দেশ তুরস্ক যেভাবে অতি অল্প সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত লক্ষ্যে স্থির থেকে একের পর এক যন্ত্রাংশ বিনা সাহায্যে নিজ দেশেই তৈরি করে ফেলছে তা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে আন্তর্জাতিক বাজারে। শুধু ড্রোনের প্রয়োজনীয় ইঞ্জিনই নয় আরেকটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান কমন এপারেচার টার্গেটিং সিস্টেম বা ক্যাটস (সিএটিএস) ও অনায়াসে তৈরি করে ফেলেছে তুরস্কের অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলো। শুধু তৈরি করেছে বললে ভুল হবে বরং বলা উচিত তৈরি করে রীতিমতো তার ওপর সফল পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছে। খুব বেশি দিন আগের কথা নয় তুরস্কের বড় অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আসেলসান পরীক্ষার সময় তাদের নির্মিত সিএটিএস ক্যামেরা ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।
২০২০ অক্টোবরেই আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীন আজারবাইজান তুরস্কের তৈরী ড্রোনে সেদেশের প্রযুক্তি ব্যবহার করার অজুহাতে তুরস্কে নতুন যন্ত্রাংশ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে কানাডা। তুরস্ক একই ন্যাটো গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ক্যানাডা সহ বাকি দেশগুলো দাদাগিরি করে তুরস্কের ওপর একের পর এক বিভিন্ন বাঁধানিষেধ চাপিয়ে দেওয়ায় শেষমেষ প্রেসিডেন্ট রেজিপ তাইয়েপ এরদোয়ান ক্ষুব্ধ হয়ে নিজ দেশ তুরস্কেই সেদেশের আপন প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাবতীয় ইঞ্জিন এবং যন্ত্রাংশ উৎপাদনের নির্দেশ দিয়েছেন। তুরস্ক আদেও এতো জটিল যন্ত্রাংশ তৈরি করতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রথমদিকে সকলেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল ঠিকই কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে তুরস্ক সত্যিই বিভিন্ন শক্তিশালী ড্রোন এবং তাদের যন্ত্রাংশসমূহ উৎপাদন করে সমরাস্ত্র শিল্পে নিজেদের পারদর্শিতা প্রমাণ করে ছেড়েছে।
কানাডা তুরস্কের ওপর তাদের নিষেধাজ্ঞা চাপালে তখনই তুরস্কের প্রতিরক্ষা আধিকারিকরা ঘোষণা করেছিলেন যে শুধুমাত্র কানাডার সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়ে চুপ চাপ বসে থাকবে না তারা। ফলত বর্তমানে অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ তৈরিতে তুরস্কের এই সফলতা এক বিশাল বড় জয় তাদের কাছে। প্রথমবার এই খবর প্রকাশিত হয় মিডিয়া সংস্থা আন্দালুসহ (৬ নভেম্বর) সেদেশের আরো বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
শুধুমাত্র যন্ত্রাংশ তৈরিতেই কিন্তু আটকে নেই তুরস্কের অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলি। হালফিলেই সেই দেশের শীর্ষ অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি আসেলসানের তৈরি কমন অ্যাপারচার টার্গেটিং সিস্টেম (সিএটিএস) এর সঙ্গে স্থানীয়ভাবে তৈরী বোমা ব্যবহার করে পরীক্ষা চালানো হয়েছে মনুষ্যবিহীন সশস্ত্র (ইউসিএভি) ড্রোন বায়ারাকতার টিবি-২ এর ওপর। এমনকি পরীক্ষা শেষে সশস্ত্র ড্রোন তৈরিকারী সংস্থা বেকার এক টুইট বার্তায় সে কথা স্বীকার করে জানিয়েছে যে, “বেয়ারাকতার টিবি-২ ইউএসিভি আসেলসান উদ্ভাবিত ইলেক্ট্রো-অপটিক টার্গেটিং সিস্টেম (সিএটিএস) দিয়ে প্রথম পরীক্ষা তারা সাফল্যের সঙ্গেই সম্পন্ন করেছে”। শুধুমাত্র টুইট ই নয় তুরস্কের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে টেকিরদা প্রদেশের বেকার ফ্লাইট এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চলাকালীন এই পরীক্ষার একটি ভিডিও প্রচার করেছে তারা সেই সঙ্গে।
আধিকারিকদের কাছ থেকে জানা গেছে এই পরীক্ষার সময় ব্যবহার করা হয়েছে তুরস্কের অপর এক শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি রকেটসানের তৈরি টিবি-২ মিনি স্মার্ট বোমা (এমএএম-এল)। এছাড়া ওইদিন উড়ানের অংশ হিসাবে ক্যাটস-এর উচ্চ-গতির লক্ষ্য লকিং এবং ট্র্যাকিংয়ের ক্ষমতা ও পরীক্ষা করা হয়েছিলো। তুরস্কের প্রথম সারির অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি আসেলসানের তৈরি এমএএম-এল সবাইকে অবাক করে ওই দিন পরীক্ষা চলাকালীন আকাশের উচ্চতা থেকে নিদ্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত ভাবে আঘাত হাঁটতে সক্ষম হয় লেজার ব্যবহার করে। শোনা যাচ্ছে পরীক্ষা সফল হওয়ায় এই ড্রোন বিমান এবং হেলিকপ্টার সহ অন্যান্য নানা সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শুরু হবে অদূর ভবিষ্যতে। এই ক্যাটস হল উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এক ইলেকট্রো-অপটিক্যাল সার্ভিলেন্স, লকিং ও টার্গেটিং সিস্টেম।
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধে তুর্কি ড্রোন ব্যবহারের অপরাধে কানাডা হুট করে তুরস্কে তাদের রপ্তানি বন্ধ করার কথা ঘোষণা করলে সেই সময় বেশ বিপাকেই পড়েছিলো তুরস্ক। ফলত নিজস্ব প্রযুক্তিতে নিজ দেশে ইঞ্জিন তৈরি করতে পারাটা তুরস্কে কাছে এক বড়ো জয়। তুর্কি দৈনিক সাবাহ পত্রিকা গত ৩০ অক্টোবর এই খবর দেয়। পত্রিকাটি তাদের রিপোর্টে জানায়, তুরস্কের খ্যাতনামা ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেকারের “বেয়ার আকতার টিভি-৩” ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ‘আকিঞ্চি’ খুব শীঘ্রই সেই দেশে তৈরি অচিরেই এই ইঞ্জিনের ব্যবহার শুরু করবে।