ভারত

ভবিষ্যতের যুদ্ধের জন্য ভারতের ঘাতক মিসাইল টেকনোলজি নিয়ে প্রচুর তথ্য গোপন

ভারতবর্ষের প্রধান দুই শত্রু দেশ হচ্ছে পাকিস্তান ও চীন যারা দুজনই ভারতের প্রতিবেশী। পাকিস্তান ও চীন দুটি দেশই পরমানু শক্তিধর। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই পাকিস্তান একাধিক জঙ্গি সংগঠন তৈরির মাধ্যমে ভারতে সন্ত্রাসী কাজকর্মের চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিগত কয়েক দশক ধরে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ কুটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে যেখানে চীন পাকিস্তানকে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য করে যা পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। যার কারনে মজবুত অর্থনীতি তৈরির পাশাপাশি সামরিক খাতেও ভারতকে প্রতিবছর মোটা অর্থ ব্যায় করতে হয়। বর্তমানে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, সাথে বিশ্বের চতুর্থ সামরিক শক্তিশালী দেশও ভারত। ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, ভারতীয় বায়ুসেনা এবং ভারতীয় নৌবাহিনী। এই তিন বাহিনীর পাশপাশি আরও একটি বিভাগ তৈরির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে তা হল ভারতীয় রকেট ফোর্স। 

বর্তমান যুগে যুদ্ধক্ষেত্রে এবং দেশের প্রতিরক্ষায় সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে মিসাইল। শত্রুর উপর আক্রমন করতে কিংবা শত্রুর মিসাইল, যুদ্ধবিমান, ড্রোন, যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে দেশকে সুরক্ষা দিতে বিভিন্ন ধরনের মিসাইল তৈরি করে প্রতিটি শক্তিশালী দেশই। ১৯৮৩ সাল থেকে ভারতও ইন্ট্রিগেটেড গাইডেড মিসাইল প্রজেক্টে বহু মিসাইল তৈরি করেছে। বর্তমানে ভারত ভবিষ্যতের যুদ্ধের কথা ভেবে এমন কিছু মিসাইল প্রযুক্তিতে কাজ করছে যাতে আরও আধুনিক প্রযুক্তি থাকবে। ভারতের রকেট ফোর্স এইসব মিসাইলের দায়িত্বে থাকবে অর্থাৎ ভবিষ্যতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মেরুদন্ড হতে চলেছে এই ভারতীয় রকেট ফোর্স। 

ভারতের ভবিষ্যতের মিসাইল প্রজেক্ট

১) ব্রাহ্মস ২ :— ব্রাহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলের হাইপারসনিক ভার্সন এই ব্রাহ্মস ২. সুপারসনিক ও হাইপারসনিকের মূল পার্থক্য হল গতি। শব্দের গতির সাথে মিসাইলের গতির তুলনা করতে ম্যাক ব্যবহার করা হয়। কোন মিসাইলের গতি ম্যাক ১ এর মানে এর গতি শব্দের গতির সমান। বাতাসে শব্দের গতি ৩৩০ মিটার প্রতি সেকেন্ড, একে ১ ম্যাক বলা হয়। ম্যাক ১ এর থেকে বেশী গতিশীল কোন বস্তর গতিকে সুপারসনিক বলা হয়। শব্দের গতির পাঁচ গুন বেশী গতি সম্পন্ন বস্তর গতিকে হাইপারসনিক বলা হয়। আবার শব্দের গতির থেকে কম গতি সম্পন্ন মিসাইলকে সাবসনিক মিসাইল বলা হয়। হাইপারসনিক মিসাইলের গতি এত বেশী হয় যার কারনে রেডারে চিহ্নিত করার পরও এই ধরনের মিসাইলকে প্রতিরোধ করা খুবই সমস্যার। ব্রাহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলের গতি ২.৮ ম্যাক কিন্ত ব্রাহ্মস ২ বা হাইপারসনিক ভার্সনের গতি হবে ৮ ম্যাক এবং রেঞ্জ হবে ১,৫০০ কিলোমিটার। ব্রাহ্মস ২ এর তুলনা একমাত্র রাশিয়ার জিরিকন মিসাইলের সাথে হতে পারে। যদিও জিরিকন মিসাইলের রেঞ্জ বেশী ২০০০ কিলোমিটার। 

২০৩০ এর মধ্যে ব্রাহ্মস ২ ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হবে।  ব্রাহ্মস ২ ভারতের সুখোই ৩০ এমকেআই, রাফায়েলের মতো যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিনে ইনস্টল করা হবে। আন্দামান এলাকায় ১,৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জ যুক্ত ব্রাহ্মস ২ মিসাইল চীনের বিরুদ্ধে ভারতের গুরুত্বপূর্ন অস্ত্র হতে চলেছে। আন্দামান থেকে প্রায় ১,৪৩৫ কিলোমিটার দূরেই মালাক্কা প্রনালী যা আন্তর্জাতিক সমুদ্র বানিজ্যের গুরুত্বপূর্ন পথ। এখানে চীনকে চাপে রাখতে ব্রাহ্মস ২ খুবই গুরুত্বপূর্ন।

২) প্রলয় মিসাইল:— প্রলয় একটি শর্ট রেঞ্জ ব্যালেস্টিক মিসাইল। এর রেঞ্জ ৫০০ কিলোমিটার এবং গতি ১.৬ ম্যাক। বিশেষ ছোট টার্গেট ধ্বংস করার জন্য এই প্রলয় মিসাইল ব্যবহার করা হবে। ভারতের প্রলয় মিসাইলের সাথে উত্তর কোরিয়ার কেএন ২৩ এবং রাশিয়ার ইস্কান্দার মিসাইলের তুলনা করা যেতে পারে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই ৩৭০ প্রলয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। প্রলয় মিসাইল ভারতীয় নৌবাহিনীর পৃথ্বী মিসাইলের বিকল্প হবে।

৩) অস্ত্র মার্ক ২ এবং অস্ত্র মার্ক ৩ :— এই মিসাইল গুলোকে বিভিআরএএএম বা বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ এয়ার টু এয়ার মিসাইল বলা হয়। এই দুটি মিসাইল ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলিকে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর থেকে এগিয়ে রাখবে। বিভিআরএএএম রেডারে চিহ্নিত হওয়া শত্রু বিমানকে ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে এই মহূর্তে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিভিআর মিসাইল হিসাবে রয়েছে ইউরোপের এমবিডএর তৈরি মিটিওর মিসাইল যা রাফায়েল যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত হয়। মিটিওর বিশ্বের অন্যতম ঘাতক বিভিআর কিন্তু একটি মিটিওর মিসাইলের খরচ অনেক প্রায় ২৫ কোটি, তাছাড়া মিটিওর মিসাইল যেকোনও যুদ্ধবিমানে ইনস্টল করা সম্ভব নয়, এমবিডিএর অনুমতি নিতে হবে। ভারতের তৈরি অস্ত্র মার্ক ২ এর দাম ১১ কোটি এবং রেঞ্জ ১৬০- ১৮০ কিলোমিটার যা মিটিওরের রেঞ্জের কাছাকাছিই। মিটিওরের রেঞ্জ প্রায় ২০০ কিলোমিটার। অস্ত্র মার্ক ২ মিটিওর এর যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী এবং দামও অনেক কম। এছাড়া ভারত অস্ত্র মার্ক ৩ ও তৈরি করছে যার রেঞ্জ ৩০০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার, তবে এর দামও ২৫ কোটির কম। অস্ত্র মার্ক ৩ এর প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে রাশিয়ার আর ৩৭, চীনের পিএল ১৫ এবং আমেরিকার এইম ২৬০. ভবিষ্যতে তেজস মার্ক ২ যুদ্ধবিমানে অস্ত্র মার্ক ২/৩ বিভিআর ইনস্টল করা হবে। 

৪) কে ৪ এবং ক ৫ এসএলবিএম:—  কে ৪ এবং কে ৫ সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল। কে ৪ এর রেঞ্জ ৩,৫০০ থেকে ৪,০০০ কিলোমিটার এবং কে ৫ এর রেঞ্জ ৫০০০ থেকে ৬০০০ কিলোমিটার। এই দুটি মিসাইলই পরমানু ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। কে ৪ এবং কে ৫ মিসাইল দুুটি ভারতের দ্বিতীয় আক্রমনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। ভারত একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। আমাদের পরমানু নীতিতে বলা হয়েছে ভারত কখনও প্রথম পরমানু অস্ত্র ব্যবহার করবেনা কিন্ত যদি অন্যকোন দেশ ভারতে পরমানু হামলা করে তাহলে তার জবাবে ভারতেরও দ্বিতীয় আক্রমনের সক্ষমতা রয়েছে। কে ৫ মিসাইলের রেঞ্জ রয়েছে পুরো পাকিস্তান, আফগানিস্তান, চীনের অধিকাংশ এলাকা, তুর্কিমেনিস্থান, উজবেকিস্তান, ইরানের কিছু অংশ, মঙ্গোলিয়া, দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ এবং মালাক্কা প্রনালী। পাকিস্তান ও চীনের জন্য চিন্তার কারন এই কে ৪ এবং কে ৫. আইএনএস আরিহান্ট সহ ভারতের সমস্ত এসএসবিএন সাবমেরিনে এই মিসাইল যুক্ত করা হবে। 

৫) অগ্নি ৬ :— ভারতের গবেষনা কেন্দ্রে তৈরি হওয়া সবচেয়ে ঘাতক মিসাইল হচ্ছে অগ্নি ৬ আইসিবিএম বা ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল। অগ্নি ৬ কে ভারতের সবচেয়ে গোপন মিসাইল প্রজেক্ট বলা হয় যার কারনে এই মিসাইল সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য তেমন পাওয়া যায়না। অগ্নি ৬ এমআইআরভি বা মাল্টিপেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টার্গেটেবল ভ্যেইকল বহন করতে সক্ষম। সাধারনত আইসিবিএম মিসাইল একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আক্রমন করে কিন্ত এমআইআরভি যুক্ত আইসিবিএম একসাথে অনেক নিশানায় আক্রমন করতে সক্ষম। বলা হচ্ছে অগ্নি ৬ দশটি এমআইআরভি বহন করতে সক্ষম এবং অগ্নি ৬ এর রেঞ্জ ১০,০০- ১২,০০০ কিলোমিটার। তবে ডিআরডিও সরাসরি এই মিসাইলের রেঞ্জ সম্পর্কে কিছু জানায়নি। অগ্নি ৬ এর সাবমেরিন ভার্সনও তৈরি করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.