চীন

চীনের সুপার ক্যারিয়ার নিয়ে কেন পৃথিবীর বহু দেশ?

রাজেশ রায়:— যেকোনও দেশের নেভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসেট বলা হয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে। একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করতে যেমন অনেক সময় লাগে তেমনি এটি তৈরি ও পরিচালনা করতেও খরচ প্রচুর। শুধু এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করলেই হলনা তার সাথে ক্যারিয়ারে থাকার জন্য যুদ্ধবিমান, ক্যারিয়ারকে সুরক্ষা দেবার জন্য ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, ক্রুজার, সাবমেরিন সহ লজিস্টিক জাহজ দরকার, যাকে একসাথে ক্যারিয়ার ব্যাটেল গ্রুপ বলে। একটি ক্যারিয়ার ব্যাটেল গ্রুপ তৈরি করতে ১৫-২০ বিলিয়ন ডলার খরচা। তাই এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে সাদা হাতি বলা হয়। অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী দেশ গুলোর পক্ষেই এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তাদের নৌবহরে যুক্ত করা সম্ভব। আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত, চীন, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড বিশ্বের মাত্র এই ছয়টি দেশের নেভিতে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে। সবচেয়ে বেশী এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে আমেরিকার, এগারোটি। সম্প্রতি ভারতীয় নৌবাহিনীতে আইএনএস ভিক্রান্ত নামে একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার যুক্ত হয়েছে এবং আগে থেকেই আইএনএস বিক্রমাদিত্য সার্ভিসে রয়েছে। অর্থাৎ ভারতীয় নেভিতে এই মহূর্তে দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে। ভারতীয় নেভি আরও একটি ক্যারিয়ারের দাবি করছে। ভারতের প্রধান শত্রু চীন দ্রুত গতিতে তাদের নৌবহর বৃদ্ধি করছে। চীনের নেভিতে তিনটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে। সম্প্রতি চীন টাইপ ০০৩ ফুজিয়ান ক্যারিয়ার তাদের নৌবাহিনীতে যুক্ত করেছে যাতে চীনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। চীনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরির ইতিহাস, চীনের এই ফুজিয়ান ক্যারিয়ার কতটা শক্তিশালী এবং ভারতীয় নেভির জন্য এটা কতটা সমস্যা তৈরি করতে পারে, এসম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

চীন দাবি করেছে তাদের ফুজিয়ান ক্লাস এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার একটি সুপার ক্যারিয়ার। প্রথমেই এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ও সুপার ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানা যাক। সুপার ক্যারিয়ার বলে সরকারী ভাবে কীছু হয় না, মিডিয়া এই নাম দিয়েছে। আসলে আকারে অনেক বড় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে বোঝাতে হলে সুপার ক্যারিয়ার শব্দ ব্যবহার করা হয়। সাধারনত ৮০,০০০ টন বা তার বেশী ডিসপ্লেসমেন্ট যুক্ত এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে সুপার ক্যারিয়ার আলা হয় আবার কোথাও ৬৫০০০ টন ডিসপ্লেসমেন্টের ক্যারিয়ারকেও সুপার ক্যারিয়ার বলা হয়। পৃথিবীর প্রথম সুপার ক্যারিয়ার ছিল আমেরিকান নেভির ফরেস্টাল ক্লাস ক্যারিয়ার যা ১৯৫৩ সালে তৈরি হয়েছিল। এর ডিসপ্লেসমেন্ট ছিল ৮১০০০ টন। এরপর আমেরিকা তৈরি করে কিটি হক ক্লাস সুপার ক্যারিয়ার যার ডিসপ্লেসমেন্ট ছিল ৮৩০০০ টন। বর্তমানে আমেরিকান নেভিতে থাকা দশটি নিমিতজ ক্লাস এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের ডিসপ্লেসমেন্ট ১ লাখ টন এবং একটি জেরাল্ড আর ফোর্ড ক্লাস ক্যারিয়ারের ডিসপ্লেসমেন্ট ১ লাখ টন। সুপার ক্যারিয়ারে সাধারন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের থেকে অনেক বেশী যুদ্ধবিমান থাকতে পারে। 

ভারতের তৈরি আইএনএন ভিক্রান্তের ডিসপ্লেসমেন্ট ৪৫০০০ টন অর্থাৎ এটি সুপার ক্যারিয়ার নয়  চীনের দাবি অনুযায়ী তাদের ফুজিয়ান ক্লাস ক্যারিয়ার একটি সুপার ক্যারিয়ার তবে চীনের এই ক্যারিয়ার এখন লঞ্চ হয়েছে সার্ভিসে আসার পর বোঝা যাবে। তবে একথা ঠিক প্রযুক্তিতে এখনও আমেরিকান এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার গুলো চীনের থেকে অনেক এগিয়ে। টাইপ ০০৩ ছাড়া চাইনিজ নেভিতে দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে। টাইপ ০০১ লিওনিং এবং টাইপ ০০২ শ্যানডং. চীনের টাইপ ০০১ লিওনিং এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার কেনার ইতিহাস খুবই মজার। টাইপ ০০১ প্রথমে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের নেভির জন্য তৈরি করছিল ১৯৮৫ সালে তখন এর নাম ছিল রিগা, এটি সোভিয়েত নেভির কুজনেসতোভ ক্লাস ক্যারিয়ার ছিল। পরে ১৯৯০ সালে এর নাম হয় ভারইয়াগ। এটি ইউক্রেনে তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ায় ইউক্রেনের কাছে অর্থ ও প্রযুক্তির অভাব হয় তখন ইউক্রেন এটি বেচবার চেষ্টা করে। চাইনিজ নেভির প্রথম থেকেই এটিট উপর আগ্রহ ছিল। ১৯৯২ সালে চীনের একটি প্রতিনিধি দল ইউক্রেনে এটি পর্যবেক্ষনের জন্য যায় কিন্তু চীন প্রথমে এটি কেনেনি। কোন ক্রেতা না পেয়ে ইউক্রেন বাধ্য হয়ে এটি ফেলে রেখেছিল। ছয় বছর পর চীন ব্যাবসায়ীর মতন ইউক্রেনকে জানায় এটি তারা কিনবে হোটেল করবার জন্য। এইভাবে ইউক্রেনের থেকে অনেক কম দামে এটি কিনে আপগ্রেড করে লিওনিং তৈরি করে চীন। চীনের দ্বিতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার টাইপ ০০২ শেনডং এই টাইপ ০০১ এর উপর নির্ভর করেই তৈরি। তবে টাইপ ০০১ এর ডিজাইনের অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে টাইপ ০০২ তে। আসলে সোভিয়েতের কুজনেসতোভ ক্লাস ক্যারিয়ারে অনেক সমস্যা আছে যা টাইপ ০০১ এও রয়েছে।

১৭ ই জুন চীন তাদের ফুজিয়ান ক্লাস ক্যারিয়ার লঞ্চ করে। এটি তাদের প্রথম ক্যাটোবার ক্লাস ক্যারিয়ার। এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার দুই ধরনের কনভেনশনালনও নিউক্লিয়ার পাওয়ার। এই দুই এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারেই দুই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, স্টোবার ও ক্যাটোবার। স্টোবার বা শর্ট টেকঅফ বাট অ্যারেস্টেড রিকোভারি পদ্ধতিতে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে স্কাই জাম্পের মাধ্যমে বিমান টেকঅফ করে এবং অ্যারেস্টেড হুকের সাহায্যে ক্যারিয়ারে বিমান অবতরনের সময় আটকানো হয়। এই ধরনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করা ও পরিচালনা করা সহজ এবং তৈরি করতে খরচও কম হয়৷ তবে এই ধরনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে ভারী যুদ্ধবিমান তার পূর্ন পেলোড সহ ব্যবহার করা যায় না। ক্যাটোবার বা ক্যাটাপুল অ্যারেস্টেড টেকঅফ বাট অ্যারেস্টেড রিকোভারি ক্যারিয়ারে বিমান ক্যাটাপুলের সাহায্যে টেকঅফ করে, অনেকটা গ্রাম বাংলায় পাখি তাড়াতে ব্যবহার করা গুলতির মতন। এই ধরনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে সব ধরনের যুদ্ধবিমান ওঠানামা করতে পারে কিন্তু এউ ধরনের ক্যারিয়ার তৈরি করতে খরচ অনেক বেশী হয়। চীনের এই টাইপ ০০৩ ক্যাটোবার ক্যারিয়ার যাতে ইমালস টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে চীনের বাকী দুই ক্যারিয়ার হচ্ছে স্টোবার ক্যারিয়ার। এই ক্যারিয়ার সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য চীন প্রকাশ করেনি তবে যতদূর জানা গেছে এই ক্যারিয়ারের ডিসপ্লেসমেন্ট ৮০০০০ টনের বেশী। 

আমেরিকার জেরাল্ড আর ফোর্ডের পর ফুজিয়ান দ্বিতীয় কোন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার যাতে ইমালস টেকনোলজি ব্যাবহার করা হয়েছে। ইমালস এর পুরো নাম ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক এয়ারক্রাফট লঞ্চ সিস্টেম। এর আগে ক্যাটোবার ক্যারিয়ারে বিমান লঞ্চের জন্য বাষ্প ব্যবহার করা হত। তবে বাষ্পের ব্যবহারে বিমানের এয়ারফ্রেম ক্ষতিগ্রস্ত হত এবং এয়ারফ্রেমের জীবনকাল কমে যেত। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে একটি বিমান লঞ্চের পর আর একটি বিমান লঞ্চ করতে হলে বেশী সময় লাগত। কিন্তু ইমালস পদ্ধতিতে এমন কোন অসুবিধা হয়না। ব্রিটেন তাদের এইচএমএস কুইন এলিজাবেথ ক্যারিয়ারের জন্য প্রথমে ইমালস সিস্টেম ব্যবহারের কথা ভেবেছিল কিন্তু পরে স্কাই জাম্প সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। চীনের এই ফুজিয়ান ক্লাস ক্যারিয়ারকে সুপার ক্যারিয়ার বলা হয় কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি কনভেনশাল ক্যারিয়ার অর্থাৎ এতে নিউক্লিয়ার প্রোপালশন সিস্টেম নেই৷ আমেরিকার নিমিতজ ক্লাস ও জেরাল আর ফোর্ডে নিউক্লিয়ার প্রোপালশন রয়েছে যার জন্য ফুজিয়ানকে আক্ষরিক অর্থে পূর্ন সুপার ক্যারিয়ার বলা যায়না। এর আগেও অনেক অনেক কনভেনশনাল ক্যারিয়ারে ক্যাটোবার সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে যেমন ভারতেরই আইএনএস ভিক্রান্তে। তবে বর্তমান ভিক্রান্ত নয় ১৯৬১ সালে ভারত ব্রিটেন থেকে যে ভিক্রান্ত কিনেছিল তার কথা বলা হচ্ছে। প্রথমে ভিক্রান্তে ক্যাটোবার সিস্টেম হিসাবে বাষ্প ব্যবহার করা হত কিন্তু পরে ভারত একে আপগ্রেড করে স্টোবার করে কারন ভারতের সী হ্যারিয়ার বিমান ওঠানামার জন্য। ইমালস সিস্টেমে ৩ সেকেন্ডে একটি বিমান লঞ্চ করার জন্য যে বিদ্যুৎ লাগে তা দিয়ে একটি ছোট শহরকে ভাল ভাবে চালানো যাবে। এই বিপুল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরমানু চুল্লী দরকার। সেখানে চীন কনভেনশনাল মানে সাধারন জ্বালানির মাধ্যমে কীভাবে ইমালস সিস্টেম চালায় তা সত্যি বিশেষজ্ঞদের অবাক করে দিয়েছে। বিশ্বের সাবচেয়ে আধুনিক ও দামী এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ডকে পরিচালনা করতেই আমেরিকার এত সমস্যা হয় সেখানে চীন যে সবসময় প্রযুক্তি নকল করে কীভাবে ইমালস প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তা সত্যিই অবাক করার ব্যাপার। তাই অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞের ধারনা এটা চীনের প্রোপোগন্ডা।

চীনের লওনিং এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে সর্বাধিক ৪০ টি বিমান বা হেলিকপ্টার লঞ্চ করা সম্ভব। অন্যদিকে শ্যানডং থেকে সর্বাধিক ৩৬ টি বিমান বা হেলিকপ্টার লঞ্চ করা সম্ভব। এই দুই ক্যারিয়ারেই ২৪ টি করে জে-১৫ বিমান ব্যবহার করে চীন যা রাশিয়ার এসইউ -৩৩ এর নকল। কিন্তু এই দুটিই স্টোবার ক্যারিয়ার হওয়ায় জে-১৫কে পুরো লোড সহ ব্যাপার করতে পারেনা চীন। রাশিয়াও এই একই কারনে তাদের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে এসইউ-৩৩ এর সাথে মিগ-২৯ ব্যবহার করে। ভারতও এই জন্য তাদের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে এসইউ-৩৩ এর বদলে মিগ-২৯কে ব্যবহার করে। কিন্তু ফুজিয়ান ক্লাস ক্যারিয়ার ক্যাটোবার হওয়ায় এতে চীন জে-১৫ সম্পূর্ণ পেলোড সহ ব্যবহার করতে পারবে এবং ভবিষ্যতে এখানে চীন জে-৩১ পঞ্চম প্রজন্মের বিমান ব্যবহার করবে। এজন্য ভারত মহাসাগরে ফুজিয়ান ভারতীয় নেভির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া ফুজিয়ানে চীন অ্যাওয়াক্স বিমান ব্যবহার করতে পারবে কিন্তু আমাদের কোন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারেই অ্যাওয়াক্স ব্যবহার করা যায়না। চীনের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা বাজেট ভারতের থেকে অনেক বেশী এবং চীনের উৎপাদনে গতিও অনেক বেশী। চীন টাইপ ০০৩ তেই আটকে নেই চীন আরও শক্তিশালী টাইপ ০০৪ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করছে সুতরাং সংখ্যার বিচারে চীনের মোকাবিলা করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয় তাই ভারতের উচিত এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ধ্বংস করার উপায়ে কাজ করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঠান্ডা যুদ্ধের সময় আমেরিকার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে কাউন্টার করবার জন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রচুর সাবমেরিন ও অ্যান্টিশিপ মিসাইল তৈরি করেছিল, ভারতেরও সেই একই রননীতি নেওয়া উচিত। একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দামী জিনিস হচ্ছে তার যুদ্ধবিমান। চীনের প্রায় সব টেকনোলজিই নকল করা৷ চীনের জে-১৫ ও জে-৩১ এর প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন আছে। সেজন্য ভারতের উচিৎ নেভির জন্য আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনা। ইতিমধ্যেই ভারতীয় নেভির জন্য রাফায়েল এম এবং এফ-১৮ সুপার হর্নেট বিমানের পরীক্ষা চলছে। ভবিষ্যতে টিইডিবিএফ এবং পঞ্চম প্রজন্মের নেভাল এমসিএ বিমান ভারতীয় নেভিতে যুক্ত হবে। তবে সর্বপ্রথমে আমাদের ভারতীয় নেভির উপর ভরসা রাখা দরকার। নেভি খুব ভাল করেই জানে কীভাবে দেশকে রক্ষা করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.