ভারত

ভারতবর্ষের বৈদিক ইতিহাসের বিরুদ্ধে কি করেছিলেন জহরলাল নেহেরু!

সোহিনী সরকারঃ  নেহরু বলেছিলেন অতীতের স্মৃতি মন্থন কখনোই বর্তমনের সমস্যার সমাধান করতে পারে না। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতবাসী হিসেবে আমাদের উচিত তার পুরনো কথাগুলোকে আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া। 

নেহেরুর ইতিহাস পাঠের তিনটি হাতিয়ার কিন্তু আজকের দিনেও সমান প্রাসঙ্গিক। নিজ দেশের অতীতের সঠিক মূল্যায়ন এবং মুষ্টিমেয় ব্যক্তি বিশেষের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টায় ভারতের ইতিহাস বিকৃতি রোধ করতে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এগুলিকে। 

তা সে ভারতের ৭৫তম বর্ষের স্বাধীনতা উদযাপন হোক,দেশভাগ হোক, বইয়ের পাতা থেকে একটু একটু করে ইতিহাসকে পাল্টে ফেলাই হোক কিংবা ইতিহাসের পুনর্গঠন; গোটা ২০২১ সাল জুড়েই কিন্তু চলেছে ইতিহাস নিয়ে হাজার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, হাজার বিতর্ক। ভারতের ইতিহাস রচনা নিয়ে  বিভ্রান্ত হওয়া বহু ব্যক্তির কাছেই জওহরলাল নেহেরু বিভিন্ন সময়ে হয়ে উঠেছিলেন প্রিয় পাঞ্চিং ব্যাগ। তবে,বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে কিন্তু ইতিহাসের প্রতি নেহেরুর দৃষ্টিভঙ্গি খুবই সরল এবং যুক্তিযু্ত বলেই মনে হয়। সত্যি বলতে বর্তমানে দেশ এবং দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বৈচিত্রের সূক্ষ্মতাটা সঠিক ভাবে বুঝতে গেলে তার ওই দৃষ্টিভঙ্গিটাই কিন্তু ধার নেওয়া প্রয়োজন।

নেহরু মনে করতেন ইতিহাস পাঠ করার তিনটি উপায় আছে।  প্রথমটি হ’ল বৈজ্ঞানিক যুক্তি এবং প্রমাণ ব্যবহার করে অতীত সম্পর্কিত রোমান্টিকতা এড়ানো।  নেহেরুর দ্য ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া বইতে তিনি ভারতের বৈদিক ইতিহাস এবং কৃতিত্বগুলিকে কিন্তু মোটেও খারিজ করেন নি। বরং দেশের এই অতীত নিয়ে তিনি যথেষ্ট গর্ব বোধ করেন। তবে, যেটা তার পছন্দ না তা হলো অতীত নিয়ে এই অত্যধিক মাতামাতি। দ্বিতীয়ত, তিনি বিশ্বাস করতেন যে কোনো দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনার আগে প্রয়োজন অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নওয়া এবং তৃতীয়ত রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইতিহাস বিকৃত করা বা ভুল দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার রোধ করা। 

রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ইতিহাসের বিকৃতি রোধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন উপায়ে অতীতের সঠিক মূল্যায়নের জন্য নেহেরুর এই ইতিহাস পাঠের উপায়গুলোকে এখনো অনয়ায়েই ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া-তে নেহেরু উল্লেখ করেছিলেন যে ইতিহাসকে উপেক্ষা করার ফলে দৃষ্টিভঙ্গির অস্পষ্টতা, জীবনের বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্নতার সাথে সাথে মনের সঠিক তথ্য বোঝার ক্ষমতা রুদ্ধ হয় ফলে, এক জাতি হিসাবে গড়ে ওঠা সমাজের কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। 

নেহরুর জন্য, ইতিহাসের অধ্যয়ন কেবল পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং এটি ছিলো নিজের ব্যক্তিগত জীবনের গভীরতা অনুধাবন করা এবং আমাদের জীবনের দীর্ঘ প্রতিফলিত যাত্রাকে বোঝার এক উপায়; যেমন – আমরা আজ কোথায় আছি অতীতে আমাদের অবস্থান কি ছিলো এগুলো জানা। প্রাচীন ভারতের উত্তরাধিকার সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি এই ইতিহাস নিয়ে অধ্যয়নেরই এক উদাহরণ। অথচ বর্তমানে রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের একাংশের কাছে এই অতীতকে, বিশেষ করে প্রাক-ইসলাম যুগের ইতিহাসকে ভারতের জন্য আদর্শ যুগ হিসেবে রোমান্টিসাইজ করা এক সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেহেরু কিন্তু ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গিরই বিরোধিতা করেছেন। মানব সভ্যতার কদর করার সাথে সাথে প্রত্যেক যুগেই মানব সভ্যতার যে বেশ কিছু ভুলত্রুটিও ছিলো তা নিয়ে কথা বলতেও দ্বিধা বোধ করতেন না তিনি।

১৯২৭ সালে দ্য ফ্যাসিনেশন অফ রাশিয়া নামক একটি প্রবন্ধে নেহরু বলেছিলেন যে আমরা ভারতীয়রা সর্বদাই আমাদের বর্তমান দুর্দশা, দারিদ্র্য, অবক্ষয় ভুলে থাকার চেষ্টায় গৌরবময় অতীতের অস্পষ্ট, অলীক কল্পনাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। এর পরিবর্তে, তিনি যুক্তি দেন যে কেনো এই মোহ থেকে বেরিয়ে আসা দরকার! তার মতে অতীত আঁকড়ে পড়ে থাকা দেশের বর্তমান দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা এবং খাদ্য ঘাটতি সহ বাকি সমস্যাগুলির সমাধানে বিন্দুমাত্র সহায়তা করে না। দ্য ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া বইতে তিনি বলেছিলেন নিজেদের দুর্বলতা, ব্যর্থতা যেমন আমাদের ভোলা উচিত নয় তেমনি সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে ভোঁতা করতে দেওয়াও মোটেই উচিত নয়। তার লেখার মাধ্যমে, নেহেরু প্রমাণ করেছেন যে ইতিহাস হলো নিজের পরিচয় আবিষ্কার এবং যাবতীয় বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে জীবনে এগিয়ে চলার পদ্ধতি শেখার এক প্রক্রিয়া।

নেহেরু মনে করতেন অতীতকে যেদিন আমরা যৌক্তিকতা এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে শিখবো সেদিন আর অতীত নিয়ে উদ্ভাসিত হবো না আমরা। ১৯৪৮ সালে ‘অন আন্ডারস্ট্যান্ডিং হিস্ট্রি’ নামক এক বক্তৃতায় নেহেরু বলেছেন যে আমরা যদি ইতিহাসের কোনো ঘটনার পিছনে লুকিয়ে থাকা কারণ খুব কাছ থেকে বুঝতে চাই তবে প্রয়োজন সেই সময়কার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য কারণগুলিকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা। যেমন, ধরা যাক ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের বিশ্লেষণ।  ভারতে ইসলামের আগমনকে কেউ কেউ ইতিহাসের এক পাকাপোক্ত পরিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ হিসাবে স্বীকার না করে দেশের ইতিহাস থেকে সম্পূর্ণ সতন্ত্র এক ঘটনা হিসাবে দেখেন। কিন্তু, হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের বিশ্বাসের বিপরীতে হেঁটে নেহেরু দাবি করেছেন যে, মুসলমানরা ভারত আক্রমণ করেনি বা শোষণ করেনি, বরং সেই সময়ের বাকি রাজা রাজরাদের মতোই ভারতে এসে বসতি স্থাপন করেছিলো সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে। ফলে তারা এখন ভারতীয় সংস্কৃতিরই একটি অপরিহার্য অংশ। নেহেরু বলেছেন, মুঘল সাম্রাজ্যের রাজবংশগুলি তাদের শাসনকালে ভারতের শিকড়ে মিশে হয়ে উঠেছিলো সম্পূর্ণভাবে ভারতীয়.. রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও, তারা কিন্তু ভারতীয় হিসাবেই বিবেচিত হতো এমনকি অনেক রাজপুত রাজপুত্রও তাদের নিজেদের প্রভু হিসাবে মেনে নিয়েছিল।

সব থেকে বড় কথা, নেহেরু মুঘল শাসনের বিভিন্ন দিককে ধর্মীয় সম্প্রীতিরই এক প্রতীক হিসাবে দেখেছিলেন যা তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ও দেখতে অবিচল ছিলেন। তা সে স্থাপত্য,খাদ্য, পোশাক, সঙ্গীত বা ভাষা যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন। বর্তমান মুঘল সাম্রাজ্য নিয়ে যতই কাঁটাছেড়া চলুক না কেনো, মুঘল আমল সত্যিই ছিল ভারতে এক সাংস্কৃতিক একীকরণের সময় যার ফলে ভবিষ্যতে ঘটে নতুন নানা ধারণার বিকাশ। নেহেরু উল্লেখ করেছেন যে আকবরের শাসনকাল ছিল হিন্দু, ইসলাম এবং শিখ ধর্মের সংমিশ্রণের সময়। তিনি বলেছিলেন,  “সংশ্লেষণের এই চেতনা তখনকার দিনে ছিলো খুবই নতুন এক ব্যাপার। তবে, আকবর সংবেদনশীলতার সাথে গোটা ব্যাপারটিকে যথাসম্ভব বোঝার চেষ্টা করেছিলেন এবং নিজের সম্রাজ্যে তা ব্যাপক ভাবে প্রয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। এই একই সঙ্গে নেহেরু কিন্তু আবার আকবরকে একজন স্বৈরাচারী শাসক হিসাবেও সমালোচনা করেছেন। তার মতে আকবর ভারতব্যাপী তার নিয়ন্ত্রণকে একদিকে যেমন দৃঢ় করতে চেয়েছিলেন তেমনি অপরদিকে ভারতের বৈচিত্র্যকেও নিজের করে নিয়েছিলেন। এই ধরনের গভীর বিশ্লেষনের শেষে মূল যে কথাটি বোঝা যায় তা হলো, অতীতের মূল্যায়ন কোনো সহজ কাজ নয় আর না তো এতো সহজে কোনো ঘটনাকে পুরোপুরি ভালো বা পুরোপুরি মন্দ বলে দেগে দেওয়া যায়। ইতিহাস নিয়ে নেহেরুর বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্ট যে তিনি একতরফা ভাবে কোনো ঘটনাকে বিচার করেন না বরং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে তবেই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পছন্দ করেন। 

অতীতকে বুঝুন, ভবিষ্যতকে উন্নত করুন- এটাই ছিলো নেহেরুর ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির দ্বিতীয় নীতি। তিনি মনে করতেন অতীতের ভুল থেকে শিখে আমরা উন্নতিসাধন করতে পারি। তার এই নীতি সর্বোত্তমভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল দেশভাগের সময়। নেহরু সেই সময় দেশভাগের ভয়াবহতা কাটিয়ে স্বাধীনতার পরে একটি ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন।  তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম কেবল এক জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল না, বরং ছিলো ভিন্ন জাতীয়তাবোধে দীক্ষিত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোককে একত্রিত করে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার জন্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাওয়া কিছু স্বার্থপর মানুষদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা।

দ্য ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়াতে, নেহেরু বলেছেন যে ধর্ম “মানব সমাজের অন্তর্নিহিত পরিবর্তন ও অগ্রগতির প্রবণতা পরীক্ষা করে।” তার মতে ধর্ম মানুষকে নিজের আত্মার সাথে মিলিত করার বদলে কতগুলো অপ্রয়োজনীয় ও সংকীর্ণ বিষয় নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। যা,বিজ্ঞানের একেবারেই বিপরীত। ধর্ম মননে এক সংকীর্ণতা এবং অসহিষ্ণুতা তৈরি করে। নেহেরু বিশ্বাস করতেন যে ব্যক্তিগত স্তরে এই অসহিষ্ণুতা কাটিয়ে ওঠার একমাত্র উপায় হলো এক ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা যা বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাকে উন্নত করবে এবং জাতীয় পর্যায়ে এমন এক রাষ্ট্র গড়ে তুলবে যা সাম্প্রদায়িক নয়,গণতান্ত্রিক। যেখানে প্রত্যেকের থাকবে এক সমান অধিকার। তবে, এই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা বা নব্য প্রতিষ্ঠিত দেশে ব্যক্তি অধিকার প্রতিষ্ঠার এই নৈতিক অবস্থান কিন্তু একদিন বিকশিত হয়নি নেহেরুর মনে। ব্রিটিশ শাসনের প্রথম দিক এবং ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তাকে শিখিয়েছিলো অতীত থেকে শিক্ষা নিতে, যা তার সংকল্পকে দৃঢ় করে। 

সঠিক ভাবে ইতিহাসকে বোঝার জন্য আরো একটি উপায় বলেছিলেন নেহেরু। তিনি মনে করতেন পৌরাণিক কাহিনীর গণ্ডি পেরিয়ে সেগুলিকে বাস্তব এবং যৌক্তিকতার আলোকে রেখে বিশ্লেষণ করা বিশেষ প্রয়োজন। মিথের ওপর হলো যুক্তিবাদ – এই ছিলো তার আদর্শ। নেহরুর মতে পৌরাণিক কাহিনীগুলি সত্য এবং কল্পকাহিনীকে মিশ্রিত করে লেখা যার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই কোনো ঘটনা সম্পর্কে যথার্থ বর্ণনা এই কাহিনীগুলো থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। বাস্তব জীবন থেকে বেশ খানিকটা বিচ্ছিন্নতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির অস্পষ্টতা তাই পরিলক্ষিত করা যায় পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে। ফলে, পরোক্ষভাবে এই কাহিনীগুলোর ব্যবহার কোনো না কোনো ভাবে ভবিষ্যতের পথে অগ্রগতিকে বাঁধাপ্রাপ্ত করে যা বিজ্ঞান দ্বারা প্রতিরোধ করা আবশ্যক। নেহেরু ১৯৫৯ সালে একটি বক্তৃতায় এই বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট ভাবে আলোচনা করেছিলেন। দেশের বিভিন্ন লোক যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের চারিপাশের পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করে সেটা বোঝানোই ছিলো তার এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য। 

দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের পাঠানো তার চিঠি থেকে একটা কথা স্পষ্ট- তা হলো প্রথম থেকেই তিনি কুসংস্কার এবং পৌরাণিক গালগল্পের উর্ধ্বে উঠে বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণের ওপর মনোযোগ দেওয়াতেই বেশি বিশ্বাসী ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, তিনি দেশের অতীতের থেকে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন দেশে খাদ্যের অপর্যাপ্ত সংস্থান নিয়ে। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে গ্রাম ও জেলার যাবতীয় অব্যবহৃত রেকর্ড ঘেঁটে সমস্ত পরিসংখ্যানগত ডেটা একত্রিত করার জন্য এবং ঘাটতি মেটাতে প্রতিটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। একই সঙ্গে সহজে উপলব্ধ নয় এমন ডেটা সংগ্রহের জন্য যাতে বিশেষ করে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হয় সেই ব্যাপারেও রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

দেশে ক্ষুধার সূচক সম্পর্কে সেই সময়ে যে ব্যাপক ভুল তথ্য চারিদিকে ছড়িয়েছিল তা রোধ করতেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন নেহেরু। তার আশা ছিলো এর মাধ্যমে গোটা দেশ জুড়ে এক নির্ভরযোগ্য ডেটা তৈরি করা যাবে, যা এই সমস্যার সমাধান করবে। 

ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় এবং বিশাল এক দেশে, জাতীয় ঐক্যের জন্য বিভিন্ন সংস্কৃতির পার্থক্য বোঝা এবং উপলব্ধি করা অপরিহার্য।  ইতিহাসের প্রতি নেহেরুর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভাবে নিবদ্ধ ছিলো সমাজের ভবিষ্যৎ উন্নত করার জন্য, সমাজকে সঠিক ভাবে বোঝার জন্য। কিছু মানুষ নিজেদের রাজনৈতিক লাভের কথা মাথায় রেখে পৌরাণিক কাহিনী, ধর্ম, মিথ্যা খবরকে হাতিয়ার করে যাতে দেশের এবং দেশের মানুষের ক্ষতি করতে না পারে তা নিশ্চিত করায় ছিলো তার মূল লক্ষ্য। দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগেই এই বিষয়টিকে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যা পরবর্তীকালে প্রধানন্ত্রী হিসাবে তার কার্যকলাপেও বারবার প্রকাশ পেয়েছে।  ভারত বর্তমানে যেখানে সীমান্তে অশান্তি, কোভিড-১৯ মহামারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ভয়ংকর কয়েকটি সংকটের মোকাবিলা করছে তখন নেহেরুর এই নীতিগুলো মনে রাখার প্রয়োজীয়তা নতুন করে মনে পড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.