শব্দের থেকে ৩০ গুন বেশী গতীর টার্গেট ধংস করতে সক্ষম ভারতবর্ষ
নিউজ ডেস্কঃ ২০১৯সালে ভারতের এ্যন্টি স্যাটেলাইট মিশন ভারতের কাছে আনন্দের বিষয় কথাটা ১০০বার সত্য। কিন্তু ঠিক একই সময়ে এটি ভারতের দুই প্রতিবেশিদের কাছে অকালে বজ্রপাত ছাড়া আর কিছু নয়। ভারতের মত একটা দেশ এটা করলো কি করে?
চীনের যে কোনো লোয়ার আর্থ অর্বিটের স্যাটেলাইটকে বর্তমানে ভারত ধ্বংস করতে সক্ষম। ভারত নিজের এ্যন্টি স্যাটেলাইট টেস্টিং এর সময় ম্যাক ৩০+ গতীর টার্গেট ধ্বংস করে। অর্থাৎ শব্দের থেকে ৩০+ গুন গতীর টার্গেট ভারত ধ্বংস করেছে।
ASAT যে শুধু এ্যন্টি স্যাটেলাইট মিসইল নয় তা আগেও আমরা দুটি পোষ্টে জানিয়েছি। ASAT একধারে যেমন স্যাটেলাইট বিধ্বংসী মিসাইল অপরদিকে এটি একটি এ্যম্টি ব্যলিস্টিক মিসাইলও বটে। একটা ব্যপার এখান বলা উচিত আমরা যখন বলি যে মিশনে মূলত ব্যবহার করা হয় রেডার, গ্রাউন্ড স্টেশান ও মিসাইল তার সাথে একটা বড় জিনিসের ব্যবহার হয়ে থাকে। যার নাম সুপার কম্পিউটার। এটির মাধ্যমেই প্রথমিক ভাবে সিমুলেশান মুডে পুরো জিনিসটার ট্রায়াল হয়ে থাকে। এমনকি পরে এর মাধ্যমে পুরো মিশন পরিচালনা হয়। কারন এই মিশনে সামান্য মাইক্রোসেকেন্ডের মূল পুরো মিশনটি ব্যর্থ করার জন্য যথেষ্ট।
ভারতের ASAT ভূমি থেকে ১০০০+কিমি উচ্চতায় ম্যাক-৩০ গতীতে ফ্লাই করা স্যাটেলাইট ধ্বংস করতে সক্ষম। অর্থাৎ ম্যাক ২৩-২৫ গতীর ব্যলিস্টিক মিসাইল যেমন IRBM & ICBM শ্রেনীর মিসাইল গুলি ভারতের ব্যলিস্টিক মিসাইল ডিফেন্সের মাধ্যমে ইন্টার্সেপ্ট করা সম্ভব। তার কারন স্যাটেলাইটের তুলনায় ব্যলিস্টিক মিসাইলের রিএন্ট্রি ভেহিকেলের রেডার সিগনেচার কম হয়। এছাড়া স্যাটেলাইটের যাত্রাপথ একই থাকে। অর্থাৎ ম্যনুয়েভারেবেল হয় না। অর্থাৎ আমরা যে গতীর স্যাটেলাইটকে যে এ্যন্টি মিসাইলের আওতায় আনতে পারি, সেই এ্যন্টি স্যাটেলাইট মিসাইল দিয়ে ব্যলিস্টিক মিসাইল টার্গেট করা গেলেও তার গতীর কিছু পার্থক্য থাকতে হবে কারন এক্ষেত্রে শনাক্ত করা একটু কঠিন হয়। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রূত মিসাইল তিনটি হল-
১/ এ্যভেঞ্জার্ড হাইপারসনিক গ্লাইডড ব্যলিস্টিক মিসাইল (রুশ)
গতী- ম্যাক ৩০ ( ম্যাক ১ = শব্দের গতী )
২/ ডংফেং-৪১ আইসিবিএম (চীন)
গতী- ম্যাক ২৫
৩/ অগ্নি-৫ আইসিবিএম (ভারত)
গতী- ম্যাক ২৪
অর্থাৎ রেঞ্জ ফ্যক্টর বাদ দিয়ে আমরা যদি গতীর বিচার করি তবে রুশ এ্যভেঞ্জার্ড বাদ দিয়ে প্রায় পৃথিবীর সব মিসাইলের গতী ইন্টার্সেপ্ট করা সম্ভব। অন্যদিকে বাস্তবতায় ভারতের ASAT হিসাবে ব্যবহৃত এ্যন্টি ব্যলিস্টিক মিসাইল PDV Mk-2 আদতে আমাদের ব্যলিস্টিক মিসাইল ডিফেন্সের ফেজ-২ এর প্রস্তুতি। এর ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হবে AD-1 & AD-2 এ্যন্টি ব্যলিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। যা ৬০০০কিমি আইসিবিএম ইন্টার্সেপ্ট করতে পারবে।
অনেকেরই প্রশ্ন থাকতে পারে ১৪০০০কিমি পাল্লার মিসাইলের গতী যদি ইন্টার্সেপ্ট করতে সক্ষম হয় তবে রেঞ্জের জন্য এর ইন্টার্সেপ্ট ক্ষমতায় এত ফারাক হওয়ার কারন কি? ব্যপারটা জটিল লাগতে পারে।
যখন মিসাইল লঞ্চ হয় ১৪০০০কিমি দূর থেকে তার মানে অবশ্যই এটা না যে আমাকে আমার ডিফেন্স সিস্টেমের রেডার রেঞ্জ অতটাই রাখতে হবে যাতে টার্গেট মিসাইলের বুস্ট ফেজ থেকে আমরা তাকে শনাক্ত করতে পারি। তবে তার মানে এই না যে আমার রেডার রেঞ্জ ৪০০কিমি হলেও চলবে। ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী রেডার শোর্ডফিশের রেঞ্জ ১৫০০কিমির বেশি। তাই এই রেডারের ওপর ভর করে মিসাইল ইন্টার্সেপ্ট করতে গেলে ৬০০০কিমির মিসাইল ইন্টার্সেপ্ট করা সম্ভব হবে। কারন যখন ৬০০০কিমি মিসাইল টার্গেট থেকে ১৫০০কিমি (রেডার রেঞ্জ) দুরে থাকার সময় সেটি এমন পজিশানে থাকবে যে আমরা এ্যন্টি মিসাইলকে লঞ্চ করে তাকে ধ্বংস করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে । অর্থাৎ একটি মিসাইল যত বেশি ফ্লাই করবে তার গতী স্বাভাবিক ভাবে বাড়বে। ৬০০০কিমি মিসাইল টার্গেট থেকে ১৫০০কিমি দুরে থাকার সময় ফ্রি-ফ্লাইট মুডে থাকলেও ১৪০০০কিমি দুর থেকে আসা একটি মিসাইল টার্গেট থেকে ১৫০০কিমি দুরে এসে নিজের টার্মিনাল গ্লাইড প্রক্রিয়া শুরু করবে। অর্থাৎ শনাক্ত করার মূহুর্তে আপনার হাতে আর সময় নেই নিজের অপরেশান পরিচালনা করার।
উল্লেখ আমাদের এ্যন্টি স্যাটেলাইট মিশনেও আমাদের শোর্ডফিশকে কাজে লাগানো হয়ে ছিল। ভারত পৃথিবীর তৃতীয় দেশ যে হিট টু কিল মেথডে স্যাটেলাইট ধ্বংস করেছে। কারন রুশের এ্যন্টি স্যটেলাইট মিসাইলটি প্রক্সিমাইটি প্রক্রিয়ায় স্যটেলাইটকে ধ্বংস করে। এক্ষেত্রে মিসাইল টার্গেটের কাছে যায় ঠিকই তবে তাকে ধাক্কা দেওয়া বা আঘাত করার মাধ্যমে ধ্বংস করে না। বরং তার কাছে গিয়েই প্রচন্ড শক্তিশালী বিষ্ফোরন ঘটায়। ফলে টার্গেট ছিন্নবিচ্ছিন হয়ে যায়। হিট টু কিল মেথডে যে এ্যকুয়েরিসি প্রয়োজন প্রক্সিমাইটিতে তা প্রয়োজন পরে না।
এ্যন্টি স্যাটেলাইট মিসাইলের কখনও বড় প্রোডাক্সানের প্রয়োজন পরে না। আপনি শত্রুপক্ষের ৮-৯টি স্যাটেলাইট ধ্বংস করেন তবে সেটাই একটি চেন রিএ্যক্শান শুরু করবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ধ্বংসাবশেষ বা স্পেশ (ডার্বিস) তীব্র বেগে ঐ অঞ্চলের সমস্ত স্যাটেলাইটে ধাক্কা মারবে। ফলে ঐ অঞ্চলে একের পর এক স্যাটেলাইট ধ্বংস হবে। তাই এখনে ম্যাস প্রোডাক্সানের প্রয়োজন পরে না।
ভারতের এ্যন্টি স্যাটেলাইট মিশনকে ব্যলিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের একটা বড় “ব্রেক থ্রু” হিসাবে দেখছে সামরিক বিশেষজ্ঞরা। তবে এটাও ঠিক তৎকালীন কংগ্রেস সরকার যদি সহসকরে ২০১২তেই পরীক্ষা করতো তবে আজ আমরা হয়তো মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমে ফেজ-২ মোতায়েন করে ফেলতে পারতাম। তবে কাজ হচ্ছে। ভবিষ্যতে আর কোনো স্যাটেলাইট ধ্বংস করা প্রয়োজন হবে না। কারন বাকি টেস্টে এক্ষেত্রে আমাদের সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে সিমুলেশান মুডে সম্পন্ন করতে পারবো।