ইসরায়েলের বারাক ৮ সিস্টেম থাকার পরেও কেন ভারতবর্ষের দেশীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম?
নিউজ ডেস্কঃ কিছুদিনের মধ্যে ভারতের হাতে আসতে চলেছে এস ৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। রাশিয়ার এই সিস্টেম হাতে পাওয়ার পর ভারতের আকাশ যে দুর্ভেদ্য হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। তবে বর্তমানে ভারতের হাতে থাকা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম যেকোনো মুহূর্তে চীন, পাকিস্তানের ঘুম কেড়ে নিতে পারে।
কিছুমাস আগে ভারতের পুরনো আকাশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম গুলিকে নতুন সিকার দিয়ে আপগ্রেড করা হয়েছে। এবং এরপর এর নতুন নামকরন করা হয় আকাশ ১এস। এরপরই ইসরায়েলের এমআর স্যাম বারাক ৮ অর্ডার করা হয়, এবং রাশিয়ার এস ৪০০ ও অর্ডার করা হয়। আর ঠিক তারপরই ডি আর ডি ও নতুন পরীক্ষা চালায় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম QRSAM এর। আর সেই ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই হাতে আসে আকাশ এনজি।
তবে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে ইসরায়েলের বারাক ৮ সিস্টেম থাকার পরেও কেন এই আকাশ এনজি? সত্যি কি এর প্রয়োজনীয়তা আছে?
আসলে আকাশ এন জি এবং QRSAM একটি ডি এন এ ভিত্তিক তৈরি হওয়া এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। ভারতবর্ষের মতো জায়গায় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই দুটির কাজও অনেকটা একরকম। এস ৪০০ কোন মিসাইল নয় এটি আসলে ৪ টি ভিন্ন মিসাইল একটি লঞ্চার আর একই রেডার কম্যান্ডের আন্ডারে কাজ করে। ঠিক একই কাজ করে ভারতের দুই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। এই দুটি সিস্টেম ক্রয় করা হয়েছে বিশেষ কিছু কথা মাথায় রেখে, অর্থাৎ যুদ্ধের সময় ভারতবর্ষের সেনাবাহিনী কিভাবে সাপোর্ট পেতে পারে, তার উপর ভিত্তি করে।
একটি ট্রাক বা যানবাহনের চারিদিকে মাউন্ট করা GaN Based AESA Fire control radar রয়েছে। এবং বাকি লঞ্চার গুলিতে আকাশ এন জি এবং QRSAM মিসাইল গুলি ইন্সটল। প্রতিটি লঞ্চার ট্রাকে ৬ টি মিসাইল থাকতে পারে সেক্ষেত্রে মোট ২৪ টি মিসাইল থাকবে। AESA ফ্লেক্সিবেল রেডার হিসাব পরিচিত। তাই এর ট্র্যকিং সক্ষমতাও অনেক বেশি।
রেডার এবং কম্যান্ড একটি ট্রাকের উপর থাকার ফলে চালকের কাছে এটি একটি বেশ ভাল কাজের জিনিস। পাশাপাশি সাথে রয়েছে ইলেকট্রো অপ্টিক্যল টার্গেটিং সিস্টেম। অর্থাৎ কোনওসময় রেডার কোন ভাবে হুমকির বিরুদ্ধে আক্রমন করতে পারে আবার অন্যদিকে ইলেক্ট্রো অপটিক্যাল টার্গেটিং সিস্টেম ১৩ কিমি রেঞ্জের মধ্যে শনাক্ত করে নেবে। QRSAM এর সবথেকে কম এনগেজনেন্ট রেঞ্জ হল ২৫০ থেকে ৩০০মিটার। অর্থাৎ এক্ষেত্রে টার্গেট যদি লং রেঞ্জে আকাশ এনজিকে রেডার জ্যমিং এর মাধ্যমে ডিফিট করতেও পারে তবুও ইলেক্ট্রো অপটিক্যাল টার্গেটিং সিস্টেম এর মাধ্যমে QRSAM সহজেই তা ধ্বংস করতে পারবে। পাশাপাশি আরও একটি কথা ভুললে চলবেনা যে GaN AESA জ্যম করবে এমন কোনও জ্যামার আজও তৈরি হয় নি
সোজা কথায় বললে ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে ইসরায়েলের বারাক ৮ হল একাই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হিসাবে কাজ করে দেবে। অর্থাৎ এটি যেকোনো এলাকাকে ১০০ কিমি রেঞ্জের মধ্যে সামরিক কভারেজ দিতে সক্ষম হবে, পাশাপাশি এর রেডারের রেঞ্জই ৩৫০ কিমি। অর্থাৎ কোন স্থানে এটি থাকলে তা যেকোনো হুমকিকে কভারেজ দিতে সক্ষম। তবে এই কাজ করার জন্য তৈরি হয়নি আকাশ এন জি এবং QRSAM।
আকাশ এন জি এবং QRSAM মোতায়েন করতে বারাক ৮ র মতো একটুও সময় লাগেনা। অর্থাৎ আকাশ এন জি QRSAM এর রেডার একটি ট্রাকে বা যানবাহনে স্থির করা থাকে। কোন রোটেশান রেডার ব্যবহার করা থাকেনা। তবে এটি বারাক ৮ করে থাকে। আর বারাক ৮ কে আবার উলম্ব বা ভারটিক্যাল ভাবে লঞ্চার বসিয়ে ফায়ার করতে হয়। অন্যদিকে আকাশ এন জি এবং QRSAM এর এইটুকুও সময় লাগেনা এর রেডারের স্থান পরিবর্তন করতে করতে টার্গেটের জন্য সার্চ, টার্গেট খুজে পেলে ট্র্যক আর তারপর লঞ্চার কে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামি মিসাইল লঞ্চ করতে সক্ষম।
আসলে এই দুটি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে অফেন্সিভ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হিসাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। অর্থাৎ কোনওসময় যদি ভারতের আর্মার্ড রেজিমেন্ট পাকিস্তানকে টার্গেট করে এগিয়ে যেতে থাকে তাহলে পাক বিমানবাহিনীর সেনাকে সাপোর্ট দিতে যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার গুলি পাঠাবে, সেক্ষেত্রে ভারতবর্ষের সেনাবাহিনীর জন্য তা হুমকি হতে পারে তখন ভারত এই হুমকির জবাব দিতে নিজের আর্মার্ড রেজিমেন্ট, ম্যকানাইজ ইনফ্যন্ট্রি বা সাধারন ইনফ্যন্ট্রির সাথে Akash-NG আর QRSAM এর ব্যটারি নামিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে পুরো গ্রাউন্ড রেজিমেন্টের সাথে এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট মুভ করবে আর ৭০-৯০কিমি এলাকা ভারতে এয়ার কভারেজের মধ্যে থাকবে।
আসলে ইসরায়েলের বারাক ৮ এলাকাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অন্যদিকে Akash-NG আর QRSAM জুড়ি তৈরি হয়েছে ভারতের অফেন্সিভ আর্মি কোরকে এয়ার কভারেজ দেওয়ার জন্য। চীনের সেনার অনুপ্রবেশ হলে দ্রুত সেখানে এয়ার ডিফেন্স সরবরাহ করা হবে। ভারতবর্ষের আকাশ এন জি এবং QRSAM সত্যি প্রশংসনীয়। ঠিকভাবে প্রোমোট করতে পারলে আন্তর্জাতিক বাজারে এর বিরাট চাহিদা হতে পারে। যেখানে রেডার ডাউনগ্রেডেড হবে আর মিসাইলের প্রপাল্সান সিস্টেম ভারতীয় ভার্সানের তুলনায় কিছুটা দূর্বল হবে।