আপদকালিন সময়ে পারমাণবিক আক্রমণ করতে ভারতবর্ষের কাছে কোন ক্লাসের বিমান রয়েছে?
নিউজ ডেস্কঃ ভারতবর্ষ এবং ফ্রান্সের বন্ধুত্ব যে কতোটা গভীর তা আর নতুন করে কিছু বলার নেই। ফ্রান্সের থেকে রাফালে পাওয়ার পর একটা কথা না বললেই নয় তা হল ভারতবর্ষের বিমানবাহিনীর ক্ষমতা ইতিমধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয় ভারতবর্ষের হাতে আসতে চলা পরমাণু সাবমেরিন ফ্রান্সের সাথে যৌথভাবে তৈরি করা হতে পারে বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তবে সম্প্রতি ভারতবর্ষের হাতে আসা পুরনো মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান গুলি যে ভারতবর্ষের বায়ুসেনার ক্ষমতা বাড়াবে তা একপ্রকার নিশ্চিত।
ভারতবর্ষের হাতে থাকা মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান গুলির ক্ষমতা বাড়াতে ফ্রান্সের থেকে নতুন করে ২৪ টি যুদ্ধবিমান ক্রয় করা হয়েছে। আসলে ভারতের বায়ুসেনায় যুদ্ধবিমানের ঘাটতি মেটাতে এই যুদ্ধবিমান গুলি ক্রয় করা হয়েছে। ৩০ বছরের বেশি পুরনো এই যুদ্ধবিমান একদম কম দামে ফ্রান্সের থেকে ক্রয় করেছে ভারতবর্ষ।
পুরনো এই যুদ্ধবিমান গুলি ফ্রান্স বহু মাস ধরে ঠিকমতো ভাবে ব্যবহার করেনি। তবে শত্রুদেশ গুলিকে আপদকালিন সময়ে পারমাণবিক হামলা চালানোর জন্য ৭৫ টি মিরাজ ২০০০ বিরাটভাবে আপগ্রেড করে দেশের একাধিক স্থানে মোতায়েন করে রেখে দিয়েছে।
২৪ মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান ক্রয় করা হলেও এরমধ্যে মাত্র ৫ টি যেকোনো মিশনের জন্য যেতে প্রস্তুত অর্থাৎ ফ্রাই কন্ডিশনে রয়েছে। ৮ টি যুদ্ধবিমানকে রিপেয়ার করতে হবে বাকি ১১ টি যুদ্ধবিমানের পার্টস খুলে নিয়ে এর গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ এবং ডিভাইস ভারতের বিমান বাহিনীতে আগে থেকে সার্ভিসে থাকা ৪৯টি মিরেজ-২০০০ যুদ্ধবিমানের রুটিন মাফিক আপগ্রেডিং, রিপিয়ার এণ্ড মেইন্টেনেন্সের জন্য ব্যবহার করা হবে।
ফ্রান্সের ড্যাসাল্ট এভিয়েশন কর্পোরেশন ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে মিরেজ-২০০০ যুদ্ধবিমান ফ্রান্সের বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে এটিকে প্রথম সার্ভিসে আনে। ২০০৭ সালের এর প্রডাকশন লাইন চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তবে আশির দশকে রাজিব গান্ধী সরকারের আমলে পাকিস্তানের এফ-১৬ জেট ফাইটারের যোগ্য প্রতিদ্বন্দী হিসেবে ১৯৮৫ সালের ২৯শে জুন প্রথম মাত্র ৭টি সুপারসনিক ২.২ ম্যাক গতির গতির মিরেজ-২০০০এইচ সিরিজের যুদ্ধবিমান সার্ভিসে আসার মাধ্যমে ফ্রান্সের বাহিরে এই যুদ্ধবিমানের প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ক্রেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত। ভারতের বিমান বাহিনীতে এখনো পর্যন্ত মোট ৪৯টি মিরেজ-২০০০ জেট ফাইটার অপারেশনাল রয়েছে। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের পাশাপাশি ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গি আস্তানায় বিমান হামলায় বেশ সফলতার সাথেই ভারত তাদের এয়ার ফ্লীটের মিরেজ-২০০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে।
সারা বিশ্বে এখনো পর্যন্ত মিরেজ-২০০০ সি/ডি/এন/বি সিরিজের ফ্রান্স মোট ৩১৫টি, ভারত ৪৯টি এইচ/টিএইচ সিরজের, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৬৭টি, ব্রাজিল ১২টি, পেরু ১২টি, তাইওয়ান ৬০টি, মিশর ২০টি এবং গ্রীস ৪৪ যুদ্ধবিমান এখনো সার্ভিসে রেখেছে। তবে কাতার তার এয়ার ফ্লীটে থাকা ১২টি মিরেজ-২০০০ইডিএ/ডিডিএ সিরিজের যুদ্ধবিমান মাত্র কয়েক বছর আগে ফ্রান্স থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আধুনিকায়ন করে নেয়। তবে বর্তমানে তাদের বিমান বহরে নতুন প্রজন্মের প্রায় ৯৬টি (এফ-১৫, রাফায়েল এবং ইউরোফাইটার তাইফুন) যুদ্ধবিমান পর্যায়ক্রমে আসতে থাকায় বিমান বহরে থাকা পুরনো মিরেজ-২০০০ যুদ্ধবিমানগুলো অবসরে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাতারের আল থানি সরকার।