আমেরিকা এবং ইসরায়েলকে মুহূর্তে শেষ করতে পারে ইরান!
নিউজ ডেস্কঃ ইরান এবং আমেরিকার সম্পর্ক যে আদায় কাঁচকলায় তা কমবেশি সকলেরই জানা। তবে মধ্য প্রাচ্যের কিছু দেশের সাথে আর বেশ ভালো সম্পর্ক আমেরিকার। কারন এই ইসলামিক দেশ গুলি প্রচুর অর্থ খরচ করে থাকেন আমেরিকান অস্ত্র ক্রয় করার জন্য। তবে ইরানের সাথে আমেরিকার ঝামেলা থাকার কারনে আরও বেশ কিছু দেশকে এর মাশুল গুনতে হয়।
কিছু মাস আগে জাতি সংঘের নির্ধারিত বার্ষিক চাদার পরিমাণ ১৬.২০ মিলিয়ন ডলার দিতে না পারার কারনে ইরানের ভোটাধিকার প্রদান ক্ষমতা রোধ করা হয়। যদিও কিছু দিনের মধ্যে তা আবার ফিরে পায় দেশটি। আসলে এই আদার পরিমাণ না দিতে পারার কারনে সদস্য পদ স্থগিত হওয়া ছিল যথেষ্ট অপমানজনক। ইরানের সংবাদমাধ্যম এই নিয়ে তেমন কিছু সারা না দিলেও এর ফলে যে তাদের দেশের মুখ পুড়েছে তা বলাই বাহুল্য।
তবে এই প্রথম নয় এর আগেও একাধিকবার মুখ পুড়েছে তাদের। এর আগে ২০২০ সালের দিকে তেহরান এয়ারপোর্টের কাছে একটি যাত্রীবাহী বিমানকে আমেরিকার বায়ুসেনার বিমান ভেবে মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করার ফলে ১৬২ জন মানুষ মারা যান। আর এই যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের অর্থ তারা না দিতে পারার ফলে তাদের বন্ধু দেশ কাতার বিমানে থাকা যাত্রীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার হাটে তুলে দেয়। ঠিক এই ভাবে কাতারের কারনে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে বেঁচে যায় ইরান।
বিমান ধংসের কথা সকলের সামনে আসলেও তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ যে কাতারকে দিতে হয়েছিল সেই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গুলি সেভাবে সমালোচনা করেনি ইরানের।অন্যদিকে আবার একাধিক সুত্রের মতে নাকি ইরান আমেরিকা এবং ইসরায়েলের মত দেশকে প্রতিনিয়ত আক্রমনের হুমকি দিচ্ছে তারা। শুধু তাই নয় গোপনে তারা নাকি ভূগর্ভে প্রচুর মিসাইল ঘাঁটি তৈরি করেছে। ২০০ কিমি থেকে শুরু করে ২০০০ কিমি পর্যন্ত প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মিসাইল মজুত করে ফেলেছে।
তবে মধ্য প্রাচ্যে ইরানের প্রভাব পরার ফলে আসলে লাভ হচ্ছে আমেরিকার। কারন মধ্য প্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারের ফলে বেশ কিছু দেশ নিজেদের অস্ত্র সম্ভার ভারী করছে। নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে বাড়াতে ইতিমধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, অমান বাহরানের মতো দেশ গুলি আমেরিকার থেকে কয়েকশো বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয় করছে। আর এর ফলে আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশ গুলি অস্ত্র ব্যবসা রমরমিয়ে বাড়ছে।
এক আন্তর্জাতিক সুত্রের মতে ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ১০ বছরে বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্যের ৪০ শতাংশ অস্ত্র সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলি ক্রয় করেছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরান, কাতার, কুয়েত এবং অন্যান্য আরব দেশগুলো ব্যবহার করতে না পারলেও মোট প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ক্রয় করে রেখেছে।
শুধু তাই নয় রাশিয়ার সাহায্যে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের হাতে ড্রোন থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র তুলে দিয়ে নিজেদের নিজেদের শিয়া মতবাদ এবং প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে ইরান। তবে জানলে খুব অবাক হবেন যে ইয়েমেনের মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ শিয়াপন্থী, তবে ইরানের অস্ত্রের উপর ভর করে তারা ইয়েমেনের বড় অংশ দখল করার পাশাপাশি প্রচুর মানুষ হত্যা করছে।
উল্টোদিকে আবার সৌদি আরব তাদের অনুগত হাই সরকারকে রক্ষার্থে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য থেকে প্রায় ৬.০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষুদ্র যুদ্ধাস্ত্র, আকাশ থেকে নিক্ষেপ যোগ্য প্রাণঘাতী বোম্বস এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম আমদানি করেছে। এক দিকে সৌদি জোট অস্ত্র দিচ্ছে ইয়েমেনের অনুগত আল-হাদী সরকরাকে রক্ষার্থে উল্টোদিকে ইরান এবং রাশিয়া মিলে অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে ইয়েমেনের শিয়াপন্থী হুথী বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীকে। আর এর ফলেই বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ইয়েমেনের বিরাট একাংশের মানুষ।
শুধু ইয়েমেন নয় মধ্য প্রাচ্যে আরও এক দেশ সিরিয়ার অবস্থাও অনেকটা সেরকমই। কট্টর শিয়া মনোভাব সম্পন্ন আসাদ সরকারকে ক্ষমতায় রেখে দেওয়ার জন্য ২০১১ সাল থেকে প্রচুর পরিমানে অস্ত্র নিজেদের দেশের স্বেচ্ছাসেবক মিলিশিয়া পাঠিয়ে দেশটিকে আজ ধ্বংস করে দিয়েছে। অথচ ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত সিরিয়ায় প্রায় আঠারো থেকে ২০ হাজারের কাছাকাছি ইরানের সেনা ও নাগরিক মৃত্যুবরণর করলেও বিষয়টি বিশ্বের চোখে আড়াল করে রেখেছে দেশটির সরকার এবং এহেন প্রাণহানী নিয়ে আজ পর্যন্ত মিডিয়ায় কোন ধরণের তথ্য প্রকাশ করেনি দেশটির খোমেনী প্রশাসন। শুধু তাই নয় সিরিয়া যুদ্ধে মৃত্যুবরণকারী নাগরিকদের তারা তাদের পরিবারের কাছে পর্যন্ত ফিরিয়ে দেয়না। কারন সারা পৃথিবীর সামনে তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসবে। আবারও উল্টোদিকে সিরিয়াতে ইরানের সামরিক ঘাঁটি এবং স্থাপনায় প্রতিনিয়ত ইসরাইলের বিমান বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ধ্বংস কিংবা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করলেও আজ পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে মুখে তীব্র আক্রমণ করা ছাড়া বড় ধরণের কোন পালটা সামরিক পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেনি তারা।
ইরান সামরিক ক্ষমতা নিয়ে বেশি করে সবার সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু কূটকৌশলী মার্কিন প্রশাসন তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। বিশেষ করে ইরানের গ্রাউণ্ড এন্ড নেভাল ফোর্সে বেশ শক্তিশালী বলে মনে করা হলেও বাস্তবে ইরানের বায়ুসেনার প্রকৃত সক্ষমতা অত্যন্ত বাজে অবস্থানে রয়েছে বলে মোট সামরিক বিশেষজ্ঞদের। এক্ষেত্রে ইরান তার বিমান বাহিনী এবং আকাশ সক্ষমতা যতই উঁচু করে দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন, ইরানের সামরিক দূর্বলতা এবং স্পর্শকাতর অক্ষমতা কিন্তু বিশ্বের নজর এড়িয়ে যাচ্ছেন না। অতয়েব ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট, ইসরাইল এবং তার সৌদি জোটকে সাথে নিয়ে ইরানে সীমিত বা বড় ধরণের বিমান হামলা করলে, বাস্তবে চরম প্রতিবাদ কিংবা তীব্র নিন্দা ব্যাতিত ইরানের পাশে আদৌ কোন দেশ থাকবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। রাশিয়া এবং চীন মুখে বিরাট বড় প্রতিবাদ এবং ইরানকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও আসলে মার্কিন বিরোধী উস্কানি এবং ইরানের কাছে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ব্যবসা করা ছাড়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন প্রতিরোধে কিছুই ব্যবস্থা গ্রহন করবে না তা কিন্তু অনেকটাই নিশ্চিত বলা যেতে পারে।