ভারত

ভারতবর্ষের মিগ বনাম পাকিস্তানের এফ ১৬? ব্যাটেল ফিল্ডে এগিয়ে কোন যুদ্ধবিমান?

নিউজ ডেস্কঃ পশ্চিমাদেশের ফাইটার বিমানের সাথে পূর্বাঞ্চলের ফাইটার বিমানের তুলনা দেওয়া একটি জনপ্রিয় প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর হবেই বা না কেন যখন এই সব দেশ নিজেদের জেট নিয়ে আরেকপক্ষকে হুমকি দেয়। এই দুই বিমানই নি:সন্দেহে সেরা। এর মধ্যে পোল্যান্ডের কাছে এই দুই যুগান্তকারী বিমান আছে।

প্রকৃতপক্ষে এই দুই বিমান তৈরি করা হয় নি একে অপরকে পাল্লা দেওয়ার জন্য এই দুই বিমান তৈরি করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে। যার ফলে এই দুই বিমানের ব্যবহার একই রকম হয় না। মার্কিন এফ ১৬ তৈরি করা হয়েছে মূলত অর্থ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য , হালকা বহুমুখী বিমান করে তৈরি করা হয়েছে যাতে এই বিমান আরেক মার্কিন ব্যয়বহুল বিমান এফ ১৫ কে সহায়তা করতে পারে। আর অন্যদিকে মিগ ২৯ হল এয়ার সুপেরিওটি ফাইটার জেট। মিগ ২৯ এর ইঞ্জিনিয়াররা মূলত এর গতি ,আক্রমনাত্নক ক্ষমতা,ইঞ্জিন , বেশি উচ্চতা যাওয়া এমন কি খারাপ রানওয়ে থেকে যাতে উড্ডয়ন করতে পারে সেই দিক বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে এর রেঞ্জ এবং এভিউনিক এর উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয় নি। আর এই সব পার্থক্য বিমান তৈরি করার সময় দেখা গেছে।

মিগ ২৯ এর দুইটি শক্তিশালী ইঞ্জিন রয়েছে যার ফলে এই বিমানের ক্ষমতা বেশি। এই দুই বিমানে ভারটিকেল stabilizer আছে যার ফলে পাইলট ইঞ্জিন চালু করার বিমানকে ব্যালেন্স করতে পারে। পশ্চিমারা এফ ১৬ বিমানে একটি ইঞ্জিন দিয়ে একে নিরাপদ করে তৈরি করেছে এবং সেই সাথে এর ককপিটকেও বেশ উন্নত করে তৈরি করেছে। এছাড়াও এর ককপিটে রয়েছে মাল্টিফাংশনাল ডিসপ্লে এবং খুবই অটোমেশন ব্যবস্থা। যার ফলে এই সব কিছু পাইলটের দক্ষতা ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর অন্যদিকে মিগের এই সব ব্যবস্থা নেই। মিগ ২৯ এর সাথে এফ ১৬ এর তুলনা দেওয়া হয় কারন মিগ ২৯ সার্ভিসে আসে ১৯৮০ সালে আর ঠিক ওই সময়ই সার্ভিসে আসে এফ ১৬ এর “সি” ভার্সন। এই দুই বিমানই অনেক দূর থেকে টার্গেটকে আক্রমন করতে অক্ষম। এখানে লম্বা দূরত্ব বলতে বোঝানো হয়েছে ১০০ কি:মি: এর থেকে বেশি দূরত্ব। যদি মিগ ২৯ এবং এফ ১৬ একে ওপরের দিকে উড়ে আসতে থাকে তাহলে সবার আগে কিন্তু মিগকে ডিটেক করতে সক্ষম হবে এফ ১৬।যেহেতু এফ ১৬ এর রয়েছে মিগের থেকে আরোও ভালো রাডার যা কি না আবার যেকোন আবহাওয়ায় বেশ ভাল কাজ করে এবং BVR সক্ষমতা পাইলটকে সর্বপরি আগেই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে। যদি এফ ১৬ এবং মিগ ২৯ এর মধ্যে যুদ্ধ লাগে এবং দুই পক্ষ যদি মিসাইল একে অপরের দিকে নিক্ষেপ করে তাহলে এই ক্ষেত্রে কে এগিয়ে থাকবে তা বলা মুশকিল যেহেতু উভয়পক্ষ তাদের মিসাইলের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করে নি।কিন্তু ধারনা করা হয় এফ ১৬ এই দিক থেকেও এগিয়ে থাকবে কারন মার্কিন এয়ার টু এয়ার মিসাইল নিক্ষেপ করার পর গাইড করা যায়। যার ফলে পাইলট নিক্ষেপ করে অন্যদিকে চলে যেতে পারবে।

আর অন্যদিকে স্বল্প দূরত্বের ডগ ফাইটে মিগ ২৯ বরাবরই এগিয়ে থাকবে। কারন এই বিমান এফ ১৬ থেকে বেশি maneverable। আর ঠিক এই কারনটার জন্য মিগ ২৯ এবং সু ২৭ এয়ার শোতে খুবই ভাল পারফরমেন্স দেখাতে পারে। প্রকূতপক্ষে এই দুই বিমানের মধ্যে কোনটি সেরা তা বের করা খুবই কঠিন।এই দুটি বিমানই সেরা।

এবার আসা যাক ক্যাননের দিকে ।ক্যাননের ক্ষেত্রে এফ ১৬ প্রতি মিনিটে ফায়ার করতে পারে ৬০০০ রাউন্ড আর অন্যদিকে মিগ ২৯ করতে পারে প্রতি মিনিটে ১৫০০ রাউন্ড। অর্থ্যা এফ ১৬ বেশি করতে পারে।তবে মিগ ২৯ এর গুলির ক্যালিবার ৩০ মি:মি: আর অন্যদিকে এফ ১৬ এর গুলির ক্যালিবার ২০ মি:মি: । অর্থ্যা মিগ ২৯ গুলির আঘাতে প্রতিপক্ষ বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে এফ ১৬ এর তুলনায়। মিগ ২৯ এর আরেকটা মজার দিক হল “ইনফ্রারেড সার্চ এন্ড track” । আর ঠিক এই সুবিধার জন্য ভারতের সাথে মার্কিন বিমান বাহিনীর মহড়ার সময় ভারত শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।

এবার এদের যুদ্ধের পরিসংখ্যান দিকে তাকানো যাক। এই ক্ষেত্রে এফ ১৬ আবার অনেক এগিয়ে।এফ ১৬ প্রতিপক্ষের ৯২ টি যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল মাত্র ১৩ এফ ১৬ ধ্বংসের বিনিময়ে।আর অন্যদিক মিগ ২৯ মাত্র ১৬ টি প্রতিপক্ষের যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল ২৮ টি মিগ ২৯ ধ্বংসের বিনিময়ে।অর্থ্যা মিগ প্রতিপক্ষের বিমান ধ্বংস করার চেয়ে নিজে বেশি ধ্বংস হয়েছে।

মিগ ২৯ এর পাইলটের হেলমেট হল “হেলমেট মাউনটেড ডিসপ্লে” অর্থ্যা পাইলট যেদিকে তাকাবে টার্গেটিং কম্পিউটার সেদিকে মিসাইলে টার্গেট করাবে।এর ফলে পাইলটের দক্ষতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এটি এতটাই কার্যকরি এক ব্যবস্থা যে বর্তমানে সকল আধূনিক বিমানে এই প্রযুক্তি রাখা হচ্ছ।

তবে আপনি যদি একজন পর্যটককে প্রশ্ন করেন এই দুইটার মধ্যে কোন বিমান সেরা তখন সে বলবে মিগ ২৯।কারন মিগ ২৯ এর একটা ভার্সন আছে মিগ ২৯ইউবি(UB)। যেটাতে দুইটা সিট রয়েছে পাইলটের জন্য।আর রাশিয়াতে আপনি পাইলট না হলেও মিগ ২৯ বিমান করে উড়ে বেড়াতে পারবেন।রাশিয়ার বিমান বাহিনীকে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ দিলে আপনি মিগ ২৯ বিমানে চড়তে পারবেন। এবং পাইলট আপনাকে দূর দূরান্তে প্রচন্ড গতিবেগ নিয়ে উড়ে যাবে।পর্যটকরা তা করছেও।

শেষে আবারোও একটা কথা এই দুটো বিমানই কিন্তু সেরা।আপনি কাউকে অবহেলা করতে পারবেন না।একমাত্র পাইলটের দক্ষতাই পারে নিজ বিমানকে শ্রেষ্ঠ করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.