রাশিয়া

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ড্রোন ব্যবহার!

নিউজ ডেস্কঃ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ড্রোন গুলি যে বিরাট ভূমিকা নিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে ইউক্রেনের হাতে থাকা এই ড্রোন গুলি রাশিয়ার একাধিক যুদ্ধাস্ত্রের উপর আক্রমণ করেছে এবং তা যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি করেছে, পাশাপাশি ড্রোন টেকনোলোজিতে যে তুরস্ক এগিয়ে রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। এই যুদ্ধে তুরস্কের যে ড্রোনটি সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে তাহল বায়রাক্তার আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোন।

তুরস্কের বায়কার মাকিনার তৈরি বায়রাক্তার আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনটি ২০২১ সালে প্রথম সার্ভিসে আসে। সিঙ্গেল ইঞ্জিন অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের সমপর্যায়ের এরিয়াল সিস্টেমের মতো কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার প্রযুক্তিগত ক্ষমতা রয়েছে। বায়রাক্তার টিবি-২ কমব্যাট ড্রোনের উপর ভিত্তি করে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোনের প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তুরস্ক এবার আরো শক্তিশালী এবং উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর বায়রাক্তার আকেনসি ড্রোন বিশ্বের সামনে নিয়ে আসছে তুরস্ক।

২০০১ সাল থেকে আমেরিকার সাহায্যে যুদ্ধক্ষেত্রে কমব্যাট ড্রোনের কার্যকর ব্যবহার বিশ্বের সামনে আসলেও যুদ্ধক্ষেত্রে এয়ার টু এয়ার মিসাইল ফায়ারের সক্ষমতা অতি সাম্প্রতিক সময়ে সার্ভিসে এসেছে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি অত্যাধুনিক হেভি কমব্যাট ড্রোন আকেনসি। আমেরিকার পাশাপাশি ইসরাইল এবং চীন ড্রোন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে আকাশে সরাসরি এয়ার টু এয়ার মিসাইল ফায়ারে শত্রু পক্ষের যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং হেলিকপ্টার ধ্বংসের ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে তুরস্কের আকেনসি কমব্যাট ড্রোনের।

তুরস্কের তৈরি করা এই বায়রাক্তার আকিঞ্চি ড্রোন গুলি হাই অল্টিটিউট এবং লং ইন্ডিউরেন্স কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি)। এই ড্রোন গুলি আকাশের অত্যন্ত উচ্চতায় উড্ডয়নের পাশাপাশি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কমব্যাট মিশন পরিচালনা করা যায়। ড্রোনটি এয়ার লঞ্চড ক্রুজ মিসাইল বহন ও হামলার করতে সক্ষম এবং এমনকি এটি থেকে স্বল্প সক্ষমতা ও ওজনের পরমাণু ওয়ারহেড সমৃদ্ধ ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়েছে। এটি ২০১৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর প্রথম পরীক্ষামুলক সফল উড্ডয়ন সম্পন্ন করে।

এই ড্রোনে দুটি ইউক্রেনের ইভশেঙ্কো প্রগ্রেসের তৈরি ৭৫০ হর্স পাওয়ারের এআই-৪৫০টি টার্বোপ্রোপ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। তুরস্কের তরি ড্রোনটিকে ভূমি থেকে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ হাজার ফিট উচ্চতায় সর্বোচ্চ ১৩০ থেকে ১৯৫ নটিক্যাল মাইল বা ৩৬১.১৪ কিলোমিটার বেগে উড়ার ব্যাপক সক্ষমতা প্রদান করে। ড্রোনটি একবার জ্বালানী নিয়ে আকাশে একটানা ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে পারে। ড্রোন প্রযুক্তির দিক থেকে দেখতে গেলে আকিঞ্চি ৩৬১.১৪ কিলোমিটার গতিকে আক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে।

এভিয়নিক্স সিস্টেমের হিসেবে বায়রাক্তার আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনে নিজস্ব দেশীয় প্রযুক্তির (এইএসএ) রাডার, ইলেকট্রনিক্স সাপোর্ট পড এবং সাইট এণ্ড স্যাটালাইট কমিউনিকেশন সিস্টেম, এসানসাল কমন এপারচার টার্গেটিং সিস্টেম এবং ইলেকট্রনিক্স ওয়ারফার সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে।

তুরস্কের এই ড্রোনে ৬টি হার্ড পয়েন্টে ১,৩৫০ কেজি পর্যন্ত মিসাইল, গাইডেড এণ্ড আনগাইডেড বম্বস বহন করতে সক্ষম। এছাড়াও ক্রুজ মিসাইল বহন করার পাশাপাশি এয়ার টু এয়ার মিসাইল হীটে আকাশেই শত্রু পক্ষের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস করার সক্ষম। তুরস্কের এসওএম এয়ার লাউঞ্চ ক্রুজ মিসাইল নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহণ করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হলেও তুরস্ক কিন্তু এখনো পর্যন্ত নিজস্বভাবে পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র টেকনোলজি অর্জন করতে সক্ষম হয় নি।

এই কমব্যাট ড্রোনটিকে পূর্বের টিবি-২ ড্রোনের মতোই অত্যাধুনিক অটোনোমাস কন্ট্রোলিং সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি রোবটের মতো নিজে নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেকঅফ এবং ল্যাণ্ডিং করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া ড্রোনটির রানওয়ে বা বেইস নির্দিষ্ট করা থাকে এবং আগে থেকেই এটির ভৌগলিক অবস্থান ড্রোনটির সফটওয়ার প্রোগ্রামে ইনস্টল থাকে৷ তাই আপদকালীন মুহুর্তে কমাণ্ড সেন্টারের সাথে ড্রোনটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, সেক্ষেত্রে ড্রোনটি তার স্যাটালাইট নেটওয়ার্কিং সিস্টেম ও নিজস্ব জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার নির্ধারিত রানওয়ে বা ঘাঁটিতে ফিরে আসাতে পারে।

আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনের উৎপাদন খরচ বা আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য কত হতে পারে তার সঠিক কোন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে উৎপাদন ব্যয় খুব সম্ভবত ২০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.