আমেরিকার থেকেই কেন ইঞ্জিন ক্রয় করা হতে পারে?
রাজেশ রায়:– একটি যুদ্ধবিমান তৈরি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তার ইঞ্জিন তৈরি করা। এরোইঞ্জিনকে সবচেয়ে জটিল প্রযুক্তি বলা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে একেবারে স্ট্রাটোস্ফিয়ার পর্যন্ত, একদম উষ্ণ থেকে ঠান্ডা তাপমাত্রা কিংনা শূন্য থেকে সুপারসনিক গতি তোলা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের শর্ত পূরন করতে হয় একটি ভালো এরোইঞ্জিনকে। বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশই এই ইঞ্জিন তৈরি করতে সক্ষম। আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের মতন এই তিন চারটি দেশই ইঞ্জিন তৈরি করতে সক্ষম। তবে রাশিয়ান ইঞ্জিনের গুনমান ইউরোপীয়ান ও আমেরিকান ইঞ্জিনের তুলনায় অনেক কম। বিপুল অর্থ রিসার্চ ও ডেভলপমেন্টে ব্যায় করেও চীন এখনও তাদের চাহিলা মতো এরো ইঞ্জিন তৈরি করতে পারেনি। স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের নিজস্ব এরোস্পেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি হয়েছে। হ্যাল তৈরি হয়েছে এই সময়।
১৯৫৯ সালে ডিআরডিও এর অধীনে গ্যাস টার্বাইন রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্টে বা জিটিআরই তৈরি হয়েছে। ১৯৬০ সালে হ্যালের অধীনে এরো ইঞ্জিন রিসার্চ ও ডিজাইন সেন্টার তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাও আজও ভারত তার নিজস্ব তৈরি যুদ্ধ বিমানের জন্য ইঞ্জিন তৈরি করতে পারেনি। আমরা আমাদের তেজস মার্ক ১ কিংবা ভবিষ্যতের মার্ক ১এ, মার্ক ২, আমকা সবেতেই আমেরিকার ইঞ্জিন ব্যবহার করব। প্রথমে ভারত ঠিক করেছিল তেজসে কাভেরী ইঞ্জিন ব্যাবহার করবে কিন্তু অনেক ডেভলপমেন্টের পরও এই ইঞ্জিন প্রজেক্ট ব্যার্থ হয়ে যায়, এমনকী ফ্রান্সের স্যাফরন নামক সংস্থার সাথে যৌথভাবেও এই প্রজেক্ট করা সম্ভব হয়নি। যার জন্য বাধ্য হয়ে ভারতকে আমেরিকার জেনারেল ইলেকট্রিকের জিই এফ-৪০৪ ইঞ্জিন ব্যাবহার করতে হচ্ছে তেজসে, ভবিষ্যতের তেজসের মার্ক ১এ ভার্সনে এই ইঞ্জিনই ব্যাপার করা হবে। তবে ভবিষ্যতে ভারতের তেজস মার্ক ২, আমকা ও টিইডিবিএফ যুদ্ধবিমানে আমেরিকার এফ-৪১৪ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে যা ১২০ কিলো নিউটন থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে সক্ষম, এই ইঞ্জিন এখন আমেরিকার এফ-১৮ সুপার হর্নেটে ব্যবহার করা হয়।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী আগামী দুই দশকে ভারতের এরো ইঞ্জিন মার্কেট হবে ৩,৫০,০০০ কোটি টাকার বা বছরে ১৭,৫০০ কোটি টাকা করে। এর জন্য ভারত সরকার দেশেই এরো ইঞ্জিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরির জন্য বিনিয়োগ শুরু করেছে এবং বেসরকারী সংস্থা গুলো আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের সংস্থা গুলোর সাথের যৌথ ভাবে দেশে ইঞ্জিন তৈরিতে বিনিয়োগ শুরু করেছে, এর ফলে ভবিষ্যতে ভারতে এরোইঞ্জিন ইকোসিস্টেম তৈরি হবে। ইংল্যান্ডের রোলস রয়েস, ফ্রান্সের স্যাফরনের মতন বিখ্যাত এরোইঞ্জিন সংস্থাগুলি ভারতে বিনিয়োগ করছে।